চীনা প্রতিনিধি দলের সঙ্গে জামায়াত আমিরের বৈঠক


চীনা প্রতিনিধি দলের সঙ্গে জামায়াত আমিরের বৈঠক

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানের সঙ্গে চীনের পিপলস ইনস্টিটিউট অব ফরেন অ্যাফেয়ার্স (সিপিআইএফএ)-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট রাষ্ট্রদূত ঝৌ পিংজিয়ান সাক্ষাৎ করেছেন। বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টায় জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

চীনা প্রতিনিধি দলে ছিলেন সিপিআইএফএর এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকাবিষয়ক বিভাগের পরিচালক ঝাও ইয়োংগুও, পেকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের সাউথ এশিয়ান স্টাডিজ সেন্টারের নির্বাহী উপপরিচালক ড. ওয়াং শু, সিপিআইএফএর কর্মকর্তা ঝাং লি, ঢাকায় চীনা দূতাবাসের পলিটিক্যাল ডিরেক্টর ঝাং জিং এবং দূতাবাসের অ্যাটাচে লিউ হোংরু।

জামায়াত আমিরের সঙ্গে ছিলেন দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য এটিএম আজহারুল ইসলাম, সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়ার সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, নির্বাহী পরিষদের সদস্য মোবারক হোসাইন এবং পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মাহমুদুল হাসান।

বৈঠক শেষে এক সংক্ষিপ্ত ব্রিফিংয়ে অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। জামায়াত আমির অসুস্থতা কাটিয়ে প্রথমবারের মতো কেন্দ্রীয় দপ্তরে বিদেশি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে দেখা করতে পেরে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করেন ও প্রতিনিধিদের ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, “চীন ও বাংলাদেশ পরস্পর উন্নয়ন সহযোগী। আমরা একত্রে কীভাবে উভয় দেশের উন্নয়ন ঘটাতে পারি এবং বন্ধুত্বের চেয়ে প্রতিবেশীর ঘনিষ্ঠ ব্রাদারলি রিলেশনকে আমরা গুরুত্বপূর্ণ মনে করি।”

তিনি আরও জানান, ’৭৫-এর পর বাংলাদেশ ও চীনের কূটনৈতিক সম্পর্কের বিষয়টি স্মরণ করা হয় এবং জামায়াত নেতাদের ওপর অতীতে চালানো দমন-পীড়ন, কারাবন্দি অবস্থায় হত্যাসহ নিবন্ধন বাতিল ও কার্যালয় বন্ধের বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়।

পরওয়ার বলেন, ছাত্রজনতার আন্দোলনের মাধ্যমে আগের সরকার বিদায় নিয়েছে, তবে তাদের ষড়যন্ত্র থেমে থাকেনি। বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট, রাজনীতি, নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। জামায়াত আমির বাংলাদেশের অর্থনীতি, ব্যাংকিং খাত, দুর্নীতি ও অর্থপাচারের বাস্তব চিত্র তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামী একটি নির্বাচনমুখী গণতান্ত্রিক ইসলামিক দল। জামায়াত আমির চীনা প্রতিনিধিদের বলেন, “সকল গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে ইতোপূর্বে জামায়াতে ইসলামী অংশগ্রহণ করেছে এবং আমরা প্রত্যেক পার্লামেন্টে নির্বাচিত হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছি। জামায়াতে ইসলামী ধর্ম-বর্ণ-নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলের সমান মর্যাদা এবং মানবিক, সাংবিধানিক ও রাজনৈতিকসহ সকল অধিকারকে আমরা মেইনটেইন করে পথ চলি।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা শাসক হবো না, আমরা সেবক হবো। সকলেই সমতার ভিত্তিতে অধিকার ভোগ করবেন।” তিনি জানান, বাংলাদেশে চীনের এক্সপোর্ট প্রসেসিংসহ অর্থনৈতিক বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরি হচ্ছে।

চীনা প্রতিনিধি দল তাদের সফরে জামায়াত আমিরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পেরে সম্মানিত বোধ করেছেন বলে জানান এবং জামায়াতের প্রতিনিধি দলকে চীনের ৫০তম বার্ষিকী উদযাপনে অংশগ্রহণের জন্য ধন্যবাদ জানান। জামায়াত আমির বলেন, “চায়নাসহ সব প্রতিবেশীর সঙ্গে আমরা সুসম্পর্ক রক্ষা করে চলতে চাই।”

প্রতিনিধি দল জানান, চীনে ১৯৪৯ থেকে ২০৪৯ সাল পর্যন্ত সময়জুড়ে আধুনিকায়ন প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে এবং প্রতি পাঁচ বছরে উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে চীন। এর প্রেক্ষিতে জামায়াত আমির বলেন, “আন্তর্জাতিক পরিবেশে আমরা যৌথ পার্টনারশীপের ভিত্তিতে উন্নয়ন ও অগ্রগতি করতে চাই।”

পরওয়ার জানান, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে পারস্পরিক অগ্রগতি সম্ভব। চীনা প্রতিনিধিরা পার্টি টু পার্টি সম্পর্ক, মতবিনিময় এবং স্ট্র্যাটেজিক ডায়ালগকে গুরুত্ব দেন। জামায়াত আমির তাদের ধন্যবাদ জানান।

সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, তারা আগামি নির্বাচনে জামায়াতের প্রস্তুতি জানতে চেয়েছেন। আমির জানান, “আমরা সবসময় নির্বাচনমুখী দল। আমাদের নির্বাচনের প্রস্তুতি আছে। আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণের যাবতীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করছি।”

মানবাধিকার প্রসঙ্গে জামায়াত আমির বলেন, “বিশ্বজুড়ে যেখানে যেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে, বিশেষ করে ফিলিস্তিন, গাজা, সিরিয়া, ইরাক, মায়ানমার, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ; এসব ক্ষেত্রে চায়নার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে।” তিনি বলেন, “আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা রাখা উচিত।”

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×