
মস্তিষ্কের গভীরে থাকা টিউমারের সীমানা নির্ভুলভাবে শনাক্ত করতে ইমপ্লান্টযোগ্য মাইক্রোইলেক্ট্রোড অ্যারে ব্যবহার করে সফল পরীক্ষা সম্পন্ন করেছেন চীনের গবেষকরা। এই অর্জনকে ইমপ্লান্টযোগ্য ক্লিনিক্যাল ব্রেইন-কম্পিউটার ইন্টারফেস (বিসিআই) প্রযুক্তিতে এক বড় অগ্রগতি হিসেবে দেখা হচ্ছে।
গ্লিওমা ও মস্তিষ্কে ছড়িয়ে পড়া অন্যান্য টিউমার দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং বারবার ফিরে আসে। এ ধরনের টিউমারের বৈশিষ্ট্য হলো উচ্চ সংক্রমণ, মৃত্যুঝুঁকি এবং অস্পষ্ট সীমারেখা। অস্ত্রোপচার বা রেডিওথেরাপির মতো চিকিৎসায় সঠিক ফলাফল পেতে টিউমারের সীমানা নির্ধারণ অত্যন্ত জরুরি।
হারবিন মেডিকেল ইউনিভার্সিটির নিউরোসার্জারি বিভাগের পরিচালক শি হুয়াইচাং বলেন, প্রচলিত পরীক্ষায় টিউমারের অবস্থান কেবল আনুমানিকভাবে জানা যায়। কিন্তু সার্জারির সময় কোনো পরিবর্তন হলে তাৎক্ষণিকভাবে ধরা পড়ে না।
এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় চাইনিজ একাডেমি অব সায়েন্সেসের অ্যারোস্পেস ইনফরমেশন রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এআইআর) ও হারবিন হাসপাতাল যৌথভাবে একটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পরিচালনা করে। সেখানে বিসিআই মাইক্রোইলেক্ট্রোড ও নিউরাল সিগন্যাল সিঙ্ক্রোনাইজেশন ডিটেক্টর ব্যবহার করে সাফল্য পাওয়া গেছে।
ট্রায়ালে ব্যবহৃত মাইক্রোইলেক্ট্রোডগুলো মাইক্রো-ইলেক্ট্রোমেকানিক্যাল সিস্টেম ও ন্যানো-ফাংশনাল ম্যাটেরিয়ালে তৈরি। নতুন প্রজন্মের এই নিউরাল প্রোব নমনীয় ও বায়োসেফ, যা রিয়েল-টাইম সিগন্যাল শনাক্ত করে টিউমারের সীমানা চিহ্নিত করতে সক্ষম। এ ছাড়া ডিটেক্টরটি সংকেত ডিকোডার হিসেবেও কাজ করে—ইলেক্ট্রোড থেকে সংগৃহীত বিপুল স্নায়বিক সংকেত বিশ্লেষণ করে টিউমারের অবস্থান নির্ধারণ করে।
অ্যারোস্পেস ইনস্টিটিউটের সহযোগী গবেষক ওয়াং মিসিয়া বলেন, “প্রচলিত নিউরাল ইলেক্ট্রোড শুধু কর্টিকাল টিউমার শনাক্ত করতে পারে। কিন্তু আমাদের ইলেক্ট্রোড কর্টেক্স, মস্তিষ্কের পৃষ্ঠ এমনকি গভীর স্তরের স্নায়বিক সংকেতও ধরতে পারে। এমনকি এটি নিউরোট্রান্সমিটার-সংক্রান্ত রাসায়নিক সংকেতও শনাক্ত করতে সক্ষম।”
শি হুয়াইচাং জানান, এই ট্রায়ালটি একজন গ্লিওমা রোগীর ওপর পরিচালিত হয়েছে। ইমেজিং ডেটা এবং একক কোষ-স্তরের রিয়েল-টাইম নিউরাল সিগন্যাল একত্র করে টিউমারের সীমানা সঠিকভাবে নির্ধারণ সম্ভব হয়েছে। অস্ত্রোপচারের পর রোগীর কোনো খিঁচুনি দেখা দেয়নি, স্নায়বিক ক্ষতি হয়নি, ভাষা স্পষ্ট ও সাবলীল হয়েছে এবং তার জীবনমান উন্নত হয়েছে।
সূত্র: সিএমজি