
ইসরায়েলের তেল শোধনাগারে ইরানের হামলা, নিহত ৩
ইসরায়েলের হাইফা শহরে রাতভর ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় বিধ্বস্ত হয়েছে ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় তেল শোধনাগার। এ ঘটনায় তিনজন নিহত হয়েছেন। নিহতদের সবাই শহরের উত্তরে অবস্থিত বাজান তেল শোধনাগার কমপ্লেক্সে কর্মরত ছিলেন। সোমবার (১৬ জুন) সন্ধ্যায় এ তথ্য প্রকাশের অনুমতি দেওয়া হয় বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি গণমাধ্যম। খবর টাইমস অব ইসরায়েলের। প্রতিবেদনে বলা হয়, সোমবার ভোররাতে একাধিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় হাইফাসহ পেতাহ টিকভা ও বনে ব্রাক শহরে প্রাণহানি ঘটে। পেতাহ টিকভায় চারজন এবং বনে ব্রাকে একজন নিহত হন। হাইফা শহরের মেয়র ইয়োনা ইয়াহাভ প্রথমে জানান, তিনজন নিহত হয়েছেন একটি "অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায়," তবে তখন তিনি ওই স্থানটির নাম প্রকাশ করেননি। পরে জানা যায়, লক্ষ্য ছিল বাজান তেল শোধনাগার। ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পরপরই কমপ্লেক্সটিতে অগ্নিকাণ্ড ঘটে, যা উদ্ধার তৎপরতাকে জটিল করে তোলে। হারেৎজ পত্রিকার মতে, নিহত তিনজন সরাসরি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাতে নিহত হননি, বরং আগুন ও ধোঁয়ায় শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা যান। উদ্ধারকারীরা প্রথমদিকে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে সক্ষম হলেও, পরে সে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ধারণা করা হচ্ছে, অতিরিক্ত তাপ ও শ্বাসরুদ্ধ অবস্থায় তাদের মৃত্যু হয়েছে। তাদের পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি, তবে সবাই হাইফা ও আশপাশের ক্রাইয়ট এলাকার বাসিন্দা বলে জানা গেছে। ওই সময় আরও দুই কর্মী সেখানে ছিলেন, যারা হালকা আহত হয়ে প্রাণে রক্ষা পান। বাজান তেল শোধনাগার কমপ্লেক্স হাইফা উপসাগরের অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় অবস্থিত। এই স্থাপনাটি বহু বছর ধরে ইসরায়েলের শত্রুদের হুমকির মধ্যে রয়েছে, যার মধ্যে আছে ইরানের হিজবুল্লাহও। ২০২২ সালে ইসরায়েল সরকার সিদ্ধান্ত নেয়, ২০৩০ সালের মধ্যে এই তেল শোধনাগার সরিয়ে নেওয়া হবে। চলতি বছর থেকেই শোধনাগারের পাশে থাকা বড় তেল ট্যাংক সরানোর কাজ শুরু হওয়ার কথা। হাইফা শহরের মেয়র ইয়াহাভ সোমবার আর্মি রেডিওকে বলেন, “সরকারের এখন সাহস দেখানোর সময় এসেছে। এই কারখানাগুলোকে আবাসিক এলাকা থেকে সরাতে হবে।” হাইফার বাসিন্দা ও পরিবেশবাদীরা বহুদিন ধরে এই তেল শোধনাগার বন্ধ ও সরিয়ে নেওয়ার দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের আশঙ্কা, এরকম স্থাপনায় হামলা হলে পরিবেশ ও মানবজীবনে বিপর্যয় নেমে আসবে। এবার সেই আশঙ্কাই সত্যি হলো।

ইসরায়েলের মাটিতে সবচেয়ে বড় ও ভয়াবহ হামলা চালাল ইরান
ইরান ও ইসরায়েল আবারও হামলা ও পাল্টাহামলায় লিপ্ত হয়েছে। সোমবার রাতে তেলআবিবকে লক্ষ্য করে সবচেয়ে বড় ও ভয়াবহ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। ইরান বলেছে, এটা তাদের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ও তীব্র হামলা। অপর দিকে তেলআবিব ও আশেপাশের এলাকায় অ্যালার্ম বাজতে শুরু করে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লাহ আলি খামেনিকে হত্যা করাই হতে পারে এই সংঘাত শেষ করার উপায়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সামাজিক মাধ্যমে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, সবাইকে অবিলম্বে তেহরান ছাড়তে। কারণ তিনি চাইছেন না যে ইরান পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করুক। ইরানে হামলায় অন্তত ২২০ জন নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে রয়েছে ৭০ জন নারী ও শিশু। অপর দিকে, ইরানে পাল্টা হামলায় ২০ জন মারা গেছে। এদিকে গাজায় চলমান যুদ্ধে নিহত হয়েছে অন্তত ৫৫ হাজার ৪৩২ জন ও আহত হয়েছে ১ লাখ ২৮ হাজার ৯২৩ জন। অপর দিকে, ৭ই অক্টোবর হামলায় ইসরায়েলে ১ হাজার ১৩৯ জন প্রাণ হারান ও ২০০ জনকে জিম্মিতে নেওয়া হয়। তথ্য : আলজাজিরা

বলপ্রয়োগ করে ইরানে সরকার পরিবর্তনের চেষ্টা হবে কৌশলগত ভুল: মাখোঁ
বলপ্রয়োগ করে ইরানে সরকার পরিবর্তনের চেষ্টার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ। তিনি বলেছেন, তেহরানে সরকার উৎখাতের চেষ্টা হবে একটি কৌশলগত ভুল। স্থানীয় সময় সোমবার কানাডায় অনুষ্ঠিত জি-৭ সম্মেলনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট। মাখোঁ বলেন, যারা মনে করেন, বাইরে থেকে বোমা ফেলে কোনো দেশকে জোর করে ‘উদ্ধার’ করা যায়, তারা বরাবরই ভুল করে এসেছেন। এ সময় ইরান ও ইসরায়েলকে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলা বন্ধের আহ্বান জানান তিনি। সম্মেলনের ফাঁকে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন ইমানুয়েল মাখোঁ। এ সময় তার কাছে খবর আসে, মধ্যপ্রাচ্যের চলমান সংকট সামাল দিতে দেশে ফিরে যাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্পের আগেভাগে সম্মেলন ত্যাগের বিষয়ে জানতে চাইলে মাখোঁ বলেন, ইরান-ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এখন এমন একটি পর্যায়ে আছে, যেখান থেকে আরও বিস্তৃত পরিসরের আলোচনা শুরু হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র যদি যুদ্ধবিরতির ব্যবস্থা করতে পারে, তবে সেটা খুব ভালো একটি বিষয়। ফ্রান্স তা সমর্থন করবে। ইরান-ইসরায়েলের মধ্যকার নজিরবিহীন সংঘাত পঞ্চম দিনে গড়িয়েছে। উভয় পক্ষ আকাশপথে পাল্টাপাল্টি হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলের হামলায় ইরানে অন্তত ২২৪ জন নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে ইসরায়েলে নিহত হয়েছেন ২৪ জন।

