
রাজধানীতে ফ্লাইওভারের ঢালে বাসের ধাক্কায় পুুলিশের এসআই নিহত
রাজধানীর খিলগাঁও ফ্লাইওভারের ঢালে বাসের ধাক্কায় কামরুল ইসলাম (৩৭) নামে পুলিশের একজন উপ-পরিদর্শক (এসআই) নিহত হয়েছেন। তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মতিঝিল থানায় কর্মরত ছিলেন। সোমবার (২ জুন) রাত সাড়ে ৮টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। পরে তাকে উদ্ধার করে কাকরাইলের ইসলামী ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। শাজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বাসাবো এলাকার বাসা থেকে মোটরসাইকেলে কর্মস্থল মতিঝিল থানায় যাচ্ছিলেন এসআই কামরুল ইসলাম। পথে খিলগাঁওয়ের খলিলের গোস্তের দোকানের বিপরীত পাশের সড়কে পৌঁছালে বাসের ধাক্কায় তিনি মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে রাস্তায় পড়ে যান। গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে নিলে রাত সাড়ে ৯টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এসআই কামরুল ইসলাম খিলগাঁওয়ের বাসাবো এলাকার একটি ভাড়া বাসায় পরিবার নিয়ে থাকতেন৷ তার গ্রামের বাড়ি নেত্রকোণা সদর থানায়। ওসি জাহাঙ্গীর হোসেন জানিয়েছেন, নিহত পুলিশ সদস্যের মরদেহ মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রাখা হয়েছে। এ ঘটনায় ঘাতক বলাকা পরিবহন বাসটি জব্দ করা হয়েছে। বাসের চালক জাহাঙ্গীর আহমেদ টিপুকে আটক করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

সমৃদ্ধির পথে যেতে জাতীয় ঐক্য বজায় রাখতে হবে : প্রধান উপদেষ্টা
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে জোরালো জাতীয় ঐকমত্য বজায় রাখার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তিনি বলেন, ‘আসুন, আমরা আমাদের ঐক্য জোরদার করি... যাতে আমরা সামনে একটি পথ খুঁজে পাই এবং দৃঢ়ভাবে এগিয়ে যেতে পারি।’ সোমবার (২ জুন) সন্ধ্যায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐক্য কমিশনের এক সংলাপের সমাপনী বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এই বৈঠকের প্রধান উদ্দেশ্য হলো ঐক্য বজায় রাখা। তিনি বলেন, ‘ঐক্য রক্ষা ও সুদৃঢ় করা সম্পর্কে আপনাদের পরামর্শ শুনলাম।’ অধ্যাপক ইউনূস বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এই সংলাপ চলবে যাতে জনগণের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী জুলাই সনদ আরও সমৃদ্ধ করা যায় এবং কোন কোন বিষয়ে আমরা ঐকমত্যে পৌঁছেছি’ তা দেশবাসী দেখতে পায়। সকাল বেলা উদ্বোধনী বক্তব্যে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই সনদ ঘোষণা করা হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই আজ দেশের কল্যাণের জন্য এখানে সমবেত হয়েছি...আমরা আশা করি সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ঐকমত্যে পৌঁছে একটি খুব সুন্দর জুলাই ঘোষণাপত্র তৈরি করতে পারব।’ প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সরকার আশা করছে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দূরত্ব কমিয়ে জুলাই সনদ ঘোষণা করতে পারবে। কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ইউনূস বলেন, তিনি খুব খুশি যে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি জাতীয় ঐক্যের লক্ষ্যে এই সংলাপে অংশ নিয়েছেন। কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক আলী রিয়াজ বলেন, কমিশনের মেয়াদ ২০২৫ সালের আগস্টে শেষ হওয়ার কথা থাকায় আগামী জুলাইয়ের জুলাই সনদ ঘোষণা করতে কমিশন কাজ অব্যাহত রাখবে। তিনি বলেন, ‘আমাদের ওপর অর্পিত পবিত্র দায়িত্ব সফলভাবে সম্পন্ন করতে হবে।’ আজ ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় দফা সংলাপ শুরু হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি এবং সংস্কার প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী অংশীদাররা সংলাপে অংশ নেন। এই কমিশন সংবিধান, বিচার ব্যবস্থা, নির্বাচনী প্রক্রিয়া, সরকারি প্রশাসন ও দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিশন সংক্রান্ত পাঁচটি মূল সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনা পর্যালোচনা ও চূড়ান্ত করার জন্য গঠিত হয়েছে। ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৯ মে পর্যন্ত প্রথম দফার আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। তখন ৩৩টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

স্বরাষ্ট্রের সুরক্ষা সেবা বিভাগে বরাদ্দ কমানোর প্রস্তাব
ঘোষিত বাজেটে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগে বরাদ্দ কমানোর প্রস্তুব দেওয়া হয়েছে। সোমবার (২ জুন) ঘোষিত বাজেটে এই বিভাগের জন্য ৪ হাজার ৩৮ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। বিদায়ী অর্থবছরে এই বিভাগে বরাদ্দ প্রস্তাব ছিল ৪ হাজার ১৩৬ কোটি টাকা। এতে ৯৮ কোটি টাকা বরাদ্দ কমেছে। সুরক্ষা সেবা বিভাগের অধীনে কারাগার, ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স, ইমিগ্রেশন অ্যান্ড পাসপোর্ট অধিদপ্তর ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর রয়েছে। এবারের বাজেটে কারা অধিদপ্তরের জন্য ১ হাজার ৪১৫ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে। যদিও ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এই বরাদ্দ ছিল এক হাজার ৪৩৪ কোটি টাকা। ঘোষিত বাজেটে ১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ কমানো হয়েছে। অবশ্য এবারের বাজেটে ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগার সম্প্রসারণ ও আধুনিকীকরণ প্রকল্প, পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারের ইতিহাস, ঐতিহাসিক ভবন সংরক্ষণ ও পারিপার্শ্বিক উন্নয়ন প্রকল্প, কুমিল্লা ও জামালপুর জেলা কারাগার পুনর্নির্মাণ প্রকল্প এবং নরসিংদী জেলা কারাগার নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি রয়েছে। এছাড়াও ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরে এবার অন্তত ২শ’ কোটি টাকার মতো বরাদ্দ কমানোর প্রস্তাব এসেছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে পাসপোর্টে বরাদ্দ ছিল ১ হাজার ৪২০ কোটি টাকা। সোমবার ঘোষিত বাজেটে এই খাতে প্রস্তাব করা হয়েছে ১ হাজার ২০৬ কোটি টাকা। যদিও এবার ‘বাংলাদেশ ই-পাসপোর্ট ও স্বয়ংক্রিয় বর্ডার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা প্রবর্তন প্রকল্প’ বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সে এবার বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে ৮৯৩ কোটি টাকা। বিদায়ী অর্থবছরে এই বরাদ্দ ছিল ৮৩১ কোটি টাকা। অর্থাৎ এবার এই খাতে অন্তত ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এবারের বাজেটে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের অ্যাম্বুলেন্স সেবা সম্প্রসারণের কথা বলা হয়েছে। ঘোষিত বাজেটে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের জন্য এবার ৩৩৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, বিদায়ী অর্থবছরে এই বরাদ্দ ছিল ৩৩৩ কোটি টাকা। এই খাতেও সামান্য বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। এবার ঢাকা কেন্দ্রীয় মাদকাসক্তি নিরাময় সম্প্রসারণ ও আধুনিকীকরণ প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে।

