
ভুয়া ও বিভ্রান্তিকর ভিডিও ছড়িয়ে পড়া গণতন্ত্রের জন্য গুরুতর হুমকি হয়ে উঠেছে বলে সতর্ক করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তার মতে, এসব ভিডিও সহিংসতা উসকে দিতে পারে, সমাজে অস্থিরতা তৈরি করতে পারে এবং বিশেষ করে সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ সমাজে জাতিগত সম্প্রীতি ও সামাজিক সংহতিকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি এসব কথা উল্লেখ করেন।
স্ট্যাটাসে শফিকুল আলম লেখেন, গত কয়েক দিনে তার স্বাস্থ্যের খোঁজ নিতে এবং এমনকি তিনি জীবিত আছেন কি না জানতে অনেকেই ফোন করেছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি লেখেন, “আমার প্রিয় ইংরেজ লেখকদের একজন মার্ক টোয়েনের ভাষায় বললে- আমার মৃত্যুর খবর অনেকটাই অতিরঞ্জিত।”
তবে তিনি স্পষ্ট করেন, এই লেখার মূল উদ্দেশ্য সেটি নয়। তাকে সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন করছে, ইউটিউব, রিলস কিংবা টিকটকে দেখা যেকোনো ভিডিও মানুষ খুব সহজেই সত্য বলে মেনে নিচ্ছে। ভিডিওটির উৎস কী, কারা এটি তৈরি করেছে বা যে ব্যক্তি বা মাধ্যম এটি প্রকাশ করেছে তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা কতটা, এসব বিষয় নিয়ে খুব কম মানুষই প্রশ্ন তুলছে। তার ভাষায়, যেন এমন একটি ধারণা তৈরি হয়েছে যে ভিডিও আকারে প্রকাশিত হলেই তা সত্য। এখানেই আসল বিপদ।
তিনি আবারও জোর দিয়ে লেখেন, “মিথ্যা দিয়ে ভরা ভিডিও গণতন্ত্রের জন্য ভয়াবহ হুমকি তৈরি করে। এগুলো সহিংসতা উসকে দিতে পারে, সমাজকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে এবং বিশেষ করে সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যে ভরা সমাজে জাতিগত সম্প্রীতি ও সামাজিক সংহতি ধ্বংস করতে পারে। ইতিহাস আমাদের দেখিয়েছে- ভ্রান্ত তথ্য মানুষের প্রাণও কেড়ে নিতে পারে।”
স্ট্যাটাসে একাধিক প্রশ্ন তুলে শফিকুল আলম লেখেন, যারা ভিডিওর মাধ্যমে ঘৃণা ও মিথ্যা ছড়ায়, তাদের মোকাবিলা কীভাবে করা উচিত। তাদের কি বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম থেকে সরিয়ে দেওয়া প্রয়োজন, নাকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকেই তাদের বাদ দেওয়া উচিত। একই সঙ্গে তিনি প্রশ্ন তোলেন, বাংলাদেশের মতো একটি দেশের পক্ষে এই হুমকি কার্যকরভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব কি না এবং তা করতে গিয়ে মতপ্রকাশ ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে কি না।
তিনি আরও লেখেন, যেসব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এসব কণ্ঠস্বরকে জায়গা দিচ্ছে এবং ছড়িয়ে পড়তে সহায়তা করছে, তাদের দায়বদ্ধতা কোথায়। ঘৃণা ছড়ানো এবং তার ফলে সৃষ্ট বিশৃঙ্খলার জন্য কোনো দেশ এসব প্ল্যাটফর্মকে জবাবদিহির আওতায় আনতে পারে কি না, সেই প্রশ্নও তোলেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব জানান, গত ১৭ মাস ধরে সরকার এসব চ্যালেঞ্জ নিয়ে গভীরভাবে লড়াই করে যাচ্ছে। তার মতে, নির্বাচন শেষ হলেও এই প্রশ্নগুলো শেষ হবে না। নির্বাচিত সরকার দায়িত্ব গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গেই এই সংকটের মুখোমুখি হবে এবং তারা কীভাবে এর মোকাবিলা করবে, সেটিই তাদের শাসনামলের চরিত্র নির্ধারণ করবে।
শেষ অংশে তিনি বলেন, অন্য দেশের মতোই বাংলাদেশ সরকারের দায়িত্ব জনগণকে ঘৃণামূলক বক্তব্য, মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য থেকে সুরক্ষা দেওয়া। তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, এই সুরক্ষা দেওয়ার পদ্ধতিতেই সবচেয়ে বড় ঝুঁকি লুকিয়ে আছে। ভুলভাবে প্রয়োগ করা হলে এমন এক অসহিষ্ণু পরিবেশ তৈরি হতে পারে, যা মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে এমনভাবে সংকুচিত করবে যার পরিণতি আগে থেকেই কল্পনা করা কঠিন। তার ভাষায়, এই সুরক্ষা ও স্বাধীনতার মধ্যে সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখাই সবচেয়ে বড় পরীক্ষা।