
আলবেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী এদি রামা রাশিয়া ইউরোপের অন্য কোনো দেশে হামলা চালাবে না বলে নিশ্চিত করেছেন। তার মতে, ন্যাটো যে কোনো ধরনের আগ্রাসন প্রতিরোধে সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত রয়েছে।
রামা পশ্চিমা দেশগুলোর উদ্বেগকে তুচ্ছ আখ্যা দিয়ে বলেন, “ইইউ এখন উচিত ইউক্রেন যুদ্ধের সমাধানের জন্য বাস্তবসম্মত একটি শান্তি পরিকল্পনা প্রণয়ন করা।”
এই মন্তব্য তিনি বার্লিন গ্লোবাল ডায়ালগ সম্মেলনের পর আল জাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে করেছেন। রামা বলেন, “ইউরোপ বা ন্যাটোর কোনো সদস্য রাষ্ট্রকে আক্রমণ করা একেবারেই নির্বুদ্ধিতার কাজ হবে। রাশিয়া আলবেনিয়ায় হামলা করবে না, ইউরোপের অন্য কোনো দেশেও না।”
প্রধানমন্ত্রী আরও জানান, “ন্যাটো যেকোনো আগ্রাসনের জন্য প্রস্তুত। ভয় পাওয়ার কিছু নেই; এখন পর্যন্ত এটি বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সামরিক জোট।”
ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭টি দেশের মধ্যে ২৩টি ন্যাটোর সদস্য। আলবেনিয়া ন্যাটোর অংশ এবং ২০১৪ সাল থেকে ইইউ প্রার্থী দেশ হিসেবে রয়েছে। রামা বলেন, “রাশিয়া নিয়মিতভাবে ইইউকে উসকানি দিচ্ছে। রাশিয়ার সীমান্তবর্তী দেশগুলো প্রতিদিন নানা ধরনের উসকানি মোকাবিলা করছে... ইইউ নিজেকে রক্ষা করছে এবং আরও শক্তভাবে রক্ষার পরিকল্পনা করছে।”
গত সেপ্টেম্বরে পোল্যান্ড, ফিনল্যান্ড, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া, নরওয়ে ও রোমানিয়া রাশিয়ার বিরুদ্ধে সন্দেহভাজন ড্রোন অনুপ্রবেশের অভিযোগ তোলে। ১৯ সেপ্টেম্বর ন্যাটো জানিয়েছে, তারা এস্তোনিয়ার আকাশসীমায় ঢুকে পড়া তিনটি রাশিয়ার মিগ-৩১ যুদ্ধবিমান আটকিয়েছে, যদিও মস্কো অভিযোগটি অস্বীকার করেছে।
জার্মান গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান মার্টিন ইয়াগার সংসদ সদস্যদের সতর্ক করে জানিয়েছেন, রাশিয়া ইউরোপে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে, তবে ন্যাটোর সঙ্গে সরাসরি সামরিক সংঘাতে যেতে চায় না। রাশিয়া নিজেও এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলে আসছে যে ইউরোপীয় দেশগুলো অকারণে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে।
রামার সরকার রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের তীব্র সমালোচক এবং মস্কোর বিরুদ্ধে ইইউর নিষেধাজ্ঞাকে সমর্থন করে। তবে রামা আল জাজিরাকে বলেছেন, “ইউরোপ এখনও কোনো শান্তি পরিকল্পনা তৈরি করেনি, এটি আমার কাছে খুবই অদ্ভুত লাগে।”
প্রধানমন্ত্রী আরও মন্তব্য করেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধবিরতির উদ্যোগ নিচ্ছেন, তখন ইউরোপকেও তাদের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালানো উচিত এবং নিজেদের শান্তির দৃষ্টিভঙ্গি সামনে আনা উচিত। তিনি বলেন, ইউরোপীয় নেতাদের রাশিয়ার সঙ্গে সংলাপের উপায় খুঁজে বের করতে হবে, যাতে যুদ্ধের অবসান সম্ভব হয়।
এর আগে গত সোমবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন, তিনি এখনো ইউরোপীয় কোনো শান্তি পরিকল্পনা দেখেননি।
এদিকে রামা জানান, আলবেনিয়ায় এখনো রাশিয়ার কোনো ড্রোন দেখা যায়নি এবং দেশটি কোনো নিরাপত্তা হুমকি অনুভব করছে না। তার ভাষায়, “আমি একজন আলবেনীয়। আমাদের কোনো ভয় নেই... আলবেনিয়ায় রুশ শত্রুতার জায়গা নেই, কারণ এখানে রাশিয়ার প্রতি কোনো সহানুভূতিও নেই।”
ইউরোপে রাশিয়ার ‘হাইব্রিড যুদ্ধ’ চালানোর অভিযোগ আগেও উঠেছে। এই যুদ্ধ সাধারণত সাইবার হামলা, ভুয়া তথ্য প্রচার বা বিভ্রান্তি তৈরির মতো কৌশল ব্যবহার করে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতে, সাম্প্রতিক ড্রোন অনুপ্রবেশও এই কৌশলের অংশ।