খামেনিকে লক্ষ্য করে ট্রাম্পের মন্তব্য, তেহরানে বিক্ষোভে উত্তাল জনতা

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আলী খামেনিকে লক্ষ্য করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিতর্কিত মন্তব্য এবং ইসরায়েলের চলমান আগ্রাসনের প্রতিবাদে ইরানে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার (১৮ জুন) ভোরে ইরানের রাজধানী তেহরানে এই বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। ওই সময় শতাধিক বিক্ষুব্ধ নাগরিক তেহরানের কেন্দ্রীয় প্যালেস্টাইন স্কয়ারে জড়ো হয়ে এই প্রতিবাদ সমাবেশে অংশ নেন। তাদের হাতে ছিল ইরানি জাতীয় পতাকা ও আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আলী খামেনির ছবি। বিক্ষুব্ধ জনতা সমাবেশে ট্রাম্পের "উস্কানিমূলক" বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানানোর পাশাপাশি ইরানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ওয়াশিংটনের হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধেও জোরালো স্লোগান দেন। বিক্ষোভটি দ্রুতই যুক্তরাষ্ট্রের শত্রুতা এবং ইসরায়েলের "অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের" বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রতিবাদে রূপ নেয়।এই বিষয়ে বিক্ষোভকারীরা বলেন, ইসরায়েলের বারবার ইরানের সার্বভৌম ভূখণ্ডে হামলা চালাচ্ছে এবং সামরিক কমান্ডার, পরমাণু বিজ্ঞানী ও নিরীহ সাধারণ নাগরিকদের হত্যা করছে, যা সন্ত্রাসবাদ ও বর্বরতার উদাহরণ। সূত্র:তাসনিম নিউজ এজেন্সি

হরমুজ প্রণালির কাছে দুই তেলবাহী জাহাজের সংঘর্ষ, আগুন

ওমান সাগরে দুই তেলবাহী জাহাজের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত জানিয়েছে, নেভিগেশন ত্রুটির কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। প্রাথমিক তথ্যের বরাত দিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের জ্বালানি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ওমান সাগরে দুটি তেলবাহী ট্যাংকারের মধ্যে একটি দুর্ঘটনাজনিত সংঘর্ষ ইঙ্গিত দেয়, ঘটনাটি একটি জাহাজের নেভিগেশনে ভুল সিদ্ধান্তের কারণে ঘটেছে। মঙ্গলবার হরমুজ প্রণালির কাছে ‘অ্যাডালিন’ এবং ‘ফ্রন্ট ইগল’ নামের দুটি ট্যাংকারের মধ্যে সংঘর্ষ হয় এবং আগুন ধরে যায়। ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সংঘাতের মধ্যে এই এলাকায় ইলেকট্রনিক হস্তক্ষেপ বেড়েছে। এই কারণে জাহাজের নেভিগেশন ব্যবস্থায় ব্যাঘাত ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। তবে জাহাজের কর্মীদের কোনো আঘাত বা তেল ছড়িয়ে পড়ার খবর পাওয়া যায়নি।

ইসরাইলের দিকে ‘ফাত্তাহ-১’ ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান

ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (আইআরজিসি) ইসরায়েলের ওপর ভয়াবহ ও শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। বুধবার (১৮ জুন) ভোররাতে এই ভয়াবহ হামলার ঘটনা ঘটে। এই হামলাকে সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে ইরানের অন্যতম বড় প্রতিশোধমূলক আঘাত হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে। হামলার আগে দখলকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডজুড়ে সাইরেন বেজে ওঠে এবং পরে ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলো বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুর ওপর আঘাত হানে। এক বিবৃতিতে আইআরজিসি জানায়, ইসরায়েলের আগ্রাসনের জবাবে চালানো এটি ১১তম প্রতিশোধমূলক হামলা। এতে ব্যবহার করা হয়েছে ‘ফাত্তাহ’ নামের অত্যাধুনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। এই ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যূহ ভেদ করে সফলভাবে বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে। এরপর ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলো বিভিন্ন সামরিক ও কৌশলগত স্থাপনায় আঘাত হানে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এই ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যূহ ভেদ করার পাশাপাশি একাধিকবার আতঙ্ক ছড়িয়েছে দখলদারদের আশ্রয়স্থলে। আইআরজিসি দাবি করছে, ইরান এখন ফিলিস্তিন অঞ্চলের আকাশসীমার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে এবং ইসরায়েলি বাহিনী পুরোপুরি অসহায় হয়ে পড়েছে। উল্লেখ্য, ১৩ জুন থেকে ইরান ইসরায়েলের বিরুদ্ধে একাধিকবার প্রতিশোধমূলক হামলা চালিয়ে আসছে। ইসরায়েলের আগ্রাসনে ইরানের পারমাণবিক, সামরিক ও আবাসিক স্থাপনায় চালানো হামলায় শহীদ হয়েছেন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা, পারমাণবিক বিজ্ঞানী ও সাধারণ নাগরিক—যাদের মধ্যে রয়েছেন ৪৫ জন নারী ও শিশু। সূত্র: তাসনিম নিউজ এজেন্সিএএস/ এমআর

মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধের ফলে ইমরান খানের পিটিআইয়ের বিক্ষোভ স্থগিত

পাকিস্তানের সাবেক প্রধান্মন্ত্রী ইমরান খানের নেতৃত্বে দেশব্যাপী যে বিক্ষোভ কর্মসূচি চলছিল তা দুই সপ্তাহের জন্য স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানিয়েছে পাকিস্থানভিত্তিক গণমাধ্যম দ্যা ডন। মধ্যপ্রাচ্যে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন দলের নেতারা। মঙ্গলবার আদিয়ালা জেলে ইমরান খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে তার দুই বোন নুরীন নিয়াজি ও উজমা এ তথ্য জানান। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে নুরীন নিয়াজি বলেন, "আমার ভাই আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত। তিনি মনে করেন, এই সময় পাকিস্তানের জাতীয় ঐক্য বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ।" উজমা জানান, "ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ইমরান খানের অবস্থান বিশ্বজুড়ে পরিচিত।" এর আগে ইমরান খান ঈদুল আজহার পর বিক্ষোভের প্রস্তুতির আহ্বান জানিয়েছিলেন। পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআইয়ের) কেন্দ্রীয় তথ্য সম্পাদক শেখ ওয়াক্কাস আক্রম জানান, “আমরা খুব সংবেদনশীল সময় পার করছি। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আগামী দুই সপ্তাহ কোনো ধরনের বিক্ষোভ হবে না।” পিটিআইয়ের রাজনৈতিক থিঙ্ক ট্যাংকের প্রধান রউফ হাসান বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। এই মুহূর্তে দেশের মানুষের মধ্যে ঐক্যের বার্তা পৌঁছে দেওয়া জরুরি বলে তিনি মনে করেন।