ট্রাম্পের পর আগেভাগে জি-৭ সম্মেলন ছাড়ছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীও
কানাডায় অনুষ্ঠিত জি-৭ শীর্ষ সম্মেলন থেকে একদিন আগেই দেশে ফিরছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এবার তাকে অনুসরণ করলেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীও। সোমবার রাতে সিবিএস নিউজের প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জি-৭ সম্মেলন ছেড়ে আগেভাগে ওয়াশিংটন ফিরছেন। মূলত যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র ইসরায়েল ও এর আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী ইরানের মধ্যে সংঘাত তীব্রতর হওয়ার প্রেক্ষাপটে গোটা মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা ব্যাপকভাবে বাড়ছে। তার জেরেই নিজ দেশে ফেরার তাগাদা অনুভব করছেন মার্কিন নেতারা। এর আগে হোয়াইট হাউস থেকে জানানো হয়েছিল, মধ্যপ্রাচ্যের চলমান পরিস্থিতির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট আগেভাগেই জি-৭ সম্মেলন ত্যাগ করতে যাচ্ছেন। বিশ্বের শক্তিশালী অর্থনীতির সাত দেশের জোট জি-৭ এর এবারের সম্মেলনটি হচ্ছে কানাডায়।

ইরানে হামলায় জড়িত জর্ডান-ফ্রান্স-যুক্তরাজ্য-যুক্তরাষ্ট্রকে কঠোর হুঁশিয়ারি
ইরানে হামলায় সমর্থন ও অংশ নেওয়া সমস্ত দেশ ও গোষ্ঠীকে বৈধ সামরিক লক্ষ্য হিসেবে গণ্য করবে তেহরান। আত্মরক্ষার অধিকার অনুযায়ী তারা হামলায় জড়িত দেশগুলোকে পাল্টা জবাব দেওয়া হতে পারে। ইরান বলেছে, অমানবিক ও অপরাধমূলক এ হামলা শুরু হওয়ার পর স্পষ্ট হয়েছে, অনেক দেশ ও আন্তর্জাতিক পক্ষ প্রকাশ্যে ও গোপনে ইসরায়েলকে সমর্থন ও সহায়তা দিয়েছে। উদাহরণ হিসেবে জর্ডান, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রকে উল্লেখ করে বলা হয়েছে, তারা জেট বিমান, আকাশ প্রতিরক্ষা ও জাহাজ সরবরাহ করে এ হামলায় অংশ নিয়েছে। অন্যদিকে, আজারবাইজানে ও পারস্য উপসাগর এলাকায় মোসাদ ও অপরাধচক্রের কার্যক্রম এবং ইরানে অনুপ্রবেশের চেষ্টায় গুপ্তচর ও বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর ভূমিকাও প্রকাশ্যে এসেছে। ইরান বলেছে, যে সমস্ত দেশ ও গোষ্ঠী এই ষড়যন্ত্রে জড়িত রয়েছে, তারা সবাইকে আত্মরক্ষার অংশ হিসেবে টার্গেট করা হতে পারে। তেহরান আরও বলেছে, যে কোনো দেশ আবার যদি ইরানে হামলায় সমর্থন ও অংশ নেয়, তাহলে তা ইরানি জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা হিসেবে গণ্য করা হবে ও সমুচিত জবাব দেওয়া হবে। ইরান দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, তারা জাতিকে ও সার্বভৌমত্বকে রক্ষার জন্য যা করার দরকার তাই করবে, অপরাধীরা সম্পূর্ণ পরাজিত না হওয়া পর্যন্ত এই লড়াই চলতে থাকবে বলেও জানিয়েছে। তথ্যসূত্র: মেহের নিউজ এজেন্সি

চীনের পরমাণু অস্ত্র নিয়ে উত্তেজনা
দীর্ঘ দিন ধরেই ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে ‘গুরুতর হুমকি’ বলে বিবেচনা করে আসছিল ইসরায়েল। আর বহুদিনের প্রস্তুতি শেষে ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ নামে ইরানের বিরুদ্ধে অভিযানে একযোগে হামলা চালানো হয়েছে ইরানের পরমাণু স্থাপনা, ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি, সামরিক ঘাঁটি ও শীর্ষ নেতৃত্বের ওপর। তেল আবিব জানিয়েছে, এটি ছিল ‘একটি সুনির্দিষ্ট ও প্রতিরোধমূলক হামলা’ যেটির লক্ষ্য ছিল ইরানের পারমাণবিক হুমকি প্রতিহত করা। এর আগে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ইসরায়েল সরকার সতর্ক করেছিল, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চূড়ান্ত ধাপে পৌঁছেছে। ইসরায়েলের হামলার জবাবে তেলআবিবসহ বিভিন্ন শহরে ইরান একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের মাধ্যমে অপারেশন ‘ট্রু প্রমিজ থ্রি’ শুরু করে দেশটি। ইসরায়েলের এ হামলায় নাতানজ, ইসফাহান ও ফরদোর তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পরমাণু স্থাপনা এবং একাধিক শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানীকে নিশানা করা হয়। স্যাটেলাইট চিত্র ও বিশ্লেষকদের মতে, অন্তত দুটি স্থাপনায় উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হয়েছে। তবে ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলোর অনেক অংশ গভীর ভূগর্ভে থাকায় ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণ পরিমাণ এখনো পরিষ্কার নয়। ইসরায়েল দাবি করেছে, হামলায় ‘গুরুতর ক্ষতি’ হয়েছে এসব স্থাপনা। যদিও ইরান এমন দাবিকে উড়িয়ে দিয়েছে। ইরান ইসরায়েলের এই পাল্টা পাল্টি হামলার মধ্যেই এবার চীনের পরমাণু অস্ত্র নিয়ে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। পারমাণবিক অস্ত্রের ভান্ডার বাড়াচ্ছে চীন। পারমাণবিক শক্তিধর যেকোনো দেশের তুলনায় নিজেদের পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি করছে চীন। ২০২৫ সালের প্রথম দিকে দেশটির পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা ৬০০-তে পৌঁছেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যা বিশ্বব্যাপী অস্ত্র প্রতিযোগিতায় গতি যোগ করেছে এবং কৌশলগত উদ্বেগ বাড়িয়েছে। তবে বেইজিং বলেছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি, শুধু আত্মরক্ষার জন্য। সম্প্রতি বেইজিংয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গুও জিয়াকুন বলেন, চীন তার জাতীয় নিরাপত্তার প্রয়োজনীয়তা অনুসারে পারমাণবিক ক্ষমতা সর্বনিম্ন স্তরে রেখেছে এবং কখনো অস্ত্র প্রতিযোগিতায় জড়িত হয় না। বেইজিং যেকোনো সময় এবং যেকোনো পরিস্থিতিতেই পারমাণবিক অস্ত্রের প্রথম ব্যবহার না করার নীতি অনুসরণ করে এবং অ-পারমাণবিক রাষ্ট্রগুলোর বিরুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার না করার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। মুখপাত্র আরও বলেন, চীন একমাত্র পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র যারা এই ধরনের নীতি গ্রহণ করেছে এবং নিজেদের বৈধ নিরাপত্তা স্বার্থ রক্ষা এবং বিশ্বকে শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল রাখার জন্য দৃঢ়ভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে।

