রাঙ্গামাটিতে পাহাড় ধস ও প্রাণহানির শঙ্কায় সতর্কতা জারি জেলা প্রশাসনের
- রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি
- প্রকাশঃ ১০:০৮ এম, ৩০ মে ২০২৫

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে গত বুধবার রাত থেকে থেমে থেমে রাঙ্গামাটি জেলা শহর সহ জেলার ১০ উপজেলায় শুরু হয়েছে মাঝারি ও ভারি বৃষ্টি। বৃষ্টি স্থায়িত্ব হওয়ায় রাঙ্গামাটি জেলার বিভিন্ন এলাকায় দেখা দিয়েছে পাহাড় ধসের শঙ্কা।
এমন পরিস্থিতিতে সম্ভাব্য দুর্যোগ এড়াতে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় সতর্কতা জারি করেছে রাঙ্গামাটি জেলা ও উপজেলা প্রশাসন। এ নিয়ে প্রচার করা হচ্ছে সতর্কবার্তা।
জেলা প্রশাসন জানায়, বর্ষায় রাঙ্গামাটি জেলায় পাহাড় ধসসহ যে কোনো দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে জেলা প্রশাসন । গত কয়েক দিন ধরে বৃষ্টি হওয়ায় শহরসহ রাঙ্গামাটি সদর,কাউখালী পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসরত লোকজনের মাঝে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। যে কোনো মুহূর্তে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটতে পারে। পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসরতদের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সতর্কতা জারি করে সচেতনতামূলক সতর্কবার্তা প্রচার করছে জেলা প্রশাসন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বৃষ্টির পরিমাণ বেড়ে গেলে ঝুঁকিতে থাকা লোকজনকে তাৎক্ষণিক ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ছেড়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে বলা হচ্ছে।
রাঙ্গামাটির জেলা প্রশাসক মো. হাবিব উল্লাহ বৃহস্পতিবার (২৯ মে) বিকেলে রাঙ্গামাটির ভেদভেডি, লোকনাথ মন্দির ও বিএডিসি এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, রাঙ্গামাটি জেলায় ২০১৭ সালের দুর্ঘটনাকে মাথায় রেখে পাহাড় ধসসহ যে কোনো ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটলে তাতে যেন একটি প্রাণও ক্ষতি না হয় সেটি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। তাই রাঙ্গামাটিতে সম্ভাব্য যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রাক-প্রস্তুতির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া রাঙ্গামাটি জেলায় আশ্রয় কেন্দ্র গুলোকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যে কোন দুর্যোগ দেখা মাত্র এলাকার স্থানীয় জনগন ও ইউপি মেম্বারদেরকে নির্দের্শনা প্রদান করা হয়েছে যাতে লোকজনকে কাছাকাছি আশ্রয় কেন্দ্র গুলোতে সরিয়ে আনার জন্য।
এ সময় তিনি স্থানীয়দের সাথে সংক্ষিপ্ত মতবিনিময় করে পাহাড়ের পাদদেশ থেকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে আসার অনুরোধ করেন। এসময় জেলা প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তা ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে জেলা শহরে পাহাড়ধসের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত ৩১টি স্থানের মধ্যে ভেদভেদী, শিমুলতলী, রূপনগর, যুব উন্নয়ন এলাকা অন্যতম। তবে বিস্ময়কর হলো ওইসব এলাকায় জনবসতি বেড়েই চলেছে। অথচ ২০১৭ সালের পাহাড় ধসের ক্ষতচিহ্ন এখনো দৃশ্যমান রয়ে গেছে। এরপরও পাহাড় ধসের ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাস করছে মানুষ। মৃত্যুঝুঁকি জেনেও বেড়েছে পাহাড়ের ঢালে বসবাস। গড়ে উঠেছে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ১৩ জুন রাতে টানা তিনদিনের ভারী বৃষ্টি আর বজ্রপাতে রাঙ্গামাটিতে ঘটে যায় স্মরণকালের পাহাড় ধসের ঘটনা। ভয়াবহ পাহাড় ধসের ঘটনায় পাঁচজন সেনাসদস্য, নারী-পুরুষ ও শিশুসহ ১২০ জনের প্রাণহানি ঘটে। এর মধ্যে শহরের মানিকছড়িতে একটি সেনা ক্যাম্পের নিচে রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম প্রধান সড়কের উপর ধসে পড়া মাটি অপসারণ করতে গিয়ে পুনরায় পাহাড় ধসের মাটি চাপা পড়ে নিহত হন ওই ক্যাম্পের দুই কর্মকর্তাসহ পাঁচ সেনাসদস্য। রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মানিকছড়ি শালবাগান অংশে ১০০ মিটার রাস্তা সম্পূর্ণ ধসে গিয়ে দীর্ঘ ৯ দিন সারাদেশের সঙ্গে রাঙ্গামাটির সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকে। পরবর্তী ২০১৮ সালের জুনে জেলার নানিয়ারচর উপজেলায় ফের পাহাড়ধসে ২ শিশুসহ ১১ জন এবং ২০১৯ সালের জুনে জেলার কাপ্তাইয়ে তিনজনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।