
আমেরিকার সঙ্গে লড়ার জন্য সামরিক ক্ষমতা সংরক্ষিত রাখছে ইরান
ইরান-ইসরায়েল হামলা-পাল্টা হামলা আরও তীব্র হয়ে উঠছে। এই সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি জড়িয়ে পড়তে পারে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ফলে পরিস্থিতি দ্রুত আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠছে এবং তা যে কোনো সময় আঞ্চলিক যুদ্ধে রূপ নিতে পারে বলে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা। মধ্যপ্রাচ্য কৌশলগত গবেষণা কেন্দ্রের বিশ্লেষক আব্বাস আসলানি আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘যুদ্ধের পরিধি ক্রমেই বাড়ছে। যদি যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি হস্তক্ষেপ করে, তাহলে এটি নতুন একপর্যায়ের আঞ্চলিক সংঘাতে রূপ নিতে পারে, যার প্রভাব শুধু সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না।’ পারস্যের হরমুজ প্রণালি ইরানের একটি কৌশলগত শক্তি উল্লেখ করে আসলানি বলেন, আন্তর্জাতিক গুরাত্বপূর্ণ এই জলপথে ইরানের শক্ত অবস্থান রয়েছে। ইরান এখনো হরমুজ প্রণালিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেনি, এমনকি সামরিক শক্তির পুরো অংশও মাঠে নামায়নি। তিনি আরও জানান, তেহরান ইচ্ছাকৃতভাবে কিছু সামরিক ক্ষমতা সংরক্ষিত রেখেছে, যেন যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়লে সেগুলো ব্যবহার করা যায়। আসলানির ভাষায়, যুক্তরাষ্ট্র যদি সরাসরি সংঘাতে জড়ায়, তবে ইরান অবিলম্বে নতুন এক সংঘাত শুরু করবে। এই পর্বে তেহরানের লক্ষ্য হবে যুক্তরাষ্ট্রের আঞ্চলিক স্বার্থ ও সামরিক ঘাঁটিগুলো। তিনি সতর্ক করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র হস্তক্ষেপ করলেই পাল্টা হামলা চালাবে ইরান। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, এই সংঘাতে শুধু ইরান-যুক্তরাষ্ট্র নয়, বরং পুরো অঞ্চলজুড়ে আরও অনেক পক্ষ জড়িয়ে পড়তে পারে। বিশ্লেষকদের মতে, এ অবস্থায় কূটনৈতিক সমাধানের পথ খোলা রাখা এবং উত্তেজনা প্রশমন করাই হবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রধান দায়িত্ব।
.png)
ইরানের পক্ষ নিয়ে বিবৃতি দিলো উত্তর কোরিয়া
ইরানের ওপর ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলাকে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে উত্তর কোরিয়া। দেশটির সরকারি বার্তা সংস্থা কেসিসিএনএ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, এই হামলা মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে সর্বাত্মক যুদ্ধের আশঙ্কা তৈরি করছে। উত্তর কোরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, ইসরায়েলের এ ধরনের আচরণ ইরানের সার্বভৌমত্বের গুরুতর লঙ্ঘন এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ। এতে আরও বলা হয়, বিশ্ব আজ যে গুরুতর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তা স্পষ্ট করে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা শক্তিগুলোর পৃষ্ঠপোষকতায় ইসরায়েল মধ্যপ্রাচ্যের জন্য ক্যান্সারের মতো এক সত্তা এবং বৈশ্বিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রধান হুমকি। গত ১৩ জুন ইসরায়েল ইরানের রাজধানী তেহরানে ব্যাপক বিমান হামলা চালায়। এতে বেশ কয়েকটি সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনায় ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং ইরানের একাধিক শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা ও পরমাণু বিজ্ঞানী নিহত হন। এর পাল্টা জবাবে ইরান ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থানে হামলা চালায়। এই পাল্টাপাল্টি হামলা এখন পর্যন্ত টানা ছয় দিন ধরে চলছে।

ইসরায়েলে মিসাইল ছুড়ল ইরান
মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা আরও তীব্র হয়েছে ইরানের সাম্প্রতিক মিসাইল হামলায়। দখলদার ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে ফের মিসাইল নিক্ষেপ করেছে ইরান। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী জানিয়েছে, হামলাগুলো প্রতিহত করতে তারা সক্রিয়ভাবে কাজ করছে এবং ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিতের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। হামলার পরপরই ইসরায়েলের বাণিজ্যিক রাজধানী তেলআবিব, আশপাশের এলাকা এবং নেতানিয়াতে সতর্কতামূলক সাইরেন বাজানো হয়। সাধারণ নাগরিকদের দ্রুত আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় সময় বুধবার (১৭ জুন) রাত ১০টা ৪৫ মিনিটে এই হামলা চালানো হয়। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী জানিয়েছে, ইরান এবার স্বল্পসংখ্যক মিসাইল নিক্ষেপ করেছে। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর অনুমতি না পাওয়া পর্যন্ত কেউ আশ্রয়কেন্দ্র বা বোমা শেল্টার ত্যাগ করতে পারবে না। সূত্র: আলজাজিরা, টাইমস অব ইসরায়েল।