‘মিস্টার ট্রাম্প, আমরা কারা জানতে কারবালার ইতিহাস পড়ুন’
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে উদ্দেশ করে ফেসবুকে ইরান মিলিটারে ও এক্সে (সাবেক টুইটর) ইসলামিক রিপাবলিক অফ ইরান বার্তা দিয়েছে। এরমধ্যে বার্তাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বার্তায় বলা হয়েছে,‘মি. ডোনাল্ড ট্রাম্প!আপনি যদি না জানেন আমরা কারা, তাহলে কারবালার ইতিহাস পড়ুন।’ এদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানিদের তাদের রাজধানী শহর ছেড়ে যাওয়ার জন্য সতর্কবর্তা দিয়েছেন। স্থানীয় সময় সোমবার (১৬ জুন) ট্রুথ সোশ্যালে তিনি বলেন, ‘সবারই অবিলম্বে তেহরান ছেড়ে যাওয়া উচিত!’, তবে কেন ছাড়া উচিত, তা তিনি উল্লেখ করেননি। ট্রাম্প তার পোস্টে আরও বলেন, ‘ইরানকে যে ‘চুক্তি’ স্বাক্ষর করতে বলেছিলাম তাতে স্বাক্ষর করা উচিত ছিল। কী লজ্জাজনক এবং মানব জীবনের অপচয়। সহজভাবে বলতে গেলে, ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র থাকতে পারে না, আমি বারবার বলেছি!’ ট্রাম্পের এমন বক্তব্যের পর ইরান মিলিটারির ফেসবুক ও ইসলামিক রিপাবলিক অফ ইরানের এক্স আইডি থেকে এমন পোস্ট করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

‘আয়াতুল্লাহ খামেনিকে হত্যার মাধ্যমে যুদ্ধ শেষ হবে’
ইরানের সুপ্রিম নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে হত্যা চেষ্টার ইঙ্গিত দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। এক সাক্ষাৎকারে নেতানিয়াহু বলেন, খামেনিকে হত্যা করলে যুদ্ধ বাড়বে না; বরং যুদ্ধ শেষ হবে। সোমবার (১৬ জুন) এবিসি নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নেতানিয়াহু এ কথা বলেছেন। খামেনিকে হত্যা চেষ্টার ব্যাপারে প্রশ্ন করলে যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত নেতানিয়াহু বলেন, দেখুন আমাদের যা করা প্রয়োজন আমরা তাই করব। আমি বিস্তারিত কিছু বলব না। কিন্তু আমরা তাদের শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানীদের টার্গেট করেছি। যদি আমরা খামেনিকে হত্যা করি তাহলে যুদ্ধ বাড়বে না। এটি যুদ্ধ বন্ধ করবে। এদিকে বার্তাসংস্থা রয়টার্স কয়েকটি সূত্রের বরাতে আজ জানিয়েছে, ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির আলোচনায় রাজি আছে ইরান। এজন্য তারা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর শরণাপন্ন হয়েছে। এছাড়া রয়টার্সের ওই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে- ইরান পারমাণবিক আলোচনায় নমনীয় হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে। তবে নেতানিয়াহু বলেছেন, ইরান সত্যিকার অর্থে আলোচনা চায় না। এ ব্যাপারে তাদের কাছে গোয়েন্দা তথ্য আছে বলেও দাবি করেন তিনি। এদিকে রোববার মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলো জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প খামেনিকে হত্যায় ভেটো দিয়েছেন। এরপর আজ নেতানিয়াহু জানালেন- তারা খামেনিকে হত্যার চেষ্টা বাদ দেননি। সূত্র: এবিসি নিউজ

ইসরাইলের বিভিন্ন শহরে হামলা শুরু করেছে ইরান
দখলদার ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে আবারও হামলা শুরু করেছে ইরান। এবারও ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরকে লক্ষ্য করে মিসাইল ছুড়েছে ইরান। সোমবার (১৬ জুন) রাতে মিসাইল ছুড়ে ইরান। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর বরাত দিয়ে আল জাজিরা জানিয়েছে, উত্তর ইসরায়েলের বিভিন্ন জায়গায় সতর্কতামূলক সাইরেন বাজানো হয়েছে। এখন এসব মিসাইল ভূপাতিত করার চেষ্টা করা হবে। এর আগে ইসরায়েলের তেল আবির শহরের বাসিন্দাদের সরে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (আইআরজিসি)। ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে তেল আবিবের নাগরিকদের অবিলম্বে এলাকা ছাড়তে হবে।

নতুন ‘সুইসাইড ড্রোন’ উন্মোচন ইরানের
যুদ্ধের মধ্যে নতুন ‘সুইসাইড ড্রোন’ উন্মোচন করেছে ইরান। দেশটির দাবি, ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ডস কর্পসের (আইআরজিসি) মহাকাশ বাহিনী সোমবার তাদের নতুন সুইসাইড ড্রোন ‘শাহেদ-১০৭’ উন্মোচন করেছে। সোমবার (১৬ জুন) মেহের নিউজ এজেন্সির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘শাহেদ-১০৭’ নামের নতুন এ ড্রোন মানববিহীন আকাশযান (ইউএভি)। এটি শত্রু লক্ষ্যবস্তুর বিরুদ্ধে আত্মঘাতী অভিযানে ব্যবহারের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। মেহের নিউজ জানিয়েছে, শাহেদ-১০৭-এর ছবিও প্রকাশ করা হয়েছে। এটি একটি পিস্টন ইঞ্জিন দ্বারা চালিত, যা ড্রোনটিকে এক হাজার ৫০০ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বে উড়তে সক্ষম করে। এই ড্রোনের দীর্ঘ পরিসর এবং ক্ষমতা এটিকে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, শাহেদ-১০৭ ড্রোনের একটি ঝাঁক ব্যবহার করা হলে তা ইসরায়েলের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার উপর উল্লেখযোগ্য ক্ষতি সাধন করতে পারে। এই ড্রোনটি ইরানের সামরিক প্রযুক্তির ক্ষেত্রে একটি নতুন মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে শাহেদ-১০৭-এর উন্মোচন আঞ্চলিক নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে। তবে ইরানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই ড্রোন তাদের প্রতিরক্ষা কৌশলের অংশ হিসেবে ব্যবহৃত হবে।

