
গাজার ফিলিস্তিনিদের আফ্রিকার যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ দক্ষিণ সুদানে স্থানান্তরের পরিকল্পনায় এগোচ্ছে ইসরায়েল। দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভা এরই মধ্যে দক্ষিণ সুদানের সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা শুরু করেছে বলে জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম এপি নিউজ।
আজ বুধবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ছয়টি নির্ভরযোগ্য সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে এপি জানায়, দুই দেশের মধ্যে এই আলোচনাগুলো চলমান রয়েছে। যদিও আলোচনার অগ্রগতির নির্দিষ্ট পর্যায় সম্পর্কে এখনো স্পষ্ট কিছু জানা যায়নি।
বিশ্লেষকদের মতে, পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে গাজার ফিলিস্তিনিদের জন্য এটি হবে একটি মারাত্মক মানবিক সংকট। কারণ, দক্ষিণ সুদান নিজেই দারিদ্র্য, দুর্ভিক্ষ এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের গভীর সংকটে রয়েছে।
গাজার জনগণকে অন্য কোনো দেশে পাঠানোর চিন্তাভাবনা প্রথম সামনে আনেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ২০২১ সালের ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর একাধিকবার তিনি বলেন, “গাজার বাসিন্দাদের এমন কোনো দেশে পাঠাতে হবে, যেখানে তারা নিরাপদে এবং সংঘাতের বাইরে থাকতে পারবেন।” সেই সময় তিনি অন্যান্য দেশকেও ফিলিস্তিনিদের আশ্রয় দিতে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। তবে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পরে এ বিষয়ে নীরব হন ট্রাম্প।
সম্প্রতি এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু আবারও ট্রাম্পের সেই প্রস্তাবকে সমর্থন জানিয়ে বলেন, “ট্রাম্প একজন দূরদৃষ্টিসম্পন্ন রাজনীতিক এবং গাজার ফিলিস্তিনিদের ভবিষ্যৎ নিয়ে তার দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে আমি একমত।”
ইসরায়েলি সম্প্রচারমাধ্যম আই২৪-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে গতকাল মঙ্গলবার নেতানিয়াহু বলেন, “আমি যদ্দুর জানি, যুদ্ধের আইন হলো যে এলাকায় যুদ্ধ হবে— সেখান থেকে বেসামরিক লোকজনকে নিরাপদ এলাকায় সরিয়ে নেওয়া, তারপর পূর্ণ শক্তি দিয়ে শত্রুকে মোকাবিলা করা।”
এপি জানায়, বিষয়টির বিস্তারিত জানার জন্য তারা ইসরায়েল এবং দক্ষিণ সুদানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। তবে কোনো পক্ষই আনুষ্ঠানিকভাবে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের একটি লবিং ফার্মের প্রধান নির্বাহী জোয়ে স্লাভিক জানিয়েছেন, দক্ষিণ সুদানে কর্মরত দেশটির কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তা তাকে জানিয়েছেন, ইসরায়েলের একটি প্রতিনিধি দল শিগগিরই দক্ষিণ সুদান সফর করবে। তাদের সফরের মূল উদ্দেশ্য হবে ফিলিস্তিনিদের জন্য সম্ভাব্য বসবাসযোগ্য অঞ্চল নির্ধারণ।
স্লাভিক এপি নিউজকে বলেন, “দক্ষিণ সুদানের সবচেয়ে বড় সংকট হলো দারিদ্র্য ও বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি। যদি ফিলিস্তিনিদের সেখানে স্থানান্তর করা হয়, তাহলে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে দক্ষিণ সুদান বড় অঙ্কের অর্থ সহায়তা পেতে পারে। তাছাড়া, দেশটির কিছু ধনী ও ক্ষমতাবান ব্যক্তির ওপর যেসব মার্কিন নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, ইসরায়েলের সঙ্গে চুক্তি হলে তা প্রত্যাহার হওয়ার সম্ভাবনাও তৈরি হবে।”
তিনি আরও বলেন, “সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো, দারিদ্র্যপীড়িত স্লোগান এখন হন্যে হয়ে বন্ধুত্বের হাত খুঁজছে, আর ইসরায়েল সেই হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।”
দক্ষিণ সুদানের সমাজকর্মী এবং সিভিল সোসাইটির শীর্ষ নেতা এডমুন্ড ইয়াকানিও বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি এপি নিউজকে জানান, “আমি দেশের কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছি। তাদের মধ্যে অন্তত চারজন নিশ্চিত করেছেন যে ইসরায়েলের সঙ্গে সরকারের আলোচনা চলছে।”