বরিশাল বন কর্মকর্তার ১৭ স্ত্রী, শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন
- বরিশাল প্রতিনিধি
- প্রকাশঃ ১০:৩৯ এম, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সরকারি চাকরির প্রলোভন, বিদেশে পড়াশোনার সুযোগ, বিমানবালা হওয়ার আশ্বাস এবং সম্পত্তি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি, এসব চটকদার প্রলোভনের মাধ্যমে একে একে ১৭ জন নারীকে বিয়ের ফাঁদে ফেলে প্রতারণা করেছেন বরিশালের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. কবির হোসেন পাটোয়ারী, এমন অভিযোগে তোলপাড় চলছে।
এই অভিযোগে অভিযুক্ত কর্মকর্তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বরিশাল নগরীতে মানববন্ধন করেছেন ভুক্তভোগী নারী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা।
বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বরিশাল নগরীর কাশিপুরে বন সংরক্ষক কার্যালয়ের সামনে এক ঘণ্টাব্যাপী এ কর্মসূচি পালন করেন তারা। মানববন্ধনে উপস্থিত কয়েকজন নারী নিজেদের কবির হোসেনের স্ত্রী দাবি করে সরাসরি অভিযোগও তোলেন।
ভুক্তভোগীদের ভাষ্য অনুযায়ী, কবির হোসেন পাটোয়ারীর বাড়ি চাঁদপুরের মতলব উপজেলায়। চাকরি জীবনে তিনি ঢাকা, খুলনা, সিরাজগঞ্জ ও বাগেরহাটসহ একাধিক জেলায় কর্মরত ছিলেন এবং এসব জায়গায় কর্মকালীন একের পর এক বিয়ের নামে প্রতারণা চালিয়ে গেছেন।
তাদের অভিযোগ, ঢাকার নাজনিন আক্তার শীলা, নারায়ণগঞ্জের সোনিয়া, খুলনার নাসরিন আক্তার দোলনসহ মোট ১৭ নারী এই প্রতারণার শিকার হয়েছেন।
সবশেষ খুলনার একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত খাদিজা আক্তারকে ২০২৫ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি বিয়ে করেন কবির হোসেন। কিন্তু বিয়ের দ্বিতীয় দিনই স্ত্রীর বাবার সম্পত্তির ভাগ লিখে দেওয়ার দাবি তোলেন তিনি। খাদিজা এতে রাজি না হওয়ায়, তাকে বরিশালের সরকারি বাসভবন থেকে বের করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।
খাদিজা আক্তার বলেন, ‘আমাকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে কবির বিয়ে করেছেন। পরে বাবার বাড়ির সম্পত্তি লিখে না দেওয়ায় তিনি আমাকে নির্যাতন করে বের করে দিয়েছেন।’
আরেক স্ত্রী দাবি করা নাসরিন আক্তার বলেন, ‘আমাকেও প্রতারণার ফাঁদে ফেলে কবির বিয়ে করেছেন। পরে তার বিয়ের নাটক ধরা পরার পর আমাকে মারধর করে তাড়িয়ে দেওয়া হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘কবির হোসেন পাটোয়ারী এ পর্যন্ত যেসব স্টেশনে চাকরি করেছেন, সেই সব এলাকায় বিয়ে করেছেন। আর প্রত্যেকটি স্টেশন ত্যাগ করার পর তাদের আর কারো খোঁজ রাখেন না।’
নাসরিনের ভাষ্য, ‘আমরা যতদূর খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি কবিরের ১৭ জন স্ত্রী রয়েছে। তাদের কোনো খোঁজ না নেওয়ায় তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এক বছর আগে কবির বরিশালে যোগদান করার পর এখানেও বিয়ের করার জন্য মেয়ে খুঁজছেন।’
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া নারীরা জানান, থানায়, আদালতে এবং বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ে একাধিকবার অভিযোগ দায়ের করলেও এখন পর্যন্ত সেসবের কোনও ফল মেলেনি। একবার দাপ্তরিক দুর্নীতির অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হলেও, প্রভাবশালী মহলের সহায়তায় জামিনে ছাড়া পেয়ে যান তিনি।
তারা কবির হোসেনকে চাকরি থেকে বরখাস্ত এবং গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার আহ্বান জানান।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কবির হোসেন পাটোয়ারীর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে তার আইনজীবী এনায়েত হোসেন বাচ্চু বলেন, ‘আমার মক্কেলের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ ভিত্তিহীন।’
এ বিষয়ে বরিশালের জেলা প্রশাসক মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘বন কর্মকর্তার প্রতারণা মাধ্যমে একাধিক বিয়ের বিষয়টি আমার জানা নেই। এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী কেউ লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে তদন্ত সাপেক্ষে বিধি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’