সাংবাদিকের প্রেমের টানে বাংলাদেশে ডেনিশ নারী


MARCH NAEEM 2ND/danish bd.jpg

প্রেম কখনোই সময়, দূরত্ব কিংবা অভিমানকে পরাস্ত করতে পারে না। মহাসাগর কিংবা সাগর দূরত্ব যা-ই হোক, প্রেমের কাছে হার মানতেই হয়— এমনটাই প্রমাণ করলেন সাংবাদিক মান্নু ও রুমানা মারিয়া দম্পতি।

২১ বছর যোগাযোগ না থাকার পরেও ফেসবুকে বদৌলতে একে অপরকে খুঁজে পেয়ে নিজের মনের মানুষের কাছে সুদূর ডেনমার্ক থেকে বাংলাদেশে ছুটে এসেছেন রুমানা মারিয়া নামের এক ডেনিশ নারী।

এদিকে প্রায় ২৫০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে মনের মানুষকে অভ্যর্থনা জানাতে বরগুনা থেকে রাজধানী ঢাকায় ছুটে গিয়েছেন মাহবুবুল আলম সাংবাদিক মান্নু। পরে মনের মানুষ ওই ডেনিশ নারীকে নিয়ে নিজ বাসায় ফিরে এসেছেন মান্নু। মাহবুবুল আলম মান্নু দৈনিক আমাদের সময়ের বরগুনা প্রতিনিধি ও বরগুনা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সদর উপজেলার ৮ নম্বর বরগুনা সদর ইউনিয়নের পাজরাভাঙ্গা এলাকার আকন বাড়ির বাসিন্দা তরুণ মান্নু নব্বইয়ের দশকে জীবিকার তাগিদে পাড়ি জমান ডেনমার্ক। আর সেখানেই বন্ধুর ফাস্টফুডের দোকানে আসা ক্রেতা তরুণী রুমানা মারিয়ার সঙ্গে পরিচয় হয় মান্নুর। সেখান থেকেই প্রথমে বন্ধুত্ব ও প্রেম হয় দুজনের। বন্ধুত্ব ও প্রেমের সম্পর্কের দেড় বছর অতিবাহিত হওয়ার পরে ১৯৯৭ সালে সুখের সংসার বাঁধার রঙিন স্বপ্ন নিয়ে বিয়ে করেন মান্নু ও রুমানা।

ওই বছরেই ডেনিশ নাগরিক স্ত্রী রুমানা মারিয়াকে নিয়ে বাংলাদেশে এসে নিজ জেলার বরগুনা সদর থানার পেছনে নিজস্ব ভবনে আকন ডায়াগনস্টিক সেন্টার নামে একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার খুলে নামমাত্র ফি নিয়ে উপকূলীয় এ জেলার দরিদ্র ও সুবিধা বঞ্চিত মানুষদের সেবা করা শুরু করেন এই দম্পতি। স্থানীয় রাজনৈতিক ও চিকিৎসক নেতাদের চাপে ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করে দিয়ে গত ২০০০ সালে স্ত্রী রুমানা মারিয়াকে তার বাবা-মায়ের কাছে ডেনমার্কে পাঠিয়ে দিয়ে নিজেকে সাংবাদিক পেশায় নিযুক্ত করেন মান্নু। দাম্পত্য জীবনে তাদের একটি পুত্র সন্তানের জন্ম হয়।

এরপরেও প্রায় তিন বছর টেলিফোনে যোগাযোগ থাকলেও পরবর্তীতে তাদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এসময় পরিবারের চাপে পড়ে মান্নুর সঙ্গে বিবাহ বন্ধন ছিন্ন করে নতুন করে বিয়ে করেন রুমানা মারিয়া। তবে সেখানে বনিবনাত না হওয়ায় সেখান থেকেও বিবাহ বিচ্ছেদ করেন রুমানা মারিয়া।

পরে ডেনমার্কে অবস্থানরত প্রবাসী বাঙালিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং ফেসবুকের মাধ্যমে প্রায় ২১ বছর পরে মাহবুবুল আলম মান্নুর সঙ্গে যোগাযোগ করতে সক্ষম হন ওই ডেনিশ নারী। পরে তাদের দুজনের কথা হয়।

বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) প্রিয় মানুষের একটু সান্নিধ্য লাভের জন্য ২৪ বছর পরে কর্মস্থল থেকে মাত্র দশ দিনের ছুটি নিয়ে ডেনমার্ক থেকে বাংলাদেশে আসেন রুমানা মারিয়া।

এ দিন আসর নামাজবাদ সদর থানার পেছনে সেই বাসায় এক লাখ টাকা দেনমোহরে মান্নু ও রুমানা আবার বিয়ে হয়। এসময় মান্নুর আত্মীয় স্বজন, স্থানীয় প্রতিবেশীসহ বরগুনার সব সংগঠনের সংবাদ কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদকর্মী মাহবুবুল আলম মান্নু বলেন, তিন বছর যোগাযোগ থাকলেও পরে প্রায় ২১ বছর আমাদের দুজনার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। গত জানুয়ারি মাসে ফেসবুকের মাধ্যমে আমাদের যোগাযোগ হয় এবং তাকে আমি চিনতে পারি। রুমানা মাত্র দশ দিনের ছুটি নিয়ে বাংলাদেশে এসেছে।

তিনি আরও বলেন, অ্যাম্বাসির সঙ্গে কথা হয়েছে, আমাদের ম্যারেজ সার্টিফিকেট সেখানে জমা দিলে তার দীর্ঘ সময় বাংলাদেশে থাকার ব্যবস্থা হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন তারা। এছাড়াও যদি আমি তার সঙ্গে ডেনমার্কে চলে যাই, তাতে রুমানার কোনো আপত্তি নাই। আর যদি না যাই, তাহলে সে আগামী মাসে তার কর্মস্থল থেকে অব্যাহতি নিয়ে বাংলাদেশে চলে আসবে।

ঢাকাওয়াচ২৪ এর খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন ।
ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×