
ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী শরীফ ওসমান হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার দিনেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (রাকসু) সাধারণ সম্পাদক সালাহউদ্দিন আম্মারকে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিব শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক পোস্টে এই হুমকি দেন। ওই পোস্টে সম্মতি জানিয়ে মন্তব্য করেছেন রাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুও।
ফেসবুক পোস্টে আসাদুল্লা-হিল-গালিব লেখেন, "দয়া করে আমার ক্যাম্পাসের টাকে কেউ কিছু করবেন না, অনুরোধ রইলো। ওইটা শুধু আমার আর আমার ভাই মোস্তাফিজুর রহমান বাবুর ভাগ।"
রাকসুর জিএস সালাহউদ্দিন আম্মারকে লক্ষ্য করে তিনি আরও লেখেন, "ছোটভাই প্রটেকশন বাড়াও। ৮০সিসি বাইক নিয়ে একা একা ঘুরাঘুরি করো না। আর তোমার আব্বার সাদিক কায়েম হেলিকপ্টারে যাতায়াত করে তুমি অন্তত প্লেনে ঢাকা যাবা তা নাহলে যমুনার আগে ও পরে একটা কিছু হলেও হতে পারে। আমি চাই তুমি বেঁচে থাকো, অনেক হিসাব আছে।"
শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) সকাল ১১টা পর্যন্ত ওই পোস্টে মন্তব্য করেছেন ছয়জন, তাঁদের মধ্যে রাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুও রয়েছেন। তিনি মন্তব্যে লেখেন, "আল্লাহর কাছে দোয়া করো যেন ওকে বেঁচে (বাঁচিয়ে) রাখে।" এছাড়া নোমান ইসলাম নামের একজন মন্তব্য করেন, "ভাই, আপনার ক্যাম্পাসে আমারে একটা ভাগ দিয়েন- শুধু এটুকুই লাগবে।"
হুমকির বিষয়ে প্রতিক্রিয়ায় রাকসুর জিএস সালাহউদ্দিন আম্মার বলেন, "পোস্টটি আমি দেখি নাই। তবে আমাকে একজন বলেছে বিষয়টি। আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পেজ থেকে মাঝেমধ্যেই এধরণের পোস্ট করে বলা হয় যে নেক্সট টার্গেট আমি। এগুলো আমার কাছে খুব একটা কনসার্নের বিষয় না। আমার কথা হলো, আল্লাহর দেয়া জান আল্লাহ নিয়ে যাবে। এজন্য আমি ঘর থেকে বের হবো না, আমার প্রোটোকল বাড়াবো- বিষয়টা এমন না।"
তিনি আরও বলেন, "আমি এধরণের হুমকিতে ন্যূনতম ভীত-সন্ত্রস্ত না। আমি আমার কাজ করে যেতে চাই। এক্ষেত্রে এধরণের কিছু মেন্টাল প্রেসারতো সবসময় নিতেই হয়। আমার পরিণতি আমি নিজে বেছে নিয়েছি। সুতরাং এধরণের হুমকিতে ভীতসন্ত্রস্ত হওয়াটাই আমার জন্য ওয়েস্টেজ অব টাইম। আর গালিবের ব্যাপারটা হলো, ছাত্রলীগ ক্ষমতায় থাকাকালীনইতো তার কোনো পাওয়ার ছিলো না। এরকম একজনের পোস্টকে গুরুত্ব দেয়া মানেইতো তাকে গুরুত্ব দেয়া হয়ে যায়।"
উল্লেখ্য, শুক্রবার জুমার নামাজের পর রাজধানীর বিজয়নগরের কালভার্ট রোড এলাকায় দুর্বৃত্তের গুলিতে গুরুতর আহত হন ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরীফ ওসমান হাদি। প্রথমে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। বর্তমানে তিনি একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
এদিকে, অনুসন্ধানী সংবাদমাধ্যম দ্য ডিসেন্ট-এর দাবি অনুযায়ী, বাইকের পেছন থেকে ওসমান হাদির ওপর গুলি করা ব্যক্তির চেহারার সঙ্গে ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান নামের এক ব্যক্তির মিল পাওয়া গেছে। তিনি রাজধানীর আদাবর থানা ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন বলে দাবি করা হয়েছে।
সংবাদমাধ্যমটি জানায়, ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার থেকে সংগৃহীত ৯ ডিসেম্বরের সিসিটিভি ফুটেজ, পুলিশের সংগৃহীত ১২ ডিসেম্বরের হামলার সিসিটিভি ফুটেজ, বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবি এবং ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে ফয়সাল করিম মাসুদ নামের অ্যাকাউন্টসহ আওয়ামী লীগপন্থী বিভিন্ন পেজ ও ব্যক্তিগত প্রোফাইলে পোস্ট করা ৫০টিরও বেশি ছবি বিশ্লেষণ করে এই মিল নিশ্চিত করা হয়েছে বলে তাদের দাবি।