
জাতীয় সংসদের ত্রয়োদশ নির্বাচন সামনে রেখে মনোনয়ন জমার সময়সীমা দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন। হাতে সময় আছে মাত্র দুদিন, ফলে প্রার্থী ও সংশ্লিষ্টদের মধ্যে বাড়ছে তৎপরতা।
তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের ক্ষমতা রিটার্নিং অফিসারের হাতে। সে কারণে সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কাছে জমা পড়া সব মনোনয়নপত্র ২৯ ডিসেম্বর বিকেল ৫টার পরপরই নিরাপত্তা নিশ্চিত করে রিটার্নিং অফিসারের কাছে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ১২(৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, নির্ধারিত দিনে বা তার আগের যেকোনো দিনে প্রার্থী নিজে, তার প্রস্তাবক কিংবা সমর্থনকারী মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারবেন। রিটার্নিং বা সহকারী রিটার্নিং অফিসার এসব মনোনয়ন গ্রহণ করবেন।
মনোনয়নপত্র জমা নেওয়ার সময় নির্ধারিত স্থানে ক্রমিক নম্বর দেওয়া হবে। রিটার্নিং অফিসার ‘রিঅ-’ এবং সহকারী রিটার্নিং অফিসার ‘সরিঅ-’ লিখে নম্বর প্রদান করবেন। কোনো প্রার্থী একাধিক মনোনয়নপত্র জমা দিলে প্রথমটিতে পূর্ণ নম্বর থাকবে এবং পরবর্তী গুলোতে বন্ধনীর মধ্যে (ক), (খ) বা (১), (২) ব্যবহার করা যাবে।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা, জামানত প্রদান, প্রস্তাবক ও সমর্থনকারীর যোগ্যতা, রাজনৈতিক দলের প্রার্থী মনোনয়ন, মনোনয়ন বাছাই, প্রার্থিতা প্রত্যাহার এবং বৈধ প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ—এসব বিষয়ে একটি বিস্তারিত পরিপত্র জারি করেছে নির্বাচন কমিশন।
ইসি সূত্র জানায়, ইসি সচিবালয়ের উপ-সচিব (নির্বাচন পরিচালনা-২ অধিশাখা) মোহাম্মদ মনির হোসেনের সই করা এই পরিপত্র শনিবার জারি করা হয়।
মনোনয়ন জমা দিতে যেসব তথ্য লাগবে
নির্বাচন সামনে এলে বিভিন্ন পেশার মানুষ মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। রাজনীতিক, ব্যবসায়ী, শিক্ষক, আইনজীবীসহ যে কোনো পেশার ব্যক্তি প্রার্থী হতে মনোনয়ন নিতে পারবেন।
ইসির নির্দেশিকা অনুযায়ী, মনোনয়নপত্রে প্রার্থীর নাম, ঠিকানা, বৈবাহিক অবস্থা, জন্মতারিখ, ভোটার নম্বর, ভোটার তালিকায় ক্রমিক নম্বর, ভোটার এলাকার নাম, উপজেলা ও জেলার তথ্য উল্লেখ করতে হবে। পাশাপাশি দিতে হবে—
১. প্রস্তাবক ও সমর্থকের নাম, ভোটার নম্বর এবং উভয়ের স্বাক্ষর। মনোনয়নপত্রের সঙ্গে হলফনামা দাখিল বাধ্যতামূলক। এতে প্রার্থী ও তার ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তিদের আয়ের উৎস, স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ, দায়দেনা, পূর্ববর্তী নির্বাচনে দেওয়া প্রতিশ্রুতি ও তা বাস্তবায়নের বিবরণ, ঋণের তথ্য অন্তর্ভুক্ত থাকবে। পাশাপাশি শিক্ষাগত যোগ্যতা ও সংশ্লিষ্ট নথি এবং বর্তমানে বা অতীতে কোনো ফৌজদারি মামলা থাকলে তার বিস্তারিত তথ্য উল্লেখ করতে হবে।
২. নির্বাচনি ব্যয়ের অর্থের উৎস, ব্যয় পরিচালনার জন্য নির্ধারিত ব্যাংক হিসাব নম্বর ও ব্যাংকের নাম, আয়কর সংক্রান্ত তথ্য, সম্পদ ও দায়ের হিসাব, বাৎসরিক আয়-ব্যয়ের বিবরণ এবং সর্বশেষ সম্পদ বিবরণী ও কর পরিশোধের প্রমাণপত্রের কপি জমা দিতে হবে। নির্বাচনি ব্যয়ের জন্য তফসিলি ব্যাংকে প্রার্থীর নামে একটি অ্যাকাউন্ট খুলে মনোনয়ন জমার আগেই নম্বর ফরমে উল্লেখ করতে হবে। সব নির্বাচনি ব্যয় ওই হিসাব থেকেই করতে হবে।
৩. যে রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন পাওয়া গেছে, তার প্রত্যয়নপত্রের কপি সংযুক্ত করতে হবে।
৪. স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ক্ষেত্রে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর ১২(৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় দলিলাদি জমা দিতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে সরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কোনো ব্যবসায়িক সম্পর্ক বা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের তথ্য।
৫. জামানত বাবদ জমা দেওয়া ব্যাংক ড্রাফট, পে-অর্ডার, ট্রেজারি চালান বা রশিদের কপি দিতে হবে।
৬. আগে কখনো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে থাকলে কোন সংসদে, কোন এলাকা থেকে নির্বাচিত হয়েছেন—সে তথ্য উল্লেখ করতে হবে।
৭. আগে নির্বাচিত না হলে এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে, সংশ্লিষ্ট নির্বাচনি এলাকার এক শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষরযুক্ত সমর্থন তালিকা জমা দিতে হবে।
রাজনৈতিক দলের প্রার্থী মনোনয়ন
দলীয় প্রার্থীদের মনোনয়নপত্রের সঙ্গে দলের নিজস্ব প্যাডে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক বা সমমর্যাদার পদধারীর স্বাক্ষরিত প্রত্যয়নপত্র দাখিল করতে হবে। কোনো আসনে একটি দল একাধিক প্রার্থী দিলে ২০ জানুয়ারি বিকেল ৫টার মধ্যে চূড়ান্ত প্রার্থীর নাম লিখিতভাবে রিটার্নিং অফিসারকে জানাতে হবে। চূড়ান্ত প্রার্থী দলীয় প্রতীক পাবেন, যদি না তিনি প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন। প্রতীক বরাদ্দ বিষয়ে আলাদা পরিপত্র পরে প্রকাশ করা হবে।
জামানত সংক্রান্ত নির্দেশনা
মনোনয়ন জমার সময় প্রার্থীকে ৫০ হাজার টাকা জামানত দিতে হবে। এ অর্থ নগদ, ব্যাংক ড্রাফট, পে-অর্ডার বা ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের অনুকূলে জমা দেওয়া যাবে। একই আসনে একাধিক মনোনয়নপত্র জমা দিলে একটি জামানতই যথেষ্ট, অন্যগুলোর সঙ্গে চালানের সত্যায়িত অনুলিপি দিতে হবে। জামানতের বাইরে অতিরিক্ত অর্থ লেনদেন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
জামানতের অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংক, যেকোনো ব্যাংক অথবা সরকারি ট্রেজারি বা সাব-ট্রেজারিতে ১০৯০৩০২১০১৪৪৩-৮১১৩৫০১ কোড নম্বরে জমা দিতে হবে। নগদে নেওয়া জামানত রিটার্নিং বা সহকারী রিটার্নিং অফিসার সরকারি খাতে জমা দেবেন।