ইসরায়েলের হামলায় ইরানে বাংলাদেশ দূতাবাসের কূটনীতিকের বাসভবন ক্ষতিগ্রস্ত

ইসরায়েলের হামলায় ইরানের রাজধানী তেহরানের বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তাদের বাসভবনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে। সোমবার (১৭ জুন) হামলার সময় ওই কূটনীতিক বাসায় না থাকায় প্রাণে বেঁচে গেছেন। তবে, তার বাসভবন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। ভুক্তভোগী ইরানে বাংলাদেশি দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি ওয়ালিদ ইসলাম বিবিসি বাংলাকে বলেন, “আমার বাসা পুরোপুরি গুঁড়িয়ে দিয়েছে।” ওয়ালিদ ইসলাম আরও বলেন, “আমাদের আশপাশে এখন আর কিছুই নেই। কেবল কূটনীতিকদের কয়েকটি বাড়ি টিকে আছে, কিন্তু আশপাশে কিছুই নেই।” প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তেহরানে বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা মূলত জর্ডান নামের একটি এলাকায় বসবাস করেন। ওই এলাকায় ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ভবনসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রয়েছে। সোমবার ঘোষণা দিয়ে ওইসব স্থাপনায় হামলা চালায় ইসরায়েল। হামলার আগে বাসিন্দাদের সরে যেতে বলা হয়। এতে প্রাণহানি কিছুটা কম হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অসংখ্য স্থাপনা। সোমবার দুপুরে তেহরানের তিন নম্বর জেলায় ইসরায়েলি সেনারা হামলার ঘোষণা দেওয়ার পর সেখানকার বাংলাদেশ মিশনে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ বাংলাদেশি নাগরিকদের সবাইকে ওই এলাকা থেকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয় ঢাকা। এরপর তেহরানে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাস কমপ্লেক্স ছেড়ে যান সেখানকার কর্মীরা। যদিও বর্তমানে তারা তেহরানের অন্য এলাকায় অবস্থান করছেন। কিন্তু ইসরায়েলি হামলার ব্যাপ্তি ক্রমেই বাড়তে থাকায় এখন নাগরিকদের তেহরানের বাইরে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এদিকে, মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব রুহুল আলম সিদ্দিক বলেন, “আমরা বাংলাদেশি যারা তেহরানে আছেন তাদের নিয়ে উদ্বিগ্ন। তারা হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কার মধ্যে আছেন। তাদের এবং আমাদের দূতাবাসে যারা কাজ করছেন, তাদের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, যাতে তারা নিরাপদে থাকতে পারেন।” তেহরানে বর্তমানে যে ৪০০ জনের মতো বাংলাদেশি অবস্থান করছেন, তারা সবাই অক্ষত রয়েছেন বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

এবার পাক সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের সঙ্গে দেখা করবেন ট্রাম্প

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল সৈয়দ আসিম মুনিরের সঙ্গে দেখা করবেন বলে জানা গেছে। খবর এনডিটিভি। আজ বুধবার (১৮ জুন) হোয়াইট হাউসের ক্যাবিনেট রুমে ট্রাম্প ও পাক সেনা-প্রধানের এ সাক্ষাৎ হবে।এরআগে ১৪ জুন এ মিটিংয়ের কথা উঠলেও তা অস্বীকার করে জান সবাই। এরপরেই এই বৈঠকের খবর প্রকাশিত হয়। পাকিস্তানি গণমাধ্যম দৈনিক ডনের এক প্রতিবেদন অনুসারে, মুনির তার মার্কিন সফরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথের সঙ্গেও দেখা করবেন। আরও জানা যায়, এ বৈঠকে ইসরায়েল ও ইরানের সংঘাত কমানোর বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। অসীম মুনিরের মার্কিন সফর নিয়ে ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, পাকিস্তানের সেনাপ্রধান রবিবার পাঁচ দিনের সরকারি সফরে ওয়াশিংটনে পৌঁছেছেন যা "প্রাথমিকভাবে দ্বিপাক্ষিক প্রকৃতির" এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সামরিক ও কৌশলগত সম্পর্ক জোরদারের লক্ষ্যে। তবে, তার এই সফর বেশ কয়েকজন পাকিস্তানি নাগরিক এবং পাকিস্তানি আমেরিকানরা ভালোভাবে নেয় নাই। তারা ওয়াশিংটনে পাকিস্তানি দূতাবাসের বাইরে এবং তার হোটেলের বাইরে বিক্ষোভ করে, পাকিস্তানে "নিরবচ্ছিন্ন গণতন্ত্র" পুনরুদ্ধারের দাবিতে বিক্ষোভ করে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) সমর্থকরা ওয়াশিংটনের ফোর সিজনস হোটেলের বাইরে মুনিরের মুখোমুখি হয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। তারা "আসিম মুনির, তুমি একজন কাপুরুষ", "তোমাকে লজ্জা দাও, গণহত্যাকারী" এবং "তোমাকে লজ্জা দাও, একনায়ক" এবং "পাকিস্তানিয়োঁ কে কাতি (পাকিস্তানিদের হত্যাকারী)" এর মতো স্লোগান দেয়। ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগামে পর্যটকদের উপর ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হওয়ার পর ভারতের সঙ্গে সামরিক সংঘাতের পর এটি মুনিরের প্রথম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফর। ইসলামাবাদ নয়াদিল্লির সঙ্গে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নিয়ে যোগাযোগ করার পরে এ সংঘর্ষের অবসান ঘটেছিল। সূত্র: এনডিটিভি/ দৈনিক ডন এমআর

‘ইসরায়েলের আকাশসীমা আমাদের দখলে’, দাবি ইরানের

ইসরায়েলের আকাশসীমার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ বর্তমানে তেহরানের হাতে বলে দাবি করেছেন ইরানের সামরিক বাহিনীর অভিজাত শাখা কর্নেল ইমান তাজিক। সম্প্রতি ইসরায়েলও ইরানের আকাশসীমার প্রসঙ্গে একই দাবি করেছে। মঙ্গলবার রাতে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে দু’দফা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করেছে ইরান। দ্বিতীয় দফা হামলার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট করা এক বার্তায় কর্নেল তাজিক বলেছেন, “আজ রাতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা এটা প্রমাণ করে যে আমরা দখলদার বাহিনীর আকাশসীমা সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করছি এবং সেখানকার বাসিন্দারা ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সামনে সম্পূর্ণ অরক্ষিত।” এর আগে মঙ্গলবার রাতে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। গত ১৩ জুন শুক্রবার ভোরে রাজধানী তেহরানসহ ইরানের ৮ শহরের অন্তত ১০০ স্থাপনায় হামলা করে ইসরায়েলের বিমান বাহিনী (আইএএফ)। হামলা শুরুর পর কিছুক্ষণ পর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এক ভিডিওবার্তায় বলেন, ইরানের হুমকির বিরুদ্ধে ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ শুরু করেছে ইসরায়েল এবং যতদিন ইরানের হুমকি থাকবে, ততদিন এ অভিযান চলবে। ইসরায়েলের হামলায় ইরানের বেশ কয়েক জন প্রথম সারির সামরিক কর্মকর্তা, পরমাণু বিজ্ঞানীসহ অন্তত ৪৫০ জন নিহত হয়েছেন। এদিকে, আইএএফের হামলার পর শুক্রবার থেকেই ইসরায়েলে পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু করেছে ইরানের সামরিক বাহিনী। ‘অপারেশন ট্রু প্রমিজ’ নামের এই পাল্টা হামলায় ইসরায়েলে এ পর্যন্ত নিহত ও আহত হয়েছেন ৫ শতাধিক মানুষ। সূত্র : টাইমস অব ইসরায়েল

