
ঐকমত্যের বাইরে সংস্কারের প্রয়োজন নেই: আমীর খসরু
ঐকমত্যের বাইরে সংস্কারের প্রয়োজন নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। রোববার (২৭ এপ্রিল) বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে মিত্র দল বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি এ মন্তব্য করেন। আমীর খসরু বলেন, ‘বাংলাদেশে তো আমরা বাকশাল করতে যাচ্ছি না। সবাইকে একমত হতে হবে- এটা যারা চিন্তা করে, এটা বাকশালী চিন্তা- যেটা শেখ হাসিনার পিতা করেছিলেন। কারণ, বিভিন্ন দলের বিভিন্ন দর্শন, বিভিন্ন চিন্তা থাকবে, ভিন্নমত থাকবে। বিষয়টা হচ্ছে যে, যেখানে ঐকমত্য হয়েছে সেগুলোর বাইরে সংস্কার করার সুযোগ নেই। এর বাইরে যেটা করতে যাবে, সেটা ডেমোক্রেটিক প্রসেসের মাধ্যমে আসতে হবে, নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আসতে হবে, জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে আসতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘যেগুলো (সংস্কার প্রস্তাব) নিয়ে ঐকমত্য হয়েছে, এই বিষয়গুলো জাতির সামনে কেন তুলে ধরা হচ্ছে না- এটাই প্রশ্ন। অলরেডি সবাই (সব রাজনৈতিক দল) সাবমিট করে দিয়েছে, অনেক দিন সময় চলে গেছে, আলোচনা শেষ। কোথায় ঐকমত্য হয়েছে, এটার জন্য এক সপ্তাহের বেশি সময় লাগে না। আমি বলব, কোথায় ঐকমত্য হয়েছে, জাতিকে জানান। জাতি জানুক এবং ওই ঐকমত্যের ভিত্তিতে আমরা সনদ সই করে দিয়ে নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাই। এর বাইরে যাওয়ার তো কোনো সুযোগ নেই।’ আমীর খসরু আরও বলেন, ‘নির্বাচনের রোডম্যাপ না দেওয়ার জন্য আজকে জনগণের মধ্যে যে সংশয় তৈরি হয়েছে, যে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে- এটা আগামী দিনের নির্বাচন প্রক্রিয়ার জন্যে ভালো কিছু বয়ে আনবে না। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নির্বাচনের রোডম্যাপ দিয়ে আশ্বস্ত করতে হবে- জাতি গণতন্ত্রের দিকে যাচ্ছে, জাতি গণতন্ত্র ফিরে পেতে যাচ্ছে। গণতন্ত্রের বাহক হচ্ছে নির্বাচন। এর মাধ্যমে আপনি গণতান্ত্রিক ট্রানজিশনে যে যাবেন, এটা জাতিকে জানাতে হবে। এর জন্য দেশের ভেতরে প্রস্তুতি আছে, দেশের বাইরে প্রস্তুতি আছে। বিনিয়োগকারীরা যারা বাংলাদেশে আসছেন, সবার একটাই প্রশ্ন- নির্বাচন কবে হবে?’ বিকেল সাড়ে ৪টায় গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য বৈঠকে বিএনপির পক্ষে আমীর খসরু ছাড়াও স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু ছিলেন। অন্যদিকে বিজেপির চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ বৈঠকে তার দলের ১০ সদস্যের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন। প্রতিনিধিদলের অন্য সদস্যরা হলেন দলটির মহাসচিব আব্দুল মতিন সাউদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী মোস্তফা তামজিদ, ওয়াশিকুর রহমান, সালাহউদ্দিন মতিন প্রকাশ, সোহেল আসিফ, এবিএম আজিজুল হক, গোলাম রাব্বানী, ভাইস চেয়ারম্যান আসাদুর রহমান ও ফয়সাল তাহের। আন্দালিব রহমান পার্থ বলেন, ‘আমাদের কথা হলো- যে সংস্কারের বিষয়ে সবাই একমত হয়েছে, তা নিয়ে ন্যাশনাল সনদ করে নির্বাচনমুখী হয়ে গেলেই তো হয়। আপনার ৫০টা রাজনৈতিক দলের অনেক বিষয়ে অনেক রকম মতামত থাকতেই পারে। তার ওপর ভিত্তি করে একমত হবো- এই চিন্তা করে আপনি তো আর নির্বাচনকে পিছিয়ে নিতে পারেন না কিংবা একটা ঘোলাটে পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারেন না।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ডিসেম্বরের আগেই নির্বাচন করা সম্ভব। আমার মনে হয়, কালক্ষেপণ না করে নির্বাচনী রোডম্যাপটা এখন জনগণের দাবি। এখন সেটাতে কনসেনট্রেটেড করা উচিত এই সরকারের।’ গত ১৯ এপ্রিল থেকে বিএনপি তার শরিক জোট ও মিত্রদের সাথে পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে আলোচনা শুরু করে। এখন পর্যন্ত তারা গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, এলডিপি, সিপিবি, বাসদ, লেবার পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ, এনডিএম, গণফোরাম, জন অধিকার পার্টি প্রভৃতি দলের সঙ্গে বৈঠক শেষ করেছে।

ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নতুন মেয়র হিসেবে বিএনপির নেতা ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনের নাম ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। রোববার (২৭ এপ্রিল) কমিশন গেজেট জারি করেছে, যা আদালতের নির্দেশনার ভিত্তিতে হয়েছে বলে ইসির সূত্র জানিয়েছে।এর আগে গত মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) ঢাকা দক্ষিণের মেয়র হিসেবে ইশরাককে বিজয়ী ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করতে হবে কি না এ বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত জানতে চেয়ে চিঠি দেয় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সেখানে থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়ার পর প্রধান নির্বাহী কমিশনার (সিইসি) অন্যান্য কমিশনার ও কর্মকর্তাদের নিয়ে এক সভা করেন, যেখানে রাতেই গেজেট জারির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।২০২০ সালে অনুষ্ঠিত ডিএসসিসির নির্বাচনের ফল বাতিল করে সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে গত ২৭ মার্চ রায় দেন আদালত।প্রসঙ্গ: ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে উত্তরে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ও দক্ষিণে আরেক আওয়ামী লীগ প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস মেয়র নির্বাচিত হন।নির্বাচনে ফজলে নূর পেয়েছিলেন ৪ লাখ ২৪ হাজার ৫৯৫ ভোট এবং ইশরাক ২ লাখ ৩৬ হাজার ৫১২ ভোট পেয়েছিলেন। এরপর ইশরাক কারচুপি ও অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে আদালতে মামলা করেন।নির্বাচন কমিশন ওই বছরের ২ ফেব্রুয়ারি ভোটের গেজেট প্রকাশ করে। এরপর থেকে তারা শপথ নিয়ে মেয়র পদে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর তাদের মেয়র পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়।

