
মিয়ানমারে দীর্ঘদিন ধরে চলা জরুরি অবস্থা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যাহার করেছে দেশটির সামরিক সরকার। একইসঙ্গে, ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছে জান্তা প্রশাসন।
বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে বলা হয়, দেশটির শাসক জেনারেল মিন অং হ্লেইং এ বিষয়ে একটি লিখিত নির্দেশনা জারি করেছেন।
জরুরি অবস্থা তুলে নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জান্তা সরকারের মুখপাত্র জৌ মিন তুন। এক অডিও বার্তায় তিনি বলেন, বহুদলীয় গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি গড়ে তোলার স্বার্থে সরকার পার্লামেন্ট নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। আসন্ন নির্বাচন উপলক্ষ্যে আজ বৃহস্পতিবার থেকে জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার করা হলো।
জান্তা প্রধান মিন অং হ্লেইং এর আগেও নির্বাচনের সময়সূচি নিয়ে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। চলতি বছরের ৮ মার্চ, এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন, ডিসেম্বর অথবা ২০২৬ সালের মধ্যে মিয়ানমারে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। মুখপাত্র জৌ মিন তুনের সাম্প্রতিক বার্তাতেও সেই বক্তব্যের প্রতিধ্বনি পাওয়া গেছে। তিনি জানান, আগামী ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে ভোটগ্রহণের নির্দিষ্ট তারিখ এখনো জানানো হয়নি।
এদিকে, মিয়ানমারের প্রধান বিরোধী দলগুলো ইতিমধ্যেই আসন্ন নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই নির্বাচনের মাধ্যমে সামরিক বাহিনী তাদের রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ আরও সুসংহত করতে চায়।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সামরিক বাহিনী জনপ্রিয় নেত্রী অং সান সু চি'র নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করে এবং জরুরি অবস্থা জারি করে। ওই অভ্যুত্থানের ফলে দেশে গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হয়, যা এখনো চলছে।
জরুরি অবস্থার আওতায় জেনারেল মিন অং হ্লেইং রাষ্ট্রের নির্বাহী, আইন ও বিচার বিভাগসহ সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী হন। সাম্প্রতিক সময়ে তিনি সহিংসতা প্রশমনের উপায় হিসেবে নির্বাচনের কথা তুলে ধরছেন।
তবে গত বুধবার জান্তা সরকার একটি নতুন আইন পাশ করেছে, যার আওতায় নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিয়ে কেউ প্রতিবাদ করলে বা বিরূপ মন্তব্য করলেও তাকে সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করতে হতে পারে।
মিয়ানমারে সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০২০ সালের নভেম্বরে। ওই নির্বাচনে ভোট জালিয়াতির অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করে এবং জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে। অভ্যুত্থানের নেতৃত্বে ছিলেন সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লেইং, যিনি পরে সামরিক সরকারের শীর্ষ পদে বসেন।
এনএলডি সরকার উৎখাতের পর দলটির প্রধান অং সান সু চি, তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্য এবং দলীয় নেতাকর্মীদের হাজার হাজারকে গ্রেপ্তার করে জান্তা। তারা এখনও কারাবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। গত বছর এনএলডির দলীয় নিবন্ধনও বাতিল করে দিয়েছে সামরিক সরকার।