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭.৪ বিলিয়ন ডলার: অর্থ উপদেষ্টা
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম বাজেট বক্তৃতায় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, প্রবাসী আয় ও রপ্তানি স্থিতিশীল থাকায় এপ্রিল মাসে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি পেয়ে ২৭.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। যা বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তিনি বলেন, ‘মূল্যস্ফীতির নিম্নমুখী ধারা অব্যাহত রাখতে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখা জরুরি। আর তা নিশ্চিত করতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল রাখাও অপরিহার্য। আজ বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপনকালে এ কথা বলেন তিনি। ড. সালেহউদ্দিন আরো বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানোর বিষয়ে আমরা শুরু থেকেই বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছি। বর্তমানে দেশের আমদানি নির্ভর মূল্যস্ফীতির প্রভাব কিছুটা কম। কারণ টাকা’র বিনিময় হার স্থিতিশীল এবং যেসব দেশ থেকে বাংলাদেশ পণ্য আমদানি করে সেসব দেশে মূল্যস্ফীতি তুলনামূলকভাবে কম। এই স্থিতিশীলতার কারণে আমরা চলতি বছরের ১৪ মে থেকে বাজারভিত্তিক বিনিময় হার চালু করতে সক্ষম হয়েছি।

প্রতিরক্ষা খাতে ১৩০০ কোটি টাকার ওপরে বরাদ্দ কমছে
২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে প্রতিরক্ষা খাতে বরাদ্দ কমেছে। বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের তুলনায় ১ হাজার ৩১৬ কোটি টাকা বরাদ্দ কমেছে। সোমবার (২ জুন) অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপনকালে এসব তথ্য জানা যায়। অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ৪০ হাজার ৬৯৮ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। এর আগে যা ছিল ৪২ হাজার ১৪ কোটি টাকা। তিনি আরও বলেন, এ বাজেটের মধ্যে প্রতিরক্ষা সার্ভিসের পরিচালন ব্যয় বাবদ ৩৭ হাজার ৮১২ কোটি টাকা এবং উন্নয়ন ব্যয়ের জন্য ৯১৬ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। বাজেটে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অন্যান্য সার্ভিসের জন্য পরিচালন ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৯২৩ কোটি টাকা। সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের পরিচালন ব্যয় বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে ৪৭ কোটি টাকা। প্রস্তাবিত ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ৯ শতাংশ। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এর মাধ্যমে ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা এবং অন্যান্য উৎস থেকে ৬৫ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেট ঘাটতি ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা। এই ঘাটতি পূরণে সরকার বৈদেশিক ঋণ, ব্যাংক ঋণ এবং সঞ্চয়পত্রের ওপর নির্ভর করবে। এবারের বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় এবং অবকাঠামো উন্নয়নে জোর দেওয়া হয়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম লক্ষ্য অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন: অর্থ উপদেষ্টা
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম লক্ষ্য হলো একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করা এবং গণতান্ত্রিক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর। সোমবার ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট বক্তৃতায় অর্থ উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। তার এই বক্তৃতা বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। অর্থ উপদেষ্টা বলেন, গত দেড় দশকে দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে ফেলা হয়েছে। তাই আমরা নির্বাচনি ব্যবস্থার সংস্কারের ওপর সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রদান করেছি এবং এ লক্ষ্যে বিভিন্ন আইন, নীতিমালা ও আদেশ সংশোধন এবং সংস্কারের কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। তিনি বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের প্রস্তুতির লক্ষ্যে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ইতোমধ্যে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা হয়েছে। নির্বাচন ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা এবং যথাযথ তথ্য বিশ্লেষণ নিশ্চিত করতে জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সিস্টেম (জিআইএস) প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। এদিকে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জন্য ২ হাজার ৭২৫ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। গত বছরে এই খাতে বাজেটের পরিমাণ ছিল ৭৯৩ কোটি টাকা, যা সংশোধিত বাজেটে দাঁড়িয়েছিল ৭১৬ কোটি টাকা।

সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বাড়তে পারে ১৫-২০ শতাংশ
২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের জন্য বিশেষ সুবিধা বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। সোমবার (২ জুন) জাতীয় বাজেট উপস্থাপনকালে অর্থ উপদেষ্টা এ ঘোষণা দেন। এতে সরকারি চাকরিজীবিদের বেতন বাড়তে পারে ১৫-২০ শতাংশ বলে জানা গেছে। অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ২০১৫ সালের পর থেকে কোনো বেতন কাঠামো না হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সরকারি কর্মচারীদের বিশেষ সুবিধা বাড়ানোর প্রস্তাব করছি। তবে এই বিশেষ সুবিধা কতটা বাড়ানো হবে তা বাজেট বক্তৃতায় উল্লেখ করা হয়নি। বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা মূল বেতনের ৫ শতাংশ বিশেষ সুবিধা পান। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটেও সাবেক অর্থমন্ত্রী মাহমুদ আলীও বিশেষ সুবিধা ঘোষণা করেছিলেন। বাজেটের পরে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী সরকারি কর্মচারীদের উদ্দেশ্যে নিয়মিত ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের সঙ্গে আরও ৫% বিশেষ সুবিধা ঘোষণা করেন। ২০১৫ সাল থেকে সরকারি চাকরিজীবীরা প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট পেয়ে আসছেন। তবে গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে, ২০২৩ সালের জুলাই থেকে বার্ষিক ইনক্রিমেন্টের পাশাপাশি অতিরিক্ত ৫ শতাংশ হারে বিশেষ প্রণোদনাও চালু করে আওয়ামী লীগ সরকার। এই বিশেষ প্রণোদনা এখনও অব্যাহত আছে। অর্থবিভাগের একাধিক কর্মকর্তা সমকালকে জানিয়েছেন, আগামী বাজেটে ১ম থেকে ৯ম গ্রেডের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ১৫ শতাংশ এবং ১০ম থেকে ২০তম গ্রেডভুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ২০ শতাংশ মহার্ঘ্য ভাতা (বিশেষ সুবিধা) পেতে পারেন । আগামী ১ জুলাই থেকে সরকারি চাকরিজীবীরা এ সুবিধা পাবেন। প্রতিবছর কর্মচারীদের যে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি (ইনক্রিমেন্ট) হয়, সেখানে কারো ৩.৭৫ শতাংশ, কারো ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। সরকারি চাকরিজীবীদের জাতীয় বেতন স্কেল পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গ্রেড-১ কর্মকর্তাদের জন্য প্রতি মাসে ৭৮ হাজার টাকা বেতন নির্ধারিত। একইভাবে মন্ত্রিপরিষদসচিব, মুখ্য সচিব ও সমমর্যাদার পদের বেতন ৮৬ হাজার টাকা এবং জ্যেষ্ঠ সচিব ও সমমর্যাদার পদের বেতন ৮২ হাজার টাকা নির্ধারিত। প্রতিবছর বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি (ইনক্রিমেন্ট) হয় গ্রেড-২ পদে ৩.৭৫ শতাংশ, গ্রেড-৩ ও ৪ পদে ৪ শতাংশ, গ্রেড-৫ পদে ৪.৫ শতাংশ, গ্রেড-৬ থেকে ২০ পর্যন্ত পদে ৫ শতাংশ করে। জানা যায়, বাজেটে বেতন-ভাতার জন্য ৮০–৯০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ থাকবে। ১৫ শতাংশ মূল বেতন বৃদ্ধি হলে ছয় হাজার কোটি এবং ২০ শতাংশে আট হাজার কোটি টাকা বাড়তি প্রয়োজন হবে। তবে বেতন বৃদ্ধির হার কত হতে পারে, তা নিয়ে এখনো কোনো আলোচনা হয়নি।

রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দূরত্ব কমিয়ে এনে জুলাই সনদ ঘোষণা করা সম্ভব: প্রধান উপদেষ্টা
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্যে পৌঁছানোর মাধ্যমে জুলাই সনদ ঘোষণা করা হবে। তিনি বলেন, “আমরা সবাই আজ এখানে দেশ ও জাতির কল্যাণে একত্রিত হয়েছি। আশা করি, সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ঐকমত্যে পৌঁছে আমরা একটি অত্যন্ত সুন্দর জুলাই সনদ প্রস্তুত করতে পারব।” সোমবার (২ জুন) বিকালে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় দফা সংলাপের উদ্বোধনী বক্তব্যে এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি আরও বলেন, সরকার আশা করে যে, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দূরত্ব কমিয়ে এনে জুলাই সনদ ঘোষণা করা সম্ভব হবে। প্রধান উপদেষ্টা নিজে ঐকমত্য কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। অধ্যাপক ইউনূস বলেন, তিনি খুব খুশি যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তুলতে এই সংলাপে অংশগ্রহণ করেছেন। কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রিয়াজ বলেন, “কমিশনের মেয়াদ ২০২৫ সালের আগস্টে শেষ হচ্ছে এবং এর আগেই জুলাই মাসে জুলাই সনদ ঘোষণা করতে কমিশন নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।”তিনি বলেন, “আমাদের ওপর অর্পিত এই পবিত্র দায়িত্ব পালনে অবশ্যই সফল হতে হবে।”জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় দফা সংলাপ সোমবার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে শুরু হয়েছে।সংলাপে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংস্কার প্রক্রিয়ায় জড়িত অংশীজনরা অংশগ্রহণ করেন। উল্লেখ্য, সংবিধান, বিচারব্যবস্থা, নির্বাচন ব্যবস্থা, সরকারি প্রশাসন এবং দুর্নীতি দমন কমিশন সংক্রান্ত পাঁচটি মূল সংস্কার কমিশনের সুপারিশ পর্যালোচনা ও চূড়ান্তকরণের জন্য এই কমিশন গঠন করা হয়। প্রথম দফার সংলাপ ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৯ মে পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সময়ে ৩৩টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক হয়। সূত্র: বাসস

ব্রডব্যান্ডের জন্য উৎসে কর ৫ শতাংশ কমানোর প্রস্তাব
প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটে ব্রডব্যান্ড পরিষেবা প্রদানকারীদের ওপর উৎসে করের হার বিদ্যমান ১০ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে কমানোর সুপারিশ করা হয়েছে। সোমবার (২ জুন) অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য বাজেট প্রস্তাবনায় এই ঘোষণা দেন। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের তথ্য অনুসারে, বর্তমানে বাংলাদেশে ১.৪ কোটি ব্রডব্যান্ড ব্যবহারকারী রয়েছে। সারাদেশে ৩ হাজারের বেশি ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানকারী এ পরিষেবা প্রদান করে।

যেসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে
২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বেশ কিছু পণ্যের শুল্ক-কর বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। অর্থ উপদেষ্টা সোমবার (২ জুন) ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেট বক্তৃতায় শুল্ক-কর বাড়ানোর প্রস্তাব করেন। তাঁর এ বক্তৃতা বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতার সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। বাজেটে যেসব শুল্ক-কর প্রস্তাব করা হয়, তা তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হয়। ফলে শুল্ককর বাড়লে দাম বেড়ে যেতে পারে। সাধারণত শুল্ক-কর বৃদ্ধির প্রভাব বাজারে দ্রুত পড়ে। কমানোর প্রভাব পড়তে দেরি হয়। যেসব দাম বাড়তে পারে- মুঠোফোন: দেশে মুঠোফোন উৎপাদন ও সংযোজনে মূল্য সংযোজন কর (মূসক/ভ্যাট) অব্যাহতি সুবিধা কিছুটা কমানো হয়েছে এবং মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা কমানোয় মুঠোফোনের দাম বাড়তে পারে। ওয়াশিং মেশিন, ব্লেন্ডার: ওয়াশিং মেশিন, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, ব্লেন্ডার, জুসার, আয়রন, রাইস কুকার, প্রেসার কুকার ইত্যাদি উৎপাদনে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা কিছুটা কমানো হয়েছে। প্লাস্টিকের তৈজসপত্র: থালাবাসনসহ প্লাস্টিকের তৈজসপত্র, গৃহস্থালি সামগ্রী ও সমজাতীয় পণ্যে ভ্যাটের হার দ্বিগুণ, অর্থাৎ ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। পরিবেশবান্ধব তৈজসপত্রে ভ্যাট ছাড় দেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার: তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) সিলিন্ডারে স্থানীয় পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতির সুবিধা কিছুটা কমিয়ে মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। এতে এলপিজি সিলিন্ডারের দাম বাড়তে পারে। বিদেশি চকলেট: বিদেশি চকলেটের শুল্কায়ন মূল্য বাড়ানো হয়েছে। ইউনিটপ্রতি চার ডলারের বদলে এখন ১০ ডলার ধরে শুল্কায়ন হবে। এতে আমদানিতে খরচ বাড়বে। লিপস্টিক: ঠোঁট, চোখ ও মুখমণ্ডলে ব্যবহৃত প্রসাধন আমদানিতে শুল্কায়ন মূল্য অনেকটাই বাড়ানো হয়েছে। ফলে এসব পণ্য আমদানি থেকে বাড়তি কর আদায় হবে। দামও বেড়ে যেতে পারে। ব্লেড: ব্লেড উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট আড়াই শতাংশ বাড়িয়ে সাড়ে সাত শতাংশ করা হয়েছে।

মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশে নামার প্রত্যাশা
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, মূল্যস্ফীতি ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসের ১০ দশমিক ৮৯ শতাংশ থেকে হ্রাস পেয়ে গত এপ্রিল মাসে ৯ দশমিক ১৭ শতাংশে নেমে এসেছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি জুন মাসেই পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশের কোঠায় নেমে আসবে। মূল্যস্ফীতির সঙ্গে এ লড়াইয়ের ফলে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার অন্যান্য বছরের তুলনায় কিছুটা কম হতে পারে। সোমবার জাতীয় বাজেট বক্তৃতায় তিনি এসব তথ্য জানান। মধ্যমেয়াদী নীতি-কৌশল বিষয়ে আলোচনা করার সময় তিনি বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, ভেঙে পড়া আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি, শ্রমিক অসন্তোষ কমিয়ে শিল্প খাতে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনা বিরাট চ্যালেঞ্জ ছিল। বিগত সরকারের সময়ে লাগামহীন দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার ফলে চরম সংকটাপন্ন ব্যাংকিং খাতের শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারের মতো কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে। তিনি বলেন, প্রবাসী আয়ের আশাব্যঞ্জক অগ্রগতি, রপ্তানি আয়ের ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি, কৃষি ও শিল্প খাতের উৎপাদন অব্যাহত থাকা এবং সঠিক মুদ্রা ও রাজস্বনীতির সমন্বিত প্রয়োগের সুফল আমরা পাচ্ছি। ইতোমধ্যে কাঙ্ক্ষিত স্থিতিশীলতা অর্জনে অনেকদূর এগিয়েছে দেশ। তবে অর্থনীতিকে স্বাভাবিক গতিতে ফিরিয়ে আনার পথে এখনও বেশকিছু ঝুঁকি রয়েছে। উপদেষ্টা বলেন, গত বছরের আগস্ট মাসে অন্তর্বর্তী সরকার যখন দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেয়, তখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল নিয়ন্ত্রণহীন মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরে মানুষকে স্বস্তি দেওয়া। এ লক্ষ্যে বিগত মাসগুলোতে আমরা ধারাবাহিকভাবে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অবলম্বন করেছি। এতে নীতি সুদের হার ১৫০ বেসিস পয়েন্ট বেড়ে এখন ১০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। মুদ্রানীতির আওতায় গৃহীত কার্যক্রমকে সহায়তা করতে সংকোচনমূলক রাজস্বনীতি অনুসরণ করা হয়েছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমিয়ে আনায় সার্বিকভাবে সরকারি ব্যয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পেয়েছে। এর ইতিবাচক প্রভাব দৃশ্যমান হয়ে উঠতে শুরু করেছে। আশার কথা হলো, এবারের রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে স্থিতিশীল ছিল। তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতির নিম্নমুখী ধারা অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল থাকা জরুরি। এটি নিশ্চিত করতে হলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল থাকা অত্যাবশ্যক। প্রবাসী আয়ের প্রবৃদ্ধি আশাব্যঞ্জক হওয়ায় এবং রপ্তানি স্থিতিশীল থাকায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এপ্রিল মাসে বৃদ্ধি পেয়ে ২৭ দশমিক ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। যা টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এ কারণে আমরা গত ১৪ মে বাজারভিত্তিক মুদ্রাবিনিময় হার চালু করেছি।

স্থানীয় সরকার খাতে ৪২ হাজার ৪৩৩ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব
২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে স্থানীয় সরকার খাতে ৪২ হাজার ৪৩৩ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। গত বছরে এই খাতে বাজেটের পরিমাণ ছিল ৪৫ হাজার ২০৫ কোটি টাকা। সোমবার (২ জুন) সচিবালয়ে নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে এই প্রস্তাব পেশ করেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, আগামী অর্থবছরে স্থানীয় সরকার খাতে ৪২ হাজার ৪৩৩ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব পেশ করছি, যা ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ছিল ৪৫ হাজার ২০৫ কোটি টাকা আর সংশোধিত বাজেটে গিয়ে তা দাঁড়ায় ৪২ হাজার ৩৫৭ কোটি টাকা। অর্থ উপদেষ্টা বলেন, যাতায়াত ও পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন, প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা প্রদান, পরিবেশ উন্নয়ন, সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার আওতায় জনগণকে সেবা প্রদান করা হচ্ছে। আধুনিক নগর ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন শহরে সড়ক অবকাঠামো উন্নয়ন, নিরাপদ পানি সরবরাহ, ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নয়ন, আধুনিক পয়ঃনিষ্কাশন ও প্রাথমিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি গ্রহণ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, সমগ্র দেশের গ্রামাঞ্চলে নিরাপদ পানির উৎস নির্মাণ, পাইপলাইনের মাধ্যমে পানি সরবরাহ, পানি শোধনাগার স্থাপন, সমগ্র দেশে কমিউনিটি অথবা স্যানিটারি ল্যাট্রিন নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ, ভূ-গর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমিয়ে আনা এবং ভূপৃষ্ঠস্থ পানির ব্যবহার বৃদ্ধি এবং প্রতিটি বাড়িকে স্বাস্থ্যসম্মত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার আওতায় আনার কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে।