জুলাইয়ে ঘটতে পারে মহাবিপর্যয় : বাবা ভাঙ্গার ভবিষ্যদ্বাণী

জাপানি মাঙ্গা শিল্পী রিও তাতসুকি, যিনি ‘নতুন বাবা ভাঙ্গা’ নামে পরিচিত। তার একটি ভবিষ্যদ্বাণী জাপানে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়েছে। ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী, আগামী ৫ জুলাই জাপানে একটি ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হানতে পারে। এই সতর্কবার্তার প্রভাবে হংকং থেকে জাপানে ফ্লাইট বাতিলের হার বেড়েছে। তাতসুকি ১৯৯৯ সালে প্রকাশিত তার মাঙ্গা সিরিজ ‘দ্য ফিউচার আই স’-এ ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে, ২০২৫ সালের ৫ জুলাই জাপানের উপকূলের কাছে সমুদ্রের তলদেশে ফাটল সৃষ্টি হবে। এর ফলে বিশাল ঢেউ তৈরি হবে, যা ২০১১ সালের তোহোকু ভূমিকম্পের সুনামির চেয়ে তিন গুণ বেশি উঁচু হতে পারে। জুলাই আসতে আর বেশি দেরি নেই। এর মধ্যে এ ভবিষ্যদ্বাণী চাউর হওয়ায় হংকং এয়ারলাইন্স জুলাই ও আগস্ট মাসে দক্ষিণ জাপানের কাগোশিমা ও কুমামোতো শহরে ফ্লাইট স্থগিত করেছে। এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ভবিষ্যদ্বাণী প্রকাশের পর থেকে যাত্রীদের আগ্রহ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। ব্লুমবার্গ ইন্টেলিজেন্সের তথ্য অনুযায়ী, জুনের শেষ ও জুলাইয়ের শুরুতে হংকং থেকে জাপানগামী ফ্লাইট বুকিং ৮৩ শতাংশ কমেছে। এমনকি এপ্রিল ও মে মাসে বসন্তকালীন ছুটির সময়ও বুকিং আগের বছরের তুলনায় প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছিল। গ্রেটার বে এয়ারলাইন্সের জাপান শাখার জেনারেল ম্যানেজার হিরোকি ইতো বলেন, আমাদের মাত্র ৪০ শতাংশ বুকিং হয়েছে। অথচ আমরা আশা করেছিলাম আসনের ৮০ শতাংশ পূর্ণ হবে। এদিকে মিয়াগি প্রশাসনের গভর্নর ইয়োশিহিরো মুরাই এ ভবিষ্যদ্বাণীকে গুজব বলেছেন। তিনি বলেন, জাপানিরা দেশ ছেড়ে পালাচ্ছে না। দয়া করে এই গুজব উপেক্ষা করুন এবং জাপান ভ্রমণে আসুন। উল্লেখ্য, রিও তাতসুকির অনেক ভবিষ্যদ্বাণী এরই মধ্যে ঘটেছে। যার মধ্যে রয়েছে-২০১১ সালের তোহোকু ভূমিকম্প ও সুনামি, প্রিন্সেস ডায়ানার মৃত্যু, ফ্রেডি মার্কারির মৃত্যু এবং কোভিড-১৯ মহামারির পূর্বাভাস।

আমরা খামেনিকে এখনই হত্যা করব না: ট্রাম্প

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক বিস্ফোরক বার্তায় জানিয়েছেন, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি কোথায় লুকিয়ে আছেন তা যুক্তরাষ্ট্র জানে, তবে আপাতত তাঁকে হত্যার পরিকল্পনা নেই। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘আমরা জানি তথাকথিত ‘সুপ্রিম লিডার’ কোথায় লুকিয়ে আছেন। তিনি সহজ লক্ষ্য, তবে সেখানে নিরাপদে আছেন। আমরা তাঁকে এখনই হত্যা করছি, অন্তত এই মুহূর্তে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চাই না যে বেসামরিক জনগণের ওপর বা আমাদের সৈন্যদের ওপর ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হোক। আমাদের ধৈর্য শেষের দিকে। এই বিষয়ে মনোযোগ দেওয়ার জন্য আপনাদের ধন্যবাদ।’ এর আগে, ট্রাম্প একটি আরেকটি পোস্টে দাবি করেন, ‘আমাদের এখন ইরানের আকাশের পূর্ণ এবং সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। ইরানের ভালো স্কাই ট্র্যাকার এবং প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম আছে, অনেক পরিমাণেও, কিন্তু তা আমেরিকান প্রযুক্তির তুলনায় কিছুই না। কেউই পুরোনো দিনের সেই আমেরিকার চেয়ে ভালো করতে পারে না।’ উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্র সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে বলেছে তারা ইরানে ইসরায়েলি হামলায় জড়িত নয়, যদিও ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরেই আমেরিকার কাছ থেকে সামরিক সহায়তা ও প্রযুক্তি পেয়ে আসছে। ইরানে চলমান উত্তেজনা ও ক্রমবর্ধমান সংঘাতের প্রেক্ষিতে এই বার্তাগুলো অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

ইরানের আকাশ এখন আমাদের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে: ট্রাম্প

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, ‘আমরা এখন ইরানের আকাশের সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক নিয়ন্ত্রণ নিয়েছি।’ স্থানীয় সময় রাত ১০টার দিকে পোস্ট করা এক বার্তায় তিনি লেখেন, ইরানের ভালো ধরনের স্কাই-ট্র্যাকার ও প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ছিল—সংখ্যাতেও কম ছিল না। কিন্তু সেগুলো আমেরিকান প্রযুক্তির তুলনায় কিছুই না। আমেরিকান চিন্তা, প্রযুক্তি আর নির্মাণ—এই তিনে মিলে যা দাঁড়ায়, তা কেউই টেক্কা দিতে পারে না। আমেরিকার চেয়ে ভালো কেউ করে না। অবশ্য ট্রাম্পের এই বক্তব্য এমন এক সময়ে এল, যখন যুক্তরাষ্ট্র সরকার এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে আসছে যে, ইসরায়েলের ইরানে সাম্প্রতিক বিমান হামলায় যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি কোনো ভূমিকা রাখেনি। উল্লেখযোগ্য যে, দীর্ঘদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তা দিয়ে আসছে। তবে শুক্রবার ইসরায়েলি হামলা শুরুর পর থেকে ওয়াশিংটন সতর্ক ভঙ্গিতে জানিয়ে আসছিল যে, তারা সরাসরি জড়িত নয়। ট্রাম্পের এই মন্তব্য ঘিরে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের মধ্যে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে—যুক্তরাষ্ট্র আসলেই কী ভূমিকা পালন করছে মধ্যপ্রাচ্যের এই সংঘাতে?

