
বরিশালে তিন দফা দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে অচলাবস্থার পর মহাপরিচালক ডা. মো. আবু জাফর বুধবার সতর্ক করে বলেছেন, “অযৌক্তিক আন্দোলন বন্ধ না হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হস্তক্ষেপ করবে।” তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের যে তিন দফা দাবি রয়েছে, তা স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশনের সুপারিশভিত্তিক, তবে এগুলো রাতারাতি বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে স্বাস্থ্যখাত সংস্কার করা হবে।
মহাপরিচালক আরও বলেন, “অন্দোলনকারীরা কমিশনের সুপারিশ পড়ে দেখেনি। গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টে তৃতীয় কোনো পক্ষের হস্তক্ষেপের তথ্য পাওয়া গেছে। এমনকি স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আন্দোলনে নামানো হয়েছে। শিক্ষার্থীরা আন্দোলন থেকে সরতে না পারলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।”
শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনতার ব্যানারে ১৬তম দিনে বরিশালে ঢাকাকুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধে যানবহন বন্ধ রয়েছে। আন্দোলনকারীরা প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে ১২টা পর্যন্ত নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল ও সাগরদি পয়েন্টে মহাসড়ক অবরোধ করেন। এতে বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার সঙ্গে রাজধানীর সড়ক যোগাযোগ বিঘ্নিত হচ্ছে।
অচলাবস্থা নিরসনে মহাপরিচালকের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল বরিশালে এসে শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালে পৌঁছান। তিনি জরুরি বিভাগের গেটে অনশনরত তিন শিক্ষার্থীর অনশন ভাঙানোর চেষ্টা করেন, তবে তারা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তা অস্বীকার করেন। পরে মহাপরিচালক শেবাচিম সভাকক্ষে প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন।
ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) সভাপতি ডা. কবিরুজ্জামানসহ কিছু চিকিৎসক আন্দোলনের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। অন্যদিকে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা নিরাপত্তা সংক্রান্ত ৬ দফা দাবি জানান এবং তা বাস্তবায়ন না হলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কাজ বন্ধের হুমকি দেন।
আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধিরা বলছেন, “আশ্বাস নয়, বাস্তবায়ন দৃশ্যমান না হলে আন্দোলন থেকে সরব না।” সভাকক্ষে দুইপক্ষের অবস্থান পাল্টাপাল্টি হওয়ায় উত্তেজনা দেখা দেয়। দুই ঘণ্টার আলোচনার পরও অনশনকারীরা মহাপরিচালকের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেন।
বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার (চলতি দায়িত্ব) আহসান হাবিবসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সভায় উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য, জাতীয়ভাবে স্বাস্থ্যখাত সংস্কারের দাবিতে বরিশালে আন্দোলন ২৭ জুলাই থেকে শুরু হয়েছে। শিক্ষার্থীদের প্রধান দাবি হলো সরকারি হাসপাতালে অবকাঠামো উন্নয়ন, আধুনিক যন্ত্রপাতি ও ওষুধ সরবরাহ, দুর্নীতি প্রতিরোধ, রাজনীতিবিহীন চিকিৎসা পরিবেশ এবং ডিজিটাল অটোমেশন ও স্বচ্ছ জবাবদিহিমূলক টাস্কফোর্স গঠন।