শাহ সিমেন্টকে কালো তালিকাভুক্তির দাবি টিআইবির
ধলেশ্বরী ও শীতলক্ষ্যা নদীর মোহনায় পরিবেশ সংরক্ষণ ও নদী রক্ষাসংক্রান্ত আইন লঙ্ঘন করে দীর্ঘদিন অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। রোববার (০১ জুন) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে শাহ সিমেন্টকে দৃষ্টান্তমূলক জবাবদিহির প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে অবিলম্বে কালো তালিকাভুক্ত করে নদী দুটিকে দখলমুক্ত করতে আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়,মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার মীরেরসরাই মৌজায় শাহ সিমেন্ট কোম্পানি প্রায় ২৪ একর নদীর জমি বালু ও মাটি ফেলে ভরাট করেছে। ফলে নদীর স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়েছে এবং নদীর শ্রেণি পরিবর্তন হয়েছে। দখল করা জমিতে গড়ে ওঠা স্থাপনা ধলেশ্বরী ও শীতলক্ষ্যার পানিপ্রবাহে বিঘ্ন সৃষ্টি করছে। এছাড়া, কারখানার তরল ও কঠিন বর্জ্য নদীতে ফেলার ফলে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ক্লিংকার ধুলো বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে নদীতে গিয়ে মিশে পরিবেশ দূষণ করছে। এতে আরও বলা হয়, মুন্সিগঞ্জ জেলা প্রশাসন এবং জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন (এনআরসিসি) ২০১৮, ২০১৯ ও ২০২৩ সালে প্রতিষ্ঠানটিকে ‘দখলদার’ হিসেবে চিহ্নিত করলেও এখন পর্যন্ত নদী রক্ষায় সরকার কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। শাহ সিমেন্ট শুধু জবাবদিহিতা ছাড়াই স্বাধীনভাবে নদীখেকো ব্যবসায় লিপ্ত রয়েছে তাই নয়, জনগণের অর্থে পরিচালিত বিভিন্ন প্রকল্পে নির্বিকারভাবে ঠিকাদার হিসেবে মুনাফা করে যাচ্ছে। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান শাহ সিমেন্ট কর্তৃক নদী দখলের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, ‘নদী দখল করে দুটি নদী ধ্বংসের এই কার্যক্রম কোনো যুক্তিতেই মেনে নেওয়ার সুযোগ নেই। এ ধরনের কার্যক্রম কেবল নদীর নাব্যতা ধ্বংস করছে না, বরং দেশের পরিবেশগত ভারসাম্য ও নদী-নির্ভর জনজীবনকেও চরম ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। নদীর স্বাভাবিক গঠন নষ্ট করে বন্যা, নদীভাঙন, পানি সংকট ও জলপ্রবাহজনিত সমস্যা বহুগুণে বাড়াচ্ছে। যার প্রভাব দেশের অর্থনীতি ও মানুষের জীবনমানের ওপর পড়ছে। ২০১৯ সালে হাইকোর্টের যুগান্তকারী রায়ে বাংলাদেশের মধ্যে এবং বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত সব নদ-নদীকে আইনি সত্তা (রিসটিক পারসন / লিগ্যাল পারসন) বা জীবন্ত সত্তা (লিভিং এনটিটি) হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এর অর্থ হলো, নদী হত্যা যে কোনো ব্যক্তি হত্যার শামিল। এমন বাস্তবতায়ও এই নদীখেকো প্রতিষ্ঠানটি বালু ও মাটি ফেলে মোহনায় জমি ভরাট করছে, যা স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত করে নদীকেই মেরে ফেলছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা মনে করি, নদীখেকো এই প্রতিষ্ঠান কোনোভাবেই রাষ্ট্র তথা সরকারের সঙ্গে কোনো ব্যবসায়িক সম্পর্ক করার অধিকার রাখেনা। শাহ সিমেন্টকে দৃষ্টান্তমূলক জবাবদিহির আওতায় আনার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে সব ধরনের সরকারি কার্যাদেশ, লাইসেন্স ও আর্থিক প্রণোদনা থেকে বঞ্চিত রাখতে অবিলম্বে কালো তালিকাভুক্তির আহ্বান জানাই আমরা।’ ড. জামান শাহ সিমেন্টের সঙ্গে সকল ব্যবসায়িক সম্পর্ক বাতিল করে এ প্রতিষ্ঠানকে ব্যবসায়িক বয়কটের দৃষ্টান্ত স্থাপনের আহ্বান জানিয়েছেন দেশের ব্যবসায়ীদের প্রতি। তিনি বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে যে ‘নতুন বাংলাদেশ’-এর স্বপ্ন সৃষ্টি হয়েছে, সেখানে এই দখলদারিত্বের কোনো স্থান নেই।’

প্রস্তাবিত বাজেটে মানুষের স্বস্তি, কর্মসংস্থান ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের প্রস্তাবনা
প্রবৃদ্ধি-কেন্দ্রিক ধারণা থেকে সরে এসে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দেশের সাধারণ মানুষকে স্বস্তি প্রদান, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সামগ্রিক অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করেছে। সোমবার (২ জুন) বিকেলে অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার এই প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করেন। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতার অর্থ উপদেষ্টার প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা সরাসরি সম্প্রচার করে। বাজেট ঘোষণায় অর্থ উপদেষ্টা বলেন, সামগ্রিক উন্নয়নের ধারণায় জোর দিয়ে দেশের ইতিহাসে এই প্রথমবারের মত অর্থনীতির গতি পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে কর-জিডিপি অনুপাত বৃদ্ধির বাজেট ঘোষণা করা হচ্ছে। বাজেট বক্তৃতায় অর্থ উপদেষ্টা বলেন, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে এনে একটি উন্নত সমাজ বিনির্মাণের উদ্দেশ্যে আমরা যে সব কার্যক্রম গ্রহণ করেছি, তার মূল লক্ষ্য হচ্ছে শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব এবং শূন্য কার্বনভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণ। যার মাধ্যমে আমূল পরিবর্তন হবে এ দেশের মানুষের জীবনমানের এবং বৈষম্যের দুষ্টচক্র থেকে মুক্তি মিলবে। যে স্বপ্নকে ধারণ করে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ভিত রচিত হয়েছিল। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে আগামী প্রজন্মের জন্য আমরা একটি সুন্দর, বাসযোগ্য আবাসস্থল রেখে যেতে চাই। জনগণের জীবনযাত্রায় নিয়ে আসতে চাই এক সুদূরপ্রসারী পরিবর্তনের ঢেউ। আমরা সে লক্ষ্যকে সামনে রেখে এবারের বাজেট সাজাবার চেষ্টা করেছি। বাজেট বক্তৃতায় অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আমাদের এবারের বাজেট কিছুটা ব্যতিক্রমধর্মী। আমরা বিগত বাজেটের চেয়ে ছোট আকারের বাজেট আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাব করছি। মধ্যমেয়াদে অর্থনীতির গতি পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে কর-জিডিপি অনুপাত বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই। অথচ তুলনীয় অনেক দেশের চাইতে বাংলাদেশের কর-জিডিপি অনুপাত উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কম। রাজস্ব খাতকে আরও গতিশীল করতে এবং রাজস্ব আহরণে স্বচ্ছতা বৃদ্ধি করতে ইতোমধ্যে আমরা বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। অটোমেটেড ব্যবস্থার মাধ্যমে আয়কর রিটার্ন দাখিল সহজ করা হয়েছে, কর আদায় বৃদ্ধির লক্ষ্যে নতুন নতুন কর অফিস স্থাপন করা হচ্ছে এবং কর আহরণের মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদি রাজস্ব কৌশল তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া, কর ব্যবস্থাপনাকে আরও কার্যকর এবং কর আদায়ের দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে রাজস্ব ব্যবস্থাপনাকে রাজস্ব নীতি হতে পৃথক করার লক্ষ্যে অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে। বাজেট বক্তৃতায় তিনি বলেন, বিগত সরকারের সময়ে আর্থিক খাতে নজিরবিহীন লুটপাট এবং দুর্নীতির ফলে খেলাপি ঋণ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পেলেও তা বারবার পুনঃতফশিলিকরণের মাধ্যমে আর্থিক খাতের প্রকৃত অবস্থা গোপন রাখা হয়েছিল। কিন্তু আমরা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী লোন লিজ ক্লাসিফিকেশন ও প্রভিশনিং ব্যবস্থা অবলম্বন করেছি। ফলে এ খাতে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২০২৩ সালের জুন মাসের ১০ দশমিক ১১ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে ২০ দশমিক ২০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। এ খাতের প্রকৃত চিত্র উদঘাটনের লক্ষ্যে এসেট কোয়ালিটি রিভিউ-এর মাধ্যমে ব্যাংকগুলোর প্রকৃত অবস্থা নিরুপণের কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। তিনি বলেন, দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মত আমরা বিগত বাজেটের চেয়ে ছোট আকারের বাজেট আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাব করছি। প্রবৃদ্ধি-কেন্দ্রিক ধারণা থেকে সরে এসে আমরা চেষ্টা করেছি সামগ্রিক উন্নয়নের ধারণায় জোর দিতে। তাই প্রথাগত ভৌত অবকাঠামো তৈরির খতিয়ান তুলে ধরার পরিবর্তে আমরা এবারের বাজেটে প্রাধান্য দিয়েছি মানুষকে। মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা, সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা, জীবিকার নিরাপত্তা এবং বৈষম্যহীন পরিবেশ—এ অত্যাবশ্যক উপাদানগুলো ছাড়া যে কোন রাষ্ট্র অকার্যকর হয়ে পড়ে, দুর্বল হয় সমাজের ভিত। এবারের বাজেটে তাই শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সুশাসন, নাগরিক সুবিধা, কর্মসংস্থান ইত্যাদি বিষয়ের উপর বিশেষ জোর দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি, চতুর্থ শিল্পবিপ্লব, স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্রমাগত যে সব সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে তার সুবিধা ভোগ এবং যে সব চ্যালেঞ্জ তৈরি হচ্ছে তা মোকাবিলা করে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করার দিকেও মনোযোগ দেয়া হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার কাছে নতুন ৬ নোটের ছবি হস্তান্তর
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে নতুন ছয় ব্যাংক নোটের ছবি হস্তান্তর করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। এসময় উপদেষ্টা পরিষদের কয়েকজন সদস্য তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন। সোমবার (২ জুন) তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের সভা শেষে নতুন এই নোটের ছবি হস্তান্তর করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নরসহ এসময় অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ, আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা ও স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে নতুন নকশা করা ছয়টি ব্যাংক নোটের ছবি হস্তান্তর করেন।