সিরিয়ায় আরও দুই ঘাঁটি থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার

সিরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে আরও দুটি সামরিক ঘাঁটি থেকে সেনা প্রত্যাহার করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এর ফলে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) পুনরুত্থানের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে বলে সতর্ক করেছে যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত কুর্দি নেতৃত্বাধীন সিরিয়ান ডেমোক্যাটিক ফোর্সেস (এসডিএফ)। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে। গত এক সপ্তাহে রয়টার্সের সাংবাদিকরা হাসাকা প্রদেশের আল-ওয়াজির ও তেল বাইদার ঘাঁটি পরিদর্শন করে সেগুলো প্রায় পরিত্যক্ত অবস্থায় পেয়েছেন। উভয় ঘাঁটির রক্ষণাবেক্ষণ করছে এসডিএফ সদস্যরা। তবে মার্কিন সেনা সদস্যদের আর দেখা যায়নি। একজন কুর্দি রাজনীতিক একটি ঘাঁটিতে থাকেন। তিনি জানান, সেখান থেকে সব মার্কিন সেনা চলে গেছেন। অপর ঘাঁটির প্রহরীরা জানান, সেনারা সম্প্রতি চলে গেছে। তবে তিনি নির্দিষ্ট সময় বলেননি। এই দুটো ঘাঁটি ছাড়ার মধ্য দিয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর সিরিয়ার অন্তত চারটি ঘাঁটি ছেড়েছে যুক্তরাষ্ট্র। চলতি মাসেই ট্রাম্প প্রশাসন জানায়, তারা সিরিয়ায় আটটি থেকে ঘাঁটি কমিয়ে মাত্র একটি ঘাঁটিতে কার্যক্রম সীমিত করবে। এপ্রিল মাসে নিউ ইয়র্ক টাইমস এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সেনা সংখ্যা ২ হাজার থেকে কমিয়ে ৫০০-তে নামিয়ে আনা হতে পারে। এসডিএফ কমান্ডার মাজলুম আবদি রয়টার্সকে বলেছেন, একটি ঘাঁটিতে কয়েকশ সেনার উপস্থিতি আইএস ঠেকাতে যথেষ্ট নয়। সম্প্রতি আইএস-এর হুমকি অনেক বেড়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, এটা যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনা। আমরা অনেক আগেই জানতাম। তবে আমরা তাদের সঙ্গে কাজ করছি যেন কোনও শূন্যতা তৈরি না হয় এবং আইএস-এর ওপর চাপ বজায় রাখা যায়। আল-শাদাদি ঘাঁটি থেকে দেওয়া এই সাক্ষাৎকারের কয়েক ঘণ্টা পরই সেখানে তিনটি ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়। যা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় ভূপাতিত হয়েছে বলে এসডিএফ সূত্র জানিয়েছে। ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে সিরিয়া ও ইরাকের বিশাল অংশ দখল করে নিয়েছিল আইএস। সেই সময় তারা কঠোর ইসলামি শাসন প্রতিষ্ঠা করে। প্রকাশ্যে শিরচ্ছেদ, ইয়াজিদি নারীদের যৌনদাসী হিসেবে বিক্রি এবং বিদেশি সাংবাদিকদের হত্যা করে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছিল। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন ৮০টির বেশি দেশের সামরিক জোট কয়েক বছরের অভিযান চালিয়ে এই গোষ্ঠীর কাছ থেকে ভূখণ্ড পুনরুদ্ধার করে। তবে গত বছর ডিসেম্বরে সিরিয়ার স্বৈরশাসক বাশার আল-আসাদ ইসলামপন্থি বিদ্রোহীদের হাতে ক্ষমতা হারানোর পর আইএস আবার সক্রিয় হয়েছে বলে দাবি করেছেন আবদি। তিনি বলেছেন, আইএস সেলগুলো বর্তমানে দামেস্কসহ কয়েকটি শহরে সক্রিয় হয়েছে। আসাদের পতনের পর সৃষ্ট বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে তারা সরকারি অস্ত্রাগার থেকে অস্ত্র ও গোলাবারুদও দখল করেছে। রয়টার্সকে কয়েকজন কুর্দি কর্মকর্তা জানান, আইএস বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ছেড়ে যাওয়া ঘাঁটির আশপাশে অনেক বেশি সক্রিয় হয়ে উঠেছে।বিশেষ করে দেইর আজ-জোর ও রাক্কায়। এসডিএফ নিয়ন্ত্রিত ইউফ্রেটিস নদীর পূর্ব তীরে আইএস একাধিক হামলা চালিয়েছে এবং অন্তত ১০ জন কুর্দি যোদ্ধা ও নিরাপত্তাকর্মী নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন আবদি। এদের মধ্যে একটি হামলা হয়েছিল একটি মার্কিন ঘাঁটির কাছে তেল ট্যাংকার বহরে পুঁতে রাখা বোমা বিস্ফোরণের মাধ্যমে। যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতি হ্রাসের ফলে কুর্দি নেতৃত্বাধীন এসডিএফ বাহিনী নতুন নিরাপত্তা সংকটে পড়তে পারে। আইএসের পুনরুত্থানের পাশাপাশি ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের ছায়াও মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতিতে নতুন উত্তেজনা তৈরি করছে। এসডিএফ কমান্ডার আবদি এই সংঘাতের বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেন, তিনি আশা করেন এটি সিরিয়ায় ছড়িয়ে পড়বে না এবং তিনি নিজেকে মার্কিন ঘাঁটিতে নিরাপদ মনে করেন।