ঐকমত্য কমিশনে জাতীয় সনদ ও নির্বাচনের রোডম্যাপ চাইল জেএসডি
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন বলেছেন, ‘রক্তক্ষয়ী গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় রাজনীতির মৌলিক পরিবর্তনের এক সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। ভাগ্যবিড়ম্বিত রাষ্ট্রের এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে রাষ্ট্রের সব অংশের মানুষের কার্যকর মালিকানা নিশ্চিত করে জনগণের অভিপ্রায়ের ‘প্রজাতন্ত্র’ নির্মাণ করতে হবে।’ রবিবার (২৭ এপ্রিল) জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে (জাতীয় সংসদের এলডি হলে) আলোচনায় জেএসডি জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে সংস্কার ও নির্বাচনের সমন্বিত রোডম্যাপ ঘোষণা করার দাবি জানিয়েছে। ৫টি সংস্কার কমিশনের রিপোর্টের ভিত্তিতে প্রণীত ৫টি স্প্রেডশিটে মোট ১৬৬টি প্রস্তাবের ওপর মতামত চাওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে জেএসডির পক্ষ থেকে ১২১টি প্রস্তাবের সঙ্গে ঐকমত্য পোষণ, ১৭টির সঙ্গে ভিন্নমত এবং ২৮টির সঙ্গে আংশিক ঐকমত্য হয়েছে। এই ১৬৬ প্রস্তাবের মধ্যে ৬৮টি অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে, ১৪টি নির্বাচনের পরে সাংবিধানিক সংস্কারের মাধ্যমে এবং ৮৪টি সংবিধান সংস্কারসভা ও আইনসভা নির্বাচন একইসঙ্গে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সংস্কারের বিষয়ে জেএসডি মতামত দিয়েছে। এছাড়া নতুন করে ১০ এপ্রিলকে ‘প্রজাতন্ত্র দিবস’ ঘোষণা ও রাষ্ট্রপতির শপথ-প্রধান বিচারপতি কর্তৃক পরিচালনার করার জন্য জেএসডির পক্ষ থেকে দাবি উত্থাপন করা হয়। সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত এবং স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে বর্ণিত দেশের নাম পরিবর্তনের বিরোধিতা করে জেএসডি বলেছে-বাংলাদেশের নাম ৫৩ বছরে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। অনাবশ্যক নাম পরিবর্তনের কারণে বিতর্কের জন্ম দেবে, যা পরিহার করা জরুরি; সংবিধানের প্রস্তাবনায় একাত্তরের চেতনা, স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের নির্দেশনা, ‘৫২ সালের ভাষা-আন্দোলনসহ অগ্নিঝরা মার্চের ঘটনাবলি উল্লেখ এবং ‘২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের অভিপ্রায়ের বহিঃপ্রকাশ থাকার প্রস্তাব দিয়েছে; বাঙালি জাতীয়তাবাদসহ অন্যান্য জাতিসত্তার স্বীকৃতি প্রদানের প্রস্তাবে বলা হয়েছে- বাঙালি জাতীয়তাবাদকে কেন্দ্র করে যুদ্ধের মাধ্যমে জাতিরাষ্ট্রের পত্তন হয়েছে, হঠাৎ করে বাঙালি জাতিসত্তা বিলুপ্ত হয়ে যাবে- এ ধরনের পদক্ষেপ আত্মঘাতী; জেএসডি স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে উল্লিখিত সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার- এই ত্রয়ী আদর্শকে সংবিধানের দার্শনিক ভিত্তি হিসেবে বিবেচনার প্রস্তাব দিয়েছে এবং রাষ্ট্রের চার মূলনীতিকে অপরিবর্তিত রাখা বাঞ্ছনীয় মনে করলেও গণতন্ত্রকে আরও সম্প্রসারিত করে অংশীদারত্বের গণতন্ত্র প্রবর্তনের দাবি করেছে; সংসদের উচ্চকক্ষের ২০০ আসনে শ্রমজীবী-কর্মজীবী-পেশাজীবীদের অদলীয় ভিত্তিতে (ইলেক্টোরাল কলেজ পদ্বতিতে) প্রতিনিধিত্ব প্রদানের প্রস্তাব করা হয়েছে; উচ্চকক্ষ হতে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন ও তার মেয়াদ তিন মাস করার জন্য প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে; বিদ্যমান সব বিভাগকে প্রদেশে উন্নীতকরণ এবং ফেডারেল সরকার পদ্ধতির সরকারব্যবস্থার প্রস্তাব করা হয়েছে; রাষ্ট্রপতি ও সংসদের মেয়াদ চার বছর করার প্রস্তাব করা হয়েছে; দুই বারের অধিক প্রধানমন্ত্রী পদে কোন ব্যক্তি অধিষ্ঠিত থাকবেন না এবং স্বশাসিত উপজেলা, পৌরসভা এবং মেট্রোপলিটন সরকারসহ শক্তিশালী স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনের প্রস্তাব করা হয়েছে। জেএসডির পক্ষ থেকে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, স্থায়ী কমিটির সদস্য তানিয়া রব, ছানোয়ার হোসেন তালুকদার, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সিরাজ মিয়া, অ্যাডভোকেট কেএম জাবির, মোহাম্মদ তৌহিদ হোসেন, কামাল উদ্দিন পাটোয়ারী এবং দলের উপদেষ্টা ডা. হেলালুজ্জামান আহমেদ প্রমুখ। আলোচনায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ ছাড়া সদস্য হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার। আলী রীয়াজ বলেন, ‘জনগণের দীর্ঘ দিনের আকাঙ্ক্ষা থেকে সংস্কার কমিশনগুলো গঠিত হয়েছে। জনগণের এই আকাঙ্ক্ষাকে পরিপূর্ণতা দিতে রাষ্ট্র সংস্কার দরকার।’ তিনি আরও বলেন, ‘গত ৫৩ বছর ধরে আমরা এমন শাসন ব্যবস্থা দেখেছি, যা ফ্যাসিবাদ তৈরি করতে পারে। এই শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তন প্রয়োজন।’ সংস্কার বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য গঠনের উদ্দেশ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠিত হয়েছে। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি এই কমিশনের কার্যক্রম শুরু হয়। উল্লেখ্য, প্রথম পর্যায়ে গঠিত সংস্কার কমিশনগুলোর মধ্যে সংবিধান সংস্কার কমিশন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন এবং দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে উল্লিখিত গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলোর ওপর রাজনৈতিক দলের সুনির্দিষ্ট মতামত জানাতে অনুরোধ করে সুপারিশগুলোর স্প্রেডশিট আকারে ৩৯টি রাজনৈতিক দলের কাছে পাঠানো হয়। এ পর্যন্ত ৩৫টি রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে কমিশন মতামত পেয়েছে। সংস্কার কমিশনগুলোর করা সুপারিশ চূড়ান্ত করতে গত ২০ মার্চ থেকে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। ইতোমধ্যে ১৯টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রাথমিক পর্যায়ের আলোচনা শেষ করেছে কমিশন।

ডিসেম্বরের আগে নির্বাচনের দাবি পার্থ’র
‘ঐকমত্যের বাইরে সংস্কারের প্রয়োজন নেই’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র নেতা আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশে তো আমরা বাকশাল করতে যাচ্ছি না। সবাইকে যে একমত হতে হবে- এটা যারা চিন্তা করে, এটা বাকশালী চিন্তা, যেটা শেখ হাসিনার পিতা করেছিলেন। কারণ বিভিন্ন দলের বিভিন্ন দর্শন, বিভিন্ন চিন্তা থাকবে, ভিন্নমত থাকবে। বিষয়টা হচ্ছে যে যেখানে ঐকমত্য হয়েছে সেগুলোর বাইরে সংস্কার করার সুযোগ নাই। এর বাইরে যেটা করতে যাবে, সেটা আপনার ডেমোক্র্যাটিক প্রসেসের মাধ্যমে আসতে হবে, নির্বাচনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আসতে হবে, জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে আসতে হবে।’ রবিবার (২৭ এপ্রিল) বিকালে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে মিত্রদল বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) সঙ্গে বৈঠকের পর দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু এসব কথা বলেন। আন্দালিব রহমান পার্থ’র নেতৃত্বাধীন বিজেপি ২০১৮ সালের পর বিএনপির সঙ্গে আবার আনুষ্ঠানিক কোন বৈঠকে অংশ নিলো। অনানুষ্ঠানিকভাবে নানাভাবে বিএনপির সঙ্গে আলোচনা করলেও দীর্ঘ দিন পর তিনি প্রকাশ্যে এলেন বিএনপি কার্যালয়ে। বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুও অংশগ্রহণ করেন। বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সামনে আমির খসরু বলেন, ‘যেগুলো (সংস্কার প্রস্তাব) নিয়ে ঐকমত্য হয়েছে, এই বিষয়গুলো জাতির সামনে কেন তুলে ধরা হচ্ছে না, এটাই প্রশ্ন। অলরেডি সবাই (সব রাজনৈতিক দল) সাবমিট করে দিয়েছে, অনেক দিন সময় চলে গেছে, আলোচনা শেষ।’ তিনি বলেন, ‘আপনি এটার জন্য এক সপ্তাহের বেশি সময় লাগে না, কোথায় ঐকমত্য হয়েছে। আমি বলবো, জাতিকে জানান কোথায় ঐকমত্য হয়েছে? জাতি জানুক এবং ওই ঐকমত্যের ভিত্তিতে আমরা সনদে সই করে দিয়ে নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাই। এর বাইরে যাওয়ার তো কোনও সুযোগ নাই।’ আমির খসরু বলেন, ‘নির্বাচনের রোডম্যাপ না দেওয়ার জন্য আজকে জনগণের মধ্যে যে সংশয় তৈরি হয়েছে, যে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে, এটা আগামী দিনের নির্বাচন প্রক্রিয়ার জন্যে ভালো কিছু বয়ে আনবে না।’ ‘যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নির্বাচনের রোডম্যাপ দিয়ে আশ্বস্ত করতে হবে- জাতি গণতন্ত্রের দিকে যাচ্ছে, জাতি গণতন্ত্র ফিরে পেতে যাচ্ছে। গণতন্ত্রের বাহক হচ্ছে নির্বাচন। তার মাধ্যমে আপনি গণতান্ত্রিক ট্রানজিশনে যে যাবেন, এটা জাতিকে জানাতে হবে। এর জন্য দেশের ভেতরে প্রস্তুতি আছে, দেশের বাইরে প্রস্তুতি আছে। বিনিয়োগকারীরা যারা আসছেন বাংলাদেশে সবার একটাই প্রশ্ন, নির্বাচন কবে হবে?’ বিজেপির চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ বলেন, ‘আমাদের কথা হলো যে সংস্কারের বিষয়ে সবাই একমত হয়েছে, সেটা নিয়ে জাতীয় সনদ করে নির্বাচনমুখী হয়ে গেলেই হয়।’ আপনার ৫০টি রাজনৈতিক দলের অনেক বিষয়ে অনেক রকম ওপিনিয়ন থাকতেই পারে। তার ওপর ভিত্তি করে একমত হবো- এই চিন্তা করে আপনি তো আর নির্বাচনকে পিছিয়ে নিতে পারেন না বা একটা ঘোলাটে পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারেন না।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ডিসেম্বরের আগেই নির্বাচন করা সম্ভব। আমার মনে হয় কালক্ষেপণ না করে নির্বাচনি রোডম্যাপটা এখন জনগণের দাবি। আমার মনে হয়, এখন সেটাতে কনসেনট্রেটেড করা উচিত এই সরকারের।’ বিকাল সাড়ে ৪টায় গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলুর সমন্বয়ে গঠিত লিয়াজোঁ কমিটির সঙ্গে বিজেপির বৈঠক বসে। আন্দালিব রহমান পার্থসহ দলটির ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দল বৈঠকে ছিলেন। প্রতিনিধি দলের অন্য সদস্যরা হলেন মহাসচিব মতিন সউদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী মোস্তফা তামজিদ, ওয়াশিকুর রহমান. সালাহউদ্দিন মতিন প্রকাশ, সোহেল আসিফ, এবিএম আজিজুল হক, গোলাম রাব্বানী, ভাইস চেয়ারম্যান আসাদুর রহমান ও ফয়সাল তাহের। উল্লেখ্য, গত ১৭ এপ্রিল থেকে বিএনপি তার শরিক জোট ও মিত্রদের সঙ্গে পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে আলোচনা শুরু করে। এখন পর্যন্ত বিএনপি ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, এলডিপি, সিপিবি, বাসদ, লেবার পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ, এনডিএম, গণফোরাম, বাম গণতান্ত্রিক ঐক্য এবং জন অধিকার পার্টি প্রভৃতি দলের সঙ্গে বৈঠক শেষ করেছে।

