
রাশিয়ার আগ্রাসনের দুই বছর পর ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রে নতুন বাস্তবতা তৈরি হয়েছে—দ্রুত বাড়ছে নারী সেনাদের অংশগ্রহণ। বর্তমানে ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীতে ৭০ হাজারেরও বেশি নারী দায়িত্ব পালন করছেন; ২০২২ সালে পূর্ণমাত্রার হামলার সময়ের তুলনায় এ সংখ্যা ২০ শতাংশ বেশি।
এদের মধ্যে সাড়ে পাঁচ হাজারের বেশি নারী সরাসরি ফ্রন্টলাইনে মোতায়েন। সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, এই উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধির পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে আধুনিক প্রযুক্তি, বিশেষ করে ড্রোন–যুদ্ধ। ড্রোন প্রযুক্তি নারী সদস্যদেরকে সামনের সারিতে না থেকেও অত্যাধুনিক যুদ্ধ ও প্রযুক্তিগত কার্যক্রমে যুক্ত হওয়ার সুযোগ দিচ্ছে। খবর দ্য নিউইয়র্ক পোস্ট।
ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সম্প্রতি জানান, ২০২২ সালের আগ্রাসনের পর দেশটির প্রায় ৪৫ হাজার সেনা নিহত এবং অন্তত ৩ লাখ ৯০ হাজার সেনা আহত হয়েছেন।
তৃতীয় আর্মি কর্পসের ২৬ বছর বয়সী নারী ড্রোন–অপারেটর মনকা বলেন, প্রযুক্তিই তাকে যুদ্ধক্ষেত্রে কার্যকর হতে সাহায্য করেছে। বিদেশে রেস্তোরাঁ ব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ করার পর তিনি দেশে ফিরে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। মনকা বলেন, ‘হাতে গোলাবারুদ নিয়ে না ছুটে, বরং প্রযুক্তির মাধ্যমে তা পৌঁছে দেওয়া যায়— এটা সত্যি অবিশ্বাস্য।’
ইউক্রেন যুদ্ধে ড্রোন এখন সবচেয়ে কৌশলগত অস্ত্রে পরিণত হয়েছে—রাশিয়ার তেল স্থাপনা, গোলাবারুদভাণ্ডার ও সুরক্ষা ঘাঁটিতে হামলায় এসব ড্রোন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। কিছু ড্রোন ‘কামিকাজে’ হিসেবে আঘাত হানে, কিছু বোমা ফেলেই ফিরে আসে, আর বহু ড্রোন নজরদারির কাজে ব্যবহৃত হয়।
৯ম ব্রিগেডের ২৫ বছর বয়সী ড্রোন–বোমা পাইলট ইয়াহা জানান, ড্রোন প্রশিক্ষণে ভর্তি হতে গিয়ে প্রথমে বাধার মুখে পড়তে হয়েছিল তাকে। তিনি বলেন, দূর থেকে শত্রুতে আঘাত হানার ধারণাটাই আমাকে টেনেছিল। তখনই বুঝেছিলাম— এটাই ভবিষ্যৎ।
যুদ্ধ যে রোমাঞ্চ নয়, বরং বেদনা ও ক্ষতির গল্প—সেটিও তুলে ধরেন ইয়াহা। তার ভাষায়, এটা যন্ত্রণা, কষ্ট আর হারিয়ে ফেলার গল্প। তবুও আপনি লড়াই করেন, কারণ আপনি পরিস্থিতি বদলাতে চান।
২৭ বছর বয়সী ইমলা আগে ছিলেন পেশাদার হকি খেলোয়াড়। সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার পর প্রথমে প্যারামেডিক হিসেবে কাজ করেন, পরে ড্রোন ইউনিটে যুক্ত হন। প্রথম রিকনাইস্যান্স মিশনে তিনি ভয় ও দুশ্চিন্তায় ভেঙে পড়েছিলেন। ইমলা এবিসি নিউজকে বলেন, ‘সত্যি বলতে, কয়েক মুহূর্তে আমার কাঁদতে ইচ্ছে হয়েছিল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বাড়ে, আত্মবিশ্বাসও ফিরে আসে।’
ইউক্রেনের খারতিয়া কর্পসসহ বেশ কয়েকটি ইউনিটে এখন নারীদের লক্ষ্য করে নতুন নিয়োগ প্রচারণা চলছে। ২০২৪ সাল থেকে এসব ইউনিটে নারী সদস্য ২০ শতাংশ বেড়েছে। জনসংযোগ কর্মকর্তা ভলোদিমির দেহতিয়ারোভ জানান, সাম্প্রতিক সময়ে বিপুল সংখ্যক নারী কমব্যাট ইউনিটে যোগ দিয়ে সফলতার সঙ্গে কাজ করছেন। তার ভাষায়, যত বেশি প্রযুক্তি আসছে, বিশেষত ড্রোন— ততই ঐতিহাসিকভাবে পুরুষশাসিত ক্ষেত্রগুলো নারীদের জন্য উন্মুক্ত হচ্ছে।