ইরানে ইসরায়েলের হামলায় ‘গভীরভাবে উদ্বিগ্ন’ চীন: শি জিনপিং

ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান সংঘাত নিয়ে প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। তিনি বলেন, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের কারণে মধ্যপ্রাচ্যে ‌‌হঠাৎ উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ায় চীন ‘গভীরভাবে উদ্বিগ্ন’। চীনা রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সিনহুয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়, মঙ্গলবার (১৭ জুন) কাজাখস্তানের রাজধানী আস্তানায় দ্বিতীয় ‘চীন-মধ্য এশিয়া শীর্ষ সম্মেলনের’ ফাঁকে উজবেকিস্তানের প্রেসিডেন্ট শাভকাত মিরজিয়োয়েভের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় শি এই মন্তব্য করেন। শি জিনপিং বলেন, চীন অন্য কোনো দেশের সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা কিংবা আঞ্চলিক অখণ্ডতা লঙ্ঘনকারী যেকোনো কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা করে। সামরিক সংঘাত কোনো সমস্যার সমাধান নয়। বরং এটি আঞ্চলিক উত্তেজনা বাড়িয়ে তোলে, যা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের স্বার্থের পরিপন্থী।চীনা প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, সব পক্ষকে দ্রুত এই সংঘাত প্রশমনের উদ্যোগ নিতে হবে। চীন এই অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে গঠনমূলক ভূমিকা রাখতে প্রস্তুত এবং সে লক্ষ্যে সকল পক্ষের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। এদিকে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান সংঘাত বন্ধে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করতে প্রস্তাব দিয়েছে রাশিয়া। তবে ইসরায়েল এই মধ্যস্থতা গ্রহণ করতে অনিচ্ছুক বলে দাবি মস্কোর। মঙ্গলবার (১৭ জুন) নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেছেন রাশিয়া প্রয়োজনে মধ্যস্থতা করতে প্রস্তুত রয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে, আমরা ইসরায়েলের পক্ষ থেকে যেকোনো মধ্যস্থতা প্রস্তাক গ্রহণ করতে বা সংঘাত বন্ধে একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানে পথ বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে অনীহা দেখতে পাচ্ছি।’ ইরান রাশিয়ার অন্যতম শীর্ষ মিত্র, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উভয় দেশই সম্পর্ক আরও গভীর করেছে। অন্যদিকে ইসরায়েলের সঙ্গেও সুসম্পর্ক বজায় রেখেছে রাশিয়া, যা এই সংঘাত বন্ধে দেশটিকে একটি সম্ভাব্য মধ্যস্থতাকারী হয়ে ওঠার সুযোগ দিয়েছে।

তেল আবিবের আকাশে ইরান থেকে ছোড়া নতুন ক্ষেপণাস্ত্র

ইসরায়েলের রাজধানী তেল আবিব ও অধিকৃত পশ্চিম তীরের আকাশে ইরান থেকে ছোড়া নতুন ক্ষেপণাস্ত্র দেখা গেছে। মঙ্গলবার (১৭ জুন) রাত ৯টার দিকে এ খবর জানায় কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা। ইসরায়েলি গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে আল জাজিরা জানায়, ইরান থেকে সর্বোচ্চ ১০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে। এর কিছুক্ষণ পরই জর্ডানের রাজধানী আম্মানে সাইরেন বাজতে শোনা যায়। আল জাজিরা সম্প্রচারে আসার ঠিক আগে আরেকবার সাইরেন বেজে ওঠে, যা ইঙ্গিত দেয় যে ক্ষেপণাস্ত্রগুলো তখন আর জর্ডানের আকাশসীমায় নেই। পরে সেগুলোকে অধিকৃত পশ্চিম তীর ও তেল আবিবের আকাশে দেখা গেছে। এই মুহূর্ত পর্যন্ত ক্ষেপণাস্ত্র আঘাতের কোনো নিশ্চিত খবর পাওয়া যায়নি। ইসরায়েলের চিকিৎসা ও জরুরি সেবাদাতা সংস্থাগুলোও এখনো কোনো হতাহত বা আহতের তথ্য জানায়নি। এছাড়া ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতের কোনো দৃশ্যমান প্রমাণও এখনো মেলেনি। তেল আবিব জেলার বাইরেও বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে সতর্কতা সাইরেন বাজানো হয়েছে, যা ইঙ্গিত দেয় পরিস্থিতি কতটা বিস্তৃত।

ইসরায়েল-ইরানের মধ্যে মধ্যস্থতার প্রস্তাব রাশিয়ার

ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান সংঘাত বন্ধে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করতে প্রস্তাব দিয়েছে রাশিয়া। তবে ইসরায়েল এই মধ্যস্থতা গ্রহণ করতে অনিচ্ছুক বলে দাবি মস্কোর। মঙ্গলবার (১৭ জুন) নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ। পেসকভ বলেন, প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেছেন রাশিয়া প্রয়োজনে মধ্যস্থতা করতে প্রস্তুত রয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে, আমরা ইসরায়েলের পক্ষ থেকে যেকোনো মধ্যস্থতা প্রস্তাক গ্রহণ করতে বা সংঘাত বন্ধে একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানে পথ বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে অনীহা দেখতে পাচ্ছি।’ ইরান রাশিয়ার অন্যতম শীর্ষ মিত্র, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উভয় দেশই সম্পর্ক আরও গভীর করেছে। অন্যদিকে ইসরায়েলের সঙ্গেও সুসম্পর্ক বজায় রেখেছে রাশিয়া, যা এই সংঘাত বন্ধে দেশটিকে একটি সম্ভাব্য মধ্যস্থতাকারী হয়ে ওঠার সুযোগ দিয়েছে। এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) জানিয়েছে, তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচি মোকাবেলার জন্য কূটনীতিই সর্বোত্তম পথ। মঙ্গলবার ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে সংঘাত নিয়ে ইইউভুক্ত ২৭ দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে ভিডিও কলে জরুরি আলোচনার পর ইইউর পররাষ্ট্র নীতি প্রধান কাজা কালাস বলেন, ‘আমরা সকলেই উত্তেজনা হ্রাসের জরুরি প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে একমত। ইরান পারমাণবিক বোমা বানাতে পারে না, যা প্রতিরোধের সমাধান হল কূটনীতি পথ এবং ইইউ এতে তার ভূমিকা পালন করবে।’ অন্যদিকে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার পাশাপাশি এবং পারমাণবিক আলোচনায় ফিরে আসার জন্য সহায়তাকারী ভূমিকা পালন করতে প্রস্তুত তুরস্ক। সোমবারের (১৬ জুন) তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান। এ ফোনালাপে ইসরাইল ও ইরানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার পাশাপাশি বৃহত্তর আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। তুরস্কের যোগাযোগ অধিদপ্তর জানিয়েছে, টেলিফোনে এরদোগান বলেছেন, তুরস্ক সংঘাত কমাতে এবং পারমাণবিক আলোচনায় ফিরে আসার জন্য সহায়তাকারী ভূমিকা পালন করতে প্রস্তুত। তিনি বলেন, চলমান সংঘাতের মধ্যে তিনি বিভিন্ন রাষ্ট্রনেতার সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। গত শুক্রবার (১৩ জুন) থেকে ইসরায়েল ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনাসহ একাধিক স্থানে সমন্বিত বিমান হামলা চালানোর পর থেকে আঞ্চলিক উত্তেজনা আরও বেড়েছে। জবাবে তেলআবিবে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালাচ্ছে তেহরান। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শুক্রবার থেকে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কমপক্ষে ২৪ জন নিহত এবং শতশত মানুষ আহত হয়েছে। অন্যদিকে ইরানের পক্ষ বলেছে, ইসরাইলি হামলায় কমপক্ষে ২২৪ জন নিহত এবং ১,০০০ জনেরও বেশি আহত হয়েছে।

