
গত জুনে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের আক্রমণের পরও ইরানের উচ্চসমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের বড় অংশ এখনও নিরাপদ রয়েছে। রাশিয়ার সংবাদমাধ্যম আরআইএ নভোস্তির সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) প্রধান রাফায়েল গ্রোসি এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
রোববার (২১ ডিসেম্বর) তিনি বলেন, “ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো উল্লেখযোগ্যভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তবে তাদের কাছে থাকা উচ্চসমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের বেশিরভাগই এখনো দেশে রয়েছে। এটি একটি উদ্বেগজনক পরিস্থিতি।”
এর আগে শনিবারও গ্রোসি উল্লেখ করেছেন, আইএইএ প্রতিনিধিদের ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় প্রবেশের অনুমতি প্রয়োজন, যাতে নির্দিষ্ট স্থানগুলো অনিরাপদ কিনা তা যাচাই করা যায়।
গ্রোসি বলেন, “ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি কেবল যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্যবস্তুতে থাকা তিনটি স্থাপনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এই স্থাপনাগুলো পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ, রূপান্তর ও ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ইরান অত্যন্ত উন্নত পারমাণবিক সক্ষমতা রাখে, যার মধ্যে শক্তিশালী গবেষণা ও উন্নয়ন উপাদান এবং দেশের বিভিন্ন স্থাপনা অন্তর্ভুক্ত।”
তিনি আরও জানান, দেশটি একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিচালনা করছে এবং রাশিয়ার সহায়তায় আরও নতুন কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। সব ক্ষেত্রে পারমাণবিক কার্যক্রম অব্যাহত আছে।
আইএইএ প্রধান বলেন, পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি (এনপিটি) এবং ব্যাপক সুরক্ষা চুক্তির অধীনে ইরানকে এই স্থাপনাগুলোতে প্রবেশাধিকার দিতে বাধ্য। তেহরান কিছু স্থাপনাকে দুর্গম ও অনিরাপদ উল্লেখ করছে, তবে পরিদর্শকদের সত্যিই প্রবেশ করতে না পারা সম্ভব কিনা তা নিশ্চিত করার জন্য অনুমতি দিতে হবে।
গ্রোসির মন্তব্য এমন এক সময় এসেছে, যখন যুক্তরাষ্ট্র দাবি করেছে তাদের সামরিক অভিযান ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করেছে।
স্মরণীয়, গত ১৩ জুন পারমাণবিক আলোচনার প্রক্রিয়ার সময় ইসরায়েল ইরানের উপর বিনা উস্কানিতে হামলা চালায়। ১২ দিনের সংঘর্ষে কমপক্ষে ১,০৬৪ জন নিহত হন, যার মধ্যে ছিলেন সামরিক কমান্ডার, পারমাণবিক বিজ্ঞানী এবং সাধারণ নাগরিক। যুক্তরাষ্ট্রও তিনটি ইরানি পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা হামলা চালিয়ে যুদ্ধের সঙ্গে যুক্ত হয়।
জবাবে ইরানি সশস্ত্র বাহিনী ইসরায়েলসহ দখলকৃত অঞ্চল এবং পশ্চিম এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ আমেরিকান ঘাঁটি কাতারের আল-উদেইদ বিমান ঘাঁটিকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধবিরতি অর্জনের কৃতিত্ব দাবি করলেও তেহরান বলছে, তারা দখলদার সরকার ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়ের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক অভিযান চালিয়ে আগ্রাসন বন্ধ করতে সক্ষম হয়েছে।