প্রধান উপদেষ্টার কাছে ৬টি নতুন নোটের ছবি হস্তান্তর
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে নতুন ছয় ব্যাংক নোটের ছবি হস্তান্তর করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। এসময় উপদেষ্টা পরিষদের কয়েকজন সদস্য তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন। সোমবার (২ জুন) তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের সভা শেষে নতুন এই নোটের ছবি হস্তান্তর করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নরসহ এসময় অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ, আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা ও স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে নতুন নকশা করা ছয়টি ব্যাংক নোটের ছবি হস্তান্তর করেন।

ন্যায়বিচার পেয়েছি, রায় দ্রুত কার্যকর চাই : মেজর সিনহার বোন
বহুল আলোচিত সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলায় বিচারিক আদালতের রায় বহাল থাকায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন মেজর সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। তিনি বলেন, হাইকোর্টের রায় ঐতিহাসিক। এ রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। আমরা চাই সব প্রক্রিয়া শেষে দ্রুত যেন রায়টা কার্যকর করা হয়। সোমবার (২ জুন) হাইকোর্টের রায় ঘোষণার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলায় সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও পরিদর্শক মো. লিয়াকত আলীকে দেওয়া মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ৬ আসামির যাবজ্জীবন দণ্ড বহাল রেখেছেন আদালত। পাশাপাশি প্রত্যেক আসামির ৫০ হাজার টাকার জরিমানার আদেশ বহাল রাখা হয়েছে রায়ে। যাবজ্জীবন বহাল থাকা আসামিরা হলেন, টেকনাফ থানার সাবেক এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল রুবেল শর্মা, সাগর দেব, কক্সবাজারের বাহারছড়ার মারিশবুনিয়া গ্রামের মো. নুরুল আমিন, মোহাম্মদ আইয়াজ ও মো. নিজাম উদ্দিন। আসামিদের আপিল খারিজ করে সোমবার (২ জুন) সকাল ১০টা ৫৫ মিনিটে বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও বিচারপতি মো. সগীর হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান রায়ের মূল অংশ পাঠ করে শোনান। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারল শামীমা দিপ্তী,ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জসিম সরকার, সহকারি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার সুমাইয়া আজিজ,লাবনী আক্তার। আদালতে মেজর সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস, সাবেক সেনা কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাত সাড়ে ৯টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর তল্লাশিচৌকিতে পুলিশের বাহারছড়া তদন্তকেন্দ্রের তৎকালীন কর্মকর্তা পরিদর্শক লিয়াকত আলীর গুলিতে নিহত হন সিনহা মো. রাশেদ খান। ঘটনার পাঁচদিন পর ২০২০ সালের ৫ আগস্ট নিহত সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে আদালতে মামলা করেন। ২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট জমা দেয় র্যাব। অভিযোগপত্রে সিনহা হত্যাকাণ্ডকে ‘পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল রায় ঘোষণা করেন। রায়ে ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও পরিদর্শক মো. লিয়াকত আলীকে মৃত্যুদণ্ড এবং টেকনাফ থানার এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত এবং কনস্টেবল রুবেল শর্মা ও সাগর দেবকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এছাড়া কক্সবাজারের বাহারছড়ার মারিশবুনিয়া গ্রামের মো. নুরুল আমিন, মোহাম্মদ আইয়াজ ও মো. নিজাম উদ্দিনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। বাকি সাত আসামি খালাস পান। পরে মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিতকরণে ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে। কারাগারে থাকা দণ্ডিত আসামিরা আপিল করেন।