জামায়াত আমিরের সাথে ইইউর রাষ্ট্রদূতের সৌজন্য সাক্ষাৎ
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার। রোববার (২৭ এপ্রিল) দুপুরে মগবাজার জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ সৌজন্য সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের সংবাদ সম্মেলন করেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি আমিরে জামায়াতসহ আমরা ব্রাসেলস সফর করেছি। সেখানে বেলজিয়াম সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমাদের একাধিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব বৈঠকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও বাংলাদেশের পারস্পরিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, উন্নয়ন-অগ্রগতিসহ নানা বিষয়ে আমাদের ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশের গণতন্ত্র, নারী অধিকার, সংখ্যালঘু এবং প্রধান রপ্তানি খাত গার্মেন্টস বিষয়ে আমাদের অবস্থান তারা জানতে চেয়েছেন। এসব বিষয়ে আমরা তাদের স্পষ্ট ধারণা দিতে সক্ষম হয়েছি।’ মো. তাহের আরও বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে আমরা তাদের পর্যবেক্ষক পাঠানোর কথা বলেছি। প্রত্যেক ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা বসাতে আমরা তাদের সহযোগিতা চেয়েছি। সে সঙ্গে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা এবং একই ব্যক্তির দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী না থাকার বিষয়টিও আমরা তাদের অবহিত করেছি। নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশমালার বিষয়ে তাদের বলেছি যে, যৌনকর্মীর লাইসেন্স প্রদান নারীর মর্যাদা ও অধিকারের প্রতি চরম আঘাত। তারা এসব বিষয়ে আমাদের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন। তারা জামায়াতে ইসলামীতে শতকরা ৪৩ ভাগ নারীর অংশগ্রহণের বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন।’ ইইউ এবং বাংলাদেশের বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ভবিষ্যতে আরও জোরদার করার ব্যাপারে তারা দৃঢ় আশা প্রকাশ করেন। আমিরে জামায়াতের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মাদ তাহের, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এবং কেন্দ্রীয় মিডিয়া ও প্রচার বিভাগের সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ এবং আমিরে জামায়াতের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা মাহমুদুল হাসান।

‘আওয়ামী লীগ পরিকল্পিতভাবে পূজামণ্ডপ ভেঙ্গে জামায়াতের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়েছে’
আওয়ামী লীগ পরিকল্পিতভাবে হিন্দুদের পূজামণ্ডপ ভেঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল। শনিবার (২৬ এপ্রিল) রাতে কদমতলী মধ্য থানা জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের সাথে প্রীতি সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে সমাবেশে নুরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ পরিকল্পিতভাবে হিন্দুদের পূজামণ্ডপ ভেঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়েছে। হিন্দুদের পক্ষের লোক দাবি করে হিন্দুদের সম্পদ দখল করেছে। স্বাধীনতার পরবর্তী অদ্যাবধি জামায়াতে ইসলামী কিংবা ইসলামি দলের কোনো নেতাকর্মী হিন্দুদের ঘর-বাড়ি দখল করেনি, পূজামণ্ডপ বা তাদের ধর্মীয় উপাসনলায় ভাঙেনি। এত দিন আওয়ামী লীগের জুলুম-নির্যাতনের ভয়ে হিন্দুরা কথা বলতে পারেনি। ৫ আগস্টে আওয়ামী লীগের পতনের মাধ্যমে অর্জিত দ্বিতীয় স্বাধীনতায় এদেশের মানুষ কথা বলতে পারছে। সেই সাথে হিন্দুরাও এখন স্বীকার করতেছে, বিগত সময়ে তাদের উপর আওয়ামী লীগ ব্যতিত অন্যরা জুলুম করেনি।’ তিনি আরো বলেন, ‘হিন্দু সম্প্রদায়রের নেতৃবৃন্দসহ ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের নেতৃবৃন্দ গত বুধবার (২৩ এপ্রিল) প্রকাশ্যে স্বীকার করে গেছেন, ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের ওপর জামায়াতে ইসলামী কিংবা ইসলামি কোনো দলের নেতাকর্মীরা জুলুম করেনি। বরং ৫ আগস্ট থেকে ৮ আগস্ট সরকারবিহীন রাষ্ট্রে জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের সম্পদ পাহারা দেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে।‘আ.লীগ পরিকল্পিতভাবে পূজামণ্ডপ ভেঙ্গে জামায়াতের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়েছে।’ জামায়াতে ইসলামী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা সংগ্রাম করে জানিয়ে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ‘ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের ওপর নয়, সমাজের কোনো মানুষের ওপর জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা জুলুম করেনি, করবে না। বরং জামায়াতে ইসলামী এ দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করার কারণে বারবার জামায়াতে ইসলামীর ওপর রাষ্ট্রীয় মদদে জুলুম নির্যাতন করা হয়েছে।’ জামায়াতে ইসলামীর লড়াই আধিপাত্যবাদের বিরুদ্ধে চলবেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী যদি ভারতীয় আধিপাত্যবাদের কাছে মাথানত করতো তবে দলের আমির, সেক্রেটারি জেনারেলসহ শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে ফাঁসিবরণ করতে হতো না। জামায়াতে ইসলামীর নেতারা ফাঁসি মেনে নিয়েছে, ভারতীয় আধিপাত্যবাদ মেনে নেয়নি, নিবে না। জামায়াতে ইসলামী একমাত্র দল যারা স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষায় জীবন দিয়েছে তবু স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বিক্রি করতে দেয়নি। অথচ যারা নিজেদেরেকে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি বলে গলাবাজি করে তারাই ক্ষমতার জন্য ভারতীয় আধিপাত্যবাদের কাছে স্বাধীনতাকে বর্গা দিয়েছে। বর্গা দেওয়া স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনতে জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা জীবন দিয়েছে, রক্ত দিয়েছে। ছাত্র-জনতা সেই স্বাধীনতা ৫ আগস্ট ফিরিয়ে এনেছে।’ জামায়াতে ইসলামী একটি মানবিক সমাজ গঠন করতে চায় উল্লেখ করে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ‘যেই সমাজে মারামারি, হানাহানি, নৈরাজ্য, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, দুর্নীতি থাকবে না। ধর্মের ভিত্তিতে মানুষকে মূল্যায়ন করা হবে না, প্রতিটি মানুষ দেশের নাগরিক হিসেবে সমানভাবে মূল্যায়িত হবে। এটাই ইসলামী রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য। একটি কল্যাণ রাষ্ট্র বিনির্মাণ জামায়াতে ইসলামীর অঙ্গিকার।’ সেই রাষ্ট্র বিনির্মাণে তিনি দলমত, ধর্মবর্ণ, জাতি-গোষ্ঠী নির্বিশেষে জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে এগিয়ে আসতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান। কদমতলী মধ্য থানা আমীর মো. মহিউদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন শ্যামপুর-কদমতলী জোন পরিচালক মহানগরীর কর্মপরিষদের সদস্য সৈয়দ জয়নুল আবেদীন, মহানগরীর মজলিসে শূরা সদস্য কদমতলী পূর্ব থানা আমীর জসিম উদ্দিন, মহানগরীর মজলিসে শূরা সদস্য ও জোন টিম সদস্য মাওলানা মো. নেছার উদ্দিন, মহানগরীর মজলিসে শূরা সদস্য কদমতলী পশ্চিম থানা আমীর মো. কবিরুল ইসলাম।

প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা চেয়েছে জামায়াত
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু করতে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা চেয়েছে জামায়াতে ইসলামী। এ ক্ষেত্রে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সহযোগিতা চেয়েছে দলটি। রোববার (২৭ এপ্রিল) জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন দলটির নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের। রাজধানীর মগবাজারের দলীয় কার্যালয়ে জামায়াত আমির শফিকুর রহমানের সঙ্গে ইইউর রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলারের সৌজন্য সাক্ষাৎ হয়। সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান দলটির নায়েবে আমির। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা যে টাইমলাইন দিয়েছেন, তার ওপরই আস্থা রাখবে জামায়াত। এ ছাড়া আগামী নির্বাচনে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে পরিদর্শক দল পাঠানোর কথা বলা হয়েছে।’ তাহের বলেন, ‘দীর্ঘ দিন ধরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে আমাদের আলোচনা চলছে। আমরা বলেছি বাংলাদেশ থেকে ইউরোপে প্রচুর পরিমাণে গার্মেন্টস পণ্য যায়। আমরা তাদের গার্মেন্টস শিল্পের জন্য নির্দিষ্ট এলাকা নির্ধারণ করে দেব। সেখানে তারা আরও বেশি বিনিয়োগ করবে।’ তিনি বলেন, ‘জামায়াত সব সময় নারীদের অধিকার, জঙ্গিবাদ দমনে কী করবে, এ প্রশ্নের সম্মুখীন হয়। আমরা এ বিষয়গুলো নিয়ে আশ্বস্ত করেছি।’ নারী সংস্কার কমিশনের সদস্যদের শ্রমিক স্বীকৃতির বিষয়ে বলেছি, ‘এটি নারীদের জন্য চরম অপমানজনক। এ ছাড়া নারীদের অংশগ্রহণ জামায়াতে ৪৩ শতাংশ, যা অন্য সবার চেয়ে বেশি।’

চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সাথে বিএনপির সম্পর্ক গভীর হচ্ছে: মির্জা ফখরুল
ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ১৫ বছর চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে সম্পর্ক রাখা না গেলেও এখন তা আবার গভীর হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শনিবার (২৬ এপ্রিল) সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানে হোটেল ওয়েস্টিনে সফররত চীনের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান।আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক গভীর হচ্ছে। যদিও ফ্যাসিস্টের সময় ১৫ বছর সম্পর্ক রাখতে পারিনি।’মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আরও বলেন, ‘নির্বাচন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে জনগণ। এ বিষয়টি চীনের প্রতিনিধিদলকে জানানো হয়েছে।’আর ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেন, ‘শুধু বিএনপি নয়, বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। নির্বাচনের বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব আমাদের ব্রিফ করেছেন। নির্বাচন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়।’এর আগে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় রাজধানীর গুলশানে হোটেল ওয়েস্টিনে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে বসে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে বিএনপির ৭ সদস্য প্রতিনিধিদল।বৈঠকে অংশ নেয়া বিএনপির সদস্যরা হলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ইসমাইল জবিউল্লাহ, দলের আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, চেয়ারপারসনের ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যাডভাইজারি কমিটির সদস্য হুমায়ুন কবির, বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য মাহমুদা হাবিবা এবং বিএনপি চেয়ারপারনের একান্ত সচিব এবিএম আব্দুস সাত্তার।

‘প্রধান উপদেষ্টার মামলা বাতিল হলে বিএনপি কর্মীদের নয় কেন’
প্রধান উপদেষ্টার নামে থাকা মামলা বাতিল হলে বিএনপি নেতাকর্মীদের কেন নয়, এমন প্রশ্ন রেখেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। এ সময় বিগত স্বৈরাচারী সরকারের আমলে বিএনপির বিরুদ্ধে হওয়া রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন রিজভী। শনিবার (২৩ এপ্রিল) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় এই প্রশ্ন রাখেন তিনি। ‘ফ্যাসিবাদের মিথ্যা মামলায় ৬০ লাখ আসামি মুক্তি কতদূর?’ শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজন করে ন্যাশনালিস্ট রিসার্চ ফাউন্ডেশন (এনআরএফ)। জাতীয় প্রেস ক্লাবে এ আলোচনা সভায় যোগ দেন বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা। প্রধান অতিথির বক্তব্যে সভায় রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন- সরকারের এমন বক্তব্য বিভ্রান্তিমূলক।’ আলোচনা সভায় বিএনপির তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নাসির উদ্দিন অসীম উপস্থিত ছিল। দ্রুত ভোট আয়োজনের দাবি জানিয়ে বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেন, সংস্কার ইস্যুতে নির্বাচনকে বিলম্বিত করতে চাইছে একটি মহল। সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টা ও তাদের ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়েও কড়া সমালোচনা করেন বিএনপির নেতারা।

এক ব্যক্তি দুই বারের বেশি প্রধানমন্ত্রী নয়, একমত জামায়াত
একই ব্যক্তি দুই বারের বেশি প্রধানমন্ত্রী নয়, এ বিষয়ে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে একমত হয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। এ ছাড়া দলটি বহুত্ববাদকে পুরো বাদ দিতে হবে বলেও জানিয়েছে। শনিবার (২৬ এপ্রিল) জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে মতবিনিময় সভা শেষে জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘প্রস্তাব করেছি সংবিধানে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপন করার জন্য। ১০ জনের একটি সমন্বয় কমিটি এসেছি। সোয়া ৫টা পর্যন্ত আলোচনা করেছি। আলোচনা অসমাপ্ত আছে, আবার বসা হবে।’ মো. তাহের আরও বলেন, ‘বেশি তাড়াহুড়ো করছি না। উল্লেখযোগ্য সংস্কারের লক্ষ্য অর্জন করতে চাচ্ছি। কমিশনেরও লক্ষ্য জাতির জন্য প্রয়োজনীয় এবং অতিগুরুত্বপূর্ণ সংস্কারে পৌঁছানো।’ আজ বেশ কিছু বিষয়ে তারা একমত হয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কিছু বিষয়ে নিজেরা প্রস্তাব দিয়েছি, কিছু বিষয়ে আরও আলোচনা প্রয়োজন। পরে আবার আলোচনা হবে। একমত হয়েছি একই ব্যক্তি দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না।’ সংবিধান সংশোধন নিয়ে মো. তাহের বলেন, ‘আর্টিকেল ৭০’-এর ক্ষেত্রে কিছু সংশোধন সহকারে কমিশনের প্রস্তাবের সঙ্গে একমত হয়েছি। সংবিধান পরিবর্তন, অর্থবিল বা বাজেট অনুমোদনের ক্ষেত্রে এবং আস্থা ভোট- এই তিনটি বিষয় ছাড়া যেকোনো বিষয়ে একজন সাংসদ দলের মত ও অবস্থানের বিপরীতে ভূমিকা রাখতে পারবেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘ন্যাশনাল কনস্টিটিউশনাল কাউন্সিলের ব্যাপারে নীতিগতভাবে একমত হয়েছি। আরও বিস্তারিত আলোচনা দরকার। এটি গঠনের প্রস্তাবনায় রাষ্ট্রপতি এবং প্রধান বিচারপতিকে কমিটিতে না রাখতে বলেছি।’ আনুপাতিক হার (পিআর) সিস্টেমে নির্বাচনের কথা বলেছেন জানিয়ে আব্দুল্লাহ মো. তাহের বলেন, ‘এটা হলে নির্বাচনে যে দুর্নীতি, জবরদখল, ভোটবিহীন নির্বাচন ও টাকার খেলা বন্ধ হবে। বিশ্বের ৬০টির মতো দেশে এই পদ্ধতিতে নির্বাচন হচ্ছে। দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদের কথা বলেছি।’ আজ মূলত সংবিধানের ওপর আলোচনা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সংবিধান সংশোধন কীভাবে হবে, এ বিষয়ে পরে আলোচনা হবে। নারী আসন বিষয়ে চূড়ান্ত আলোচনা এখনো হয়নি, কিছু আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়া বহুত্ববাদকে পুরো বাদ দিতে বলেছি। প্রস্তাব করেছি আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপন করার জন্য।’

দেশে এখন গণতন্ত্র ও নির্বাচন সোনার হরিণ: আবদুস সালাম
দেশে এখন গণতন্ত্র ও নির্বাচন সোনার হরিণ হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম। তিনি বলেছেন, ‘ভোটের অধিকার ও গণতন্ত্রের আন্দোলন আজ দেশের সব রাজনৈতিক দল এবং সাধারণ মানুষের জন্য অপরিহার্য হয়ে গেছে। জনগণ চায় একটি সংস্কার করা রাজনৈতিক ব্যবস্থার মাধ্যমে সুষ্ঠু নির্বাচন। বিএনপি যে সংস্কার করেছে অন্য কোনো দল তা করতে পারেনি।’ শনিবার (২৬ এপ্রিল) দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণার দাবিতে জিয়া মঞ্চ আয়োজিত মানববন্ধনে তিনি এসব কথা বলেন। মানববন্ধনে আবদুস সালাম আরও বলেন, ‘গত ১৭ বছর ধরে বিএনপি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে কাজ করছে।’ বিএনপি গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য রাজনীতি করে এবং ভবিষ্যতেও করবে বলে উল্লেখ করেন তিনি। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্য উদ্ধৃত করে আবদুস সালাম বলেন, ‘আমরা আইনের শাসন চাই, দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ চাই এবং পরপর দুই বারের বেশি কেউ যেন প্রধানমন্ত্রী না হতে পারে- এমন ব্যবস্থাও চাই।’ ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে অবিলম্বে নির্বাচিত সরকারের প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন আবদুস সালাম। তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে অন্তবর্তী সরকারকে দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে এবং জনগণের আস্থা অর্জন করতে হবে। সীমান্তের ওপার থেকে ফ্যাসিস্টের কথায় কিছু হবে না। এ দেশ চলবে জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমে।’ মানববন্ধনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম পিন্টু, যুগ্ম মহাসচিব আব্দুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, গবেষণা বিষয়ক সহ-সম্পাদক শামীমুজ্জামান শামীম, ফরিদপুর বিভাগ বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিম, চট্টগ্রাম বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক হারুন অর রশিদসহ জিয়া মঞ্চের বিভিন্ন নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া জিয়া মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক মো. ফয়েজ উল্লাহ ইকবাল, যুগ্ম-সম্পাদক জামাল হোসেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জিয়া মঞ্চের আহ্বায়ক খলিলুর রহমান বাবু এবং ঢাকা মহানগর উত্তর জিয়া মঞ্চের আহ্বায়ক রেজাউল করিমও মানববন্ধনে অংশ নেন।

