কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে ধর্ষণচেষ্টায় ২ জনের কারাদণ্ড, পলাতক ৩


কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে ধর্ষণচেষ্টায় ২ জনের কারাদণ্ড, পলাতক ৩

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) নৃবিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষার্থীকে চলন্ত বাসে শ্লীলতাহানি ও ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে দুইজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালত তাদের অজামিনযোগ্য দুই বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন।

শুক্রবার (২২ আগস্ট) সকাল ৯টার দিকে সেন্টমার্টিন পরিবহণের একটি বাসে এ ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও শিক্ষার্থীদের বরাতে জানা গেছে, ওই শিক্ষার্থী কোটবাড়ি বিশ্বরোড থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে বাসে ওঠেন। কিন্তু পদুয়ার বাজার থেকে ইউ-টার্ন নেওয়ার বদলে বাসটি তাকে নিয়ে যায় চৌদ্দগ্রামের দিকে। একপর্যায়ে সুয়াগাজী এলাকায় ঘুরে বাসটি ফের পদুয়ার বাজারে আসে। তখন বাসে ছিল চালক, হেল্পারসহ আরও তিনজন। তারা শিক্ষার্থীকে একা পেয়ে গলায় ছুরি ধরে স্বর্ণালংকার ও টাকা ছিনিয়ে নেয় এবং ধর্ষণের চেষ্টা করে। এমনকি শিক্ষার্থীকে হাত-পা বেঁধে ফেলে দেওয়ারও চেষ্টা করা হয়। পরে তার অনুরোধে স্থানীয় একটি হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়।

খবর পেয়ে স্থানীয়রা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জানালে তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে ভুক্তভোগীকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার করে এবং বাসে থাকা দুজনকে ধরে ফেলে। বাকি তিনজন পালিয়ে যায়।

ঘটনার পর উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা ৯৯৯-এ ফোন করে পুলিশ ডাকে। তারা বাস মালিক ও পলাতক অভিযুক্তদের ক্যাম্পাসে আনার দাবি জানায়। তবে পুলিশ রাজি না হলে শিক্ষার্থীরা দুপুরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে, এতে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। সেনাবাহিনী এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আশ্বাসে অবরোধ তুলে নেয় শিক্ষার্থীরা।

পরে ভ্রাম্যমাণ আদালত আটক দুইজনকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেন। অন্য তিনজনকে ধরতে অভিযান চলছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বাদী হয়ে ধর্ষণচেষ্টা ও শ্লীলতাহানির মামলা করবে বলে নিশ্চিত করেছে।

গ্রেফতার হওয়া দুইজন হলেন—মো. হোসেন আলী (২৫) ও মো. আলী হোসেন (২৩)। তাদের ভাষ্যমতে পলাতকরা হলেন—পিচ্চি রাসেল (৩২), নূর আলম ও সৌরভ। সেন্টমার্টিন পরিবহণের মালিক হলেন মো. চাঁন মিয়া।

কুমিল্লা সদর দক্ষিণের উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুবাইয়া খানম বলেন, 'শিক্ষার্থীদের এসেই আমি মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে সাজা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। তারা শুরুতে রাজি হয়নি, পরে মেনে নেয়।

কুমিল্লার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাজির আহমেদ খাঁন জানান, গ্রেফতার দুইজনকে আদালত সাজা দিয়েছে। বাকি তিনজনকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। আশাকরি কোনো গাফিলতি হবে না।

কুবি প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আবদুল হাকিম বলেন, পরিস্থিতি খুব উত্তপ্ত ছিল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সেনাবাহিনীও হিমশিম খাচ্ছিল। অবশেষে আদালত দুই বছরের সাজা দিয়েছে। আমি চাই অভিযুক্তরা শাস্তি পাক।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেন, আমাদের ছাত্রীকে হাত-পা বেঁধে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করা হয়েছে। এটা মেনে নেওয়া যায় না। দুইজন ধরা পড়েছে, পুলিশ আশ্বাস দিয়েছে বাকি তিনজনকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করবে।

তিনি আরও বলেন, এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ইতোমধ্যেই দুই বছরের অজামিনযোগ্য জেল দিয়েছেন। পুলিশও জানিয়েছে, এক মাসের মধ্যে চার্জশিট দেওয়া হবে যাতে ন্যায়বিচার নিশ্চিত হয়।

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×