বকশীগঞ্জে মাদ্রাসা শিক্ষকের প্রতারণার জালে আটকা দেড় শতাধিক মানুষ


Jan 2025/Feb 2025/untitled-11-1741545989.jpg

বকশীগঞ্জে ‘সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা’ বানানোর কথা বলা দেড় শতাধিক মানুষের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত শিক্ষক হামিদুর রহমান চন্দ্রাবাজ শেফালী মফিজ মহিলা আলিম মাদ্রাসার ইবতেদায়ি প্রধান হিসেবে কর্মরত। তাঁর বাড়ি বাট্টাজোর ইউনিয়নের মধ্যপলাশতলা গ্রামে। গতকাল রোববার সকালে অর্ধশত ভুক্তভোগী স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে এমন অভিযোগ করেন ও অভিযুক্ত হামিদুর রহমানের বিচার দাবি করেন।

জানা গেছে, বকশীগঞ্জ উপজেলার বাট্টাজোর ইউনিয়নের মধ্যপলাশতলা গ্রামের মোসলেম উদ্দিনের ছেলে হামিদুর রহমান। ২০১৯ সালে গ্রামের সহজ-সরল মানুষকে সরকারি বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পাইয়ে দেওয়া ও সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা বানানোর কথা বলে প্রত্যেকের কাছে থেকে ৫ থেকে ১০ হাজার করে টাকা নেন। পরে তাদের সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পরিচয়পত্র ও সনদপত্রও দেন। সনদপত্রে লেখা ‘ঘরে ঘরে জাগ্রত করতে হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, ৭১ এর সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা পরিষদ’। যার ওপরে লেখা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল জামুকা কর্তৃক নিবন্ধন নম্বর ২৩৯/১৭। কিন্তু এসব সনদ যাচাই-বাছাই করতে গিয়ে তারা জানতে পারেন এগুলো ভুয়া। এর পর টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য বারবার তাগাদা দিলেও চতুর হামিদুর টালবাহানা শুরু করেন। এমনকি মামলা হামলার ভয়ভীতি দেখান তাদের। এ ঘটনায় একাধিকবার গ্রাম্য সালিশ বৈঠক হলেও কোনো সময় উপস্থিত হননি তিনি।

কয়েকদিন আগে নাশকতা মামলায় পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। জামালপুর কারাগারে রয়েছেন আসামি হামিদুর রহমান। তাঁর বিরুদ্ধে জমি দখলেরও অভিযোগ রয়েছে।

কথা হয় প্রতারণার শিকার মধ্যপলাশতলা গ্রামের ইসমাইল হোসেন, হাসমত আলী, খলিলুর রহমান, জমিলা বেগম ও আবেদন বেগমসহ অনেকের সঙ্গে। তাদের মধ্যে ইসমাইল হোসেন জানান, সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা বানানোর কথা বলে হামিদুর তাঁর কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকা নেন। বলেছিলেন, সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা হলে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা করে সরকারি ভাতা ও সরকারি পাকা ঘর পাবেন। এ ছাড়া আরও অনেক সুযোগ-সুবিধা পাবেন। কিন্তু কোনো সুবিধা পাচ্ছেন না। এখন বুঝতে পারছেন প্রতারণার শিকার হয়েছেন। হামিদুরের বিচার চান তিনি।
ভুক্তভোগী জমিলা বেগম বলেন, ‘এ দুনিয়ায় আমার কেউ নেই। সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা বানিয়ে মাসে মাসে টাকা দেওয়ার কথা বলে হামিদুর আমার কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকা নেন। আমি ধারদেনা করে তাঁকে টাকা দেই। পরে জানতে পারি প্রতারণা করেছে। এখন টাকাও ফেরত দিচ্ছেন না। টাকা চাইতে গেলে হুমকি দেন। আমি তাঁর শাস্তি চাই।’

স্থানীয়রা জানান, আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন হামিদুর। বাট্টাজোড় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতির বেয়াই হওয়ার কারণে চলতেন দাপটের সঙ্গে। যে কারণে তাঁকে কেউ কিছু বলার সাহস করত না। অন্যের জমি দখল ও সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা বানানোর কথা বলে দেড় শতাধিক মানুষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন হামিদুর। একজন মাদ্রাসা শিক্ষক হয়েও মানুষের সঙ্গে এমন প্রতারণা করেছেন তিনি। তাঁকে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানান তারা।

অভিযুক্ত হামিদুর রহমান জামালপুর জেলা কারাগারে থাকায় তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে শেফালী মফিজ মহিলা আলিম মাদ্রাসার সুপার আবদুর রশিদের ভাষ্য, হামিদুর রহমানের প্রতারণার বিষয়টি জানতেন না তিনি। এখন লোকমুখে শুনছেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার নওশেদ আলী বলেন, একটা প্রতারক চক্র সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা বানানোর কথা বলে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের মানুষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। আসলে সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা বলতে কিছু নেই। যারা প্রতারণা করেছে, তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।

বকশীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার শাকের আহমেদ জানান, অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ঢাকাওয়াচ২৪ এর খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন ।
ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×