নারী সংস্কার কমিশনের প্রতিটি সুপারিশ ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক: ফয়জুল করিম
নারী সংস্কার কমিশনের দেয়া সুপারিশগুলো ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে মন্তব্য করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করিম। তাই নারী সংস্কার কমিশন বাতিল করে কমিশনের সদস্যদের বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানান তিনি। শনিবার (২৬ এপ্রিল) বিকেলে ভারতের ওয়াকফ আইন সংস্কারের নামে মুসলিমদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র এবং দেশে নারী সংস্কার কমিশন বাতিলের দাবিতে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের সামনে আয়োজিত গণমিছিলে অংশ নিয়ে ফয়জুল করিম এসব কথা বলেন।তিনি বলেন, ‘নারী সংস্কার কমিশনের প্রতিটি সুপারিশ ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। নারী সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনার মাধ্যমে ইউনূস সরকারকে হটানোর পরিকল্পনা চলছে। অচিরেই নারী সংস্কার কমিশন বাতিল করে সদস্যদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।’নির্বাচন ইস্যুতে মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করিম বলেন, ‘আগে প্রয়োজনীয় সব সংস্কার শেষ করতে হবে, পরে নির্বাচন দিতে হবে। জাতীয় সংসদের আগে স্থানীয় নির্বাচন চায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।’এ সময় ওয়াকফ আইন সংস্কারের নামে নরেন্দ্র মোদি সরকার ভারতের মুসলমানদের সম্পত্তি দখলের পাঁয়তারা করছে বলেও মন্তব্য করেন ফয়জুল করিম। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সভাপতি মাওলানা মুহাম্মদ ইমতিয়াজ আলমের সভাপতিত্বে এ সময় বক্তব্য দেন দলের মহাসচিব মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ, মাওলানা লোকমান হোসাইন জাফরী, মকবুল হোসাইন, মুফতি দিলাওয়ার হোসাইন সাকী, মাওলানা মুহাম্মদ আরিফুল ইসলাম, এডভোকেট হানিফ মিয়া, মুনতাসির আহমাদ, ইঞ্জিনিয়ার মোরাদ হোসেন, মাওলানা মুহাম্মদ মাকসুদুর রহমান, শাহাদাত হোসাইন প্রধানিয়া, হাম্মাদ বিন মোশাররফ, মুহাম্মদ আবু বকর সিদ্দিক, আরিয়ান মুহাম্মদ ইমন।

এনসিপিতে যোগ দিতে হবে এমন বাধ্যবাধকতা নেই: আসিফ মাহমুদ
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে দায়িত্বের পর রাজনৈতিক দলে যোগ দেওয়ার প্রশ্নে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেছেন, ‘এখনো এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেইনি। যখন সময় আসবে তখন দেশের মানুষের জন্য যেটা বেস্ট অপশন বা ভালো মনে হবে, সেখানে যোগ দিতে পারি।’ শনিবার (২৬ এপ্রিল) আসিফ মাহমুদ এ কথা বলেছেন বলে তার ফেসবুকে পেজের অ্যাডমিন পোস্ট দিয়ে জানিয়েছেন। আসিফ মাহমুদ আরো বলেন, ‘ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দলেই যোগ দিতে হবে, এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।’ নির্বাচন সামনে রেখে উপদেষ্টার পদ থেকে এই মুহূর্তে পদত্যাগের কোনো পরিকল্পনা নেই স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়ার। তবে রাজনৈতিক দলে যোগ দিলে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) বাদেও অন্য দলে যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনার কথা জানান তিনি নিজেই। এদিকে, শনিবার বিকেলে পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশনের নিয়োগ পরীক্ষায় শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে আসিফ মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়ার কারণে মানুষের মধ্যে আমাদের নিয়ে একটা আকাঙ্ক্ষা আছে। তারা মনে করেন আমরা দেশের জন্য দীর্ঘমেয়াদে কাজ করবো। তবে কোন রাজনৈতিক দলে যুক্ত হবো, তা নির্ধারণের সময় এখনো আসেনি।’ সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘উপদেষ্টার পদ থেকে এই মুহূর্তে পদত্যাগের কোনো পরিকল্পনা নেই। এছাড়া এটা ধরে নেয়ার কোনো কারণ নেই যে আমি নতুন কোনো রাজনৈতিক দলেই যুক্ত হবো। যখন রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার সিদ্ধান্ত নেবো, তখন নিজের জন্য সেরা অপশনই বেছে নেবো।’

ফ্যাসিবাদের সহযোগী বিচারকদেরও বিচার হতে হবে: রিজভী
ফ্যাসিবাদের সহযোগী বিচারকদেরও বিচার হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘এদের বিচার নিশ্চিত করলে ভবিষ্যতে কেউ কোনো আদালতকে দিয়ে অশুভ ইচ্ছা ও অগণতান্ত্রিক নির্যাতন–নিপীড়ন মানুষের ওপর চালানোর সাহস পাবে না।’ শনিবার (২৬ এপ্রিল) ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘ফ্যাসিবাদের মিথ্যা মামলায় ৬০ লাখ আসামি, মুক্তি কতদূর’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ‘ন্যাশনালিস্ট রিসার্চ ফাউন্ডেশন’ এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘শেখ হাসিনার ফ্যাসিজমকে যারা প্রতিষ্ঠিত করতে সাহায্য করেছেন, তাদের অন্যতম হচ্ছেন আদালত। বিচারপতি খায়রুল হক, বিচারপতি এনায়েতুর রহিম, বিচারপতি আসাদুজ্জামান—(আছে) এ রকম অসংখ্য নাম। তিনি বলেন, ‘এরা সবচেয়ে নির্দোষ যে নারী, জনগণের পক্ষে সংগ্রাম করেছেন নিরবিচ্ছিন্নভাবে, শত নিপীড়ন–নির্যাতন ভোগ করে জনগণকে ছেড়ে যাননি, মাটিকে ছেড়ে যাননি, সেই দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলায় আসাদুজ্জামান তাকে সাজা দিয়েছেন। সেই বিচারকেরা কেন শাস্তির আওতায় আসবেন না।’ আওয়ামী লীগের সময় বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, ‘৬০ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে যে মামলা, সেই মামলা আট মাস চলে যাওয়ার পরও আদালতের সেলফে থাকার কথা ছিল না। অতি দ্রুত এ মামলাগুলোর নিস্পত্তি করতে হবে।’ বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘ফ্যাসিবাদের বিচারক, তাদেরও বিচার হতে হবে। আমরা নুরেমবাগ ট্রায়ালে দেখেছি—হিটলারের আদালতের যারা বিচারক ছিলেন, কোনো ধরনের যুক্তির কথা না শুনে হিটলারের কথায় লাখ লাখ কয়েদিকে পুড়িয়ে মারার যাঁরা সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, বিচার করেছেন, তাদের বিচার হয়নি? তাঁদের যদি বিচার হতে পারে, তাহলে আজকে শেখ হাসিনার আমলের ফ্যাসিবাদকে যাঁরা প্রলম্বিত করেছেন, তাদের কেন বিচার হবে না। তাঁদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে।’ আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপদেষ্টা মাহাদী আমিন বলেন, ‘পৃথিবীতে এমন অনেক দেশ আছে, যে দেশের জনসংখ্যা ৬০ লাখ নেই। অথচ বিএনপির ৬০ লাখ নেতা–কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে।’ আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন আয়োজক সংগঠন ন্যাশনালিস্ট রিসার্চ ফাউন্ডেশনের আহ্বায়ক সৈয়দ আবদাল আহমেদ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক নাসির উদ্দিন আহমেদ। সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজীজুল বারী হেলাল, নাটোর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ফারজানা শারমিন প্রমুখ। সঞ্চালনায় ছিলেন ন্যাশনালিস্ট রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সদস্যসচিব ফরিদ উদ্দিন আহমেদ।

