
স্বাধীনতার ৫৫তম বার্ষিকী পালন করা হলেও দেশের মানুষ এখনও তার জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। এই শঙ্কার কথা উল্লেখ করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেন, স্বাধীনতার প্রকৃত মানে বোঝাতে আমাদের সংগ্রাম থেমে থাকা যাবে না।
মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) দলের কার্যালয়ে বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
রেজাউল করীম বলেন, “স্বাধীনতার ৫৫তম দিবসেও জাতি তার জান-মালের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে। এর নাম স্বাধীনতা হতে পারে না। একাত্তরের আলোচনা এলেই একাত্তরে কে কি করেছে তার মহিমা ও কীর্তন শুরু হয়। একাত্তর সালে এবং বাংলার দীর্ঘ সংগ্রামে যারাই অংশ নিয়েছেন, জীবন দিয়েছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান আমরাও জানাই, সর্বদা জানিয়েই যাবো। একই সঙ্গে তারা কেন জীবন উৎসর্গ করেছিলেন সেই আলোচনা না করলে তাদের ত্যাগকে অর্থবহ করা যায় না।”
তিনি আরও বলেন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ মানুষের ভোটের অধিকার, সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য হয়েছিল। তবে স্বাধীনতার ৫৫ বছর পর দেখা যাচ্ছে, আমরা প্রকৃত অর্থে স্বাধীনতা অর্জন করতে পারিনি। “হ্যাঁ! আমরা আলাদা ভূখণ্ড পেয়েছি, নিজস্ব পতাকা পেয়েছি। কিন্তু এগুলো স্বাধীনতা নয়; এগুলো হলো স্বাধীনতার প্রতীক। প্রকৃত স্বাধীনতা হলো, সমাজ থেকে আয় বৈষম্য, সুযোগের বৈষম্য ও সম্মান বৈষম্য দূর করা, মানুষের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন বন্ধ করা, খুন-গুম ও বিনাবিচারে আটক বা হত্যা বন্ধ করা, সুবিচারের নিশ্চয়তা দেওয়া এবং খাদ্য, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।”
চরমোনাই পীর প্রশ্ন তোলেন, এত রক্ত ও জীবন উৎসর্গের পর আমরা আসলে কী পেয়েছি। তিনি বলেন, “প্রতীকী স্বাধীনতা পেয়েছি বটে কিন্তু সেই স্বাধীনতা অর্থবহ হয়নি। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ একাত্তরের বিজয়কে অর্থবহ করার সংগ্রাম অব্যাহত রাখবে।”
রেজাউল করীম আরও বলেন, ২৪ জুলাই ও আগস্টের ঘটনাগুলো নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। ৫৪ বছরের জমে থাকা সমস্যা দূর করে দেশকে নতুনভাবে গড়ে তোলার সুযোগ এসেছে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ যদি সরকার গঠন করার সুযোগ পায়, তারা সমাজ থেকে আয় বৈষম্য, সুযোগ বৈষম্য ও সম্মানের বৈষম্য দূর করবে। আইন এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করবে। মানুষের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন, খুন-গুম ও বিনাবিচারে হত্যা বন্ধ হবে। সমাজকে সহযোগিতাপূর্ণ ও সৌহার্দ্যমূলক করা হবে এবং রাজনৈতিক সংস্কৃতিও সৌজন্যমূলক হবে।
চরমোনাই পীর ১৬ ডিসেম্বর উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর স্ট্যাটাসের সমালোচনা করে বলেন, “তিনি প্রকারান্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকেও অস্বীকার করতে চান। তার এবং ভারতের এমন মনোভাব ভুল ও নিন্দনীয়।” তিনি যোগ করেন, প্রতিবেশিদের সঙ্গে সম্পর্ক হবে পারস্পরিক সহযোগিতা ও সম্মানের ভিত্তিতে। কিন্তু যদি কেউ তাদের ভূখণ্ডে বাংলাদেশবিরোধী কার্যক্রমকে আশ্রয় দেয়, তবে বাংলাদেশের মানুষ তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেবে।
ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “কোনো সাধারণ জ্ঞান সম্পন্ন মানুষ এ ধরনের বক্তব্য দিতে পারে না।”
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন ইসলামী আন্দোলন ঢাকা মহানগরের সভাপতি ও যুগ্মমহাসচিব মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন দলের মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা ইউনুস আহমদ। ঢাকা দক্ষিণের সভাপতি ও যুগ্মমহাসচিব মাওলানা ইমতেয়াজ আলম বিশেষ বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতৃবৃন্দও সভায় উপস্থিত ছিলেন।