ইরানে অস্ত্র ভরা বিমান পাঠিয়েছে চীন
ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে সরাসরি জড়িয়ে পড়েছে চীন। গোপনে দিচ্ছে অস্ত্র। ইরানের রাজধানী তেহরানে বেইজিংয়ের একটি কার্গো বিমান নামার পর থেকেই শুরু হয়েছে এমন জল্পনা-কল্পনা। মিডিয়ার প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, ওই বিমানটি আকাশে থাকতেই ট্রান্সপন্ডার বন্ধ করে দিয়েছিল, যাতে রাডারে সেই বিমানের অস্তিত্ব ধরা না পড়ে। সেই থেকেই ডানা মেলেছে, নানা গুঞ্জন। তাহলে কী গোপনে ইরানকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র সরবরাহ করছে চীন? নির্ভরযোগ্য সূত্র না থাকলেও ভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়া ডটকম বেশ গুরুত্ব দিয়েই ওই বিমান অবতরণের খবর প্রকাশ করেছে। এভাবে ট্রান্সপন্ডার বন্ধ করে ওই বিমানের অবতরণের ঘটনা, গোপন কোনো অভিযানের দিকেই ইঙ্গিত করে বলে জানিয়েছে গণমাধ্যমটি। ইরানের সঙ্গে চীনের সামরিক ও কৌশলগত সম্পর্ক রয়েছে। তাই ওই বিমানে সামরিক অস্ত্র বা নিষিদ্ধ কোনো পণ্য থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদিও এমন খবরের সত্যতা যাচাই করা যায়নি। এরই মধ্যে ইরানকে হুমকি দিয়ে রেখেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাই এমন পরিস্থিতিতে চীন যদি সত্যিই ইরানকে সহায়তা করে থাকে, তাহলে তা হবে যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি চ্যালেঞ্জের সামিল। ইসরায়েলের সঙ্গে ইরানের এই লড়াইয়ে ইতোমধ্যে তেহরানের পাশে দাঁড়িয়ে বার্তা দিয়েছে বেইজিং। পুরোপুরি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণের কথাও চীন জানিয়ে রেখেছে। বিনা উসকানিতে শুক্রবার গভীর রাতে ইরানে অপারেশন রাইজিং লায়ন শুরু করে ইসরায়েল। এতে সামরিক শক্তিধর কয়েকটি দেশ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। বিশেষ করে চীন, রাশিয়া, তুরস্ক, পাকিস্তান ও সৌদি আরবসহ বাকি মুসলিম বিশ্ব ইরানের প্রতি সমর্থন জানায়। আর যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো ইসরায়েলকে সাহস ও অস্ত্রের যোগান দিয়েই যাচ্ছে।

প্যারিস এয়ার শোতে ইসরায়েলি অস্ত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের স্টল বন্ধ করল আয়োজকরা
প্যারিস এয়ার শোতে “আক্রমণাত্মক অস্ত্র” প্রদর্শনের অভিযোগে একাধিক ইসরায়েলি অস্ত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের স্টল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা। আল জাজিরা জানিয়েছে, আয়োজকরা ইসরায়েলের পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের স্টলের চারপাশে বড় কালো প্রাচীর নির্মাণ করে ঘিরে দেন। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে ইসরায়েল অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজ (আইএআই), রাফায়েল ও এলবিট সিস্টেমস। আল জাজিরার সংবাদদাতা নাটাচা বাটলার জানান, আয়োজকরা মনে করছেন, এসব প্রতিষ্ঠানের প্রদর্শিত অস্ত্র শো-এর নিয়মের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় বলেই স্টলগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “এই প্রতিষ্ঠানগুলোর অনেকেই ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর জন্য অস্ত্র সরবরাহ করে, যার মধ্যে রয়েছে অত্যাধুনিক ড্রোন সিস্টেম—যেগুলো গাজায় ব্যবহৃত হচ্ছে।” বাটলারের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, রাফায়েলের এক নির্বাহী তার স্টল পুরোপুরি ‘কালো পর্দায়’ ঢেকে দেওয়া দেখে রীতিমতো ‘হতভম্ব’ হয়ে পড়েন। রাফায়েলের ওই নির্বাহী জানান, তাদের কোনও ধরনের আগাম সতর্কতা দেওয়া হয়নি। বিষয়টি তাকে ক্ষুব্ধ করেছে। এ বিষয়ে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে আয়োজকদের এই সিদ্ধান্তের নিন্দা জানায়। তারা একে ইসরায়েলি কোম্পানিগুলোর প্রতি “বৈষম্যমূলক আচরণ” হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, “এই নজিরবিহীন ও লজ্জাজনক সিদ্ধান্তের পেছনে রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য রয়েছে।”

ইরানে তালিকাভুক্ত বাংলাদেশি ৬৭২, খোঁজ রাখছে দূতাবাস
ইরানে ইসরায়েলের হামলায় দেশটিতে অবস্থানরত বাংলাদেশি কোনো নাগরিকের ক্ষয়ক্ষতির তথ্য পাওয়া যায়নি। সোমবার তেহরানের বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, ইরানে ইসরায়েলের হামলার পর থেকে দূতাবাস বিভিন্ন জায়গায় অবস্থানরত বাংলাদেশিদের খোঁজখবর রাখছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো বাংলাদেশি নাগরিকের আহত বা নিহতের খবর পাওয়া যায়নি। দূতাবাস জানায়, বাংলাদেশের দূতাবাসের তালিকায় ইরানে ৬৭২ জন বাংলাদেশি রয়েছেন। তবে তালিকার বাইরেও বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি রয়েছেন দেশটিতে। সব মিলিয়ে এ সংখ্যা হতে পারে প্রায় ১৪ হাজার। এর মধ্যে বেশির ভাগ অনিয়মিত হয়ে পড়েছেন। এদিকে বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য হটলাইন চালু করছে বাংলাদেশ দূতাবাস। ইরানে বসবাসরত সব বাংলাদেশি নাগরিককে দূতাবাস জানিয়েছে, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জরুরি প্রয়োজনে যোগাযোগের জন্য দূতাবাস জরুরি হটলাইন স্থাপন করেছে। ইরানে বসবাসরত সব বাংলাদেশি নাগরিককে মোবাইল ফোন নম্বরগুলোতে হোয়াটসঅ্যাপসহ সরাসরি যোগাযোগ করতে অনুরোধ করা হয়েছে। নম্বরগুলো হলো +৯৮৯৯০৮৫৭৭৩৬৮ ও +৯৮৯১২২০৬৫৭৪৫। এ ছাড়া ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি হটলাইন চালু করেছে, +৮৮০১৭১২০১২৮৪৭। ১৩ জুন ভোরে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা, ক্ষেপণাস্ত্র কারখানা এবং সামরিক কাঠামোসহ ১০০টির বেশি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালায় ইসরায়েল। এ হামলায় ইরানের সেনাপ্রধানসহ ২০ জনের বেশি সামরিক কর্মকর্তা এবং ছয়জন পরমাণুবিজ্ঞানী নিহত হন। এর পর থেকে উভয় দেশ পাল্টাপাল্টি হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।

