
ময়মনসিংহের ভালুকায় এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার পর মরদেহে আগুন দেওয়ার ঘটনায় ধর্ম নিয়ে কটূক্তির অভিযোগের পক্ষে কোনো তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি—এমনটাই জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। শনিবার (২০ ডিসেম্বর) দুপুরে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ময়মনসিংহ সদর দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়।
ঘটনার সঙ্গে জড়িত অভিযোগে মোট ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শুক্রবার মধ্যরাতে জেলার ভালুকা উপজেলার স্কয়ার মাস্টারবাড়ি এলাকায় পৃথক অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন— মো. তারেক হোসেন (১৯), মো. লিমন সরকার, মো. মানিক মিয়া (২০), এরশাদ আলী (৩৯), নিঝুম উদ্দিন (২০), আলমগীর হোসেন (৩৮), মো. মিরাজ হোসেন আকন্দ (৪৬), মো. আজমল হাসান সগীর (২৬), মো. শাহিন মিয়া (১৯) এবং মো. নাজমুল (২১)। এর মধ্যে মো. আজমল হাসান সগীর, মো. শাহিন মিয়া ও মো. নাজমুলকে গ্রেফতার করেছে বাংলাদেশ পুলিশ।
ময়মনসিংহ র্যাব-১৪ সদর দপ্তরের অধিনায়ক নয়মুল হাসান জানান, ধর্ম নিয়ে কটূক্তির অভিযোগ তুলে দিপু চন্দ্র দাসকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আঘাতসহ কিলঘুসি মেরে হত্যা করা হয়। পরে মরদেহে আগুন দেওয়া হয়। তবে দিপু চন্দ্র দাসের বিরুদ্ধে যে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তোলা হয়েছে, তার কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কারও সঙ্গে কথোপকথনে বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ধর্ম নিয়ে কটূক্তির বিষয়টি কেউ নিশ্চিতভাবে দেখাতে পারেনি। তিনি বলেন, আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে গুরুতর অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে ওই সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
র্যাব কর্মকর্তা আরও জানান, পাইওনিয়ার নিট কম্পোজিট কারখানার সামনে লোকজন জড়ো হতে শুরু করলে দিপু চন্দ্র দাসকে চাকরি থেকে ইস্তফা দিতে বাধ্য করা হয়। পরে তাকে কারখানা থেকে বের করে দিলে উত্তেজিত জনতা হামলা চালিয়ে হত্যা করে এবং মরদেহে আগুন দেয়। দিপু চন্দ্র দাসকে পুলিশের কাছে না দিয়ে জনতার হাতে তুলে দেওয়ার অভিযোগে কারখানার ফ্লোর ম্যানেজার আলমগীর হোসেন ও ইনচার্জ মো. মিরাজ হোসেন আকন্দকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার অধিকার কারো নেই। কেন ওই যুবককে পুলিশের হাতে না দিয়ে জনতার হাতে তুলে দেওয়া হলো, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ইতোমধ্যে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ও ভালুকা থানা পুলিশের যৌথ অভিযানে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত সবার পরিচয় নিশ্চিত করে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।’
এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে ভালুকার ডুবালিয়াপাড়া এলাকায় দিপু চন্দ্র দাসের বিরুদ্ধে মহানবী (সা.) সম্পর্কে কটূক্তির অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। রাত ৯টার দিকে বিক্ষুব্ধ জনতা তাকে মারধর করলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। পরে তার মরদেহ ঢাকা–ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে একটি গাছে ঝুলিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।