
বিজয় দিবস উপলক্ষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) নতুন এক চিত্রের দেখা মিলল। মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) দুপুর দেড়টার দিকে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা পাকিস্তানের পতাকার পাশে ভারতের পতাকা এঁকেছেন।
শিক্ষার্থীরা জানান, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিজয় দিবসকে নিজের দেশের জয় হিসেবে তুলে ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিয়েছেন। তারা মনে করেন, এটি বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে নস্যাৎ করার উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচেষ্টা। এই প্রতিবাদ হিসেবে তাদের উদ্যোগ।
আইন বিভাগের ১৬ ব্যাচের শিক্ষার্থী ফয়সাল বলেন, "নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশের স্বাধীনতার কুক্ষিগত করার জন্য পোস্ট দিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে তারা আমাদের সহায়তা করেছিলো আমাদের রিজিয়ন দখল করার জন্য। মোদির ওই পোস্টের প্রতিবাদ জানিয়ে আমার ভারতের পতাকা একেছি।"
এর আগে বিজয় দিবসের প্রথম প্রহরে রাত ১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে পাকিস্তানের পতাকা আঁকা শুরু করেন শাখা ছাত্রদল ও ছাত্রঅধিকারের কিছু নেতাকর্মী। এ সময় তারা ক্যাম্পাসের ফটক দিয়ে শিক্ষার্থীদের বহনকারী বাসকে বের হতে বাধা দেন। বিষয়টি নিয়ে প্রথমে প্রক্টরিয়াল বডির সদস্য এবং কয়েকজন শিক্ষার্থী তাদের বাধা দেন। এই পরিস্থিতিতে দুই গ্রুপের মধ্যে বাকবিতণ্ডা, হাতাহাতি এবং ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
পরবর্তীতে শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান হিমেল এবং সদস্য সচিব শামসুল আরেফিনের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা রাতভর প্রধান ফটকে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ চালান। তারা উপাচার্যের গাড়িও অবরোধ করেন। ভোর ৫টার দিকে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা অবরোধ তুলে নিলে উপাচার্য ও প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা ক্যাম্পাস ছাড়েন।
শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব শামসুল আরেফিন বলেন, "জুলাইয়ের পর আমরা মনে করেছিলাম, ভিন্নমত প্রকাশ করতে পারবে। কিন্তু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পাকিস্তানের গণহত্যা ও আমাদের মা-বোনের ওপর অত্যাচারের প্রতীকী প্রতিবাদের জন্য একজনের উপর বাংলাদেশ বিরোধী কিছু দালাল হামলা করেছে। জবিতে কোনো স্বৈরাচার কিংবা মবতন্ত্রের আত্মপ্রকাশ করতে পারবে না। ছাত্রদল বাংলাদেশের জন্য ঘুমায় না। সবার আগে বাংলাদেশ।"
আহ্বায়ক মেহেদী হাসান হিমেল জানান, "বিজয়ের মাসে প্রতীকী প্রতিবাদে পাকিস্তানের পতাকা আঁকতে গেলে প্রথমে প্রক্টরিয়াল বডি বাধা দেয়। পরে আস-সুন্নাহ হলের কিছু শিক্ষার্থী সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে। এ সময় সাংবাদিকদের ওপরও হামলা করা হয়।"
তিনি আরও বলেন, "১৯৭১-এর গণহত্যায় কিছু পাকিস্তানি সমর্থকরা সমর্থন দিয়েছিল। তাদের প্রেতাত্মারা এখনও বাংলাদেশে রয়েছে। পাকিস্তানকে হেয় করলে তাদের অন্তরে জ্বালা করে। সে জায়গা থেকে পাকিস্তানি পতাকা এঁকে প্রতীকী প্রতিবাদে তারা বাধা দিয়েছে।"
জবি প্রক্টর অধ্যাপক ড. তাজাম্মুল হক বলেন, "বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে পতাকা আঁকতে গেলে অনুমতি প্রয়োজন। তারা অনুমতি না নিয়েই পতাকা অঙ্কন করেন। শিক্ষার্থীদের বহনকারী বাস ক্যাম্পাস থেকে বের হতে বাধা দেয়।"