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আরও ৬৯ ফিলিস্তিনি নিহত
গাজা উপত্যকাজুড়ে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় বুধবার (১৮ জুন) কমপক্ষে ৬৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ত্রাণ ট্রাকের জন্য অপেক্ষা করার সময় ইসরায়েলি হামলার শিকার হন ২৯ জন। এই হামলায় আরও শতাধিক ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। গাজার চিকিৎসা সূত্রের বরাতে কাতার-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ফিলিস্তিনি ত্রাণ প্রত্যাশীদের হত্যার সর্বশেষ ঘটনাটি বুধবার ভোরে মধ্য গাজার নেটজারিম করিডোরের কাছে সালাহ আল-দিন স্ট্রিটে ঘটেছে। গত ২৬ মে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েলে পরিচালিত গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ শুরু করার পর থেকে প্রায় প্রতিদিনই তাদের খোলা চারটি ত্রাণ কেন্দ্রের কোনো একটির কাছে এমন প্রাণঘাতী ঘটনা ঘটেছে। ফিলিস্তিনি সংবাদ সংস্থা ওয়াফা জানিয়েছে, বুধবার গাজার দক্ষিণে আল-মাওয়াসি শিবিরে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের তাঁবুতে ইসরায়েলি হামলায় আরও আটজন নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে একজন নারী এবং দুই শিশু রয়েছে। চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে সংবাদ সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, গাজার মধ্যাঞ্চলে মাগাজি ক্যাম্পে আরেকটি হামলায় একই পরিবারের স্বামী, স্ত্রী এবং সন্তানসহ ১০ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়াও গাজা শহরের দক্ষিণে জেইতুন এলাকার একটি বাড়িতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় আটজন নিহত এবং আরও অনেকে আহত হয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালযয়ের তথ্যমতে, ২০২৩ সালের অক্টোবরে শুরু হওয়া যুদ্ধে ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ৫৫ হাজার ৬৩৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যার মধ্যে কয়েক হাজার শিশু, নারী এবং বয়স্ক ব্যক্তি রয়েছে। এছাড়াও আরও ১ লাখ ২৯ হাজার ৮৮০ মানুষ আহত হয়েছে।

ইরান বলেছে তারা হোয়াইট হাউজের ‘পা চাটবে না’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্যের তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে নিউইয়র্কে জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানের কূটনৈতিক মিশন। ইরানি আলোচকরা হোয়াইট হাউজে যেতে চান ট্রাম্পের এ বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছে তারা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে মিশনের এক পোস্টে বলা হয়, “কোনো ইরানি কর্মকর্তাকে পা চাটার জন্য হোয়াইট হাউজের দরজায় বসে থাকতে বলা হয়নি"। "তার (ট্রাম্পের) মিথ্যার চেয়েও ঘৃণ্য জিনিস হলো ইরানের সর্বোচ্চ নেতাকে 'উৎখাতের' বিষয়ে তার কাপুরুষোচিত হুমকি," পোস্টটিতে যোগ করা হয়। এটি ট্রাম্পের সাম্প্রতিক দাবির প্রতি ইঙ্গিত করে যে আমেরিকা জানে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা কোথায় আছেন, কিন্তু "আপাতত" তার ক্ষতি করতে চায় না। পোস্টটিতে আরও বলা হয়েছে যে ইরান "জোর করে চাপিয়ে দেওয়া" আলোচনায় অংশ নেবে না এবং যে কোনো হুমকির জবাব পাল্টা হুমকি দেবে, যে কোনো পদক্ষেপের জবাবে পাল্টা ব্যবস্থাও নেবে। সূত্রঃ বিবিসি

ইরান ইস্যুতে আমি কী করব, কেউ জানে না: ট্রাম্প
যুক্তরাষ্ট্র ইরানে হামলা করবে কি না, এ প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ‘আমি এটা করতে পারি, আবার আমি না-ও করতে পারি।’ হোয়াইট হাউসের লনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট এ কথা বলেছেন। এ তথ্য জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা আল জাজিরা। এ সময় যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার কাছাকাছি যাচ্ছে কি না, জানতে চাইলে ট্রাম্প উত্তরে বলেন, ‘আমি এটা বলতে পারি না, আপনি কি সত্যিই ভাবছেন যে আমি এই প্রশ্নের উত্তর দিতে যাচ্ছি?’ ট্রাম্প বলেন, ‘আপনারা জানেন না আমি এটাও করতে যাচ্ছি কি না। আমি এটা করতে পারি, আবার না-ও করতে পারি। মানে, কেউ জানে না আমি কী করতে যাচ্ছি।’ ইরান অনেক সমস্যায় পড়েছে উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেন, এবং তারা আলোচনা করতে চায়। আর আমি বলেছিলাম, ‘কেন তোমরা আগে আমার সঙ্গে আলোচনা করোনি–এত সব মৃত্যু ও ধ্বংসের আগে কেন তোমরা আলোচনা করোনি?’ প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমি জনগণকে বলেছিলাম, কেন তোমরা দুই সপ্তাহ আগে আমার সঙ্গে আলোচনা করোনি? তোমরা ভালো করতে পারতে। তোমাদের একটি দেশ থাকত।’

ইরানিরা আত্মসমর্পণ করে না: খামেনি
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লাহ আলী খামেনি বলেছেন, “ইরান, এর জনগণ এবং এর ইতিহাস সম্পর্কে জানা ব্যক্তিরা কখনোই এই জাতির সাথে হুমকির ভাষায় কথা বলেন না। কারণ ইরানিরা আত্মসমর্পণ করে না।" ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে তার এই বক্তব্য পাঠ করা হয়। উপস্থাপক নিজেই এটি পড়ে শোনান, খামেনি নিজে নন। "মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপের যেকোনো রূপ নিঃসন্দেহে অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হবে," বিবৃতিতে বলা হয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত মঙ্গলবার ইরানকে নিঃশর্তভাবে আত্মসমর্পণ করতে বলেছিলেন। এমন প্রেক্ষাপটে আয়াতোল্লাহ আলী খামেনি বললেন, ইরানিরা আত্মসমর্পণকারী নয়। সূত্রঃ বিবিসি

মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটিতে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে ইরান
ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি যোগ দিলে চুপ থাকবে না তেহরান। সেকারণে এখন থেকেই মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটিগুলোকে নিশানা করে হামলা চালানোর জন্য প্রস্তুত হচ্ছে ইরান। ‘দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস’ পত্রিকাকে এমনটাই জানিয়েছেন ইরানের দুই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা। তারা বলেছেন, ইরান প্রথমে ইরাকে থাকা মার্কিন বাহিনীকে লক্ষ্য করে হামলা চালাবে। এরপর অন্যান্য আরব দেশে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটিগুলোতে হামলা চালাবে ইরান। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ইরানের ফরদো পারমাণবিক কেন্দ্রে ইসরায়েলের হামলা পরিকল্পনায় সমর্থন দেওয়ার কথা বিবেচনা করার মধ্যেই ইরানের মার্কিন ঘাঁটিগুলোতে হামলা প্রস্তুতির এই খবর এল। ইরানের পাহাড়ি এলাকায় অবস্থিত ফোর্দো পারমাণবিক স্থাপনা, যেটি এখনও পর্যন্ত টিকে রয়েছে, সেটিকে লক্ষ্য করেই নতুন হামলার পরিকল্পনা চলছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী চান, ইরানের ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক স্থাপনা ফর্দোয় বোমা ফেলুক যুক্তরাষ্ট্র। কারণ, এই স্থাপনা ধ্বংস করতে যে বোমা দরকার তা কেবল যুক্তরাষ্ট্রের আছে। এ পরিস্থিতিতেই ইরানের আশঙ্কা, যে কোনও সময় যুক্তরাষ্ট্র তাদের উপর হামলা চালাতে পারে। আর এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে পাল্টা জবাব দেবে ইরানও। তেহরানের কর্মকর্তারা আরও সতর্ক করে বলেছেন, প্রয়োজনে ইরান হরমুজ প্রণালীতে মাইন পেতে দিতে পারে। এই প্রণালী বিশ্বব্যাপী জ্বালানি সরবরাহের একটি গুরুত্বপূর্ণ পথ। সেখানে মাইন পেতে দেওয়া হলে আন্তর্জাতিক জাহাজ চলাচলে বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। এতে বিশ্বজুড়ে জ্বালানির দাম বাড়তে পারে হঠাৎ করেই। তাছাড়া, ইরান-সমর্থিত ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরাও আবার লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এর মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উড়োজাহাজগুলোকে আটলান্টিক পেরিয়ে যেতে দেখা গেছে, যা ওয়াশিংটনের তরফে সামরিক প্রস্তুতি জোরদারের ইঙ্গিত বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ওদিকে, দ্য টেলিগ্রাফকে একজন মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, ট্রাম্প এখন এই সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি জড়ানোর ব্যাপারে আগের চেয়ে অনেক বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।

তেহরানে আবারও হামলা চালাল ইসরায়েল
তেহরানে আবারও হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির সামরিক স্থাপনাকে এ হামলায় নিশানা করা হয়েছে। বুধবার (১৮ জুন) ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এক্সে এক পোস্টে এ তথ্য জানিয়েছে। খবর আলজাজিরার। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তেহরানে বিমান হামলা চালানো হয়েছে। এ হামলায় ইরানি সরকারের সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে আক্রমণ চালিয়েছে ইসরায়েল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইসরায়েলের হামলার ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। এতে ইরানের রাজধানীর পশ্চিমে কারাজের পায়াম বিমানবন্দরের কাছে একটি বোমা হামলার দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। এর কিছুক্ষণ আগে ইসরায়েল জানিয়েছে, তারা আবার তেহরানে হামলা চালাচ্ছে। উল্লেখ্য, গত ১৩ জুন ভোরে ইসরায়েল ইরানের বিরুদ্ধে আগ্রাসী যুদ্ধ শুরু করে। দেশটির চালানো এ হামলায় সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনার পাশাপাশি আবাসিক এলাকাও লক্ষ্যবস্তু করা হয়। এই হামলায় ইরানের মধ্যাঞ্চলীয় ইসফাহান প্রদেশের নাতাঞ্জ পারমাণবিক স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং কয়েক ডজন সামরিক কমান্ডার, পারমাণবিক বিজ্ঞানী ও বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন।

এবার যুক্তরাষ্ট্রকে ‘কঠোর’ হুঁশিয়ারি রাশিয়ার
যুদ্ধবাজ ইসরাইলকে সরাসরি সামরিক সহায়তা দিলে মধ্যপ্রাচ্যে ‘চরম অস্থিতিশীলতা’ সৃষ্টি হতে পারে বলে যুক্তরাষ্ট্রকে কঠোর ভাষায় সতর্ক করল রাশিয়া। এ সতর্কবার্তা দিয়েছেন রুশ উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ। তার বক্তব্য বুধবার প্রকাশ করেছে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ইন্টারফ্যাক্স। রিয়াবকভ বলেন, ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করছি ইসরাইলকে সামরিক সহায়তা দেওয়া কিংবা তা বিবেচনায় নেওয়াটাও পরিস্থিতিকে মারাত্মকভাবে অস্থিতিশীল করে তুলবে’। চলমান সংকটে মস্কো বর্তমানে ইসরাইল ও ইরান উভয় পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছে বলেও জানান রুশ উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ‘পরিস্থিতি সংকটজনক’ এদিকে রাশিয়ার বৈদেশিক গোয়েন্দা সংস্থা (এসভিআর) প্রধান সের্গেই নারিশকিন পৃথক এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে পরিস্থিতি এখন চূড়ান্ত সংকটজনক। সামান্য উসকানিতেই এটি এক বিস্তৃত যুদ্ধে পরিণত হতে পারে’। যুক্তরাষ্ট্রে অভ্যন্তরীণ আলোচনা ও ট্রাম্পের মন্তব্য রাশিয়ার হুঁশিয়ারির আগে এক মার্কিন সূত্র জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার দল ইসরাইলের পাশে থেকে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার সম্ভাব্যতা নিয়ে আলোচনা করছেন। এ আলোচনার মধ্যেই ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে এক বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন। বলেছেন, ‘আমরা জানি সেই তথাকথিত ‘সুপ্রিম লিডার’ কোথায় লুকিয়ে আছে... তবে এখনই তাকে হত্যা করব না। ধৈর্য ফুরিয়ে আসছে’। রাশিয়ার অবস্থানের তাৎপর্য • রাশিয়া ইরানের ঘনিষ্ঠ মিত্র এবং সিরিয়ায় ইরান-সমর্থিত বাহিনীর সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে সমন্বয় করে চলেছে। • মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন-ইসরাইলি সামরিক আগ্রাসনের বিরোধিতা করে আসা মস্কো এখন আরও সরাসরি হুঁশিয়ারি দিচ্ছে। রাশিয়ার এ অবস্থান শুধু রাজনৈতিক নয়, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে একটি নতুন ভূরাজনৈতিক সংঘর্ষের ইঙ্গিতও বহন করে। বিশেষ করে যদি ওয়াশিংটন সরাসরি ইসরাইলের পক্ষে চলমান যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। সূত্র: ইন্টারফ্যাক্স, রয়টার্স, সিএনএন

ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ থামাতে এগিয়ে আসছেন পুতিন
ইরান ও ইসরায়েলের সংঘাত দ্রুত বন্ধের আহ্বান জানিয়ে মধ্যস্থতার করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের সঙ্গে টেলিফোন আলাপে এ প্রস্তাব দেন তিনি। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা তাস এজেন্সির বরাত দিয়ে আল জাজিরা জানিয়েছে, দুই নেতাই ‘গভীর উদ্বেগ’ ও দ্রুত সমাধানের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি আমিরাতের প্রেসিডেন্টকে এই ইস্যুতে অন্যান্য আঞ্চলিক নেতাদের সঙ্গে তার আলোচনার বিষয়েও অবহিত করেন। উভয় নেতা মধ্যপ্রাচ্যে চলমান সংঘাত নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং দ্রুত একটি সমাধানে পৌঁছানোর প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন। বিশ্লেষকদের মতে, ইউক্রেন যুদ্ধে জড়িত থাকা সত্ত্বেও মধ্যপ্রাচ্যে কূটনৈতিক সক্রিয়তা বাড়াচ্ছে রাশিয়া। ভ্লাদিমির পুতিনের এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিকভাবে রাশিয়ার প্রভাব বজায় রাখার কৌশল হিসেবেও দেখা হচ্ছে। এর আগে গত ১৬ জুন ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে চলমান সংঘাত বন্ধে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যিপ এরদোয়ানের সঙ্গে ফোনালাপ করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ক্রেমলিনের বরাত দিয়ে মস্কো থেকে এএফপি জানিয়েছে, দুই নেতা অবিলম্বে ইসরায়েল ও ইরানের সংঘাত বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন।

ইরানের শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচির অধিকার আছে: রাশিয়া
রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেছেন, ইরানের শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচির অধিকার রয়েছে এবং এটি বৈধ। রুশ বার্তা সংস্থা তাসের বরাতে তিনি বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে পারমাণবিক হুমকি কোনো কাল্পনিক বিষয় নয় বরং এটি বাস্তব এবং কার্যকর ঝুঁকি তৈরি করছে গোটা অঞ্চল ও বিশ্বের জন্য। খবর ইরনা নিউজ। তিনি আরও বলেন, ইরানের পরমাণু স্থাপনার উপর ইসরাইলের সাম্প্রতিক হামলাগুলো কেবল উত্তেজনা বৃদ্ধি করছে না বরং এগুলো ‘অঞ্চল ও বৈশ্বিক নিরাপত্তার জন্য সরাসরি হুমকি।’ রাশিয়ার পক্ষ থেকে জাতিসংঘে স্থায়ী প্রতিনিধি গেন্নাদি গাতিলভও ইসরাইলের হামলার বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। জেনেভায় এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ইসরাইলের এ আগ্রাসী আচরণ আন্তর্জাতিকভাবে স্পষ্ট আইনি ও রাজনৈতিক শাস্তি দাবি করে। তিনি সতর্ক করে বলেন, যদিও রাশিয়া ও কিছু দেশ সংঘর্ষ থামাতে চেষ্টা করছে, তবে বাস্তবে সবচেয়ে নেতিবাচক ও অনিশ্চিত পরিস্থিতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে অঞ্চলটি। এর প্রতিক্রিয়া শুধু মধ্যপ্রাচ্যে নয়, পুরো বিশ্বের জন্য বিপর্যয় বয়ে আনতে পারে। ইরনার প্রতিবেদন বলছে, ১৩ জুন গভীর রাতে ইসরাইল ইরানের অভ্যন্তরে অকারণে সামরিক হামলা চালায়, যেখানে আবাসিক ভবনসহ বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে বোমা বর্ষণ করা হয়। এতে শীর্ষস্থানীয় ইরানি সামরিক কর্মকর্তারা নিহত হন এবং সাধারণ নাগরিকদের ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়। এর জবাবে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আলী খামেনি সেদিনই নতুন সামরিক কমান্ডার নিয়োগ দেন এবং ঘোষণা দেন, ইসরাইলের জন্য অন্ধকার সময় আসছে। পরে ইরানি সশস্ত্র বাহিনী প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে বলে, আমরা জাহান্নামের দরজা খুলে দেব। এরপরই তেলআবিব, জেরুজালেম ও হাইফাসহ ইসরাইল অধিকৃত অঞ্চলগুলোর ওপর ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা শুরু হয়।

ইসরায়েলের হামলা থেকে ইরানের আত্মরক্ষা বৈধ: এরদোয়ান
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বলেছেন, ইসরাইলের অবৈধ হামলা থেকে ইরান নিজেদের রক্ষা করছে। তিনি ইসরায়েলের হামলাকে 'রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদ' বলে অভিহিত করেছেন। বুধবার (১৮ জুন) রয়টার্সের প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ইরানের আত্মরক্ষা স্বাভাবিক, আইনি ও বৈধ। পার্লামেন্টে ক্ষমতাসীন একে পার্টির সদস্যদের উদ্দেশে এরদোয়ান বলেন, ওয়াশিংটন ও তেহরানের মধ্যে পরমাণু আলোচনা শেষ হওয়ার অপেক্ষা না করেই ইসরাইল তুরস্কের প্রতিবেশী ইরানে হামলা চালিয়েছে। তিনি আরও বলেন, আঙ্কারা কূটনীতির মাধ্যমে সমস্যার সমাধান দেখতে চায়। তুরস্ক এই সংকটের সমাধানে অবদান রাখতে প্রস্তুত আছে। গত সপ্তাহে ইরানের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল। শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া হামলার মূল লক্ষ্য ছিল ইরানের পরমাণু অ সামরিক স্থাপনা। রাজধানী তেহরানসহ একাধিক আবাসিক এলাকাও আক্রান্ত হয়। ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ব্যবহার করে পাল্টা হামলা চালায় ইরান।