‘বাংলাদেশ নতুন ধারা’ নামে নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ
‘বাংলাদেশ নতুন ধারা’ পার্টি নামে নতুন আরেকটি রাজনৈতিক দল শনিবার আত্মপ্রকাশ করেছে। রাজধানী সেগুনবাগিচার তোপখানা রোডে বাংলাদেশ শিশু কল্যাণ পরিষদের ভিআইপি কনফারেন্স রুমে সকালে এক অনুষ্ঠানে দলটির আত্মপ্রকাশের ঘোষণা দেওয়া হয়। এই দলের আহ্বায়ক মুহাম্মাদ আবদুল আহাদ নূর ও সদস্যসচিব মামুনুর রশীদ মামুন। অনুষ্ঠানের সভাপতি পার্টির পৃষ্ঠপোষক এ টি এম মমতাজুল করিম ৩৭ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেন। আহ্বায়ক কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, উপদেষ্টা মুক্তিযোদ্ধা এ কে সামসুল হক কাবা, মুফতি মহিউদ্দিন, মুফতি আবদুল হালিম, এনাম জয়নাল আবেদীন, এম হাবিব উল্লাহ, কি এম সাদ বিন রানী, ফারুক আলম, জি এম মোস্তফা মিলন, মনোয়ার হোসেন বাবুল, প্রফেসর খোদাদাদ খান, ইঞ্জিনিয়ার শহিদুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর, ফিরোজ আলম, মো. হাসান আলী, জ্যেষ্ঠ যুগ্ন আহ্বায়ক মিজানুর রহমান স্বপন, যুগ্ম আহ্বায়ক মো. হুমায়ূন কবির, ওসমান গনী খোকন, অ্যাডভোকেট রেজাউল হক রেজা, অ্যাডভোকেট গিয়াসউদ্দিন শাহিন, যুগ্ম সদস্য সচিব ইশারুল হোসেন, যুগ্ম সদস্য সচিব মোল্লা মো. জমির উদ্দিন, সালেহ আহমেদ। কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটি সদস্য মনির হোসেন মনির, মো. নিজামুদ্দিন ভূইয়া, শাহ মো. মোতাহার উদ্দিন তপন, কাজী সরোয়ার হোসেন, শাহাদাৎ হোসেন, মোশারফ হোসেন দুলাল, সারোয়ার হোসেন জাহান, সালাউদ্দিন আহমেদ, তানভীর আহমেদ, তাজরিয়ান আলম, মো. শফিকুল ইসলাম, শামীম মিয়া প্রমুখ। ঘোষণাপত্রে মুহাম্মাদ আবদুল আহাদ নুর বলেন, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে আরও সুদৃঢ় করতে স্বতন্ত্র স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি, সম্মানের ভিত্তিতে পররাষ্ট্র ব্যবস্থাপনা, শক্তিশালী প্রতিরক্ষা নীতি, সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করার বিষয়ে তাদের থাকবে বলিষ্ঠ পদক্ষেপ।

সংস্কার ও নির্বাচনের সমন্বিত রোডম্যাপ ঘোষণা করুন : রব
রাষ্ট্রীয় রাজনীতির মৌলিক সংস্কার ও জাতীয় নির্বাচন প্রশ্নে একটি রোডম্যাপ ঘোষণা করার আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব।শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) উত্তরাস্থ বাসভবনে জেএসডির স্থায়ী কমিটির সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সভার শুরুতে ক্যাথলিক গুরু ফ্রান্সিস পোপের মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়।তিনি বলেন, সাংবিধানিক সংস্কারসহ জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে জাতীয় সনদ প্রণয়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং তাৎপর্যপূর্ণ। এ লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সব দল ও সমাজশক্তি তথা শ্রমজীবী, কর্মজীবী ও পেশাজীবী সংগঠনসমূহের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যাপক ভিত্তিক ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা আবশ্যক।রব বলেন, প্রণীত জাতীয় সনদ নির্বাচনের আবশ্যিক শর্ত পূরণ করবে। এভাবেই সংস্কার ও নির্বাচন পারস্পরিক পরিপূরক বিধায় সংস্কার ও নির্বাচনের সমন্বিত রোডম্যাপ ঘোষণা করা আবশ্যক। এই পদক্ষেপ গ্রহণের মধ্য দিয়েই জাতীয় রাজনীতি একটি সুস্পষ্ট লক্ষ্যে ধাবিত হবে। সংস্কার এবং নির্বাচন কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। জাতীয় রাজনীতির মৌলিক প্রশ্নে ফ্যাসিবাদ বিরোধী শক্তির অনৈক্য বা বিভেদ পরিস্থিতিকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলবে।সভায় দেশের সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন দলের সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, স্থায়ী কমিটির সদস্য তানিয়া বর, ছানোয়ার হোসেন তালুকদার, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ সিরাজ মিয়া, মোহাম্মদ তৌহিদ হোসেন, অ্যাডভোকেট কে এম জাবির ও কামাল উদ্দিন পাটোয়ারী প্রমুখ।

সংস্কার ও নির্বাচনের সমন্বিত রোডম্যাপ ঘোষণা করুন: আ স ম রব
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেছেন, ‘রাষ্ট্রীয় রাজনীতির মৌলিক সংস্কার ও জাতীয় নির্বাচন প্রশ্নে একটি রোডম্যাপ ঘোষণা করুন। সাংবিধানিক সংস্কারসহ জাতীয় ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে জাতীয় সনদ প্রণয়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ। এ লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সকল দল ও সমাজশক্তি তথা শ্রমজীবী, কর্মজীবী ও পেশাজীবী সংগঠনসমূহের সাথে আলোচনা করে ব্যাপকভিত্তিক ঐক্যমত প্রতিষ্ঠা আবশ্যক।’ আজ শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) উত্তরাস্থ বাসভবনে জেএসডির স্থায়ী কমিটির সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সভার শুরুতে ক্যাথলিক গুরু ফ্রান্সিস পোপের মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। জাতীয় সনদ নির্বাচনের আবশ্যিক শর্ত পূরণ করবে জানিয়ে সভায় আবদুর রব বলেন, ‘সংস্কার ও নির্বাচন পারস্পরিক পরিপূরক বিধায় সংস্কার ও নির্বাচনের সমন্বিত রোডম্যাপ ঘোষণা করা আবশ্যক। এই পদক্ষেপ গ্রহণের মধ্য দিয়ে জাতীয় রাজনীতি একটি সুস্পষ্ট লক্ষ্যে ধাবিত হবে। সংস্কার ও নির্বাচন কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। জাতীয় রাজনীতির মৌলিক প্রশ্নে ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তির অনৈক্য বা বিভেদ পরিস্থিতিকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলবে।’ সভায় দেশের সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন দলের সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, স্থায়ী কমিটির সদস্য তানিয়া বর, অ্যাডভোকেট ছানোয়ার হোসেন তালুকদার, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ সিরাজ মিয়া, মোহাম্মদ তৌহিদ হোসেন, অ্যাডভোকেট কেএম জাবির ও কামাল উদ্দিন পাটোয়ারী প্রমুখ।

নারী সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে পশ্চিমা দালালদের দিয়ে: খেলাফত মহাসচিব
‘নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনকে গঠন করা হয়েছে কিছু উচ্ছিষ্ট নাস্তিক ও পশ্চিমা দালালদের দিয়ে, যাদের মূল উদ্দেশ্য হলো বাংলাদেশের ধর্মীয় ও পারিবারিক কাঠামোকে ধ্বংস করা।’ শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) জুমার নামাজের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটে বিক্ষোভ মিছিল পূর্ববর্তী সমাবেশে খেলাফত মজলিস মহাসচিব আহমদ আব্দুল কাদের এসব কথা বলেন।তিনি আরও বলেন, ‘অভিন্ন পারিবারিক আইন, বিয়ে, তালাক, উত্তরাধিকার এবং ভরণপোষণের ক্ষেত্রে সব ধর্মের নারীদের জন্য এক আইন চালুর প্রস্তাব দিয়েছে তারা। এটা সরাসরি কোরআন-সুন্নাহর বিরুদ্ধে এবং মুসলমানদের বিশ্বাসের উপর নগ্ন আঘাত। আমরা এ ধরনের ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ড কখনো মেনে নেব না। এই দেশে ৯০ শতাংশের বেশি মানুষ মুসলমান। তাদের ধর্মীয় অনুভূতির প্রতি কোনো শ্রদ্ধা না রেখেই কমিশন প্রস্তাব করেছে যৌনকর্মীদের পেশাগত স্বীকৃতি দেওয়ার। এটা শুধু ইসলামবিরোধী নয় বরং সমাজে অবাধ যৌনতা ও নৈতিক অবক্ষয় ছড়ানোর কৌশল। যৌনকর্মীদের আইনি স্বীকৃতি মানে এই পেশাকে উৎসাহ দেওয়া, যা কোনো ধর্মপ্রাণ দেশের নাগরিকই মেনে নেবে না।’উল্লেখ্য, বায়তুল মোকাররম মসজিদের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন খেলাফত মজলিসের নেতাকর্মীরা৷ মিছিল পল্টন মোড় ঘুরে উত্তর গেটে এসে শেষ হয়৷ এর আগে নামাজ শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে নেতারা ভারতের আগ্রাসন বন্ধে কূটনৈতিক পদক্ষেপ নিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহবান জানান৷ এছাড়া সমাবেশ থেকে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবিত প্রতিবেদন বাতিলসহ ইসলাম বিদ্বেশী যেকোন প্রস্তাব বন্ধের দাবি জানিয়েছে খেলাফত মজলিস।

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধসহ চার দফা দাবিতে শাহবাগে শহীদি সমাবেশ শুরু
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবি এবং জুলাই গণহত্যাসহ বিভিন্ন ঘটনার বিচার দাবিতে রাজধানীর শাহবাগে ‘শহীদি সমাবেশ’ শুরু হয়েছে। শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) দুপুর ৩টার পর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে ইনকিলাব মঞ্চের ব্যানারে এই সমাবেশ শুরু হয়। সমাবেশ থেকে চার দফা দাবি উত্থাপন করা হয়। এগুলো হল আগামী ১০০ দিনের মধ্যে জুলাই গণহত্যার দৃশ্যমান বিচার শুরু করতে হবে এবং আওয়ামী লীগকে নির্বাহী আদেশ, আদালতের রায় ও রাজনৈতিক সমঝোতার মাধ্যমে সাংবিধানিকভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে; শাপলা চত্বরের ঘটনার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে জাতিসংঘের সহায়তায় একটি তদন্ত কমিশন গঠন করে শহীদদের তালিকা প্রকাশ ও বিচার প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে; পিলখানা হত্যাকাণ্ড নিয়ে গঠিত কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ করে সুপারিশমালা বাস্তবায়ন করতে হবে; দেশের সব রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ইশতেহারে আওয়ামী লীগের গণহত্যার বিচারের বিষয়ে স্পষ্ট ধারা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ইনকিলাব মঞ্চ জানায়, এই দাবিতে আগামী ১০০ দিন দেশের ৬৪ জেলায় গণসংযোগ চালানো হবে। দাবি পূরণ না হলে আগামী ৩৬ জুলাই (৫ আগস্ট) ‘মার্চ ফর বাংলাদেশ’ কর্মসূচি ঘোষণা করে শাহবাগ থেকে সচিবালয় ঘেরাও করা হবে। সমাবেশে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত আছেন।