ইরানে ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৪৫২ জন: এইচআরএএনএ

ইরানে ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা জানিয়েছে দেশটির মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস অ্যাক্টিভিস্টস ইন ইরান (এইচআরএএনএ)। সংস্থাটি জানায়, বোমা হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে ইরানে ৪৫২ জন মানুষ নিহত এবং ৬৪৬ জন আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার এইচআরএএনএ-এর বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে বিবিসি। এইচআরএএনএ বলছে, নিহতদের মধ্যে ২২৪ জন বেসামরিক নাগরিক এবং ১০৯ জন সামরিক সদস্য। এছাড়া ইসরায়েলের হামলায় ১৮৮ জন বেসামরিক নাগরিক এবং ১২৩ জন সামরিক সদস্য আহত হয়েছেন। তবে ১১৯ জন নিহত এবং ৩৩৫ জন আহত ব্যক্তি সামরিক নাকি বেসামরিক তা শনাক্ত করতে পারেনি সংস্থাটি। ইরানের সরকারের পক্ষ থেকে এত হতাহতের তথ্য সম্পর্কেও কিছু জানানো হয়নি। এর আগে ইসরায়েলি বিমান হামলায় দুই শতাধিক নাগরিক নিহতের তথ্য জানিয়েছিল দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

ইসরায়েলের হামলার বিরুদ্ধে অবস্থান জানাল আরব ও মুসলিম দেশগুলো

ইরানে ইসরায়েলের হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে আরব ও মুসলিম বিশ্বের দেশগুলো। মঙ্গলবার ২০টি আরব ও মুসলিম দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা এক যৌথ বিবৃতিতে এ নিন্দা জানান। একইসঙ্গে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা কমানোর আহ্বান জানান তারা। খবর সিএনএনের যৌথ এ বিবৃতিতে অংশ নিয়েছেন মিসর, জর্ডান, পাকিস্তান, বাহরাইন, ব্রুনাই, তুরস্ক, চাদ, আলজেরিয়া, কোমোরোস, সংযুক্ত আরব আমিরাত, জিবুতি, সৌদি আরব, সুদান, সোমালিয়া, ইরাক, ওমান, কাতার, কুয়েত, লিবিয়া এবং মৌরিতানিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। বিবৃতিতে তারা বলেন, ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যে বিপজ্জনক সংঘর্ষ ও উত্তেজনা চলছে তা নিয়ে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। তারা বলেন, প্রতিটি দেশের সার্বভৌমত্ব, ভৌগোলিক অখণ্ডতা এবং সুসম্পর্ক রক্ষার নীতিকে সম্মান জানানো উচিত। সব পক্ষকে শান্তিপূর্ণভাবে বিরোধ নিষ্পত্তির পথে এগিয়ে যেতে হবে। বিবৃতিতে তারা মধ্যপ্রাচ্যকে পারমাণবিক ও অন্যান্য গণবিধ্বংসী অস্ত্র থেকে মুক্ত করার গুরুত্বের কথাও তুলে ধরেন। পাশাপাশি দেশগুলোকে পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তিতে (এনপিটিতে) যোগ দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। উল্লেখ্য, ইসরায়েল এ চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী নয়। এ আন্তর্জাতিক চুক্তির উদ্দেশ্য হলো পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার ঠেকানো। পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা জোর দিয়ে বলেন, এ সংকট কেবল কূটনীতির মাধ্যমে সমাধান হতে পারে। যুদ্ধ দিয়ে কোনো স্থায়ী সমাধান আসবে না।

আয়াতুল্লাহ খামেনির পরিণতি হতে পারে সাদ্দাম হোসেনের মতো, ইসরায়েলের হুমকি

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ হুমকি দিয়ে বলেছেন, “ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির পরিণতি ইরাকের সাবেক শাসক সাদ্দাম হোসেনের মতো হতে পারে। যিনি ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন আগ্রাসনের পর ক্ষমতাচ্যুত হন ও পরবর্তীতে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।” মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা। আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, স্থানীয় গণমাধ্যমকে কাটজ বলেন- “আমি ইরানি স্বৈরাচারীকে সতর্ক করছি— ইসরায়েলি বেসামরিক জনগণের ওপর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা এবং যুদ্ধাপরাধ চালিয়ে যাওয়ার পরিণাম ভালো হবে না।” আয়াতুল্লাহ খামেনিকে উদ্দেশ্য করে হুমকি দিয়ে ইসরায়েলের ওই প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, “খামেনির মনে রাখা উচিত— ইসরায়েলের বিরুদ্ধে একই পথ বেছে নেওয়া ইরানের প্রতিবেশী এক দেশের স্বৈরশাসকের পরিণতি কী হয়েছিল।” ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, “আজও আমরা তেহরানে শাসকগোষ্ঠী ও সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে অভিযান চালিয়ে যাব।”

এবার মোসাদ কার্যালয়ে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ইরানের

ইসরায়েলি গুপ্তচর সংস্থা মোসাদের কার্যালয় ও দেশটির একটি সামরিক গোয়েন্দা কেন্দ্রে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার দাবি করেছে ইরানের ইসলামিক বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (আইআরজিসি)। মঙ্গলবার (১৭ জুন) আইআরজিসি এক বিবৃতির বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে ইরানের আধা-সরকারি বার্তা সংস্থা তাসনিম। আইআরজিসি এক বিবৃতিতে বলা হয়, মঙ্গলবার ভোরে তাদের অ্যারোস্পেস ফোর্স ইউনিটগুলোর মোসাদের বিরুদ্ধে কার্যকর অভিযান পরিচালনা করেছে। অত্যন্ত উন্নত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দ্বারা সুরক্ষিত থাকা সত্ত্বেও, দখলদার সেনাবাহিনীর সামরিক গোয়েন্দা অধিদপ্তর ‘আমান’ এবং তেল আবিবে মোসাদের কার্যালয়ে ক্ষেপণাস্ত্র সফলভাবে আঘাত হেনেছে। আইআরজিসি আরও জানিয়েছে, গোয়েন্দা সংস্থার এসব কার্যালয়ে এখন আগুন জ্বলছে। এরআগে সোমবার (১৬ জুন) রাতে তেল আবিব ও হাইফা শহরকে টার্গেট করে পাল্টা হামলা শুরু করে ইরান, মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত চলে। বিশেষ করে রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার কেন্দ্র আইআরআইবি-তে হামলার পরপরই ইরান সরাসরি জবাব দেয় ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে। ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত এক ঘোষণায় জানানো হয়, ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোর (আইআরজিসি) ‘অপারেশন ট্রু প্রমিস-৩’-এর নবম ধাপ শুরু করেছে। এই হামলায় ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন একসঙ্গে ব্যবহার করা হয়। আইআরজিসির একজন মুখপাত্র জানান, আমরা ইহুদিবাদীদের শান্তিতে থাকতে দেব না। এর আগে, সোমবার সন্ধ্যায় ইসরায়েল একযোগে ইরানের বিভিন্ন স্থানে বিমান হামলা চালায়। হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় তেহরানের পাশের একটি সামরিক ঘাঁটি, কেরমানশাহ শহরের ফারাবি হাসপাতাল এবং ইসলামিক রিপাবলিক অব ইরান ব্রডকাস্টিং (আইআরআইবি) ভবন। এসব স্থাপনা কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে ইসরায়েল।

