ঋণের টাকার জন্য রিকশাচালকের মুখে বিষ ঢেলে হত্যা
- রাজশাহী প্রতিনিধি
- প্রকাশঃ ০৯:১৪ পিএম, ১৮ আগস্ট ২০২৫

রাজশাহীতে ঋণের টাকার জন্য ফজলুর রহমান (৫৫) নামে এক রিকশাচালককে ঘাস মারার বিষ খাইয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) রাত আটটার দিকে তাকে পা বাঁধা ও গলায় রশি বাঁধা অবস্থায় বাড়ির পাশে উদ্ধার করা হয়। পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার তিনি মারা যান। মৃত্যুর আগে একটি ভিডিওতে ফজলুর অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম উল্লেখ করেন। পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছে।
গ্রেপ্তারকৃত ধুলু মিয়া (৪৫) মোহনপুর উপজেলার কেশরহাট পৌরসভার বাসিন্দা। ফজলুর রহমানের স্ত্রী আনজুয়ারা বিবির দায়ের করা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
পরিবারের অভিযোগ, ফজলুরকে ঘাস মারার বিষ খাইয়ে হত্যা করা হয়েছে। তারা জানান, ধুলু মিয়া একজন সুদের কারবারি এবং এই ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত। শনিবার রাতে মোহনপুর থানায় আনজুয়ারা বিবি হত্যা মামলা করলে রাতেই ধুলুকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
মামলার এজাহারে আনজুয়ারা বিবি উল্লেখ করেন, ফজলুর শহরে রিকশা চালাতেন এবং মাঝে মাঝে গ্রামের বাড়ি বেলনায় আসতেন। ১৪ আগস্ট সন্ধ্যা ৭টার দিকে তিনি কেশরহাট হয়ে বেলনায় ফিরছিলেন। রাত ১১টার দিকে স্থানীয় একটি চায়ের দোকানের সামনে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় তাকে ফেলে রাখা হয়। প্রতিবেশীরা দেখতে পান, তার মুখ থেকে লালা ঝরছে এবং বিষের গন্ধ আসছে।
প্রথমে তাকে মোহনপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে রাজশাহী মেডিকেলে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি তার বড় ছেলে শাহ আলমকে জানান, ধুলু ও আরও ৫–৬ জন তাকে ধরে এনে বিষ খাইয়ে গেছে। পরদিন শুক্রবার রাতে তিনি মারা যান।
রোববার সন্ধ্যায় বেলনায় ফজলুর রহমানের বাড়িতে গিয়ে প্রতিবেদক দেখেন, পরিবারের সদস্যরা গভীর শোক আর অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। আশপাশের মানুষজনও তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। বাড়িতে তখন ফজলুরের স্ত্রী আনজুয়ারা ও ছোট ছেলে তারেক উপস্থিত ছিলেন।
ফজলুরের চাচাতো ভাই এনামুল হক বলেন, “ধুলু সুদে টাকা দেয়। অনেককেই দিয়েছে। ফজলুর ২০২২ সালে তার কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা ধার নিয়েছিলেন। সুদসহ ৪৩ হাজার টাকা পরিশোধ করেও ধুলু আরও ৩০ হাজার টাকা দাবি করেন। এই নিয়ে সালিশ হয়। ১৫ হাজার টাকায় মীমাংসা হয়, কিন্তু ধুলু তা মানেননি।”
আনজুয়ারা বিবি বলেন, “গত কোরবানির ঈদের তিন-চার দিন আগে ধুলু আমাদের বাড়িতে আসে। আমার স্বামী তখন বলে, ‘পরিস্থিতি খারাপ, পাঁচ হাজার টাকা দিছি, মাফ কইরা দেন।’ ধুলু টাকা না নিয়ে হুমকি দিয়ে চলে যায়। পরে সে শহরে চলে যায়, আর বাড়ি ফেরেনি। এখন লাশ হয়ে ফিরেছে।”
কান্না জড়িত কণ্ঠে আনজুয়ারা বলেন, “কাল থেকে পাড়া-প্রতিবেশীরা আর আত্মীয়রা চাল দিয়ে সাহায্য করেছে। ঘরে কিছুই নাই। আমার স্বামীকে যারা মেরেছে, আমি চাই তারাও যেন বাঁচতে না পারে।”
ঘাসিগ্রাম ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য কাওসার সরদার বলেন, “আলু চাষের জন্য ধুলুর কাছ থেকে টাকা নিয়েছিলেন ফজলুর। বিষয়টি নিয়ে গ্রামে সালিশ হয়, মীমাংসাও করা হয়। শুনেছি, মৃত্যুর আগে ফজলুর ভিডিওতে কারও নাম বলেছেন। তিনি এনজিও ও বিভিন্ন উৎস থেকে ঋণ নিয়ে চাপে ছিলেন, তাই শহরে গিয়ে রিকশা চালাতেন।”
মোহনপুর থানার ওসি আতাউর রহমান বলেন, “মারা যাওয়ার আগে ফজলুর অভিযুক্ত একজনের নাম ভিডিওতে বলেছেন। তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনাটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত চলছে।”