তৃতীয় পক্ষ অংশ নিলে যুদ্ধ শুরু হবে পূর্ণ মাত্রায়: ইরান
ইরান ও ইসরায়েলের সঙ্গে চলমান সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের জড়িয়ে পড়া নিয়ে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাঘাঈ বলেছেন, তৃতীয় পক্ষ হামলায় অংশ নিলে পূর্ণ মাত্রার যুদ্ধ শুরু হবে। বুধবার (১৮ জুন) আল জাজিরাকে দেওয়া এই সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন তিনি। ইসমাইল বাঘাঈ বলেন, কোনো তৃতীয় পক্ষ ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যকার যুদ্ধে সরাসরি জড়িয়ে পড়লে, সেটি পূর্ণ মাত্রার এক সংঘাতের দিকেই যাবে। আর সেটি কেবল এই অঞ্চল নয়; বরং এর বাইরেও ছড়িয়ে পড়বে। যুক্তরাষ্ট্রকে সুযোগ দেবে না জানিয়ে মুখপাত্র বলেন, ইরান আপাতত কেবল ইসরায়েলের ভূখণ্ডকে লক্ষ্য করে হামলা চালানোর ওপর মনোযোগ দিচ্ছে এবং তারা বিশ্বাস করে, প্রতিবেশী দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রকে নিজেদের ভূখণ্ড ব্যবহার করে ইরানের ওপর হামলা চালাতে দেবে না।

জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতে যাচ্ছেন খামেনি
ইসরায়েলের সঙ্গে চলমান উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি জাতির উদ্দেশে টেলিভিশনে ভাষণ দিতে যাচ্ছেন। দেশটির আধা-সরকারি সংবাদ সংস্থা তাসনিম নিউজ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, আগামী কয়েক মিনিটের মধ্যেই রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যমে খামেনির এই ভাষণ প্রচারিত হবে। ভাষণে তিনি ইসরায়েল-ইরান চলমান সংঘাত এবং আঞ্চলিক পরিস্থিতি নিয়ে বক্তব্য দেবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, গত শুক্রবার ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী ইরানের ভেতরে অতর্কিত হামলা চালায়। ওই দিনই সর্বশেষ জনসমক্ষে দেখা গিয়েছিল আয়াতুল্লাহ খামেনিকে। এরপর এটাই হতে যাচ্ছে তার প্রথম প্রকাশ্য বক্তব্য। তীব্র উত্তেজনার এই সময়ে তার ভাষণকে ঘিরে দেশ-বিদেশে বাড়ছে আগ্রহ।

ইরান আত্মসমর্পণ করবে না, বললেন খামেনি
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি বলেছেন, ‘‘যেভাবে ইরান চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধ দৃঢ়ভাবে প্রতিরোধ করেছে, ঠিক তেমনি চাপিয়ে দেওয়া শান্তির বিপক্ষেও দৃঢ়ভাবে অবস্থান নেবে। বুধবার জাতির উদ্দেশে টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে এমন মন্তব্য করেছেন ইরানের এই সর্বোচ্চ নেতা। ভাষণে ইসরায়েলকে ভুলের জন্য কঠিন শাস্তি পেতে হবে বলেও হুঙ্কার দিয়েছেন তিনি। আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি বলেছেন, ‘‘এই জাতি কারও চাপের মুখে আত্মসমর্পণ করবে না।’’ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মঙ্গলবারের এক মন্তব্যের বিষয়ে বলেন, ‘‘যারা বুদ্ধিমান এবং ইরান, ইরানি জাতি ও এর ইতিহাস সম্পর্কে জানেন, তারা কখনও হুমকির ভাষায় এই জাতির সঙ্গে কথা বলবেন না। কারণ ইরানি জাতি কখনও হুমকির কাছে মাথানত করে না।’’ সতর্ক করে দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আমেরিকানদের জানা উচিত, যেকোনও মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ অপূরণীয় ক্ষতির কারণ হবে। যার পরিণতি তারা সহজে সামাল দিতে পারবে না।” এদিকে, ইসরায়েলের সঙ্গে চলমান সংঘাত ও যুক্তরাষ্ট্রের এই সংঘাতে জড়িয়ে পড়া নিয়ে কাতার-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার সঙ্গে কথা বলেছেন ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাঘাঈ। বুধবার আল জাজিরাকে দেওয়া এই সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, কোনও তৃতীয় পক্ষ ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যকার যুদ্ধে সরাসরি জড়িয়ে পড়লে, সেটি পূর্ণমাত্রার এক সংঘাতের দিকেই যাবে। আর সেটি কেবল এই অঞ্চল নয়; বরং এর বাইরেও ছড়িয়ে পড়বে। ইসমাইল বাঘাই বলেন, ইরান আপাতত কেবল ইসরায়েলের ভূখণ্ডকে লক্ষ্য করে হামলা চালানোর ওপর মনোযোগ দিচ্ছে এবং তারা বিশ্বাস করে, প্রতিবেশী দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রকে নিজেদের ভূখণ্ড ব্যবহার করে ইরানের ওপর হামলা চালাতে দেবে না। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘কূটনীতি কখনই শেষ হয় না।’’ তবে তেহরান এখন আর ওয়াশিংটনের ওপর ভরসা করে না বলেও জানান তিনি। ইরানি এই কর্মকর্তা বলেছেন, রাশিয়াসহ সব দেশের সঙ্গেই যোগাযোগ করছে ইরান। কারণ তারা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য। আমরা প্রত্যাশা করি, যারা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের দায়িত্বপ্রাপ্ত, তারা যেন এই হামলার নিন্দা ও সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে সক্রিয়ভাবে কাজ করে। সূত্র: আল জাজিরা।

ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ভয়ে পাতাল রেলস্টেশনে ইসরায়েলিরা
ইসরায়েলে একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইরান। দেশটির এ হামলায় বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ইরানের হামলার ভয়ে পাতাল রেলস্টেশনে আশ্রয় নিয়েছেন ইসরায়েলিরা। বার্তাসংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে ইসরায়েলিদের পাতাল রেলস্টেশনে আশ্রয় নেওয়ার ছবি প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েল-ইরান সংঘর্ষের সময় ইরান ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করায় সতর্কতামূলক সাইরেনের কারণে বারবার ইসরায়েলিরা হামলার আশ্রয়স্থলে ছুটে যাচ্ছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার ছোড়া বেশিরভাগ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করা হয়েছে এবং ইসরায়েলের উদ্ধারকারী সংস্থাগুলোর কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। রয়টার্স প্রতিবেদনে বেশকিছু ছবি সংযুক্ত করেছে। এসব ছবিতে দেখা গেছে, তেল আবিবের কাছে রামাত গানে সম্ভাব্য ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ভয়ে মানুষ একটি ভূগর্ভস্থ মেট্রো স্টেশনে আশ্রয় নিয়েছে। এদিকে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জন্য গুরুত্বপূর্ণ অ্যারো ইন্টারসেপ্টরের মজুত কমে যাচ্ছে। এই ঘাটতি ইরানের দূরপাল্লার ব্যালিস্টিক মিসাইল প্রতিহত করার ক্ষমতাকে প্রভাবিত করতে পারে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মার্কিন কর্মকর্তার বরাতে প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র এই সমস্যা সম্পর্কে কয়েক মাস ধরে অবগত রয়েছে। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করতে যুক্তরাষ্ট্র স্থল, সমুদ্র এবং আকাশে অতিরিক্ত ব্যবস্থা নিয়েছে।

ইসরায়েলে হামলায় এখন পর্যন্ত ৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ ইরানের
দখলদার ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গত শুক্রবার থেকে ৪০০-র বেশি ক্ষেপণাস্ত্র ও শত শত ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইরান। এমন তথ্য জানানো হয়েছে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর দপ্তর থেকে। নেতানিয়াহুর অফিস জানায়, এই হামলাগুলো ইসরায়েলের অন্তত ৪০টি স্থানে আঘাত হেনেছে। এ পর্যন্ত দেশটির ট্যাক্স কর্তৃপক্ষের কাছে প্রায় ১৯ হাজার ক্ষয়ক্ষতির অভিযোগ জমা পড়েছে। ইসরায়েলি সরকারের তথ্যমতে, এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত ২৪ জন নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন ৮০০-র বেশি মানুষ। নিরাপত্তার স্বার্থে প্রায় ৩ হাজার ৮০০ মানুষকে নিজ বাসস্থান ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এদিকে, ইরানি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শুক্রবার থেকে ইসরায়েলি হামলায় ইরানে এখন পর্যন্ত ২২৪ জন নিহত হয়েছেন। সূত্র : সিএনএন

ইরানে সন্দেহভাজন একাধিক ইসরায়েলি গুপ্তচর গ্রেপ্তার
ইরানে ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তি ও সন্ত্রাসী হামলার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দেশটির সরকারি সংবাদ সংস্থা তাসনিম নিউজ এজেন্সি সোমবার এ তথ্য জানিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দরনগরী বুশেহরের একটি সংবেদনশীল পারমাণবিক এলাকার ছবি তোলার সময় এক বিদেশি নাগরিককে আটক করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে সরাসরি মোসাদের হয়ে তথ্য সংগ্রহের অভিযোগ আনা হয়েছে। এছাড়া রাজধানী তেহরানের নিকটবর্তী বাহারেস্তান কাউন্টিতে একটি যানবাহনে তল্লাশির সময় মোসাদ-সংশ্লিষ্ট এক সন্ত্রাসী চক্রের সন্ধান পায় নিরাপত্তা বাহিনী। সেখানে মাইক্রো-ড্রোন, বিস্ফোরক, যোগাযোগ সরঞ্জাম ও লক্ষ্যনির্ধারণ ব্যবস্থা উদ্ধার করা হয়েছে। এই ঘটনার বিষয়ে বাহারেস্তানের ভারপ্রাপ্ত গভর্নর মোরাদ মোরাদি বলেন, গ্রেপ্তাররা এসব সরঞ্জাম ব্যবহার করে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ব্যাপক আত্মঘাতী হামলার পরিকল্পনা করছিল। তাদের উদ্দেশ্য ছিল জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা দুর্বল করা। এছাড়া, ইরানের ইসফাহান শহরের একটি ওয়ার্কশপ থেকে ড্রোন ও মাইক্রো-এয়ারক্রাফট তৈরির উপকরণ উদ্ধারের পর আরও চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের দাবি, তারা ইসরায়েলের ভাড়াটে কর্মী হিসেবে কাজ করছিলেন। উল্লেখ্য, ইসফাহান শহরটি ইরানের গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর নিকটবর্তী এলাকায় অবস্থিত।

