যুদ্ধবিরতির পরও মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা, অব্যাহত ইসরায়েলি হামলা
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক
- প্রকাশঃ ০৮:৫৩ এম, ২৮ অক্টোবর ২০২৫
যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পরও ইসরায়েলের সামরিক অভিযান থামেনি। গাজা, পশ্চিম তীর, সিরিয়া ও লেবাননজুড়ে টানা হামলায় পুরো মধ্যপ্রাচ্য আবারও অস্থির হয়ে উঠছে।
আল জাজিরার সোমবার (২৭ অক্টোবর) প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও ইসরায়েলের আক্রমণ অব্যাহত রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে। যুক্তরাষ্ট্রের নীরব ভূমিকা ইসরায়েলের এই আগ্রাসনকে আরও বাড়িয়ে তুলছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
গত ১০ অক্টোবর ঘোষিত যুদ্ধবিরতি গাজার মানুষের ওপর কিছুটা চাপ কমালেও ইসরায়েলি হামলা পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। বরং লেবানন, সিরিয়া ও পশ্চিম তীরেও দেশটি নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, প্রতিবেশী দেশগুলোকে দুর্বল করে নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই ইসরায়েলের মূল কৌশল হিসেবে দেখা দিচ্ছে।
যদিও সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা ইসরায়েল সফর করেছেন, ওয়াশিংটন এখনও তেল আবিবের এসব আঞ্চলিক হামলার বিরুদ্ধে কোনো অবস্থান নেয়নি। বরং ট্রাম্প প্রশাসন এখনো মূলত গাজার পরিস্থিতিতেই মনোযোগ দিচ্ছে।
পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযান আরও তীব্র হয়েছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত শুধু এই অঞ্চলেই নিহত হয়েছেন এক হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি। ইসরায়েল সেখানে দখল আরও সুসংহত করার চেষ্টা করছে।
এ ছাড়া ফিলিস্তিনিদের জলপাই সংগ্রহে বাধা দেওয়া, হেনস্তা ও নির্বিচারে গ্রেপ্তারের ঘটনাও অব্যাহত রয়েছে।
ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোটরিচ তার সমর্থকদের আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে, যাতে তিনি পশ্চিম তীরকে ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্ত করার পরিকল্পনায় সমর্থন দেন। তিনি বলেন, “পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের সার্বভৌমত্ব ঘোষণা করতে হবে, এতে করে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের বিপজ্জনক ধারণা ঠেকানো যাবে।”
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে সিরিয়ার ভেতরেও ইসরায়েলি হামলা বেড়েছে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, দক্ষিণ সীমান্তে প্রায় প্রতিদিনই ইসরায়েলি বাহিনী অনুপ্রবেশ করছে।
গত বছরের ডিসেম্বরে সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ সরকার পতনের পর থেকে সিরিয়ার সামরিক স্থাপনায় টানা হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। সর্বশেষ রোববার সকালে কুনেইত্রা প্রদেশের আল-রাজানিয়া ও সাইদা আল-হানুত গ্রামে ইসরায়েলি সেনারা প্রবেশ করে অস্থায়ী চেকপোস্ট স্থাপন করে। সরকারি বার্তা সংস্থা সানা জানায়, ওই সময় তারা এক রুটি সরবরাহকারীকে আটক করে পরে ছেড়ে দেয়।
জাতিসংঘে সিরিয়ার প্রতিনিধি ইব্রাহিম ওলাবি ২৪ অক্টোবর নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে বলেন, “ইসরায়েলকে অবশ্যই সিরিয়ার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে এবং গোলান মালভূমিসহ দখলকৃত অঞ্চল থেকে সরে যেতে হবে।”
লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে প্রতিদিনই ইসরায়েলি বিমান ও ড্রোন হামলা হচ্ছে। সোমবার জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন ইউএনআইএফআইএল জানায়, তাদের টহল দলের ওপর গ্রেনেড নিক্ষেপ করলে তারা একটি ইসরায়েলি ড্রোন গুলি করে নামায়। পরে ইসরায়েলি ট্যাংক শান্তিরক্ষীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে, যদিও হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
রোববার বালবাকের নবি চিত ও দক্ষিণ লেবাননের নাকুরা এলাকায় ইসরায়েলি হামলায় দুইজন নিহত হন। ২০২৪ সালের ২৭ নভেম্বর যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও ইসরায়েল এখনও লেবাননের ভেতরে অবস্থান করছে এবং প্রায় প্রতিদিনই হামলা চালাচ্ছে। এসব হামলায় বেসামরিক নাগরিক নিহত ও অবকাঠামোর ক্ষতি হচ্ছে।
ইসরায়েলের দাবি, হিজবুল্লাহর পুনর্গঠন ঠেকাতেই এসব অভিযান চালানো হচ্ছে। অন্যদিকে ওয়াশিংটন ও তেল আবিব চায় লেবানন সরকার হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্র করুক, যদিও যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে এমন কোনো শর্ত ছিল না। লেবানন সরকার যুক্তরাষ্ট্রকে আহ্বান জানিয়েছে, ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের জন্য তাকে জবাবদিহির আওতায় আনতে।
তবে মার্কিন বিশেষ দূত টম ব্যারাক এখনো ইসরায়েলকে থামাতে ব্যর্থ হয়েছেন, যার ফলে দেশজুড়ে উদ্বেগ বাড়ছে।
মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স গত সপ্তাহে ইসরায়েল সফরে বলেন, ১০ অক্টোবরের যুদ্ধবিরতি “প্রত্যাশার চেয়েও ভালোভাবে” চলছে। কিন্তু বাস্তবে গাজায় এখনও হামলা চলছে। শনিবার রাতে নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় একজন নিহত ও চারজন আহত হন বলে আল-আউদা হাসপাতাল জানিয়েছে। যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর থেকে প্রায় ১০০ ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন।
ইসরায়েল রাফাহ সীমান্ত দিয়ে রোগীদের দেশত্যাগেও বাধা দিচ্ছে। এমনকি তৃতীয় ধাপের ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদেরও চিকিৎসার জন্য বাইরে যেতে দেওয়া হচ্ছে না।
মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে, আর যুদ্ধবিরতির পরও থামছে না ইসরায়েলের আগ্রাসন। অনেক বিশ্লেষক আশঙ্কা করছেন, এভাবে চলতে থাকলে অঞ্চলটি আবারও ভয়াবহ সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে পারে।