ঘুমের যেসব অভ্যাস নীরবে আপনার ক্ষতি করছে


ঘুমের যেসব অভ্যাস নীরবে আপনার ক্ষতি করছে

শুধু ঘুমালেই চলবে না, ঘুমের ধরনও হতে হবে সঠিক ও স্বাস্থ্যসম্মত। নইলে দিনের ক্লান্তি দূর করতে গিয়ে অজান্তেই ডেকে আনছেন মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি। আধুনিক জীবনের ব্যস্ততায় অনেকেই আজকাল ঘুমের সঠিক রুটিন মানছেন না। রাত জেগে কাজ, মোবাইল স্ক্রলে ডুবে থাকা, দিনের বেলা ঘুমিয়ে নেওয়ার অভ্যাস কিংবা সপ্তাহের ঘুমের ঘাটতি ছুটির দিনে একবারে পুষিয়ে নেওয়া এসব যেন আজকাল সাধারণ ব্যাপার হয়ে উঠেছে।

তবে এই সাধারণ অভ্যাসগুলোর মধ্যেই লুকিয়ে আছে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির ইঙ্গিত।

যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির সাম্প্রতিক এক গবেষণা বলছে, মানুষকে চারটি ঘুমের ধরনে ভাগ করা যায়, যেগুলোর প্রতিটিরই শরীরের ওপর রয়েছে আলাদা প্রভাব। গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক জার্নাল Psychosomatic Medicine-এ। প্রায় ৩৭০০ ব্যক্তির ১০ বছরের ঘুম-সংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে গবেষকরা এই চারটি ধরণ শনাক্ত করেন।

প্রথমটি ‘ভালো স্লিপারস’, অর্থাৎ যারা নিয়মিত ও স্বাস্থ্যসম্মত ঘুমান। দ্বিতীয়টি ‘ন্যাপারস’, যারা রাতের ঘুম ঠিকভাবে হলেও দিনে ঘুমানোর অভ্যাস রাখেন। তৃতীয় ধরণ ‘উইকেন্ড ক্যাচ-আপ স্লিপারস’, যারা সপ্তাহের কর্মদিবসে কম ঘুমিয়ে ছুটির দিনে অতিরিক্ত ঘুমিয়ে ঘাটতি মেটানোর চেষ্টা করেন। আর চতুর্থটি ‘ইনসমনিয়া স্লিপারস’ - যারা দীর্ঘদিন ধরে ঘুমের জটিলতায় ভোগেন, ঘুম আসতে দেরি হয়, ঘুম হয় অল্প সময়ের এবং দিনে অতিরিক্ত ক্লান্তি অনুভব করেন।

গবেষণায় উঠে এসেছে, অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে বেশির ভাগই পড়েন ‘ন্যাপারস’ এবং ‘ইনসমনিয়া স্লিপারস’ ক্যাটাগরিতে।

সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন ইনসমনিয়ায় আক্রান্তরা

গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের ঘুমের সমস্যা দীর্ঘদিনের, তাদের হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ও মানসিক বিষণ্নতার আশঙ্কা অনেক বেশি। গবেষণা দলের নেতৃত্ব দেওয়া ডা. সুমি লি বলেন, “যাদের দীর্ঘদিন ধরে ঘুমের সমস্যা রয়েছে, তাদের পক্ষে আবার স্বাভাবিক ঘুমের ছন্দে ফিরে আসা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। কিন্তু যদি দৈনন্দিন জীবনে ঘুমের মান উন্নত করা যায়, তাহলে এর প্রভাব সামগ্রিক স্বাস্থ্য রক্ষায় অত্যন্ত ইতিবাচক হবে।”

বিশেষজ্ঞদের মতে, একজন রোগীর ঘুমের ধরন বুঝে চিকিৎসা পরিকল্পনা করলে ফলাফল হয় আরও কার্যকর। ইনসমনিয়ায় আক্রান্তদের ক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। তবে শুধু রাতের ঘুম ঠিক থাকলেই চলবে না, দিনে নিয়মিত ঘুমানোর অভ্যাসও হতে পারে বিপদের কারণ। গবেষণায় বলা হয়েছে, যেসব ব্যক্তি রাতে ঠিকঠাক ঘুমান, কিন্তু দিনের বেলায়ও ঘুমিয়ে নেন, তাদের মধ্যেও দীর্ঘমেয়াদি নানা ধরনের অসুস্থতার ঝুঁকি দেখা গেছে।

ঘুমের গুরুত্ব সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা মনে করিয়ে দেন, এটা শুধু বিশ্রামের সময় নয়, বরং শরীর ও মস্তিষ্ক পুনর্গঠনের একটি অপরিহার্য অংশ। তাই শুধু ঘুমের পরিমাণ নয়, তার ধরন ও গুণমানও সমান গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত, সুষম ও সঠিক ঘুমের অভ্যাস গড়ে তুলতে পারলে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, মানসিক অবসাদসহ বহু দীর্ঘস্থায়ী রোগ প্রতিরোধ অনেকটাই সহজ হয়ে যায়।

সূত্র: মেডিকেল নিউজ টুডে

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×