‘ইরানের কাছে যুদ্ধবিরতি ভিক্ষা চাওয়ার আগেই উন্মাদনা বন্ধ করুন’
গত শুক্রবার ভোরে হঠাৎ ইরানে হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ নামের এই অভিযানে রাজধানী তেহরানসহ ইরানের বিভিন্ন সামরিক স্থাপনা, পরমাণু গবেষণা কেন্দ্র ও আবাসিক স্থাপনায় হামলা চালায় ইহুদিবাদী সেনারা। এই হামলার জবাবে ইরান শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে ‘অপারেশন ট্রু প্রমিস-৩ নামে’ অভিযান শুরু করে ইরান। শুরুতে খুব একটা সফলতা না পেলেও হাইপারসনিক মিসাইল ব্যবহারের পর থেকে পুরো পরিস্থিতিই যেন পাল্টে যায়। ইসরায়েলের সুরক্ষিত বিভিন্ন স্থাপনায় একের পর এক ইরানি মিসাইলের আঘাতে দিশাহারা ইসরায়েল। এমন পরিস্থিতিতে শেষ পর্যন্ত ইরানের কাছে যুদ্ধবিরতি ভিক্ষা চাইতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন ইসরায়েলি নিরাপত্তা ও সামরিক বিশেষজ্ঞ ইয়োসি মেলম্যান। মেহর নিউজ এজেন্সির বরাত দিয়ে এই তথ্য প্রকাশ করেছে পার্স টুডে। মেলম্যান বলেন, যদি পরিস্থিতি এভাবে চলতে থাকে, অবশেষে ইসরাইল ইরানের কাছে যুদ্ধবিরতি ভিক্ষা চাইতে বাধ্য হবে। তিনি আরও লিখেছেন যে, এই আনন্দ-উচ্ছ্বাস ক্ষণস্থায়ী ছিল। শুক্রবার সকালে আমি নিজেকেই জিজ্ঞাসা করলাম, ‘যুদ্ধে যাওয়া কি সত্যিই প্রয়োজনীয় ছিল, বিশেষ করে ইরানিদের বিরুদ্ধে?’ তিনি বলেন, শিয়ারা ঐতিহাসিকভাবে কষ্ট সহ্য করতে প্রস্তুত। আমি তাদের ত্যাগ স্বীকারের মানসিকতার বিষয়টি স্মরণ করি, যেমনটি তারা ইরাকের সাথে আট বছরের যুদ্ধে নজিরবিহীন ত্যাগের প্রমাণ দেখিয়েছিল। তিনি আরও বলেন, আমি অনুরোধ করছি যে, হতাহতের সংখ্যা কমিয়ে আনুন এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাহায্যে চুক্তির মাধ্যমে এই যুদ্ধ উন্মাদনা বন্ধ করুন; অন্যথায়, শেষ পর্যন্ত আমাদের যুদ্ধবিরতির জন্য ভিক্ষা চাইতে হবে এবং ইরান তা প্রত্যাখ্যান করবে।’ এদিকে বিশ্বব্যাপী পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধে গঠিত আন্তর্জাতিক চুক্তি ‘নন-প্রোলিফারেশন ট্রিটি (এনপিটি)’ থেকে সরে যাচ্ছে ইরান। সোমবার (১৬ জুন) দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এনপিটি চুক্তি থেকে বের হয়ে যাওয়ার চিন্তাভাবনা করছে তারা। ১৯৭০ সালে ইরান এনপিটি স্বাক্ষর করে, যা বেসামরিক পরমাণু শক্তির অধিকার নিশ্চিত করলেও পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি না করার বাধ্যবাধকতা আরোপ করে। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) ইরানের বিরুদ্ধে এনপিটি চুক্তির শর্ত ভঙ্গের অভিযোগ এনেছে। তবে ইরান শুরু থেকেই দাবি করে আসছে, তাদের পরমাণু কর্মসূচি সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ। এমনকি দেশটির প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান সোমবার পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, ‘পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি ইসলামি শরিয়াহ ও সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনির ফতোয়ার পরিপন্থি।’

মধ্যপ্রাচ্যের দিকে যাত্রা করছে মার্কিন বিমানবাহী রণতরী
ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে চলমান ক্রমবর্ধমান সংঘাতের মধ্যেই মধ্যপ্রাচ্যের দিকে রওনা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহী রণতরী ইউএসএস নিমিৎজ, যা এই অঞ্চলে পরিস্থিতি আরও দুর্বিষহ করে তুলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, সোমবার (১৬ জুন) সকালে ইউএসএস নিমিৎজ দক্ষিণ চীন সাগর থেকে মধ্যপ্রাচ্যের দিকে যাত্রা শুরু করে। রণতরীটির চলতি সপ্তাহের শেষ দিকে ভিয়েতনামের দানাং বন্দর পরিদর্শনের কথা ছিল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ভিয়েতনামী দুই সূত্র জানিয়েছে, আগামী ১৯-২৩ জুন ভিয়েতনামের দানাং বন্দরে প্রত্যাশিত সফরের অংশ হিসেবে ২০ জুন ইউএসএস নিমিৎজে অভ্যর্থনা অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে। একটি সূত্র হ্যানয়ের মার্কিন দূতাবাসের একটি চিঠির কথা উল্লেখ করেছেন, যেখানে বলা হয়, ‘একটি জরুরি অপারেশনাল প্রয়োজনীয়তার’ কারণে এই অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে। এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্যমার্কিন দূতাবাস রয়টার্সের অনুরোধে তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া দেয়নি। মার্কিন প্রশান্ত মহাসাগরীয় নৌবহরের কমান্ডারের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে মার্কিন নৌবাহিনীর নিয়মিত উপস্থিতির অংশ হিসেবে নিমিৎজ গত সপ্তাহে দক্ষিণ চীন সাগরে সামুদ্রিক নিরাপত্তা অভিযান পরিচালনা করে। এদিকে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে চলমান ক্রমবর্ধমান সংঘাতের মধ্যে মার্কিন রণতরী গতিপথ নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে। ওয়াশিংটন ডিসির স্টিমসন সেন্টারের একজন বিশিষ্ট ফেলো বারবারা স্লাভিন বলেন, ‘উদ্বেগের বিষয় হলো এই যুদ্ধ অব্যাহত থাকবে এবং আরও বিস্তৃত হবে, ইরান এই অঞ্চলে মার্কিন সামরিক স্থাপনায় মার্কিন লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। তাই ইরানকে পরাস্ত করার জন্য বিমানবাহী রণতরী এবং অন্যান্য সামরিক গতিবিধির দিকে নজর থাকবে। আমার মনে হয় না ইরানিরা যুক্তরাষ্ট্রকে এমন একটি সংঘাতে জড়িয়ে ফেলতে আগ্রহী, যা ইতিমধ্যেই তাদের জন্য বেশ ধ্বংসাত্মক।’ সূত্র: রয়টার্স, আলজাজিরা

