নরসিংদীতে সংঘাত, গ্রামছাড়া তিন শতাধিক বিএনপি নেতাকর্মী
- নিউজ ডেস্ক
- প্রকাশঃ ১২:১১ পিএম, ২২ অক্টোবর ২০২৫

নরসিংদীর আলোকবালিতে ফের রাজনৈতিক সহিংসতার আগুন জ্বলছে। নিষিদ্ধঘোষিত আওয়ামী লীগের একাংশের নেতা ও সমর্থকদের হাতে এলাকাটি রূপ নিয়েছে আতঙ্কের ঘাঁটিতে। প্রকাশ্যে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মহড়া, হত্যাকাণ্ড ও হামলার ঘটনায় প্রাণ বাঁচাতে গ্রাম ছেড়েছেন তিন শতাধিক বিএনপি নেতাকর্মী।
জুলাই মাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পর যখন দেশের নানা প্রান্তে আওয়ামী লীগ নেতারা আত্মগোপনে চলে যান, তখন আলোকবালিতে উল্টো চিত্র। এখানকার রাজনৈতিক সংঘর্ষ যেন থামছেই না। এলাকায় ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী দুটি পক্ষ; আসাদ বাহিনী ও দীপু সমর্থক গোষ্ঠী হিংস্র আধিপত্য কায়েমে মরিয়া।
এই দুই গ্রুপের হাতে ইতোমধ্যে প্রাণ গেছে তিনজনের। তাদের মধ্যে রয়েছে আলোকবালি ইউনিয়ন যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সাদেক মিয়া, যিনি ২৯ সেপ্টেম্বর নিজ গ্রামে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। এর আগে, ১৮ সেপ্টেম্বর ভোরে বারাটিয়া সন্ত্রাসীরা মুরাদনগর বাকনগর গ্রামে বিএনপি কর্মীদের ওপর হামলা চালিয়ে হত্যা করে একজনকে।
সহিংসতা থেমে না থাকায় আতঙ্কে এলাকাছাড়া হচ্ছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। অনেকেই আশ্রয় নিচ্ছেন দেশের বাইরে। যারা এখনও রয়ে গেছেন, তারাও পরিবার নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, আসাদ ও দীপু চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে অস্ত্রধারীরা খোলাখুলি এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। তারা বিএনপির অনুসারীদের খুঁজে খুঁজে গ্রাম থেকে তাড়িয়ে দিচ্ছে। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে, অনেকে দিন-রাত ঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
পুলিশ ইতোমধ্যে এলাকায় একটি ক্যাম্প স্থাপন করেছে এবং অভিযান চালিয়ে কিছু অস্ত্র উদ্ধার করেছে। নরসিংদী জেলা পুলিশ সুপার জানান, "অভিযান অব্যাহত রয়েছে, ইতিমধ্যেই তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।" তিনি আরও বলেন, "রাজনৈতিক সহিংসতা বন্ধ করতে সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন।"
সর্বশেষ পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি সেনাবাহিনী ও অন্যান্য সংস্থাও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহায়তা করছে।
এলাকাবাসীর দাবি, সহিংসতা বন্ধে দ্রুত ও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হোক, যেন সাধারণ মানুষ নিরাপদে জীবনযাপন করতে পারে। তাদের বক্তব্য, “দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে সন্ত্রাসীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করতে হবে।”
অনেকের ধারণা, রাজনৈতিক ক্ষমতার পাশাপাশি এই সহিংসতার পেছনে রয়েছে অর্থনৈতিক স্বার্থ। মূলত মেঘনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও সেই নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতেই এই আধিপত্য বিস্তারের লড়াই। যার খেসারত দিতে হচ্ছে নিরীহ জনগণকে।