.jpg)
নাইজেরিয়ার উত্তরাঞ্চলের একটি ক্যাথলিক স্কুল থেকে অপহৃত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১০০ জনকে উদ্ধার করেছে দেশটির কর্তৃপক্ষ।
রোববার (০৭ ডিসেম্বর) সরকারি সূত্র ও স্থানীয় গণমাধ্যম এ তথ্য জানিয়েছে।
জাতিসংঘের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানায়, উদ্ধার হওয়া শিক্ষার্থীরা রাজধানী আবুজায় পৌঁছেছে এবং সোমবার তাদের নাইজার অঙ্গরাজ্যের প্রশাসনের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হবে। সূত্রটির বক্তব্য, “তাদের আগামীকাল নাইজার স্টেট সরকারের হাতে তুলে দেওয়া হবে।”
দ্য গার্ডিয়ান জানায়, উদ্ধার শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা চলছে। প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া শেষে তাদের অভিভাবকদের কাছে ফেরত পাঠানো হবে। প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র সানডে ডেয়ারও এএফপিকে নিশ্চিত করেছেন যে ১০০ ছাত্রছাত্রী মুক্তি পেয়েছে।
গত ২১ নভেম্বর নাইজার স্টেটের আগোয়ারা জেলার পাপিরি এলাকার সেন্ট মেরি স্কুলে হামলা চালিয়ে সশস্ত্র ব্যক্তিরা ৩০৩ শিক্ষার্থী ও ১২ শিক্ষককে অপহরণ করে। নাইজেরিয়ার খ্রিস্টান সংগঠন সিএএন জানায়, অপহৃত শিক্ষার্থীদের বয়স ১০ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে, এবং ছেলে-মেয়ে উভয়ই ছিল।
অপহরণের কয়েক দিনের মধ্যেই ৫০ জন শিক্ষার্থী পালিয়ে বাড়ি ফিরতে সক্ষম হয়। সর্বশেষ ১০০ জনকে উদ্ধারের পরও প্রায় ১৫৩ শিক্ষার্থী ও ১২ শিক্ষক এখনো দুর্বৃত্তদের হাতে বন্দি বলে মনে করা হচ্ছে।
এ ঘটনার কয়েক দিন আগেই পাশের কেব্বি স্টেটের মাগা শহরের সরকারি বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে আরও ২৫ ছাত্রীকে অপহরণ করা হয়। এই স্থানটি আগোয়ারা এলাকার ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ১৭০ কিলোমিটার দূরে।
কনটাগোরা ডায়োসিসের মুখপাত্র ড্যানিয়েল আটোরি বলেন, “আমরা তাদের ফেরার অপেক্ষায় প্রার্থনা করছিলাম। যদি এটি সত্য হয়, তবে এটি অবশ্যই স্বস্তির খবর।” তবে তিনি জানান, এ বিষয়ে ফেডারেল সরকারের কাছ থেকে তারা এখনও আনুষ্ঠানিক কোনো বার্তা পাননি।
স্থানীয়রা বলছেন, সাম্প্রতিক এই অপহরণগুলো ২০১৪ সালে চিবক শহর থেকে ২৭০-এর বেশি ছাত্রী তুলে নেওয়ার ঘটনার পর সবচেয়ে বড় অপহরণের ঘটনা। হিসাব অনুযায়ী, ওই ঘটনার পর থেকে এখন পর্যন্ত ১,৪০০-র বেশি শিক্ষার্থী নাইজেরিয়ায় অপহৃত হয়েছে।
এই পরিস্থিতি সামনে আসার পর যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেন, নাইজেরিয়ার খ্রিস্টানরা “গণহত্যার” ঝুঁকিতে রয়েছে। তবে দেশটির সরকারি পক্ষ ও খ্রিস্টান সংগঠনগুলো এই দাবি প্রত্যাখ্যান করে জানায়, চলমান সহিংসতায় সব ধর্মের মানুষই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা কিমিয়েবি ইমোমোটিমি এবিয়েনফা গত মাসে আল জাজিরাকে বলেন, “আমরা স্বীকার করি দেশে সহিংসতা হয়েছে, কিন্তু এটি শুধু খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে নয়। মুসলিমদেরও হত্যা করা হয়েছে, ঐতিহ্যবাহী উপাসকরাও নিহত হয়েছেন। সংখ্যার বিচারে খ্রিস্টানরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ ভুক্তভোগী নন।”
ট্রাম্প আরও অভিযোগ করেন, নাইজেরিয়া খ্রিস্টানদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ এবং দেশটিতে সামরিক হস্তক্ষেপের হুমকিও দেন। একই সঙ্গে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা কমানোর কথাও উল্লেখ করেন।
দুই কোটির বেশি জনসংখ্যার নাইজেরিয়া ধর্মীয়ভাবে বিভক্ত দেশ- উত্তরে মুসলিম প্রধান অঞ্চল, আর দক্ষিণে খ্রিস্টানদের আধিক্য। পিউ রিসার্চ সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, দেশের প্রায় ৫৬ শতাংশ মুসলিম এবং ৪৩ শতাংশ খ্রিস্টান। উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সক্রিয় সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর হামলা প্রায় ১৫ বছর ধরে চলমান, যা মূলত মুসলিমপ্রধান এলাকাতেই সীমাবদ্ধ।