পরিস্থিতি ভয়াবহ, তেল আবিবের বাসিন্দাদের সরে যেতে বলল ইরান
ইসরাইলের তেল আবিব শহরের বাসিন্দাদের সরে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (আইআরজিসি)। ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে তেল আবিবের নাগরিকদের অবিলম্বে এলাকা ছাড়তে হবে। আল-জাজিরার খবরে এ কথা বলা হয়। এর আগে ইরানের রাজধানী তেহরানের একটি বড় এলাকার বাসিন্দাদের ‘অবিলম্বে সরে যেতে’ সতর্ক করে দিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। বিবিসি জানায়, আইডিএফের মুখপাত্র আভিচাই আদরায়ি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ দেওয়া পোস্টে বলেন, আগামী ঘণ্টাগুলোতে আমরা তেহরানের এ এলাকায় অভিযান চালাব, যেমন আগের দিনগুলোতেও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় হামলা চালানো হয়েছে। তিনি জানান, ইরানের সামরিক অবকাঠামো লক্ষ্য করে এ অভিযান চালানো হবে। এদিকে সোমবার রাতে ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ভবনে হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। কিছুক্ষণ আগে এ হামলা হয়েছে বলে জানিয়েছে আল-জাজিরা। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সংক্ষেপে প্রচারিত ঘোষণায় বলা হয়েছে, রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম বর্তমানে ইসরাইলি হামলার লক্ষ্যবস্তু। হামলার বিস্তারিত বা ক্ষয়ক্ষতির তথ্য এখনো প্রকাশ করা হয়নি। এ হামলার কিছুক্ষণ আগে ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ও রেডিও ‘অদৃশ্য হতে যাচ্ছে’ বলে হুমকি দিয়েছিলেন ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাৎজ। কাৎজের বিবৃতির বরাত দিয়ে এএফপির খবরে বলা হয়, ইরানের প্রচারণা ও উসকানির মেগাফোন ‘অদৃশ্য হতে যাচ্ছে’। এর আগে ইরানের পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর কেরমানশাহের একটি হাসপাতালে হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। হামলায় হাসপাতালটির একাংশের ছাদ ধসে পড়েছে। এতে কয়েকজন রোগী আহত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ হামলাকে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন ও যুদ্ধাপরাধ বলে অভিহিত করেছে। ইরানের ফারস ও তাসনিম সংবাদ সংস্থার প্রকাশিত একাধিক ভিডিওর বরাত দিয়ে সিএনএন বলেছে, হামলায় কেরমানশাহে ফারাবি হাসপাতালের একটি অংশের ছাদ ধসে পড়েছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব ভিডিওচিত্র যাচাই করেছে সিএনএন। তেহরানে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এসমাইল বাঘাঈ অভিযোগ করেন, ইসরাইল ইচ্ছাকৃতভাবে হাসপাতালকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। আল-জাজিরার খবরে বলা হয়, বাঘাই বলেন, হাসপাতাল ও আবাসিক এলাকায় হামলা চালানো আন্তর্জাতিক আইনের মারাত্মক লঙ্ঘন ও যুদ্ধাপরাধ। ইতিহাস বিচার করবে; এই (ইসরাইল) শাসনের মিত্র ও পক্ষ অবলম্বনকারীদের জন্য চিরস্থায়ী লজ্জা অপেক্ষা করছে।

ইরানের হাসপাতালে ইসরায়েলি হামলা
ইরানের পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর কেরমানশাহে একটি হাসপাতালে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। হামলায় হাসপাতালটির একাংশের ছাদ ধসে পড়েছে। এতে কয়েকজন রোগী আহত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই হামলাকে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন ও যুদ্ধাপরাধ বলে অভিহিত করেছে। ইরানের ফার্স ও তাসনিম সংবাদ সংস্থার প্রকাশিত একাধিক ভিডিওর বরাত দিয়ে সিএনএন বলেছে, হামলায় কেরমানশাহে ফারাবি হাসপাতালের একটি অংশের ছাদ ধসে পড়েছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব ভিডিওচিত্র যাচাই করেছে সিএনএন। তাসনিম সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, হাসপাতালটির ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভাঙা কাচ ও ছাদ ধসে এই ইউনিটের রোগীরা আহত হয়েছেন। তেহরানে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাঘাই অভিযোগ করেন, ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে হাসপাতালকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। আল জাজিরার খবরে বলা হয়, বাঘাই বলেন, হাসপাতাল ও আবাসিক এলাকায় হামলা চালানো আন্তর্জাতিক আইনের মারাত্মক লঙ্ঘন ও যুদ্ধাপরাধ। ইতিহাস বিচার করবে; এই (ইসরায়েল) শাসনের মিত্র ও পক্ষ অবলম্বনকারীদের জন্য চিরস্থায়ী লজ্জা অপেক্ষা করছে। তবে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) সিএনএনকে জানায়, তারা ইরানে কোনো হাসপাতালের ওপর হামলার বিষয়ে অবগত নয়।

ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন এবং রেডিও সদর দপ্তরে হামলা
মধ্যপ্রাচ্যের চলমান উত্তেজনার মধ্যে ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ও রেডিওর প্রধান সদর দপ্তরে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এ হামলার ফলে দেশটির সরকারি সম্প্রচার কার্যক্রমে বড় ধরনের বিঘ্ন দেখা দিয়েছে বলে জানা গেছে। সূত্র জানায়, ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজের হুমকির কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই এ হামলা সংঘটিত হয়। হামলার আগেই তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলেন, ইরানের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যমগুলো “খুব শিগগিরই অদৃশ্য হয়ে যাবে।” বিশ্লেষকদের মতে, এই হামলা কেবল সামরিক নয়, তথ্যযুদ্ধেও ইসরায়েলের সক্রিয় অবস্থান তুলে ধরছে। ইরানের ভেতর থেকে জনমত এবং সংবাদ প্রবাহকে ব্যাহত করতেই এই কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সূত্রঃ বিবিসি

