অবশেষে দেশের পথে বাংলাদেশ-ভারতের ১৮৫ জেলে, মাঝ সাগরে হস্তান্তর
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- প্রকাশঃ ০৯:৩৯ পিএম, ০৫ জানুয়ারী ২০২৫

নানা সময় আটক হয়ে ভারতে বন্দি ৯০ জন বাংলাদেশি জেলে অবশেষে দেশে ফিরছেন; একইভাবে এখানকার কারাগারে থাকা ৯৫ জন ভারতীয় জেলে নিজ দেশের পথে রওনা দিয়েছেন।
রোববার (৫ জানুয়ারি) বঙ্গোপসাগরের পশ্চিমাঞ্চলীয় আন্তর্জাতিক জলসীমায় দুই দেশের মধ্যে মোট ৮১৫ জন জেলে হস্তান্তরের এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
বাংলাদেশি জেলেরা সোমবার (৬ জানুয়ারি) বিকালের দিকে চট্টগ্রামে পৌঁছাবেন বলে আশা করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। প্রত্যাবাসিত জেলে ও নৌকর্মীদের পরিবারের সদস্যরা সেখানে তাদের গ্রহণ করবেন।
সদ্য সমাপ্ত ২০২৪ সালের বিভিন্ন সময় একে অপরের জলসীমায় ঢুকে পড়ায় দুই দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তারা আটক হয়েছিলেন। পরে সমঝোতার ভিত্তিতে তাদের যার যার দেশের কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
এর অংশ হিসেবে তাদের বিরুদ্ধে উভয় দেশে হওয়া মামলা তুলে নেওয়া হয়।
হস্তান্তর প্রক্রিয়া শেষের তথ্য দিয়ে রোববার বিকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘এ দিন দুপুর ১২টার দিকে উভয় দেশের কোস্ট গার্ড জেলে ও নৌকর্মীদের হস্তান্তরের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে।’
একই সঙ্গে দুই দেশের আটক করা আটটি নৌযান হস্তান্তর করা হয়।
বাংলাদেশের ‘এফভি লায়লা-২’ ও ‘এফভি মেঘনা-৫’ নামের দুইটি মাছ ধরার নৌযান ফেরত আনা হয়েছে। অপর দিকে, ভারতের ছয়টি মাছ ধরার নৌকা ফেরত দেওয়া হয়।
এরপর জেলে ও নৌকর্মীরা তাদের ফিশিং ভেসেলসহ চট্টগ্রামের পথে রওনা হয়েছেন বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, মৎস্য অধিদপ্তর ও বিজিবির প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে কোস্ট গার্ডের মাধ্যমে এ হস্তান্তর কার্যক্রম শেষ হয়।’
আটক এসব জেলের প্রত্যাবাসন নিয়ে কয়েক দিন ধরে দুই দেশে নানা আয়োজন চলছিল।
ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকা লিখেছে, ‘বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তরের জন্য শনিবার (৪ জানুয়ারি) সকালেই ১২ জন বাংলাদেশি জেলেকে হলদিয়া নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পারাদীপ থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ৭৮ জনকে।
অন্য দিকে, বাংলাদেশে আটক থাকা ৯৫ জন ভারতীয় জেলেকেও একইভাবে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেওয়ার প্রস্তুতি শুরু হয় কয়েক দিন আগে থেকেই। এই জেলেদের অধিকাংশই দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপ ও নামখানার বাসিন্দা বলে তথ্য দিয়েছে আনন্দবাজার।
গেল ২৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে ভারতের ৯৫ জেলের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলা প্রত্যাহার ও তাদের ট্রলার ফিরিয়ে দেওযার সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।
বাগেরহাট ও পটুয়াখালীর কারাগারে থাকা ওই ৯৫ জন জেলের মুক্তির প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার খবর দুই দেশের সংবাদ মাধ্যমেও এসেছে।
গেল ৩১ ডিসেম্বর ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়ার এক খবরে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে আটক থাকা ৯৫ ভারতীয় জেলের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে। তারা এত দিন বাগেরহাট ও পটুয়াখালীর কারাগারে ছিলেন।’
বেশির ভাগ জেলেই পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার বাসিন্দা বলেও খবরে তুলে ধরা হয়।
ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম ইকোনমিক টাইমসের এক খবরে বলা হয়, ‘ভারতীয় জলসীমায় ‘অবৈধভাবে’ মাছ ধরার অভিযোগে ১০ ডিসেম্বর ৭৮ নাবিকসহ দুইটি বাংলাদেশি ট্রলার আটক করে দেশটির কোস্ট গার্ড। এরপর তাদের উড়িষ্যার প্যারা দ্বীপে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।’
এর আগে সেপ্টেম্বরে আটক হন আরও ১২ জন বাংলাদেশি জেলে। তাদের ট্রলার ভারতের জলসীমায় ডুবে গিয়েছিল।
সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে বাংলাদেশের জলসীমার ভিতর ঢুকে পড়ায় ভারতের কাকদ্বীপের ছয়টি ট্রলার আটক করে বাংলাদেশের কোস্ট গার্ড। সেসব ট্রলারে ৯৫ জন ভারতীয় জেলে ছিলেন।
আনন্দবাজার লিখেছে, ‘কাকদ্বীপের জেলেদের বাংলাদেশে আটক হওয়ার বিষয়টি জানার পর তাদের ভারতে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে তৎপর হন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যের তরফে কেন্দ্রীয় সরকারেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়।’