মোনাজাতে ‘খালেদা জিয়ার নাম না নেওয়ায়’ ইমামকে যুবদল নেতার হুমকি


March 2025/Saikat Hasan.webp
সৈকত হাসান ইকবাল

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার কাশীপুর ইউনিয়নের ঈদগাহে ঈদ জামাত শেষে দোয়ায় বিএনপির চেয়ারপারসন ‘খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনা না করায়’ এক যুবদল নেতা ইমামকে চাকরিচ্যুত করার হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে ওই যুবদল নেতা বলেছেন, ‘নামাজের আগেই দোয়ায় খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনা করার অনুরোধ করা হলেও তিনি তা করেননি। পরে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আমি বাধ্য নই।’ তবে তাকে চাকরিচ্যুতির হুমকি দেওয়া হয়নি। 

আজ সোমবার (৩১ মার্চ) সদর উপজেলার কাশীপুর কেন্দ্রীয় ঈদগাহের দ্বিতীয় জামাতে ইমামতি করেন চরকাশীপুরের আঞ্জুবাহার জামে মসজিদের খতিব মুফতি মুহাম্মদ ইমদাদুল হক৷  তার অভিযোগ, নামাজ শেষে দোয়ায় খালেদা জিয়ার নাম উল্লেখ না করায় তাকে হেনস্থা করেছেন ফতুল্লা থানা যুবদলের সাবেক সহসম্পাদক সৈকত হাসান ইকবাল।

ঈদের জামাতের ইমাম ইমদাদুল হক একইসঙ্গে বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলনের নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির প্রচার ও দাওয়াহবিষয়ক সম্পাদক। ইমদাদুল তাকে ‘হেনস্থা ও তার চাকরি কেড়ে নেওয়ার’ হুমকির বিষয়টি উল্লেখ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন।

স্ট্যাটাসে ইমাম ইমদাদুল ‘ঈদের দিনে ঈদগাহ থেকে মনে কষ্ট নিয়ে বাড়ি ফিরলাম...’ শিরোনামে ঘটনার বিস্তারিত উল্লেখ করেন৷ সেখানে স্থানীয়রা অনেকে যুবদল নেতার নেতিবাচক আচরণের জন্য নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন৷ লেখাটি শতাধিক ব্যক্তি শেয়ারও করেছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সোমবার সকাল পৌনে ৮টার দিকে কাশীপুর কেন্দ্রীয় ঈদগাহে দ্বিতীয় জামাত অনুষ্ঠিত হয়৷ নামাজ শেষে দোয়ায় ইমাম দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনায় দোয়া করেন৷  শারীরিকভাবে অসুস্থ সবার সুস্থতা কামনা করেন৷ তবে বিশেষ কারও নাম দোয়ায় উল্লেখ করা হয়নি।

দোয়া শেষে ইমদাদুল হককে ঘিরে ধরেন যুবদল নেতা সৈকত হাসান ইকবাল ও তার অনুসারীরা৷ অনুরোধের পরেও দোয়ায় খালেদা জিয়ার নাম উল্লেখ করে দোয়া প্রার্থনা না করায় চটে যান ইকবাল৷ ইমামের সঙ্গে তিনি উচ্চবাচ্য করতে থাকেন৷ পরে এলাকার মুরব্বীদের মধ্যস্থতায় যুবদল নেতা ও তার অনুসারীরা সেখান থেকে চলে যান বলে জানান ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক মুসুল্লি।

যোগাযোগ করা হলে ইমদাদুল হক বলেন, ‘নামাজ শুরুর আগে বিএনপি সমর্থক স্থানীয় এক ব্যক্তি (যিনি ঈদগাহ কমিটিরও সদস্য) তাকে খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনা দোয়া করতে অনুরোধ জানান৷ কিন্তু তিনি দোয়ায় অসুস্থ সকলের আরোগ্য কামনা করেন, বিশেষ কারও নাম উল্লেখ করেননি।’

ইমাম আরও বলেন, ‘আমি নামাজ শেষ করে যথারীতি দোয়া করি এবং সেখানে কারও নাম উল্লেখ করি নাই। কারণ, এটি আম-মজলিস। এখানে সব দলের লোকই আছে। তাই, বিতর্ক এড়াতে নির্দিষ্ট দলের কারও নাম উল্লেখ করা উচিত হবে না ভেবেই তা করিনি৷ তাছাড়া উনি (খালেদা জিয়া) রাষ্ট্রীয় কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদেও নেই, সুতরাং তার নাম উল্লেখে কোনো বাধ্যবাধকতাও নেই৷ আমি সবার রোগমুক্তি কামনা করেছি৷ কিন্তু নামাজ শেষে যুবদল নেতা ইকবাল আমার চাকরি খেয়ে দেবেন বলে হুমকি দেন৷ আমি অনুরোধের পরও কেন তার নাম নেইনি সেজন্য তিনি আমার দিকে তেড়ে আসেন৷ খুবই আগ্রাসী আচরণ ছিল তার৷ মুসুল্লিরা তখন প্রতিবাদ জানালে থামেন তিনি।’

অভিযুক্ত যুবদল নেতা সৈকত হাসান ইকবাল বলেন, ‘আমি তার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করি নাই৷ আমি তাকে শুধু বললাম, অনুরোধের পরও আপনি কেন খালেদা জিয়ার নাম নিলেন না৷ উনি বললেন, উনি বাধ্য না৷ তখন উনি কই চাকরি করেন জানতে চাই৷ জানলাম, উনি যেই মসজিদে চাকরি করেন সেই মসজিদের সভাপতি আমাদের ছোট ভাই।’

ঢাকাওয়াচ২৪ এর খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন ।
ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×