তেহরানজুড়ে ফের বিস্ফোরণ, বাসিন্দাদের এলাকা ছাড়ার নির্দেশ ইসরায়েলের
ইরানের রাজধানী তেহরানের পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলে আবারও বড় ধরনের বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। সোমবার দেশটির সরকারি গণমাধ্যমের খবরে তেহরানে নতুন করে বিস্ফোরণের এই তথ্য জানানো হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও এবং ছবিতে দেখা যায়, বিস্ফোরণস্থলের আকাশে কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলী উড়ছে। ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (আইআরজিসি) নিয়ন্ত্রিত বার্তা সংস্থা ফারস নিউজ এজেন্সি বলেছে, তেহরানের পশ্চিমাংশে একটি সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এছাড়া রাজধানী পূর্বাঞ্চলেও বড় ধরনের বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে বলে দেশটির অন্যান্য সংবাদমাধ্যম খবর দিয়েছে। এর আগে, ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী তেহরানে সরকারি ও সামরিক স্থাপনার আশপাশের এলাকার বাসিন্দাদের দ্রুত অন্যত্র চলে যাওয়ার আহ্বান জানায়। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর এই আহ্বানের পরপরই তেহরানের পূর্ব ও পশ্চিম অংশে বিস্ফোরণ ঘটেছে। তবে বিস্ফোরণে কোনও হতাহত হয়েছে কি না তাৎক্ষণিকভাবে তা জানা যায়নি। এদিকে, আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই প্রথমবারের মতো তেহরানের নির্দিষ্ট একটি এলাকা ডিস্ট্রিক্ট থ্রি থেকে লোকজনকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। তেহরানের উত্তরের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার পূর্বাংশে অবস্থিত এই জেলায় কয়েকটি দেশের দূতাবাস রয়েছে। যার মধ্যে ব্রিটিশ দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাসভবন এবং জাতিসংঘের কার্যালয়ও আছে। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ওই এলাকায় ইসরায়েলি বাহিনীর আসল লক্ষ্য কী, তা এখনও পরিষ্কার নয়। তারপরও সেখানকার বাসিন্দাদের দ্রুত এলাকা ছাড়ার হুমকি দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী; যা নজিরবিহীন ঘটনা। ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত দেশটিতে অন্তত ২২৪ জন নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে, ইরানের হামলায় ইসরায়েলে কমপক্ষে দুই ডজন নিহত ও আরও অনেকেই আহত হয়েছেন। সূত্র: আল জাজিরা, বিবিসি।

সর্বাত্মক যুদ্ধের জন্য বন্ধু রাষ্ট্রগুলোকে ডাকছে ইরান
মধ্যপ্রাচ্যে চরম উত্তেজনার মধ্যে সর্বাত্মক যুদ্ধের জন্য বন্ধু রাষ্ট্রগুলোকে নিয়ে যৌথ সেনাবাহিনী গঠনের আহ্বান জানিয়েছে ইরান। দেশটির শীর্ষ নেতা ও প্রভাবশালী রাজনীতিক মহসেন রেজাই ঘোষণা করেছেন, সৌদি আরব, তুরস্ক, পাকিস্তানসহ একাধিক মুসলিম দেশকে নিয়ে এই যৌথ সেনাবাহিনী গঠন করা যেতে পারে। তিনি নতুন এই বাহিনীর নাম প্রস্তাব করেছেন ‘ইসলামিক সেনাবাহিনী’। রেজাই বলেন, ‘মুসলিম রাষ্ট্রগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমাদের অস্তিত্ব রক্ষায় এই পদক্ষেপ সময়ের দাবি। যারা আমাদের ধ্বংস করতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে সম্মিলিত শক্তি নিয়ে দাঁড়াতে হবে।’ বিশ্লেষকদের মতে, ইরানের এমন প্রস্তাব মধ্যপ্রাচ্যের কূটনৈতিক ভারসাম্যে বড় পরিবর্তন আনতে পারে। ইসলামিক সেনাবাহিনী গঠিত হলে তা কেবল আঞ্চলিক নয়, বৈশ্বিক পরিণতির দিকে ঠেলে দিতে পারে এই সংঘাতকে। এতে সৌদি-ইরান প্রতিদ্বন্দ্বিতার পাশাপাশি মার্কিন-ইসরায়েল জোটের প্রতিক্রিয়া আরও তীব্র হয়ে উঠতে পারে। এদিকে, সোমবার সকালে ইসরায়েলের রাজধানী তেল আবিব ও বন্দরনগরী হাইফায় আবারও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। এই হামলায় অন্তত পাঁচজন নিহত এবং বহু মানুষ আহত হয়েছেন। বিস্ফোরণে ঘরবাড়িতে অগ্নিকাণ্ড ঘটে এবং একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে মারাত্মক ক্ষতি হয়। হামলার শিকার হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের তেল আবিবস্থ দূতাবাসও। দূতাবাস আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তা সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে দূতাবাস আশ্রিত সাত লাখ মার্কিন নাগরিককে ঘরেই অবস্থান করতে বলা হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘আমাদের ঘাঁটি বা স্বার্থে হামলা হলে, ওয়াশিংটন সম্পূর্ণ শক্তি দিয়ে জবাব দেবে। কেউ যেন আমাদের ধৈর্যের পরীক্ষা না নেয়।’ মধ্যপ্রাচ্যে এমন উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কূটনৈতিক উদ্যোগে অবিলম্বে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে না আনলে, অঞ্চলটি এক ভয়াবহ সর্বাত্মক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে। সূত্র : আলজাজিরা

বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে ইসরায়েল, দাবি নেতানিয়াহুর
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দাবি করেছেন, ইরানের বিরুদ্ধে সংঘাতে তার দেশ বিজয়ের পথে রয়েছে। তিনি আরও বলেন, তেহরানের আকাশ এখন ইসরায়েলি বিমানবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ইসরায়েল এই যুদ্ধে বিজয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সোমবার (১৬ জুন) এক বক্তব্যে নেতানিয়াহু বলেন, আমরা আমাদের দুটি লক্ষ্য অর্জনের পথে রয়েছি। সেগুলো হলো- পারমাণবিক হুমকি নির্মূল এবং ক্ষেপণাস্ত্র হুমকি নির্মূল। তিনি বলেন, ইসরায়েল বিজয়ের পথে রয়েছে। ইসরায়েলি মিডিয়ার খবর অনুযায়ী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ এবং চিফ অফ স্টাফ লেফটেন্যান্ট-জেনারেল ইয়াল জামিরের সাথে মধ্য ইসরায়েলের টেল নফ বিমানঘাঁটি পরিদর্শন করার সময় নেতানিয়াহু এই মন্তব্য করেন। এ সময় ইরানি নাগরিকদেরও হুমকি দেন নেতানিয়াহু। তিনি ইরানিদের রাজধানী তেহরান ছেড়ে চলে যেতে বলেন। নেতানিয়াহু বলেন, আমরা আরও বড় পদক্ষেপের দিকে যাচ্ছি। উল্লেখ্য, ইরান ও ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের উত্তেজনা এখন সরাসরি সংঘাতে রূপ নিয়েছে। দুই দেশ একে অপরের বিরুদ্ধে সরাসরি হামলা চালিয়েছে, যা আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে এবং পরমাণু আলোচনা স্থবির হয়ে পড়েছে। এই সংঘাতের সূচনা হয় গত শুক্রবার (১৩ জুন), যখন ইসরায়েল আকস্মিক বিমান হামলা চালিয়ে ইরানের পরমাণু অবকাঠামো- বিশেষ করে নাতানজ ও ইসফাহানের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোকে লক্ষ্য করে আঘাত হানে। ইসরায়েলি কর্মকর্তারা এ হামলাকে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংসের অভিযানের শুরু হিসেবে অভিহিত করেন। এই হামলায় ইরানের শীর্ষ সামরিক নেতা ও বিজ্ঞানীরা নিহত হয়েছেন বলে দাবি করা হয়। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি)-এর প্রধান জেনারেল হোসেইন সালামি ও ইরানের চিফ অব স্টাফ জেনারেল মোহাম্মদ বাঘেরি। জবাবে শনিবার (১৪ জুন) রাতে ইরান ইসরায়েলে পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। এরপর থেকেই দেশ দুটির মধ্যে হামলা-পাল্টা হামলা চলমান রয়েছে। ফলে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে আরও বড় ধরনের সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা দিন দিন বাড়ছে। সূত্র : আলজাজিরা

