
হাতের ছেঁড়া বা পোড়া নোট নিয়ে দোকান থেকে ব্যাংক পর্যন্ত ঘুরেও কাজ না হওয়া ছিল বহু মানুষের নিত্যদিনের অভিজ্ঞতা। সেই বিড়ম্বনার অবসান ঘটাতে ক্ষতিগ্রস্ত নোটের বিনিময়ে অর্থ ফেরত দেওয়ার বিষয়ে নতুন নীতিমালা চালু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এখন থেকে নষ্ট হওয়া নোট জমা দিলে নির্ধারিত হারে তার বিপরীতে টাকা ফেরত পাবেন গ্রাহকরা। সম্প্রতি এ সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করে দেশের সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সার্কুলারে বলা হয়েছে, নির্দেশনাগুলো অবিলম্বে কার্যকর হবে।
নীতিমালায় স্পষ্ট করে জানানো হয়েছে, কোনো নোটের যদি ৯০ শতাংশের বেশি অংশ অক্ষত থাকে, তাহলে গ্রাহক সেই নোটের পুরো মূল্যমান ফেরত পাবেন।
এই সার্কুলারের মাধ্যমে ‘বাংলাদেশ ব্যাংক নোট প্রত্যর্পণ প্রবিধান ২০২৫’ কার্যকর করা হয়েছে। একই সঙ্গে বাতিল করা হয়েছে ‘বাংলাদেশ ব্যাংক নোট রিফান্ড রেগুলেশনস ২০১২’। আগে ছেঁড়া বা পোড়া নোট বদলের ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট নির্দেশনা না থাকলেও নতুন বিধিমালায় নোটের কত অংশ থাকলে কত টাকা দেওয়া হবে, তা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।
সার্কুলার অনুযায়ী, কোনো নোট যদি দুই টুকরো হয়ে যায়, তাহলে সেই খণ্ড দুটি নিঃসন্দেহে একই নোটের অংশ হতে হবে। জমা নেওয়ার সময় নোটের বিচ্ছিন্ন অংশগুলোর উল্টো পিঠে সরু ও হালকা সাদা কাগজ ব্যবহার করে জোড়া লাগানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যাতে নোট শনাক্তে কোনো জটিলতা না হয়। একইভাবে, যেসব জীর্ণ নোট পরীক্ষা করার সময় নড়াচড়ায় ছিঁড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে, সেগুলোর ক্ষেত্রেও উল্টো পিঠে হালকা সাদা কাগজ সংযুক্ত করার কথা বলা হয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, বিভিন্ন কারণে ক্ষতিগ্রস্ত, নষ্ট বা পুড়ে যাওয়া প্রচলিত নোট কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শাখা অফিসের পাশাপাশি বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকেও বদল করা যায়। যদিও প্রতিটি ব্যাংক শাখায় ছেঁড়া নোট বদলের সুযোগ রয়েছে, তবে সব নোটের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ মূল্য পাওয়া যায় না।
শুধু যেসব নোটের ৯০ শতাংশের বেশি অংশ অক্ষত থাকে, সেগুলোর বিপরীতে পুরো অর্থ ফেরত দেওয়া হবে। সাধারণত এসব নোট তাৎক্ষণিকভাবে বদলে দেওয়া হয়। অন্যান্য ছেঁড়া-ফাটা নোটও বিধিমালা অনুসারে সঙ্গে সঙ্গেই বিনিময় করা হয়ে থাকে।
নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত নোটের বিনিময় মূল্য পেতে কোনো ব্যাংক শাখায় সমস্যা হলে গ্রাহক সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে আবেদন করতে পারবেন। শাখা থেকে সমাধান না হলে আবেদনটি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে পাঠাতে হবে। সেখানেও নিষ্পত্তি না হলে বিষয়টি কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাঠানো হবে। এ ক্ষেত্রে আবেদন পাওয়ার আট সপ্তাহের মধ্যে নোটের মূল্য পরিশোধের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। মূল্য প্রদেয় হলে তা সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের হিসাবে সমন্বয় করা হবে।
সুষ্ঠু নগদ লেনদেন নিশ্চিত করতে ব্যাংকিং বিধি অনুযায়ী ছেঁড়া-ফাটা, ত্রুটিপূর্ণ ও ময়লাযুক্ত নোটের বিনিময় এবং দাবিযোগ্য নোটসংক্রান্ত সেবা নিয়মিতভাবে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কোনো ব্যাংক শাখা এ ধরনের সেবা দিতে অনীহা দেখালে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও সার্কুলারে সতর্ক করা হয়েছে।