
একটি মৃত্যুই যেন নাড়িয়ে দিয়েছে রাজধানী। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সম্মুখসারির যোদ্ধা ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শহীদ শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুর প্রতিবাদে রাজধানীর শাহবাগে জড়ো হতে শুরু করেছেন ছাত্র-জনতা। সকাল থেকেই দলে দলে মানুষ সেখানে উপস্থিত হচ্ছেন। কেউ মিছিল নিয়ে, কেউ আবার নিজ উদ্যোগে এসে যোগ দিচ্ছেন আন্দোলনে। হাতে জাতীয় ও প্রতিবাদী পতাকা, কণ্ঠে ক্ষোভ আর প্রতিশোধের অঙ্গীকারে মুখর শাহবাগ।
বিক্ষোভকারীরা স্লোগানে স্লোগানে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। “ফ্যাসিবাদের কালো হাত ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও”, “আওয়ামী লীগের আস্তানা এই বাংলায় হবে না”, “হাদি ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দেব না” স্লোগানে উত্তাল হয়ে উঠেছে এলাকা।
শুক্রবার ১৯ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ৮টার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, রাজধানীর নানা প্রান্ত থেকে ছাত্র-জনতা শাহবাগে এসে জমায়েত হচ্ছেন। আন্দোলনকারীদের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ।
শনিরআখড়া থেকে আসা এক মাদ্রাসা শিক্ষার্থী আশফাকুর রহমান আবেগঘন কণ্ঠে বলেন, “আমরা একজন সাচ্চা দেশপ্রেমিককে হারিয়েছি। রাতে ঘুমাতে পারিনি। প্রতিবাদ জানাতে সকালেই এখানে চলে এসেছি। ওসমান হাদির মত দেশপ্রেমিক সাহসী মানুষকে হারিয়ে আমরা শোকাহত।”
রামপুরা থেকে আসা ইমরুল কায়েস বলেন, “ওসমান হাদির মৃত্যু পুরো বাংলাদেশকে নাড়িয়ে দিয়েছে। আমরা শোককে শক্তিতে পরিণত করে এই হত্যার প্রতিশোধ নেব। হাদি ভাইয়ের বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরে যাব না।”
এর আগে বৃহস্পতিবার ১৮ ডিসেম্বর রাত পৌনে ১০টার দিকে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী শহীদ শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে রাজধানীজুড়ে ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটে। সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যুর খবর জানাজানি হতেই বিক্ষোভে ফেটে পড়ে ছাত্র-জনতা।
জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম সংগঠক শরিফ ওসমান হাদি গত ১২ ডিসেম্বর রাজধানীর বিজয়নগরে গণসংযোগের সময় চলন্ত রিকশায় থাকা অবস্থায় আততায়ীর গুলিতে গুরুতর আহত হন। গুলিটি তার মাথায় লাগে। প্রথমে ঢাকায় এবং পরে সিঙ্গাপুরে দীর্ঘদিন চিকিৎসা চললেও শেষ পর্যন্ত বৃহস্পতিবার রাতে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
এই মৃত্যুকে ঘিরে রাজধানী ঢাকা এখন এক উত্তাল ও থমথমে পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।