পাকিস্তানের সেনাপ্রধানের সঙ্গে বৈঠকের আগে মোদি-ট্রাম্পের ফোনালাপ
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মাঝে টেলিফোনে আলোচনা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে তাদের মাঝে এই ফোনালাপ হয়েছে বলে বুধবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি। তিনি বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাদের আলোচনার সময়ে ইরান-ইসরায়েল চলমান সংঘর্ষ এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে কথা বলেছেন। তবে দুই নেতার প্রায় ৩৫ মিনিট আলোচনা হয় পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সংঘাতের সময় পরিচালিত ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে। এদিকে, ওয়াশিংটনের স্থানীয় সময় বুধবার দুপুরে হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে বসার কথা রয়েছে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল অসীম মুনিরের। সেই বৈঠকের আগেই ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের দুই নেতার মধ্যে টেলিফোনে আলোচনা হয়েছে। বিবৃতিতে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি বলেছেন, গত ২২ এপ্রিল পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর সমবেদনা জানাতে প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করেছিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। সেদিন তিনি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে তার সমর্থনের কথাও জানিয়েছিলেন। এরপর দুই নেতার মাঝে প্রথমবারের মতো কথা হয়েছে বুধবার। তিনি বলেন, এ কারণেই প্রধানমন্ত্রী মোদি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে অপারেশন সিঁদুর নিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন। মিশ্রি বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, ২২ এপ্রিলের পর সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারে দৃঢ় সংকল্পের কথা বিশ্বের কাছে জানিয়ে দিয়েছিল ভারত। প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, ৬ ও ৭ মে রাতে পাকিস্তান ও পাক অধিকৃত কাশ্মিরে কেবল জঙ্গি ঘাঁটি ও গোপন আস্তানাকে নিশানা করেছিল ভারত। পরিমিত, সুনির্দিষ্ট এবং উত্তেজনা যাতে বৃদ্ধি না পায়, সেরকমই পদক্ষেপ নিয়েছিল ভারত। পাকিস্তানের পক্ষ থেকে যে কোনও আগ্রাসনের কঠোর জবাব দেওয়ার বিষয়টিও পরিষ্কার করেছিল দিল্লি।’’ ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বিক্রম মিশ্রির ভিডিও বার্তাটি শেয়ার করেছেন। ভিডিওতে পররাষ্ট্রসচিব বলছেন, ‘‘গত ৯ মে রাতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ফোন করেন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স। সেদিন তিনি বলেছিলেন, পাকিস্তান ভারতে বড়সড় হামলা চালাতে পারে। প্রধানমন্ত্রী মোদি তাকে স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছিলেন, যদি এমন কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়, তাহলে ভারত আরও কড়া জবাব দেবে। মোদি ও মার্কিন প্রেসিডেন্টের ফোনালাপের বিষয়ে বিক্রম মিশ্রি বলেন, ‘‘ভারত ৯-১০ মে রাতে পাকিস্তানের হামলার কঠিন জবাব দেয় এবং পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর উল্লেখযোগ্য ক্ষতি সাধন করে। তাদের সামরিক বিমানঘাঁটিগুলো অকেজো করে দেওয়া হয়। ভারতের দৃঢ় পদক্ষেপের কারণে পাকিস্তান সামরিক অভিযান বন্ধের অনুরোধ করতে বাধ্য হয়।’’ বিবৃতিতে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী মোদি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে স্পষ্ট জানিয়ে দেন, এই গোটা ঘটনাক্রমে কোনও সময়েই ভারত-মার্কিন বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা বা যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে মধ্যস্থতার প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়নি। বিক্রম মিশ্রি বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য মনোযোগ সহকারে শোনেন এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের লড়াইয়ের প্রতি তার সমর্থন ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, জি-সেভেন শীর্ষ সম্মেলন চলাকালীন ট্রাম্প ও মোদির মাঝে আলোচনা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট তড়িঘড়ি ফিরে যাওয়ায় সেই আলোচনা হয়নি। এরপরে ট্রাম্পের আগ্রহেই দুই নেতা ভারতীয় সময় বুধবার সকালে টেলিফোনে কথা বলেন বলে জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রসচিব। সূত্র: বিবিসি।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আলী খামেনেয়ির জাতির উদ্দেশে ভাষণ
ইরানের বিভিন্ন স্থানে ইহুদিবাদী ইসরায়েলের হামলায় দেশটির বেশ কিছু সংখ্যক কমান্ডার, বিজ্ঞানী এবং বেসামরিক নাগরিক নিহত হওয়ার পর দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনেয়ি ইরানি জাতির উদ্দেশে ভিডিও বার্তা দিয়েছেন। বুধবার (১৮ জুন) বার্তাটি সম্প্রচারিত হয়েছে দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে। জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে খামেনেয়ি বলেন, ‘আমাদের কয়েকজন প্রিয় কমান্ডার ও বিজ্ঞানী এবং বেসামরিক নাগরিকের শাহাদাত সবার জন্য কষ্টদায়ক। আমি ইরানি জাতি ও তাদের পরিবারের প্রতি অভিনন্দন, সমবেদনা ও শোক জানাচ্ছি। আশা করছি সর্বশক্তিমান আল্লাহ তাদের উচ্চ মর্যাদা দান করবেন এবং তাদের পবিত্র আত্মাগুলোকে তাঁর বিশেষ করুণায় আচ্ছাদিত করবেন।’ ইসরায়েল মারাত্মক ভুল করে ফেলেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি আমাদের প্রিয় জাতিকে বলতে চাই, ইহুদিবাদী ইসরায়েল বড় ভুল করে ফেলেছে, মারাত্মক ভুল করেছে এবং এর পরিণতিতে দখলদার ইসরায়েল অসহায় হয়ে পড়বে ইনশাআল্লাহ। ইরানি জাতি শহিদদের মূল্যবান রক্ত বৃথা যেতে দেবে না, তারা তাদের দেশের আকাশসীমা লঙ্ঘন মেনে নেবে না।’ ইসরায়েলকে প্রতিহত করতে ইরানের সশস্ত্র বাহিনী প্রস্তুত বলেও জানান আয়াতুল্লাহ আলী খামেনেয়ি। দেশের কর্মকর্তাগণ ও সর্বস্তরের জনগণ সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে রয়েছেন বলেও ভাষণে উল্লেখ করেন তিনি। দেশটির সর্বোচ্চ এই নেতা আরও বলেন, ‘আজ দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন মহল ও ব্যক্তি থেকে একই রকম বার্তা জারি করা হয়েছে। সকলেই মনে করেন যে আমাদের অবশ্যই ঘৃণিত ও নিকৃষ্ট সন্ত্রাসী ইহুদিবাদী ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। আল্লাহর ইচ্ছায় আমরা শক্তিমত্তার সাথে কাজ করব এবং তাদেরকে কোন ছাড় দেয়া হবে না।’ শত্রুর প্রতি কড়া বার্তা দিয়ে খামেনেয়ি বলেন, ‘নিঃসন্দেহে ইহুদিবাদীদের জীবন অতিষ্ট হয়ে পড়বে। ইহুদিবাদীরা যেন এটা না ভাবে যে, তারা আঘাত করেছে এবং এখানেই তা শেষ হয়ে গেছে। না, তারা শুরু করেছে এবং তারা যুদ্ধের সূচনা করেছে। ইহুদিবাদীরা যে মারাত্মক অপরাধ করেছে, তা থেকে তাদেরকে অক্ষত অবস্থায় বের হওয়ার সুযোগ দেব না। ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সশস্ত্র বাহিনী অবশ্যই এই ঘৃণিত ইহুদিবাদী শত্রুর ওপর প্রচণ্ড আঘাত হানবে এবং ইরানি জাতি আল্লাহর ইচ্ছায় ইসরায়েলকে ইসলামি প্রজাতন্ত্র পরাজিত করবে বলে জানান তিনি।