মেজর সিনহা হত্যা: ওসি প্রদীপ ও লিয়াকত আলীর মৃত্যুদণ্ড বহাল
বহুল আলোচিত সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলায় সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও পরিদর্শক মো. লিয়াকত আলীকে মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ৬ আসামির যাবজ্জীবন দণ্ড বহাল রেখেছেন আদালত। এছাড়া রায়ে প্রত্যেক আসামির ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানার আদেশ বহাল রাখা হয়েছে। সোমবার (২ জুন) বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও বিচারপতি মো. সগীর হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। এর আগে গেলো বৃহস্পতিবার মামলাটির উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায়ে জন্য এদিন ধার্য করেন। যেখানে সব আসামিদের নিম্ন আদালতের দেওয়া সাজা বহাল চান অ্যাটর্নি জেনারেল। আদালতে রাষ্ট্র পক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। এছাড়া রাষ্ট্র পক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি মো. জেনারেল জসিম সরকার, মো. আসাদ উদ্দিন, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. গিয়াসউদ্দিন গাজি, লাবনি আক্তার, তানভীর প্রধান, সুমাইয়া বিনতে আজিজ ও আসাদুল্লাহ আল গালিব। উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এই ঘটনায় দায়ের করা মামলার বিচার শেষে ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত দুজনকে মৃত্যুদণ্ড, ছয়জনকে যাবজ্জীবন ও সাতজনকে খালাস দিয়ে রায় দিয়েছিলেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন পরিদর্শক বরখাস্ত লিয়াকত আলী ও টেকনাফ থানার বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের বরখাস্তকৃত উপ-পরিদর্শক (এসআই) নন্দ দুলাল রক্ষিত, সাগর দেব, রুবেল শর্মা, টেকনাফ থানায় পুলিশের করা মামলার সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো. নেজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন। বিচারিক আদালতের রায়ের পরে নিয়ম অনুসারে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের দণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে। অন্যদিকে, দণ্ডিত আসামিরা আপিল ও জেল আপিল করেন।

রাজধানীতে বহুতল ভবনে আগুন
রাজধানীতে একটি বহুতল ভবনে ভোর সকালে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। সোমবার (২ জুন) সকাল ৬টা ৫৫ মিনিটে পুরানা পল্টন এলাকায় এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া সেলের কর্মকর্তা খায়রুল ইসলাম রনি। তিনি বলেন, পুরানা পল্টনে একটি ১০ তলা ভবনের ৬ তলায় আগুন লাগে। সকালে রাস্তা ফাঁকা থাকায় খবর পেয়ে ৭টা ১ মিনিটেই ঘটনাস্থলে পৌঁছায় ফায়ার সার্ভিস। পরে পাঁচটি ইউনিটের ১৭ মিনিটের প্রচেষ্টায় সকাল ৭টা ১৮ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। খায়রুল ইসলাম রনি আরও বলেন, প্রাথমিকভাবে আগুনের সূত্রপাত ও ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে জানা যায়নি।

নগদে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের প্রমাণ মিলেছে: দুদক
মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস নগদ লিমিটেডে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়ম ও ১৫০ কোটি টাকা আত্মসাতের প্রাথমিক প্রমাণ পেয়েছে বলে জানিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আজ রোববার দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে একটি এনফোর্সমেন্ট টিম ঢাকায় নগদের প্রধান কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতির সত্যতা পাওয়ার কথা জানায়। দুদক মহাপরিচালক ও মুখপাত্র মো. আক্তার হোসেন রোববার (১ জুন) এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। দুদক জানায়, নিয়োগ সংক্রান্ত অনিয়মের বিষয়ে পাওয়া তথ্য অধিকতর তদন্তের জন্য প্রধান উপদেষ্টার আইসিটি বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যবের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা আতিক মোর্শেদ এবং তার স্ত্রী জাকিয়া সুলতানা জুইকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। ১৫০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগটি যাচাই করতে নগদ কর্তৃপক্ষের কাছে প্রয়োজনীয় নথিপত্র চাওয়া হয়েছে। ওইসব নথি পেয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে টিমের পক্ষ থেকে কমিশনে বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। এরপর কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক’ সিরিজের নতুন টাকার ডিজাইন উন্মোচন
বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও স্থাপত্য ঐতিহ্য তুলে ধরতে ‘বাংলাদেশের ঐতিহাসিক এবং প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপত্য’ শীর্ষক একটি নতুন সিরিজের ব্যাংকনোট ও কারেন্সি নোটের ডিজাইন উন্মোচন করেছে। এই নতুন সিরিজে ৫০০, ২০০, ১০০ ও ১০ টাকা মূল্যমানের ব্যাংক নোট এবং ৫ ও ২ টাকা মূল্যমানের কাগুজে কারেন্সি নোট অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। প্রকাশিত ডিজাইন অনুযায়ী, প্রতিটি নোটে বাংলাদেশের বিভিন্ন সময়ের উল্লেখযোগ্য প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ও ঐতিহাসিক স্থাপত্যকে মূল থিম হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এতে দেশের সাংস্কৃতিক পরিচিতিকে সামনে আনতে চমৎকার চিত্র ও নিখুঁত শিল্পশৈলীর ব্যবহার করা হয়েছে। সোমবার (২ জুন) থেকে সাধারণ গ্রাহকরা এসব নোট পেতে শুরু করবেন। প্রথম ধাপে ২০, ৫০ ও ১০০০ টাকার নতুন নোট বাজারে ছাড়া হয়েছে। ৫০০ টাকার নোটে দেখা যাবে কেন্দ্রিয় শহীদ মিনার ও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট২০০ টাকায় থাকবে ভাস্কর্য ও গ্রাফিতি ২০২৪১০০ টাকায় প্রতিফলিত হবে ষাটগম্বুজ মসজিদ ও সুন্দরবনের দৃশ্য১০ টাকায় স্থান পেয়েছে বাইতুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ ও গ্রাফিতি ২০২৪৫ টাকার নোট এ থাকবে তারা মসজিদ২ টাকায় স্থান পেয়েছে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ ও রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধ

অধ্যাপক আনোয়ারাকে কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় এইচআরএফবির নিন্দা
বীর মুক্তিযোদ্ধা ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক এস এম আনোয়ারা বেগমকে কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও নিন্দা জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ (এইচআরএফবি)। আজ রোববার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সংগঠনটি জানায়, ৬৯ বছর বয়সী একজন নারীকে জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর সিদ্ধান্তে তারা ক্ষুব্ধ ও হতাশ। বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই রাজধানীর রায়সাহেব বাজার এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলির ঘটনায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সুজন মোল্লা আহত হন। পরে তিনি ১৬ ফেব্রুয়ারি সূত্রাপুর থানায় অধ্যাপক আনোয়ারা বেগমের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা করেন। তদন্তকারী কর্মকর্তা মামলার সঙ্গে আনোয়ারা বেগমের সম্পৃক্ততার বিষয়ে আদালতকে লিখিতভাবে জানান। বিবৃতি অনুযায়ী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে থেকে শিক্ষার্থীরা অধ্যাপক আনোয়ারা বেগমকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন। এরপর পুলিশ চলমান মামলার আওতায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখায়। গত বৃহস্পতিবার তাঁকে আদালতে হাজির করলে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এইচআরএফবি জানায়, আনোয়ারা বেগম রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত ছিলেন এবং ২০২১ সালে অবসরে যান। তিনি বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৭ ধারা অনুযায়ী নারী ও বয়স্ক ব্যক্তিদের জামিনের বিষয়টি আদালতের বিবেচনায় নেওয়ার সুযোগ রয়েছে-যা এই ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ছিল বলেও সংগঠনটি উল্লেখ করেছে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকালে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিটি ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত ও ন্যায়বিচার নিশ্চিতের দাবি জানাচ্ছে এইচআরএফবি। পাশাপাশি সংগঠনটি সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, এসব ঘটনায় দায়ের করা মামলায় বাছবিচারহীনভাবে শত শত ব্যক্তিকে সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার ও কারাগারে পাঠালে মামলাগুলোর গ্রহণযোগ্যতা ক্ষুণ্ন হতে পারে এবং প্রকৃত অপরাধীদের বিচারের পথ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। তাদের মতে, যেকোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে তা নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে প্রমাণিত হওয়া প্রয়োজন। এমনকি জুলাই হত্যাকাণ্ডের মতো স্পর্শকাতর মামলায় অনিয়মিত গ্রেপ্তারের ঘটনা বিচারপ্রক্রিয়ার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এই প্রেক্ষাপটে, আনোয়ারা বেগমসহ সংশ্লিষ্ট মামলাগুলোর আসামি নির্ধারণ, গ্রেপ্তার ও কারাগারে প্রেরণের ক্ষেত্রে অধিক যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য পুলিশ ও আদালতের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ।