ইলিয়াস কাঞ্চনের নেতৃত্বে নতুন দল জনতা পার্টি বাংলাদেশের যাত্রা শুরু
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেতা ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের অন্যতম মুখ ইলিয়াস কাঞ্চনের নেতৃত্বে যাত্রা শুরু করেছে নতুন একটি রাজনৈতিক দল ‘জনতা পার্টি বাংলাদেশ’। শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) রাজধানীর একটি হোটেলে আনুষ্ঠানিকভাবে দলটির আত্মপ্রকাশ ঘটে। ‘গড়বো মোরা ইনসাফের দেশ’ স্লোগান নিয়ে যাত্রা শুরু করা দলটির চেয়ারম্যান হয়েছেন ইলিয়াস কাঞ্চন নিজেই, আর সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্ব পেয়েছেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ। দলটির লক্ষ্য উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানানো হয়, মুক্তিযুদ্ধ ও ২৪-এর চেতনায় বিশ্বাসী এবং গণমানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠাই তাদের প্রধান লক্ষ্য। নতুন দল গঠন প্রসঙ্গে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘রাজনীতি নতুন কিছু না। আমি অনেক দিন ধরেই জনসেবা করছি। এবার সেটা একটা সংগঠিত কাঠামোর মধ্যে আনছি। আমরা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছি এবং দেশের ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।’ নতুন এ দলটিতে রাজনীতিবিদ, শিক্ষক, সাংবাদিক, সাবেক আমলা ও সমাজকর্মীরা রয়েছেন বলে জানান এক সময়ের জনপ্রিয় এই চিত্রনায়ক। তার দাবি, বিদ্যমান দলগুলোর প্রতি জনআস্থা কমে যাওয়ায় দেশের মানুষ বিকল্প নেতৃত্বের সন্ধান করছে, আর ‘জনতা পার্টি বাংলাদেশ’ সেই চাহিদা পূরণে ভূমিকা রাখবে। অনুষ্ঠানে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির নাম উপস্থাপন করেন ইলিয়াস কাঞ্চন। জানা গেছে, নতুন এই দলটিতে নির্বাহী চেয়ারম্যান ও মুখপাত্র করা হয়েছে গোলাম সারোয়ার মিলনকে। ভাইস চেয়ারম্যান করা হয়েছে- রফিকুল হক হাফিজ, সিনিয়র অ্যাডভোকেট এবিএম ওয়ালিউর রহমান, রেহানা সালাম, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, এমএ ইউসুফ, সৈয়দা আজিজুন নাহার, গোলাম মেহরাজ, ব্রিগ্রেডিয়া জেনারেল (অব.) কামরুল ইসলাম এবং নির্মল চক্রবর্তীকে। নির্বাহী কমিটিতে আরও রয়েছেন সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এম আসাদুজ্জামান, যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট এবিএম রফিকুল হক তালুকদার রাজা, আল আমিন রাজু, অ্যাডভোকেট শিউলি সুলতানা রুবী, নাজমুল আহসান, জামাল উদ্দিন, শাহাদত হোসেন, আসাদুজ্জামান ও জাকির হোসেন লিটু। দলটির সমন্বয়কারীর দায়িত্ব পেয়েছেন নূরুল কাদের সোহেল, সহ-সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর, জাকির হোসেন ও ফাতেমা বেগম।

বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যেই সংস্কার করে নির্বাচন সম্ভব: এনসিপি
নির্বাচন বিলম্বের পক্ষে নয় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। অন্তর্বর্তী সরকারের বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যেই মৌলিক সংস্কার শেষ করে ভোট সম্ভব বলে মনে করেন নেতারা। এদিকে, নির্বাচনী প্রচারণায় চমকে দিতে চাওয়া নেতারা বলছেন, ‘পুরনো ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে নতুনরূপে গণসংযোগের পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে। তাদের প্রত্যাশা, নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিতে সরকার এবং রাজনৈতিক দলগুলো আন্তরিক হবে।’ গণঅভ্যুত্থানে হাসিনা সরকারের পতনের সাড়ে ৬ মাস পর, নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের উদ্দেশ্যে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আত্মপ্রকাশ করে অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব থাকা তরুণদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি। নির্বাচনের আগে মৌলিক সংস্কার ও আওয়ামী লীগের বিচারের দাবিতে অনড় এনসিপি। মৌলিক সংস্কার বলতে ঠিক কোন সংস্কারগুলোর ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে দলটি, তা জানালেন এনসিপির নেতারা। এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সরোয়ার তুষার বলেন, ‘মৌলিক সংস্কারের মানে হলো আমাদের রাষ্ট্রের যে স্বৈরতান্ত্রিক ভিত্তি আছে তাকে বিলুপ্ত করে একটা গণতান্ত্রিক কাঠামো তৈরি করা। এখন যে এরেঞ্জমেন্ট সেখানে রাষ্ট্র, সরকার, দল, প্রশাসন মিলে ভংঙ্কয় একটা সিন্ডিকেট হয়ে দাঁড়ায়। যা দল তাই সরকার, তাই রাষ্ট্র, তাই প্রশাসন। বিচার বিভাগকে যেনো রাজনীতিকরণ করতে না পারে। নির্বাহী বিভাগ আইন বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না।’ দলটির মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী যাতে স্বৈরতান্ত্রিক না হতে পারে সে কারণে দুই বারের পর কেউ প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবে না। মন্ত্রী পরিষদ শাসিত সরকার হতে হবে। মন্ত্রীরা সিদ্ধান্ত নেবে।’ সংস্কারের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য হলে, সরকারের বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যেই মৌলিক সংস্কার সম্পন্ন করে নির্বাচন সম্ভব বলে জানান এনসিপি নেতারা। ভোটে বিলম্বের পক্ষে নন বলেও জানান তারা। নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, ‘ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন করা সম্ভব। সংস্কারের সবগুলো রিপোর্ট চলে এসেছে। যদি দলগুলো, বিভিন্ন পক্ষগুলো এক রুমে বসে আলোচনা করে। তাহলে এক থেকে দুই মাসের বেশি সময় লাগার কথা না।’ সরোয়ার তুষার আরও বলেন, ‘যে সময়ই নির্বাচন হোক আমরা সর্বোচ্চ ভালো ফল করতে চাই। পৃথিবীতে সাম্প্রতিক এমন অনেক ঘটনা রয়েছে, যেখানে নতুন দল হিসেবে চমক সৃষ্টি করেছে।’ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিতে নির্বাচন কমিশন ও রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছার প্রত্যাশা করেন এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুউদ্দীন পাটোয়ারী। পুরানো রীতি থেকে বেরিয়ে নতুন রূপে গণসংযোগের মাধ্যমে এনসিপির পক্ষে জনমত তৈরির পরিকল্পনার কথাও জানান তিনি। নাসিরুউদ্দীন পাটোয়ারী বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কথা বলেছি। নির্বাচন আচরণবিধিতে পরিবর্তন আনতে হবে। ক্যাম্পেইন বাজেটেও পরিবর্তন আনতে হবে এবং আরপিওর অনেকগুলো নিয়ম রয়েছে যেগুলো জনবিরোধী সেগুলো পরিবর্তন করতে হবে। এগুলোতে পরিবর্তন আনতে দলগুলোর কৃষ্টি কালচাল পরিবর্তন করতে হবে। আমরা ভিন্নভাবে মানুষের সঙ্গে কথা বলছি। লিফলেট বানানো কাজ শুরু করে দিয়েছি। জনগণের কাছে গিয়ে বোঝানো চেষ্টা করছি।’ প্রস্তাবিত মৌলিক সংস্কারগুলি না করে নির্বাচনে গেলে গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা ব্যর্থ হবে বলেও মনে করেন এনসিপির এই শীর্ষ নেতা।