ইসরায়েলের বাসে পড়ল ইরানি মিসাইল

ইসরায়েলের একটি বাসে ইরানের মিসাইল আঘাত হেনেছে। এতে বাসটি বিধ্বস্ত হয়ে আগুন ধরে যায়। খবর আলজাজিরার। মঙ্গলবার (১৭ জুন) ইসরায়েলের ওয়াইনেট নিউজ জানিয়েছে, ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের চারটি স্থানে আঘাত হেনেছে। যার ফলে হার্জলিয়ায় একটি আট তলা ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মিসাইল পড়ে উপকূলীয় শহরে একটি খালি বাসে আগুন লেগে যায়। জরুরি পরিষেবার বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, এই সর্বশেষ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। সোমবার (১৬ জুন) রাতে তেলআবিবকে লক্ষ্য করে সবচেয়ে বড় ও ভয়াবহ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। ইরান বলেছে, এটা তাদের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ও তীব্র হামলা। অপর দিকে তেলআবিব ও আশেপাশের এলাকায় সাইরেন বাজতে শুরু করে। এদিকে ইসরায়েলের হামলায় ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোর (আইআরজিসি)-এর শীর্ষ কমান্ডার নিহত হয়েছেন। আইআরজিসির সদর দপ্তরের প্রধান কমান্ডার নিহতের পর সদ্য তিনি এ পদে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। আলজাজিরার মঙ্গলবারের (১৭ জুন) প্রতিবেদনে বলা হয়, তেহরানে হামলা করে আইআরজিসি’র খাতাম আল-আনবিয়া কেন্দ্রীয় সদর দপ্তরের প্রধান আলী শাদমানিকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। দখলদারদের সামরিক বাহিনী এ তথ্য জানিয়েছে। ইসরায়েল শাদমানিকে ইরানের “সবচেয়ে সিনিয়র সামরিক কমান্ডার” এবং ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আলী খামেনির “সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি” হিসেবে বর্ণনা করেছে। ইরানের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

ইসরায়েলের তেল শোধনাগারে ইরানের হামলা, নিহত ৩

ইসরায়েলের হাইফা শহরে রাতভর ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় বিধ্বস্ত হয়েছে ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় তেল শোধনাগার। এ ঘটনায় তিনজন নিহত হয়েছেন। নিহতদের সবাই শহরের উত্তরে অবস্থিত বাজান তেল শোধনাগার কমপ্লেক্সে কর্মরত ছিলেন। সোমবার (১৬ জুন) সন্ধ্যায় এ তথ্য প্রকাশের অনুমতি দেওয়া হয় বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি গণমাধ্যম। খবর টাইমস অব ইসরায়েলের। প্রতিবেদনে বলা হয়, সোমবার ভোররাতে একাধিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় হাইফাসহ পেতাহ টিকভা ও বনে ব্রাক শহরে প্রাণহানি ঘটে। পেতাহ টিকভায় চারজন এবং বনে ব্রাকে একজন নিহত হন। হাইফা শহরের মেয়র ইয়োনা ইয়াহাভ প্রথমে জানান, তিনজন নিহত হয়েছেন একটি "অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায়," তবে তখন তিনি ওই স্থানটির নাম প্রকাশ করেননি। পরে জানা যায়, লক্ষ্য ছিল বাজান তেল শোধনাগার। ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পরপরই কমপ্লেক্সটিতে অগ্নিকাণ্ড ঘটে, যা উদ্ধার তৎপরতাকে জটিল করে তোলে। হারেৎজ পত্রিকার মতে, নিহত তিনজন সরাসরি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাতে নিহত হননি, বরং আগুন ও ধোঁয়ায় শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা যান। উদ্ধারকারীরা প্রথমদিকে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে সক্ষম হলেও, পরে সে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ধারণা করা হচ্ছে, অতিরিক্ত তাপ ও শ্বাসরুদ্ধ অবস্থায় তাদের মৃত্যু হয়েছে। তাদের পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি, তবে সবাই হাইফা ও আশপাশের ক্রাইয়ট এলাকার বাসিন্দা বলে জানা গেছে। ওই সময় আরও দুই কর্মী সেখানে ছিলেন, যারা হালকা আহত হয়ে প্রাণে রক্ষা পান। বাজান তেল শোধনাগার কমপ্লেক্স হাইফা উপসাগরের অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় অবস্থিত। এই স্থাপনাটি বহু বছর ধরে ইসরায়েলের শত্রুদের হুমকির মধ্যে রয়েছে, যার মধ্যে আছে ইরানের হিজবুল্লাহও। ২০২২ সালে ইসরায়েল সরকার সিদ্ধান্ত নেয়, ২০৩০ সালের মধ্যে এই তেল শোধনাগার সরিয়ে নেওয়া হবে। চলতি বছর থেকেই শোধনাগারের পাশে থাকা বড় তেল ট্যাংক সরানোর কাজ শুরু হওয়ার কথা। হাইফা শহরের মেয়র ইয়াহাভ সোমবার আর্মি রেডিওকে বলেন, “সরকারের এখন সাহস দেখানোর সময় এসেছে। এই কারখানাগুলোকে আবাসিক এলাকা থেকে সরাতে হবে।” হাইফার বাসিন্দা ও পরিবেশবাদীরা বহুদিন ধরে এই তেল শোধনাগার বন্ধ ও সরিয়ে নেওয়ার দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের আশঙ্কা, এরকম স্থাপনায় হামলা হলে পরিবেশ ও মানবজীবনে বিপর্যয় নেমে আসবে। এবার সেই আশঙ্কাই সত্যি হলো।

