
দীর্ঘ নীরবতা ভেঙে অবশেষে ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে ক্ষয়ক্ষতির কথা প্রকাশ্যে মেনে নিল পাকিস্তান। গত মে মাসে চালানো ওই সামরিক অভিযানের সাত মাস পর প্রথমবারের মতো দেশটির সরকার স্বীকার করেছে যে এতে তাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিমান ঘাঁটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
রোববার রাজধানী ইসলামাবাদে এক সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র ও উপপ্রধানমন্ত্রী ইসহাক দার জানান, ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর অভিযানের ফলে নূর খান বিমান ঘাঁটির গুরুতর ক্ষতি হয়েছে। তিনি বলেন, “নূর খান বিমান ঘাঁটিকে লক্ষ্য করে মাত্র ৩৬ ঘণ্টায় ৮০টি বিস্ফোরকবাহী ড্রোন নিক্ষেপ করেছিল ভারত। পাকিস্তানের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম অবশ্য ৮০টি ড্রোনের মধ্যে ৭৯টিই আটকে দিতে পেরেছিল, মাত্র একটিকে আটকাতে ব্যর্থ হয়েছিল।”
ইসলামাবাদ থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত নূর খান বিমান ঘাঁটিকে পাকিস্তান বিমান বাহিনীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। দার অভিযোগ করেন, “নূর খান বিমান ঘাঁটিতে হামলা করা ভারতের জন্য ভুল ছিল। কারণ এই হামলার পরই পাকিস্তান পাল্টা অভিযানের (অপারেশন বুনিয়ান উম মারসুস) সিদ্ধান্ত নেয়।”
এর আগে অপারেশন সিঁদুরের ফলে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে প্রকাশ্যে কোনো বক্তব্য দেননি পাকিস্তান সরকারের কোনো মন্ত্রী। ইসহাক দারের সাম্প্রতিক মন্তব্যে বোঝা যাচ্ছে, এ বিষয়ে ইসলামাবাদ আগের অবস্থান থেকে কিছুটা সরে এসেছে।
সংবাদ সম্মেলনে যুদ্ধবিরতি প্রসঙ্গেও কথা বলেন দার। তিনি স্পষ্ট করেন যে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে ভারতকে যুদ্ধবিরতির কোনো প্রস্তাব দেওয়া হয়নি। তার ভাষ্য অনুযায়ী, ১০ মে ভোরে নূর খান বিমান ঘাঁটিতে হামলার পর সকাল ৮টা ১৭ মিনিটে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও তাকে ফোন করে জানান, ভারত যুদ্ধবিরতিতে আগ্রহী এবং পাকিস্তানের অবস্থান জানতে চায়। এ প্রসঙ্গে দার বলেন, “আমি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বললাম, যুদ্ধে জড়ানোর কোনো ইচ্ছা পাকিস্তানের নেই।”
এই সামরিক উত্তেজনার পেছনে রয়েছে জম্মু ও কাশ্মিরে ভয়াবহ এক সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা। গত ২২ এপ্রিল ভারতের অনন্তনাগ জেলার পেহেলগামের বৈসরন উপত্যকায় স্বয়ংক্রিয় রাইফেল দিয়ে গুলি চালিয়ে ২৬ জন পর্যটককে হত্যা করা হয়। নিহত সবাই পুরুষ এবং তাদের অধিকাংশই হিন্দু ধর্মাবলম্বী ছিলেন।
হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই দায় স্বীকার করে বিবৃতি দেয় দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট বা টিআরএফ নামের একটি সন্ত্রাসী সংগঠন। প্রাথমিক তদন্তে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ জানায়, টিআরএফ পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী লস্কর ই তৈয়বার একটি শাখা।
এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় ভারত সিন্ধু নদের পানি বণ্টন চুক্তি স্থগিতসহ পাকিস্তানের নাগরিকদের ভিসা বাতিল করে এবং একাধিক কূটনৈতিক পদক্ষেপ নেয়। পাল্টা জবাবে পাকিস্তানও ভারতের জন্য আকাশসীমা বন্ধ এবং ভিসা বাতিলসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ ঘোষণা করে।
দুই দেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যেই ১০ মে পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মিরসহ কয়েকটি এলাকায় ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে সংক্ষিপ্ত সামরিক অভিযান চালায় ভারতের প্রতিরক্ষা বাহিনী। নয়াদিল্লির দাবি অনুযায়ী, অভিযানে ৭০ জন পাকিস্তানি সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে। তবে পাকিস্তান বলছে, এতে ৩১ জন নিহত ও ৫৭ জন আহত হয়েছে এবং তাদের কেউই সন্ত্রাসী ছিলেন না।
সূত্র: এএফপি