.png)
জুলাই যোদ্ধাদের কয়েকজনকে হত্যার উদ্দেশ্যে টার্গেট করা হতে পারে- এমন স্পর্শকাতর তথ্য সরকারকে আগেই জানানো হয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে সে সময় কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে সংশ্লিষ্টদের দাবি।
শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) সন্ত্রাসীদের গুলিতে গুরুতর আহত হন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য প্রার্থী শরিফ ওসমান বিন হাদি। সংকটাপন্ন অবস্থায় তিনি বর্তমানে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
একটি শীর্ষস্থানীয় জাতীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্ভাব্য ‘টার্গেট কিলিং’-এর তালিকায় হাদির পাশাপাশি জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ এবং আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদসহ আরও কয়েকজন জুলাই সংগঠকের নাম ছিল।
সূত্র জানায়, সেপ্টেম্বর মাসে যুক্তরাজ্যপ্রবাসী এক আইনজীবীর মাধ্যমে প্রাপ্ত এই তথ্য যথাসময়ে সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা ও উচ্চপর্যায়ের দায়িত্বশীলদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। এমনকি ওসমান হাদিসহ তিনজন জুলাই যোদ্ধা নিজেরাই তাদের নিরাপত্তা ঝুঁকির বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরে আনেন। একই সঙ্গে ওই আইনজীবীও আলাদাভাবে একাধিকবার বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করেন।
সূত্র আরও জানায়, ওই আইনজীবী সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের কাছে বিশ্বাসযোগ্য তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করেন এবং তথ্য প্রাপ্তির নির্দিষ্ট উৎসের কথাও উল্লেখ করেন। তিনি ব্যাখ্যা করে জানান, পেশাগত কারণে বিশ্বের কয়েকটি দেশের গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা সংস্থার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় তার কাছে এসব স্পর্শকাতর তথ্য এসেছে। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে বড় ধরনের বিপদের আশঙ্কার কথাও তিনি সতর্ক করে জানান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, ‘অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য সূত্রে এমন হামলার তথ্য পেয়ে আমরা সরকারকে জানিয়েছিলাম। কিন্তু কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এছাড়া এসব ক্ষেত্রে শুধু ব্যক্তিগতভাবে নিরাপত্তা বাড়িয়েও তেমন কোনো ফল আসে না। কারণ বিদ্যমান বাস্তবতায় পুলিশি নিরাপত্তা নিয়ে তৃণমূল পর্যায়ে রাজনীতি করাও সম্ভব নয়। এসব উন্নত দেশগুলোতে চলে।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা সরকারকে বারবার বলেছি-নির্বাচনের আগে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে একটি বড় ধরনের অভিযান চালাতে হবে। বিশেষ করে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযান ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন করা আদৌ সম্ভব নয়। শুধু কয়েকজন ছিঁচকে চোর ধরেই লোক দেখানো অভিযান সবার জন্য আত্মঘাতী হতে বাধ্য।’
সূত্র অনুযায়ী, ওসমান হাদি, ব্যারিস্টার ফুয়াদ ও হাসনাত আবদুল্লাহসহ জুলাই সংগঠকদের ওপর সম্ভাব্য হামলার তথ্য পাওয়ার পর ওই যুক্তরাজ্যপ্রবাসী আইনজীবী দ্রুত ঢাকায় আসেন। সেপ্টেম্বরে তিনি হাসনাত আবদুল্লাহ, ওসমান হাদি ও ব্যারিস্টার ফুয়াদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বিস্তারিত তথ্য জানার পর তারা সরকারের উচ্চপর্যায়ে বিষয়টি তুলে ধরে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
সে সময় সরকারিভাবে তাদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী বা বডিগার্ড নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। তবে মাঠপর্যায়ের রাজনীতি ও কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগের সীমাবদ্ধতার কথা বিবেচনা করে তারা সে প্রস্তাবে রাজি হননি। আগাম হুমকির তথ্য দেওয়া ওই আইনজীবী বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছেন।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাজ্যসহ বেশ কয়েকটি দেশের নিরাপত্তা এজেন্সির সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। ওই সব সূত্রের সুবাদে জুলাই সংগঠকদের ওপর হামলার বিষয়ে তার কাছে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আসে। বিষয়টি তিনি গুরুত্বের সঙ্গে নেন এবং দ্রুত ঢাকায় চলে আসেন। এরপর হাসনাত আবদুল্লাহ, ব্যারিস্টার ফুয়াদ এবং ওসমান হাদির সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন। করণীয় নির্ধারণে তাদের সঙ্গে একান্তে একাধিক বৈঠকও করেছেন। গুরুত্ব বিবেচনায় বিষয়টি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাকেও জানানো হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হাদির ওপর হামলা কোনোভাবেই ঠেকানো গেল না। অন্যদের ক্ষেত্রেও জীবনের ঝুঁকি রয়ে গেছে।’
এদিকে পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, হাদির ওপর হামলার পেছনে বিদেশে অবস্থানরত সন্ত্রাসীদের সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত হিসেবে ফিলিপ ওরফে গারো ফিলিপ নামে এক ভাড়াটে কিলারের নাম উঠে এসেছে। হামলার পর থেকেই ফিলিপকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। পুলিশ বলছে, তাকে আটক করা গেলে এই ‘কিলিং মিশন’-এর নেপথ্যে থাকা অন্যদের পরিচয়ও স্পষ্ট হবে।