
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আজকে নির্বাচনকে বানচাল করে দেওয়ার এবং পিছিয়ে দেওয়ার যে চক্রান্ত চলছে, তা সফল হলে দেশের সর্বনাশ হবে। এই সংকটময় সময়ে একটি নির্বাচিত সরকার অত্যন্ত জরুরি, তাই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি যেন তারা আর দেরি না করে দ্রুত নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে।
সোমবার (১০ নভেম্বর) সকাল ১১টার দিকে ঠাকুরগাঁও জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনে মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের সন্তানদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ঠাকুরগাঁও জেলা ইউনিট কমান্ডের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা নূর করিম।
মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকারকে শ্রদ্ধা ও সম্মান করে এবং আশা করে প্রধান উপদেষ্টা খুব দ্রুত নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবেন, যাতে দেশে একটি নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়।
তিনি আরও বলেন, একটা কথা মনে রাখতে হবে; দেশটা আমাদের, এই মাটি আমাদের, এই মানুষগুলো আমাদের।
বিএনপি মহাসচিব অভিযোগ করেন, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধকে পরিকল্পিতভাবে ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। যারা একাত্তরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর ছিল, সেই চক্রই এখন ধর্মীয় অনুভূতিকে ব্যবহার করে দেশটাকে গ্রাস করার চেষ্টা করছে।
এ সময় তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশ্যে বলেন, এই ষড়যন্ত্র রুখে দেওয়ার দায়িত্ব আপনাদেরই নিতে হবে। আজকে একটা চেষ্টা করা হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধকে ঘুরিয়ে দেওয়ার। বলা হচ্ছে ,৭১-এ হয় নাই, আমরা কিছুই করি নাই, দেশটার জন্য কোনো অবদান রাখিনি। এখন যারা ‘২৪-এ করেছে তারাই সব করেছে; এই রকম একটা ধারণা দিচ্ছে।
তিনি প্রশ্ন তোলেন, “দীর্ঘ ৯ মাস যারা যুদ্ধ করেছি, পরিবার-পরিজনের খবর নিতে পারিনি... সেই দিনটাকে ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে, সেটা কি ভুলিয়ে দেওয়া যায়?” মুক্তিযোদ্ধারা “না” সূচক জবাব দিলে তিনি বলেন, “আমার জন্মটাকে কি আমি ভুলতে পারি?”
মির্জা ফখরুল আরও অভিযোগ করেন, “আজকে সুপরিকল্পিতভাবে একটি মহল দেশের স্বাধীনতা ও মূল্যবোধের বিরুদ্ধে কাজ করছে। যারা ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে যোগসাজশ করে মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করেছিল, তাঁদের পরিবার ধ্বংস করেছিল, মেয়েদের তুলে দিয়েছিল পাকবাহিনীর হাতে; তাদের সঙ্গে কি এই দেশের মানুষ আপস করতে পারে?”
তার বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় সভাস্থলে উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধারা ‘না’ বলে সাড়া দেন। এ সময় একজন মুক্তিযোদ্ধা স্লোগান দেন, “একাত্তরের হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার। রাজাকার, আলবদর হুঁশিয়ার সাবধান।”
ক্ষোভ প্রকাশ করে মির্জা ফখরুল আরও বলেন, “আমি এসব কথা বলতে চাই না, কিন্তু যারা দেশটাকে গিলে খাওয়ার চেষ্টা করছে, তাদের রুখতে এখন বিভেদের চেতনাকেই সামনে আনতে হবে।”
তিনি আরও স্মরণ করিয়ে দেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে বেগম খালেদা জিয়া মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় গঠন করেছিলেন এবং মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ভাতা চালু করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত তিনি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থেকে দেশের স্বার্থে কাজ করার আহ্বান জানান।