জুমার খুতবায় বিএনপি নেতাদের বাধা, ভিডিও ভাইরাল
- লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি
- প্রকাশঃ ১০:২৪ পিএম, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জে শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) উত্তর জয়পুর ইউনিয়নের হানিফ মিয়াজীর হাট কেন্দ্রীয় ঈদগাহ জামে মসজিদে জুমার খুতবায় বাধা দেওয়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লে তা নিয়ে স্থানীয়ভাবে তীব্র সমালোচনা দেখা দিয়েছে। ঘটনায় মোমেনাদের কাছে ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা কয়েকজন ভিডিও করে তা আপলোড করেন।
ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, মসজিদের খতিব মাওলানা মহিউদ্দিন হাসান (নোয়াখালী) ওই দিন ‘জবানের হেফাজত’ বিষয়ক বক্তব্য দিচ্ছিলেন। ওই বয়ানের সময় চন্দ্রগঞ্জ থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এম ইউসুফ ভূইয়া ও থানা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মুকিত সোহেল ও তাদের অনুসারীরা বয়ানে বাধা দেন এবং খোদা খতিবকে উত্ত্যক্ত করেন যার একটি ৩ মিনিট ২৪ সেকেন্ডের ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে বিএনপি নেতাদের কণ্ঠে শোনা যায় জাতীয় বেইমান, এটাতো এ্যানি চৌধুরী (বিএনপি নেতা) অন্য একটি দলের নেতারে নিয়ে বলছে। এটা কি মসজিদে আলোচনার বিষয়। আপনি কুরআন থেকে কথা বলেন। জাতীয় বেইমান শব্দ তো কুরআনে নাই। আপনি একদলকে হাইলাইটস করছেন, আরেক দলকে পচাচ্ছেন। যেটি আপনি করছেন, এতে সমাজ ভাগ করছেন। আপনি তো ইমাম, সবার নেতা আপনি। কিন্তু একটি দলকে উপস্থাপন করছেন। আপনি জামায়াত নেতা। মসজিদে জামায়াতের ওয়াজ করছেন।
এই প্রতিবাদে খতিব মহিউদ্দিন বলেন, ইমান নিয়ে মসজিদের মধ্যে আলোচনা হবে। আর আমি কোনো ব্যক্তিকে বেইমান বলিনি। এছাড়া কোনো দলকে মসজিদে রিপ্রেজেনটেটিভ করি নাই। আপনারা বসেন। আমার বক্তব্য শুনেন এবং নোট নেন।
ভিডিওতে আরও একজন বিএনপি নেতা বলেন, এ্যানি চৌধুরী কী বলছেন- ওই বক্তব্য এখানে দেওয়ার দরকার নাই। আপনি সবার ইমাম। মসজিদে এমন কোনো বক্তব্য দেবেন না, যাতে করে সবার মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হয়।
কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, বিএনপি নেতারা পরিকল্পনায় নয়, আচমকাই এসে বয়ানে অন্তর্বর্তী বাধা দেন। এরপর উপস্থিত মুসল্লিরা পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করলে অভিযুক্তরা খতিবের পেছনে জুমা নামাজ আদায় করেন।
মসজিদ কমিটির সভাপতি আবদুল কাদের অভিযোগ করেছেন, কয়েক বছর ধরে মহিউদ্দিন হুজুর জুমার নামাজ পড়ান। কখনো এ ধরনের সমস্যা হয়নি। যদি খতিবের আলোচনায় ভুল থাকে। তাহলে সেটি শালিন ভাষায় বলা যেত। মসজিদ কমিটিকে বলতে পারতেন। কিন্তু বিএনপি নেতারা সেটি না করে মসজিদের ভেতরে উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করেছেন। তিনি জানান, মসজিদ কমিটি ও মুসল্লিদের সঙ্গে বৈঠক করে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
অভিযুক্ত চন্দ্রগঞ্জ থানা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আবদুর মুকিত সোহেল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, মব-টব বুঝি না। জুমার বয়ানে বিএনপি ও এ্যানি চৌধুরীকে নিয়ে আকার-ইঙ্গিতে খতিব কথা বলেছেন। এজন্য প্রতিবাদ করেছিলাম। তবে হুজুর সরাসরি এ্যানি ভাই কিংবা বিএনপির নাম নেননি। গণঅভ্যুত্থানের পরে খতিব সাহেব বিএনপিকে ইঙ্গিত করে কথা বলেছেন। কিন্তু জামায়াতকে নিয়ে বলে না। ওনি মসজিদে জামায়াতের পক্ষ হয়ে কথা বলেন। এখন যেভাবে ওয়াজ করেন, ৫ আগস্টের আগে কখনো এভাবে বলেননি তিনি।
খতিব মহিউদ্দিন হাসান বলেন, জবানের হেফাজত নিয়ে আলোচনা করছি। এতে কোনো দল কিংবা ব্যক্তির নাম নিইনি। তবুও বিএনপি’র নেতারা মসজিদে মব সৃষ্টি করে আমাকে হেনস্তা করে। বিষয়টি মসজিদ কমিটি সুষ্ঠু সমাধান না করলে আমি আইনগত ব্যবস্থা নেব অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে। তিনি পুনরায় বলেন, জুমার আলোচনায় কোনো দল কিংবা ব্যক্তির নাম নিইনি এবং যদি মসজিদ কমিটি সমাধান না করে তখন আইনগত পথ নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ মসজিদ মিশন জেলা শাখার সেক্রেটারি মাওলানা মো. জসিম উদ্দিন এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বলেন, ইমামরা মিম্বরে দাঁড়িয়ে হক কথা বলেন এবং তাদের উদ্দেশ্য আল্লাহর সন্তুষ্টি; মসজিদের ভেতরে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ও মব সৃষ্টি গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি জানান, যারা মসজিদে খুদিতভাবে বাধা দেয় তাদের হেদায়াতের জন্য আলেমরা দোয়া করবে, কিন্তু সমস্যা থেকেই গেলে তাদের বয়কটের কথাও ভাবা উচিত।
ঘটনাবলের প্রেক্ষিতে স্থানীয় ধর্মীয় ও সুশীল সমাজের দিক থেকেও সমালোচনার সুর শোনা যায়। মসজিদ কমিটি ও সংশ্লিষ্ট পক্ষেরা এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে তীব্রতার সঙ্গে তদন্ত ও সমাধানমূলক উদ্যোগ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।