খামেনিকে লক্ষ্য করে ট্রাম্পের মন্তব্য, তেহরানে বিক্ষোভে উত্তাল জনতা
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আলী খামেনিকে লক্ষ্য করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিতর্কিত মন্তব্য এবং ইসরায়েলের চলমান আগ্রাসনের প্রতিবাদে ইরানে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার (১৮ জুন) ভোরে ইরানের রাজধানী তেহরানে এই বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। ওই সময় শতাধিক বিক্ষুব্ধ নাগরিক তেহরানের কেন্দ্রীয় প্যালেস্টাইন স্কয়ারে জড়ো হয়ে এই প্রতিবাদ সমাবেশে অংশ নেন। তাদের হাতে ছিল ইরানি জাতীয় পতাকা ও আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আলী খামেনির ছবি। বিক্ষুব্ধ জনতা সমাবেশে ট্রাম্পের "উস্কানিমূলক" বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানানোর পাশাপাশি ইরানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ওয়াশিংটনের হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধেও জোরালো স্লোগান দেন। বিক্ষোভটি দ্রুতই যুক্তরাষ্ট্রের শত্রুতা এবং ইসরায়েলের "অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের" বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রতিবাদে রূপ নেয়।এই বিষয়ে বিক্ষোভকারীরা বলেন, ইসরায়েলের বারবার ইরানের সার্বভৌম ভূখণ্ডে হামলা চালাচ্ছে এবং সামরিক কমান্ডার, পরমাণু বিজ্ঞানী ও নিরীহ সাধারণ নাগরিকদের হত্যা করছে, যা সন্ত্রাসবাদ ও বর্বরতার উদাহরণ। সূত্র:তাসনিম নিউজ এজেন্সি

হরমুজ প্রণালির কাছে দুই তেলবাহী জাহাজের সংঘর্ষ, আগুন
ওমান সাগরে দুই তেলবাহী জাহাজের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত জানিয়েছে, নেভিগেশন ত্রুটির কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। প্রাথমিক তথ্যের বরাত দিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের জ্বালানি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ওমান সাগরে দুটি তেলবাহী ট্যাংকারের মধ্যে একটি দুর্ঘটনাজনিত সংঘর্ষ ইঙ্গিত দেয়, ঘটনাটি একটি জাহাজের নেভিগেশনে ভুল সিদ্ধান্তের কারণে ঘটেছে। মঙ্গলবার হরমুজ প্রণালির কাছে ‘অ্যাডালিন’ এবং ‘ফ্রন্ট ইগল’ নামের দুটি ট্যাংকারের মধ্যে সংঘর্ষ হয় এবং আগুন ধরে যায়। ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সংঘাতের মধ্যে এই এলাকায় ইলেকট্রনিক হস্তক্ষেপ বেড়েছে। এই কারণে জাহাজের নেভিগেশন ব্যবস্থায় ব্যাঘাত ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। তবে জাহাজের কর্মীদের কোনো আঘাত বা তেল ছড়িয়ে পড়ার খবর পাওয়া যায়নি।

ইসরাইলের দিকে ‘ফাত্তাহ-১’ ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান
ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (আইআরজিসি) ইসরায়েলের ওপর ভয়াবহ ও শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। বুধবার (১৮ জুন) ভোররাতে এই ভয়াবহ হামলার ঘটনা ঘটে। এই হামলাকে সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে ইরানের অন্যতম বড় প্রতিশোধমূলক আঘাত হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে। হামলার আগে দখলকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডজুড়ে সাইরেন বেজে ওঠে এবং পরে ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলো বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুর ওপর আঘাত হানে। এক বিবৃতিতে আইআরজিসি জানায়, ইসরায়েলের আগ্রাসনের জবাবে চালানো এটি ১১তম প্রতিশোধমূলক হামলা। এতে ব্যবহার করা হয়েছে ‘ফাত্তাহ’ নামের অত্যাধুনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। এই ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যূহ ভেদ করে সফলভাবে বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে। এরপর ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলো বিভিন্ন সামরিক ও কৌশলগত স্থাপনায় আঘাত হানে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এই ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যূহ ভেদ করার পাশাপাশি একাধিকবার আতঙ্ক ছড়িয়েছে দখলদারদের আশ্রয়স্থলে। আইআরজিসি দাবি করছে, ইরান এখন ফিলিস্তিন অঞ্চলের আকাশসীমার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে এবং ইসরায়েলি বাহিনী পুরোপুরি অসহায় হয়ে পড়েছে। উল্লেখ্য, ১৩ জুন থেকে ইরান ইসরায়েলের বিরুদ্ধে একাধিকবার প্রতিশোধমূলক হামলা চালিয়ে আসছে। ইসরায়েলের আগ্রাসনে ইরানের পারমাণবিক, সামরিক ও আবাসিক স্থাপনায় চালানো হামলায় শহীদ হয়েছেন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা, পারমাণবিক বিজ্ঞানী ও সাধারণ নাগরিক—যাদের মধ্যে রয়েছেন ৪৫ জন নারী ও শিশু। সূত্র: তাসনিম নিউজ এজেন্সিএএস/ এমআর