ইরান-ইসরায়েল সংঘাত বন্ধে মধ্যস্থতা করতে প্রস্তুত পুতিন-এরদোয়ান
ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে গত চারদিন ধরে যে পাল্টাপাল্টি হামলা চলছে, সেটি বন্ধে মধ্যস্থতা করার আগ্রহ দেখিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। খবর বিবিসি বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উভয়ই আলাদাভাবে জানিয়েছেন- সংঘাত বন্ধের লক্ষ্যে তারা মধ্যস্থতা করতে প্রস্তুত রয়েছেন। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, সংঘাত নিরসনের জন্য রাশিয়ার আগের প্রস্তাব এখনও বহাল রয়েছে। যদিও পরিস্থিতি এখন আরও জটিল হয়ে পড়েছে। সমস্যার সমাধানে রাশিয়া বিবাদমান পক্ষগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে বলেও জানিয়েছে ক্রেমলিন। এদিকে, তুরস্কের প্রেসিডেন্টের কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান সোমবার ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন। ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাতের অবসান ঘটাতে তুরস্ক মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালনেও প্রস্তুত বলে ইরানকে জানিয়েছেন এরদোয়ান।

ইরানে আবারও ইসরায়েলি হামলা
ইরানে আবার হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলে এ হামলা চালানো হয়েছে। সোমবার ( ১৬ জুন) ফারস নিউজ এজেন্সির বরাতে আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। ফারস নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, পশ্চিম তেহরানের একটি সামরিক ঘাঁটিতে হামলা হয়েছে। ইসরায়েল এ অঞ্চলে সামরিক ঘাঁটিকে নিশানা করে এ হামলা চালিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের গণমাধ্যমও পূর্বাঞ্চলে বিস্ফোরণের খবর জানিয়েছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী রাজধানীর কিছু অংশে হুমকি দেওয়ার পর এ হামলা হয়েছে। এর আগে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, তেহরানের বাসিন্দারা শিগগিরই এ হামলার মূল্য দেবে। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইরান রাতভর ১০০টিরও কম ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। তবে এর মধ্যে মাত্র সাতটি ইসরায়েলে আঘাত হেনেছে। সামরিক এক মুখপাত্র জানান, ইসরায়েল ইরানের ওপর আকাশে আধিপত্য অর্জন করেছে এবং ইরানের এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি সারফেস-টু-সারফেস ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করেছে। রয়টার্স জানিয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় এ পর্যন্ত ইসরায়েলে ২৪ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের সকলে বেসামরিক নাগরিক। অন্যদিকে ইসরায়েলের হামলায় ইরানে অন্তত ২২৪ জন নিহত হয়েছেন। এদিকে বিশ্বব্যাপী পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধে গঠিত আন্তর্জাতিক চুক্তি ‘নন-প্রোলিফারেশন ট্রিটি (এনপিটি)’ থেকে সরে যাচ্ছে ইরান। সোমবার (১৭ জুন) দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এনপিটি চুক্তি থেকে বের হয়ে যাওয়ার চিন্তাভাবনা করছে তারা।

ইরানের পুনর্গঠন সক্ষমতায় বিস্মিত ইসরায়েল : মার্কিন বিশ্লেষক
ইসরায়েলের হামলায় একাধিক সামরিক কমান্ডার নিহত হওয়ার পরও অবিরাম ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করেছে ইরান। শীর্ষস্থানীয় সামরিক কর্মকর্তাদের হারানোর পরও তেহরানের এই পুনর্গঠন সক্ষমতা ইসরায়েলকেও বিস্মিত করেছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমনটাই জানান যুক্তরাষ্ট্রের একজন বিশ্লেষক। -সিএনএন কোয়েন্সি ইনস্টিটিউট ফর রেসপনসিবল স্টেটক্রাফটের ভাইস প্রেসিডেন্ট ট্রাইটা পার্সি বলেন, ইসরায়েলিরা ইরানের পুনর্গঠন সক্ষমতাকে অবমূল্যায়ন করেছে। কারণ তারা (ইসরায়েলিরা) অত্যন্ত সফলভাবে ইরানের সামরিক বাহিনীর শীর্ষ নেতৃত্বকে লক্ষ্যবস্তু করেছিল এবং তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে হত্যা করতে সক্ষম হয়েছিল। তিনি বলেন, ইসরায়েল বিশ্বাস করেছিল যে তারা ইরানের কমান্ড ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে ব্যাহত করেছে। কিন্তু সেই ধারণা দ্রুত বদলে গেছে। এখন আমরা যা দেখছি তা হলো, ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইসরায়েলের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সমস্ত স্তর ভেদ করতে সফল হচ্ছে। এদিকে সোমবার ভোরেও ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। হামলায় রাজধানী তেল আবিব ও বন্দরনগরী হাইফায় অন্তত পাঁচজন নিহত ও অনেক আহত হয়েছেন। হামলায় ঘরবাড়িতে অগ্নিকাণ্ড ও বিদ্যুৎকেন্দ্রে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রসঙ্গত, টানা কয়েকদিন ধরে ইরান ও ইসরায়েলের হামলা ও পাল্টা হামলায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্য। গত ১৩ জুন ভোরে তেহরানসহ ইরানের বেশ কিছু স্থানে পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় হামলা চালায় ইসরায়েল। পরে তীব্র শক্তি নিয়ে ইসরায়েলে পাল্টা হামলা শুরু করে ইরানও। দফায় দফায় চলছে এই হামলা ও পাল্টা হামলা। এতে বহু হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।