ইসরায়েলের মাটিতে সবচেয়ে বড় ও ভয়াবহ হামলা চালাল ইরান

ইরান ও ইসরায়েল আবারও হামলা ও পাল্টাহামলায় লিপ্ত হয়েছে। সোমবার রাতে তেলআবিবকে লক্ষ্য করে সবচেয়ে বড় ও ভয়াবহ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। ইরান বলেছে, এটা তাদের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ও তীব্র হামলা। অপর দিকে তেলআবিব ও আশেপাশের এলাকায় অ্যালার্ম বাজতে শুরু করে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লাহ আলি খামেনিকে হত্যা করাই হতে পারে এই সংঘাত শেষ করার উপায়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সামাজিক মাধ্যমে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, সবাইকে অবিলম্বে তেহরান ছাড়তে। কারণ তিনি চাইছেন না যে ইরান পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করুক। ইরানে হামলায় অন্তত ২২০ জন নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে রয়েছে ৭০ জন নারী ও শিশু। অপর দিকে, ইরানে পাল্টা হামলায় ২০ জন মারা গেছে। এদিকে গাজায় চলমান যুদ্ধে নিহত হয়েছে অন্তত ৫৫ হাজার ৪৩২ জন ও আহত হয়েছে ১ লাখ ২৮ হাজার ৯২৩ জন। অপর দিকে, ৭ই অক্টোবর হামলায় ইসরায়েলে ১ হাজার ১৩৯ জন প্রাণ হারান ও ২০০ জনকে জিম্মিতে নেওয়া হয়। তথ্য : আলজাজিরা

বলপ্রয়োগ করে ইরানে সরকার পরিবর্তনের চেষ্টা হবে কৌশলগত ভুল: মাখোঁ

বলপ্রয়োগ করে ইরানে সরকার পরিবর্তনের চেষ্টার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ। তিনি বলেছেন, তেহরানে সরকার উৎখাতের চেষ্টা হবে একটি কৌশলগত ভুল। স্থানীয় সময় সোমবার কানাডায় অনুষ্ঠিত জি-৭ সম্মেলনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট। মাখোঁ বলেন, যারা মনে করেন, বাইরে থেকে বোমা ফেলে কোনো দেশকে জোর করে ‘উদ্ধার’ করা যায়, তারা বরাবরই ভুল করে এসেছেন। এ সময় ইরান ও ইসরায়েলকে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলা বন্ধের আহ্বান জানান তিনি। সম্মেলনের ফাঁকে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন ইমানুয়েল মাখোঁ। এ সময় তার কাছে খবর আসে, মধ্যপ্রাচ্যের চলমান সংকট সামাল দিতে দেশে ফিরে যাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্পের আগেভাগে সম্মেলন ত্যাগের বিষয়ে জানতে চাইলে মাখোঁ বলেন, ইরান-ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এখন এমন একটি পর্যায়ে আছে, যেখান থেকে আরও বিস্তৃত পরিসরের আলোচনা শুরু হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র যদি যুদ্ধবিরতির ব্যবস্থা করতে পারে, তবে সেটা খুব ভালো একটি বিষয়। ফ্রান্স তা সমর্থন করবে। ইরান-ইসরায়েলের মধ্যকার নজিরবিহীন সংঘাত পঞ্চম দিনে গড়িয়েছে। উভয় পক্ষ আকাশপথে পাল্টাপাল্টি হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলের হামলায় ইরানে অন্তত ২২৪ জন নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে ইসরায়েলে নিহত হয়েছেন ২৪ জন।

ট্রাম্পের পর আগেভাগে জি-৭ সম্মেলন ছাড়ছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীও

কানাডায় অনুষ্ঠিত জি-৭ শীর্ষ সম্মেলন থেকে একদিন আগেই দেশে ফিরছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এবার তাকে অনুসরণ করলেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীও। সোমবার রাতে সিবিএস নিউজের প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জি-৭ সম্মেলন ছেড়ে আগেভাগে ওয়াশিংটন ফিরছেন। মূলত যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র ইসরায়েল ও এর আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী ইরানের মধ্যে সংঘাত তীব্রতর হওয়ার প্রেক্ষাপটে গোটা মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা ব্যাপকভাবে বাড়ছে। তার জেরেই নিজ দেশে ফেরার তাগাদা অনুভব করছেন মার্কিন নেতারা। এর আগে হোয়াইট হাউস থেকে জানানো হয়েছিল, মধ্যপ্রাচ্যের চলমান পরিস্থিতির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট আগেভাগেই জি-৭ সম্মেলন ত্যাগ করতে যাচ্ছেন। বিশ্বের শক্তিশালী অর্থনীতির সাত দেশের জোট জি-৭ এর এবারের সম্মেলনটি হচ্ছে কানাডায়।

ইরানে হামলায় জড়িত জর্ডান-ফ্রান্স-যুক্তরাজ্য-যুক্তরাষ্ট্রকে কঠোর হুঁশিয়ারি

ইরানে হামলায় সমর্থন ও অংশ নেওয়া সমস্ত দেশ ও গোষ্ঠীকে বৈধ সামরিক লক্ষ্য হিসেবে গণ্য করবে তেহরান। আত্মরক্ষার অধিকার অনুযায়ী তারা হামলায় জড়িত দেশগুলোকে পাল্টা জবাব দেওয়া হতে পারে। ইরান বলেছে, অমানবিক ও অপরাধমূলক এ হামলা শুরু হওয়ার পর স্পষ্ট হয়েছে, অনেক দেশ ও আন্তর্জাতিক পক্ষ প্রকাশ্যে ও গোপনে ইসরায়েলকে সমর্থন ও সহায়তা দিয়েছে। উদাহরণ হিসেবে জর্ডান, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রকে উল্লেখ করে বলা হয়েছে, তারা জেট বিমান, আকাশ প্রতিরক্ষা ও জাহাজ সরবরাহ করে এ হামলায় অংশ নিয়েছে। অন্যদিকে, আজারবাইজানে ও পারস্য উপসাগর এলাকায় মোসাদ ও অপরাধচক্রের কার্যক্রম এবং ইরানে অনুপ্রবেশের চেষ্টায় গুপ্তচর ও বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর ভূমিকাও প্রকাশ্যে এসেছে। ইরান বলেছে, যে সমস্ত দেশ ও গোষ্ঠী এই ষড়যন্ত্রে জড়িত রয়েছে, তারা সবাইকে আত্মরক্ষার অংশ হিসেবে টার্গেট করা হতে পারে। তেহরান আরও বলেছে, যে কোনো দেশ আবার যদি ইরানে হামলায় সমর্থন ও অংশ নেয়, তাহলে তা ইরানি জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা হিসেবে গণ্য করা হবে ও সমুচিত জবাব দেওয়া হবে। ইরান দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, তারা জাতিকে ও সার্বভৌমত্বকে রক্ষার জন্য যা করার দরকার তাই করবে, অপরাধীরা সম্পূর্ণ পরাজিত না হওয়া পর্যন্ত এই লড়াই চলতে থাকবে বলেও জানিয়েছে। তথ্যসূত্র: মেহের নিউজ এজেন্সি