
অধিকৃত পশ্চিম তীরের কাবাতিয়া শহর এখন কার্যত অবরুদ্ধ। টানা সামরিক অভিযানে ঘরবাড়ি দখল, ব্যাপক গ্রেপ্তার ও কঠোর কারফিউ আরোপ করেছে ইসরায়েলি বাহিনী, যা স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়েছে।
স্থানীয় সূত্রের বরাতে আল জাজিরা জানিয়েছে, অভিযানের দ্বিতীয় দিন শনিবার শহরের সব প্রবেশপথ বন্ধ করে দেয় ইসরায়েলি সেনারা। বিভিন্ন এলাকা থেকে বাসিন্দাদের আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ফিলিস্তিনি বার্তা সংস্থা ওয়াফা জানায়, কাবাতিয়ার একাধিক বাড়ি জোরপূর্বক দখলে নিয়ে সেগুলো অস্থায়ী জিজ্ঞাসাবাদ কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এর ফলে অনেক পরিবারকে ঘর ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর রেডিও জানিয়েছে, পুরো শহরজুড়ে ‘পূর্ণ কারফিউ’ কার্যকর রয়েছে।
এই অভিযানের নির্দেশ দেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ। তার ভাষ্য অনুযায়ী, উত্তর ইসরায়েলে সংঘটিত এক ছুরিকাঘাত ও গাড়ি চাপা দেওয়ার ঘটনায় অভিযুক্ত একজন ফিলিস্তিনি কাবাতিয়ার বাসিন্দা—এই অভিযোগের ভিত্তিতেই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
শুক্রবার দেওয়া এক বিবৃতিতে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানায়, একাধিক ডিভিশনের সেনা, সীমান্ত পুলিশ এবং অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংস্থা শিন বেতের সদস্যদের কাবাতিয়ায় মোতায়েন করা হয়েছে। বাহিনীটি সন্দেহভাজন হামলাকারীর বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে এবং সেটি ভেঙে ফেলার প্রস্তুতিও চলছে বলে জানানো হয়।
ফিলিস্তিনিদের অভিযুক্ত করে তাদের পরিবারের বাড়িঘর ধ্বংসের ইসরায়েলি নীতিকে দীর্ঘদিন ধরেই মানবাধিকার সংগঠনগুলো ‘সমষ্টিগত শাস্তি’ হিসেবে অভিহিত করে আসছে। তাদের মতে, এ ধরনের পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, কাবাতিয়ার আরও বিভিন্ন এলাকায় অভিযান অব্যাহত থাকবে। তল্লাশি চালিয়ে গ্রেপ্তার ও অস্ত্র উদ্ধারের উদ্যোগ নেওয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে।
কাবাতিয়ার এক বাসিন্দা আল জাজিরাকে বলেন, শহরজুড়ে ভয় ও আতঙ্কের পরিবেশ বিরাজ করছে। তার ভাষায়, ইসরায়েলি বাহিনীর লাগাতার হুমকি ও উসকানি পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলেছে।
অভিযান কেবল কাবাতিয়ায় সীমাবদ্ধ ছিল না। ওয়াফার খবরে বলা হয়েছে, শনিবার রামাল্লাহ ও হেবরনের আশপাশের কয়েকটি গ্রামেও অভিযান চালানো হয়। হেবরনের কাছে দুরা, আবদা ও ইমরেইশ এলাকা থেকে অন্তত আটজনকে মারধর করে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি সামরিক অভিযান এখন প্রায় নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে গাজায় চলমান যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে দখলদার বাহিনীর দমন–পীড়নের মাত্রা আরও বেড়েছে।