
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর নির্দেশ দিয়েছেন, যে কোনো ধরনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে এই ডিসেম্বরে পাঁচটি একীভূত ব্যাংকের আমানতকারীদের তাদের আমানত ফেরত দিতে হবে। তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন, এই সময়সীমার মধ্যে আমানতকারীদের অর্থ নিশ্চিতভাবে ফেরত দেওয়ার পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) ব্যাংকের প্রথম পরিচালনা পর্ষদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ বৈঠক থেকেই গভর্নরের নির্দেশনা আসে ।সভার সভাপতিত্ব করেন ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া। এতে অংশ নেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. হাফিজ আহমেদ চৌধুরী, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সচিব মো. সাইফুল্লাহ পান্না, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. কামাল উদ্দিন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী, যুগ্ম-সচিব মো. রাশেদুল আমিন ও শেখ ফরিদ।
এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর, ডেপুটি গভর্নর ড. মো. কবির আহাম্মদ, বিআরডি’র দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম, ব্যাংক রেজল্যুশন ডিপার্টমেন্টের কর্মকর্তারা এবং রেজল্যুশনের আওতাধীন পাঁচ ব্যাংকের প্রশাসকরা সভায় উপস্থিত ছিলেন।
সভায় প্রথমে পরিচালকদের কাছে রেজল্যুশনের আওতায় সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের বিষয়ে এখন পর্যন্ত নেওয়া পদক্ষেপগুলো উপস্থাপন করা হয়। এরপর গভর্নর নির্দেশ দেন, দ্রুত আইটি সিস্টেম ইন্টিগ্রেশন সম্পন্ন করতে যাতে আমানত ফেরত দেওয়া বা অন্য কোনো প্রক্রিয়ায় প্রযুক্তিগত সমস্যা না হয়।
নতুন গঠিত ব্যাংকের জন্য একটি একক ও সমন্বিত এইচআর নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। কারণ, বর্তমানে একীভূত পাঁচটি ব্যাংকে পদবি, গ্রেড ও পদোন্নতি ব্যবস্থায় ভিন্নতা রয়েছে। তাই সকল কর্মকর্তার জন্য অভিন্ন পদবি কাঠামো, স্বচ্ছ পদোন্নতি ব্যবস্থা ও বেতন-গ্রেড সিস্টেম প্রবর্তন করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক এর বাস্তবায়নে নিয়মিত নজরদারি করবে।
এছাড়া আমানতকারীরা যেন আগের ইস্যু করা চেক ব্যবহার করেই অর্থ তুলতে পারেন, তা নিশ্চিত করার কথাও বলা হয়েছে। জানুয়ারি মাসে সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হবে, তবে এর আগে আমানতকারীরা তাদের অর্থ ফেরত পাবেন। সভায় উপস্থিত পর্ষদ গভর্নরের সঙ্গে একমত পোষণ করে আমানতকারীদের স্বার্থ সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হিসেবে নিশ্চিত করার অঙ্গীকার করেন।
এর আগে, গতকালের সরকারের সময়ে কয়েকটি প্রভাবশালী গ্রুপ জালিয়াতির মাধ্যমে ডজনখানেক ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ ঋণ উত্তোলন করে। এসব অনিয়ম ও ঋণ কেলেঙ্কারির কারণে ব্যাংকগুলো ধীরে ধীরে সংকটে পড়ে। সংকটে থাকা পাঁচটি ব্যাংক একত্রিত করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক গঠনের অনুমোদন দিয়েছে। এই পাঁচটি ব্যাংক হলো: এক্সিম ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক এবং ইউনিয়ন ব্যাংক।
সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকার দিচ্ছে ২০ হাজার কোটি টাকা, এবং বাকি ১৫ হাজার কোটি টাকা আসবে আমানতকারীদের শেয়ার থেকে। অনুমোদিত মূলধন রাখা হয়েছে ৪০ হাজার কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, পাঁচ ব্যাংকে বর্তমানে ৭৫ লাখ আমানতকারীর প্রায় ১ লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকা আমানত রয়েছে। বিপরীতে মোট ঋণ রয়েছে ১ লাখ ৯৩ হাজার কোটি টাকা, যার বড় অংশ ইতিমধ্যেই খেলাপি হয়ে গেছে।
দেশব্যাপী এসব ব্যাংকের ৭৬০টি শাখা, ৬৯৮টি উপশাখা, ৫১১টি এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট এবং ৯৭৫টি এটিএম বুথ রয়েছে। একীভূত হওয়ার পর একই এলাকার একাধিক শাখা এক বা দুইটি শাখায় সংযুক্ত করা হবে। ব্যাংকগুলোর পরিচালন খরচ কমাতে ইতিমধ্যেই কর্মীদের বেতন ও ভাতা ২০ শতাংশ কমানো হয়েছে।
সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের জন্য প্রাথমিকভাবে রাজধানীর মতিঝিল সেনা কল্যাণ ভবনে অফিস নেওয়া হয়েছে। এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতিঝিল শাখায় একটি চলতি হিসাবও খোলা হয়েছে। শিগগিরই পরিচালনা পর্ষদ গঠন ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হবে। এর আগে, ৫ নভেম্বর প্রশাসক নিয়োগ ও ব্যাংকগুলোর শেয়ার শূন্য ঘোষণা করা হয়েছিল।