নগর বনায়নের লক্ষ্যে ডিএনসিসি ও বন অধিদপ্তরের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর
ঢাকা শহরের পরিবেশ উন্নয়ন ও সবুজায়নের লক্ষ্যে আজ ১ জুন ২০২৫ তারিখে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) ও বন অধিদপ্তরের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ সমঝোতা স্মারক (MoU) স্বাক্ষরিত হয়েছে। রাজধানীর আগারগাঁওস্থ বন ভবনে অনুষ্ঠিত এই চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রথম পক্ষ হিসেবে স্বাক্ষর করেন ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং দ্বিতীয় পক্ষ হিসেবে স্বাক্ষর করেন বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক মো: আমীর হোসাইন চৌধুরী। সমঝোতা স্মারকের আওতায় ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের অন্তর্গত সড়ক বিভাজক (মিডিয়ান), ফুটপাথ, খাল ও জলাশয়ের পাড়, এবং অন্যান্য বনায়নযোগ্য স্থানে যৌথ উদ্যোগে নগর বনায়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে। এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য হচ্ছে নগরের বায়ু, পানি ও শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ, তাপমাত্রা হ্রাস, ল্যান্ডস্কেপ উন্নয়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলায় পরিবেশবান্ধব অবকাঠামো গড়ে তোলা। বনায়নের জন্য নির্ধারিত জায়গা ডিএনসিসি দখল ও আবর্জনামুক্ত করে উপযোগী করে দেবে, যেখানে বন অধিদপ্তর গাছ ও ঘাস জাতীয় উদ্ভিদ রোপণ করবে। চারা রোপণের তিন মাস পর্যন্ত বন অধিদপ্তর তদারকি করবে এবং এরপর ডিএনসিসি বাগানের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নেবে। এছাড়া বনায়ন কার্যক্রম বাস্তবায়নে উভয় পক্ষ স্থানীয় কমিউনিটি, বিশেষজ্ঞ, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে বেসরকারি সংস্থার সহায়তা গ্রহণ করতে পারবে। বাগানের সুরক্ষায় প্রাকৃতিক দুর্যোগজনিত ক্ষয়ক্ষতির বিষয়েও যৌথভাবে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। প্রধান বন সংরক্ষক মো: আমীর হোসাইন চৌধুরী জানান, পরিবেশ রক্ষা ও সবুজ নগর গঠনে এই সমঝোতা স্মারক এক নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে।

বোনাস না বাড়ালে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি এমপিওভুক্ত কর্মচারীদের
উৎসব ভাতা (বোনাস) বাড়ানোর দাবিতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত কর্মচারীরা। তারা মাউশির মহাপরিচালকের কাছে লিখিত আবেদনও জমা দিয়েছেন। জানিয়েছেন, দাবি মানা না হলে কঠোর কর্মসূচি দেবেন তারা। বর্তমান সরকার এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের উৎসব ভাতা ২৫ শতাংশ বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করলেও কর্মচারীদের ভাতা না বাড়ানোয় তারা এ কর্মসূচি পালন করেছেন বলে জানিয়েছেন। রোববার (০১জুম) বাংলাদেশ বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তৃতীয় শ্রেণি কর্মচারী পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির ব্যানারে এই কর্মসূচি পালিত হয়। কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্মচারী পর্ষদ আহ্বায়ক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান আদনান হাবিব, সদস্যসচিব মোহাম্মদ আব্দুল করিম শেখ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মাসুদুর রহমান, পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মোহাম্মদ লিমন বিশ্বাস, সহসভাপতি তুষার আহমেদ, বরিশাল জেলা সভাপতি মিরাজ ফকির, কুমিল্লা জেলা সিনিয়র সহসভাপতি মো. শফিকুল ইসলাম। কর্মসূচি থেকে বক্তারা হুঁশিয়ারি দেন, বর্তমান অন্তর্র্বতী সরকার ঈদের আগে ২৫ শতাংশ উৎসব বোনাস বৃদ্ধি না করলে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে। তারা জানান, সারাদেশে ২ লাখের বেশি এমপিওভুক্ত বিদ্যালয়ের কর্মচারী আছেন। অল্প বেতনে তারা যুগ যুগ ধরে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। তারা সরকারের কাছে দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছেন। কিন্তু সরকার দাবির প্রতি ভ্রুক্ষেপ করছে না। বক্তরা আরও বলেন, প্রায় ২১ বছর পর উৎসব ভাতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। কিন্তু কর্মচারীদের জন্য কোনো সুখবর নেই। সর্বশেষ ২০০৪ সালে জোট সরকারের আমলে উৎসব ভাতা বৃদ্ধি করা হয়। এ সময় আন্দোলনকারীরা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলে তিনি দাবি বাস্তবায়নের আশ্বাস দেন। শিক্ষকদের চেয়ে কর্মচারীরা কম বেতন পান বলে তাদের উৎসব ভাতা আগে থেকেই ৫০ শতাংশ, অন্যদিকে শিক্ষকদের ছিল ২৫ শতাংশ। সম্প্রতি শিক্ষকদের উৎসব ভাতা বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করা হয়েছে। এরপরই নিজেদের দাবি নিয়ে সোচ্চার হয়েছেন এমপিওভুক্ত কর্মচারীরা। তারা চান, তাদের উৎসব ভাতাও ২৫ শতাংশ বাড়ানো হোক। অর্থাৎ ঈদের বেতনের ৭৫ শতাংশ বোনাস দাবি তাদের।