সংস্কারের নামে নির্বাচন বিলম্বিত হলে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি বিএনপির
সংস্কারের বিপক্ষে নয় বিএনপি, তবে সংস্কারের নামে নির্বাচন বিলম্বিত করার চেষ্টা হলে ফের আন্দোলনের নামার হুঁশিয়ারি দিয়ে আসছেন দলটির নেতারা। তারা বলছেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে দেয়া রাজনৈতিক দলের প্রস্তাব প্রকাশ করে একমাসের মধ্যেই জুলাই সনদ স্বাক্ষর করে নির্বাচনী রোডম্যাপ দেয়া সম্ভব। জুলাই বিপ্লবের পর ভেঙে পড়া রাষ্ট্র মেরামতে সংস্কার প্রস্তাবে রাজনৈতিক দলগুলোর সাড়া আশা জাগিয়েছে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে দেড়যুগের ভোটাধিকার ফিরে পাবার আকাঙ্ক্ষাও। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া থাকলেও অন্যতম রাজনৈতিক দল বিএনপি, সংস্কারের পাশাপাশি শিগগিরই নির্বাচন অনুষ্ঠানে নিজেদের অবস্থানে অনড়।এ নিয়ে বরাবরের মতোই কিছু মহলের সমালোচনার মুখে বিএনপি। প্রশ্ন উঠছে দলটি সংস্কার চায় নাকি ক্ষমতা চায়। তবে বিএনপির নেতাদের সাফ জবাব, স্বৈরাচারী সরকার ক্ষমতায় থাকতেই রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফা দিয়ে এসেছেন তারা। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংস্কারের প্রস্তাবেও সাড়া দিয়ে বিএনপি ইতিবাচক অবস্থান নিয়েছে।ডিসম্বরের মধ্যে নির্বাচনী রোডম্যাপ আদায়ে নিজেদের মতামতের সঙ্গে ঐকমত্যে শরিক ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গেও আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি।দলটির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, ‘বিএনপি সাত-আট বছর আগ থেকেই সংস্কারের কথা বলে আসছে। একবারেই কি সংস্কার হয়? এই ধারাবাহিকতা চলতে থাকবে। যে সরকারই আসুক সংস্কার করতে হবে। যেগুলো হাতে থাকবে সেগুলো, আবার নতুন কোনো সংস্কার।’সংস্কার নিয়ে বিএনপির কোনো সমস্যা নেই জানিয়ে এই নেতা বলেন, ‘আমরা তো সংস্কার চাই। তবে নির্বাচন বিলম্ব করার কোনো কারণ দেখি না। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে রোজা, তারপর গরম। এরপর এসএসসি পরীক্ষা রয়েছে। কাজেই জানুয়ারির মধ্যেই নির্বাচনটা হওয়াই ভালো। এরপরে গেলেই জনগণ ও বিএনপি মানবে না।’ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আগে কারও মুখ দিয়ে সংস্কারের শব্দ বের হয়নি। কিন্তু বিএনপি দীর্ঘ দিন ধরে সংস্কারের কথা বলে আসছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ঐকমত্য কমিশনের কাছে দেয়া সব রাজনৈতিক দলের সংস্কার প্রস্তাব প্রকাশ করলে জনগণও জানল একমত কোথায় হয়েছে কোথায় হয়নি। যেখানে ঐকমত হয়েছে, সেগুলোর সংস্কার একমাসের মধ্যে সমাধান করা যাবে। জুলাই সনদে স্বাক্ষরের মাধ্যমে নির্বাচনী রোডম্যাপ দেয়া সম্ভব। আগস্ট-সেপ্টেম্বরে নির্বাচন হতে পারে।’দলটির আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনা, বাঁচিয়ে রাখা এবং গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থাকে সুদৃঢ় করাসহ সমস্ত উদ্যোগ বিএনপির নেতৃত্বে হয়েছে।’তিনি আরও বলেন, ‘ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হলে অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনেই জাতীয় নির্বাচন নিরপেক্ষ হতে পারে।’

মানুষ ভোট দেওয়ার জন্য প্রস্তুত : আমীর খসরু
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ‘মানুষ ভোট দেওয়ার জন্য প্রস্তুত। নির্বাচন হচ্ছে মানুষের ভোটাধিকারের মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করে গণতান্ত্রিক অর্ডার ফিরিয়ে আনা। এটা একটা জনগণের মালিকানার বিষয়।’ বৃহস্পতিবার বিকেলে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বাম গণতান্ত্রিক ঐক্য এবং জন অধিকার পার্টির সঙ্গে বৈঠক শেষে এসব কথা বলেন তিনি। আমীর খসরু সাংবাদিকদের বলেন, ‘ধারাবাহিক আলোচনার অংশ হিসেবে আমরা আজও বাম গণতান্ত্রিক ঐক্য এবং বাংলাদেশ জন অধিকার পার্টির সঙ্গে বৈঠক করেছি। নির্বাচন নিয়ে কথা বলেছি।’ তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দলকে ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতায় যেতে হবে। যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করবে, তারা তো এটাই মনে করবে, তাই না? ভোট হবে, ক্ষমতায় যাবে।নির্বাচিত সদস্যরাই নির্বাচিত হয়ে সংসদে যাবেন, ক্ষমতায় যাবেন। এটাই তো গণতন্ত্র। এটা বুঝতে অসুবিধা হওয়ায় তো কোনো কারণ দেখছি না।’ বৈঠকে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা বুলু, বাম গণতান্ত্রিক ঐক্যের সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ এবং বাংলাদেশ জন অধিকার পার্টির সভাপতি ইসমাইল হোসেন সম্রাট। প্রসঙ্গত, গত ১৭ এপ্রিল থেকে বিএনপি তার শরিক জোট ও মিত্রদের সঙ্গে পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে আলোচনা শুরু করে। এখন পর্যন্ত বিএনপি ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, এলডিপি, সিপিবি, বাসদ, লেবার পার্টি, গণ অধিকার পরিষদ, এনডিএম ও গণফোরামের সঙ্গে বৈঠক করেছে।

সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে পৃথিবীর যেকোনও সমস্যা দূর করা সম্ভব: ড. ইউনূস
কাতার ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে সামাজিক ব্যবসার ওপরে বক্তব্য রাখছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকাতার ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে সামাজিক ব্যবসার ওপরে বক্তব্য রাখছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ব্যবসার মাধ্যমে নিজের জন্য টাকা কামিয়ে নিজেকে ধনী করা যেতে পারে, অথবা ব্যবসা করে পৃথিবীর যত সমস্যা আছে, তা দূর করা যেতে পারে, এটি সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত ইচ্ছা। তিনি বলেন, ‘এটাকে বলে সামাজিক ব্যবসা। এর মূল উদ্দেশ্যই অর্থ আয়ের চেয়ে সমস্যার সমাধান করা।’ বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) দোহায় কাতার ইউনিভার্সিটিতে দেওয়া এক বক্তৃতায় এসব কথা বলেন তিনি। প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘চাকরি করা কারও জীবনের লক্ষ্য হতে পারে না। এটি একটি ভুল দিকে যাওয়ার মতো অবস্থা। মানুষ কারও অধীনে কাজ করার জন্য জন্ম নেয়নি। কেন আমি চাকরি করে দাসত্বের জীবন বেছে নেবো। কারও কাছ থেকে নির্দেশ নেওয়া মানুষের সঙ্গে যায় না। তাহলে আমরা কী করবো। আমি বলি, ব্যবসার প্রচলিত পদ্ধতি একদম ভুল। এটি দাসত্ব তৈরি করে। এই পদ্ধতিতে শুধুমাত্র মুনাফা কীভাবে বাড়ানো যায়— সেই পথ দেখানো হয়। শুধুমাত্র একটি পরিবর্তন সব প্রেক্ষাপট পাল্টে দিতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘সামাজিক ব্যবসার প্রচলন করার অভ্যাস সবার মধ্যে নেই। অর্থ আয় করায় হয়তো সুখ নিয়ে আসতে পারে, কিন্তু অন্যকে, পুরো পৃথিবীকে খুশি করার মধ্যে ব্যাপক সুখ আছে। সুতরাং, নিজেই বিচার করুন— কোন ধরনের সুখ আপনার প্রয়োজন। আমি মনে করি, সবার কাছে একটি স্বতন্ত্র আইডিয়া আছে, যা কিনা পুরো পৃথিবীকে বদলে দিতে পারে। কিন্তু কেউ সেই পথে হাঁটে না। কারণ সেই পথের প্রচলন নেই, প্রচলন আছে শুধু মুনাফা অর্জনের।’ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘পৃথিবীকে বদলানোর শক্তি তোমাদের মধ্যে আছে। ভুল পথে সেই শক্তির অপচয় করা ঠিক হবে না। জীবন অনেক ছোট। তোমরা ইতোমধ্যে তারুণ্যের সীমা অতিক্রম করেছো। এখনই সময় পৃথিবীকে বদলানোর। নতুন পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হও পৃথিবীকে বদলাতে, অস্ত্র নিয়ে নয়।’ ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘দারিদ্র্যতা গরিব মানুষের সৃষ্টি নয়। তাহলে কারা করেছে? আমরা যেই ব্যবস্থা পৃথিবীর জন্য প্রচলন করেছি সেটি। আমরা এর বিপরীত ব্যবস্থা যেটা দারিদ্র্যতা সৃষ্টি করবে না, সেটা তৈরি করছি না। আমাকে বিভিন্ন বিজনেস স্কুল থেকে আমন্ত্রণ জানান হয়। আমি শুধু গিয়ে বলি যে,. আমরা ভুল পথে হাঁটছি। আমি বলি যে, আপনারা ব্যবসা শেখাচ্ছেন মানুষকে গরিব করার জন্য। আমি আপনাদের থামতে বলছি না। শুধু বলছি আপনারা শুধু টাকা কামানোর কথা শিক্ষার্থীদের শেখাচ্ছেন। আপনারা নিশ্চিত করেন যে, আপনাদের শিক্ষার্থীরা যেসব কোম্পানিতে চাকরি করবে, সেসব কোম্পানি যেন অনেক সফল হয়, অনেক আয় করে। আমি শুধু বলছি, আপনারা কেন একটা আলাদা অনুষদ কিংবা বিভাগ তৈরি করছেন না, সামাজিক ব্যবসার জন্য। তরুণদের শেখান কীভাবে সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে যেকোনও সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে।’