একটি ব্যাংকের মোট ঋণের ৯৫ শতাংশই খেলাপি: অর্থ উপদেষ্টা
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- প্রকাশঃ ০৬:৫৭ পিএম, ১৩ আগস্ট ২০২৫
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ব্যাংক ও ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলোতে ঋণের নামে ব্যাপক লুটপাট হয়েছিল। তিনি বলেন, এই টাকার বড় অংশ বিদেশে পাচার হয়েছে এবং ফেরত আদায় না হওয়ায় তা এখন খেলাপি ঋণে পরিণত হচ্ছে।
মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) সরকারের এক বছর পূর্তিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই তথ্য তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল অর্থ মন্ত্রণালয়ের মাল্টিপারপাস হলে।
ড. সালেহউদ্দিন জানান, নতুন করে আরও ১০১ জন অর্থ পাচারকারী শনাক্ত হয়েছে, প্রত্যেকে সর্বোচ্চ ২০০ কোটি টাকা করে বিদেশে পাচার করেছে। এর আগে কয়েক হাজার কোটি টাকা পাচারের সঙ্গে জড়িত ১১ জনকে শনাক্ত করা হয়েছিল, যাদের বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তী সরকার মামলা করেছে। পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার প্রক্রিয়াও ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে।
তিনি বলেন, “শুধুমাত্র একটি ব্যাংকের মোট ঋণের ৯৫ শতাংশই খেলাপি। ওই ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও তার বন্ধুরা সব টাকা নিয়ে চলে গেছেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে একটি কমিটি গঠন করে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহায়তা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
গত এক বছরের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, “আগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সব সূচক নেগেটিভ ছিল। এখন সব সূচকই পজিটিভ হয়েছে। সুশাসনের ঘাটতি, অর্থপাচার ও দুর্নীতির কারণে আর্থিক খাত খাদের কিনারায় ছিল, এখন তা কিছুটা স্থিতিশীল হয়েছে।”
মূল্যস্ফীতি প্রসঙ্গে উপদেষ্টা জানান, জুনে এটি ৬ শতাংশে নামার সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমানে তা ৮ শতাংশের বেশি এবং জুলাইয়ে ১৪ শতাংশে পৌঁছেছিল।
ব্যাংক খাত সংস্কারের জন্য বরাদ্দ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পর্যাপ্ত বরাদ্দ নেই, তবে আইএমএফ অর্থ দেবে। “অমানতকারীদের অর্থ খেয়ানত হবে না, যা যা দরকার তা করা হবে।”
টাকা ফেরত আনার বিষয়ে তিনি জানান, বড় ধরনের ১১টি মামলা শুরু হয়েছে এবং পাচারের স্থান শনাক্ত করা হয়েছে। ১২টি দেশের সঙ্গে মিউচ্যুয়াল লিগ্যাল অ্যাগ্রিমেন্ট (এমএলএ) করতে চিঠি পাঠানো হয়েছে এবং আইনজীবীর মাধ্যমে অর্থ ফেরত আনার চেষ্টা চলছে।
তিনি আরও বলেন, “কর আহরণ আশাতীত নয়। ব্যবসা-বাণিজ্যের অবস্থার ওপর কর আদায় নির্ভর করে। তবুও ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো যদি ব্যাংক খাত সংস্কারের উদ্যোগকে ব্যাহত করে, তাহলে আমানতকারীরা মুখ ফিরিয়ে নেবে। সরকারি প্রতিষ্ঠানের দুর্বলতা ও মানবসম্পদ ঠিক করা আগামী নির্বাচিত সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে।”