
ঘূর্ণিঝড় রিমাল : চট্টগ্রাম শাহ আমানত ও কক্সবাজার বিমানবন্দর বন্ধ
চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও কক্সবাজার বিমানবন্দর বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরে ৯ নম্বর বিপৎসংকেত দেখানোর পর ঘূর্ণিঝড় রিমালের সম্ভাব্য ক্ষতিকর প্রভাব এড়াতে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ এ সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিয়েছে।শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আজ রোববার দুপুর ১২টা থেকে ফ্লাইট ওঠানামা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে রাত আটটা পর্যন্ত এ ঘোষণা বহাল থাকবে। আবহাওয়া অধিদফতরের বুলেটিন পর্যবেক্ষণ করে এরপরে নতুন সিদ্ধান্ত জানাবে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।বিমানবন্দরের কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইব্রাহীম জানান, ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষতি কমাতে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ এমন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাস পর্যবেক্ষণ করে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।কক্সবাজার বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ ওঠানামা বন্ধ: রোববার কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে সব ধরনের উড়োজাহাজ ওঠানামা বন্ধ ঘোষণা করেছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ। ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম সকালে এ তথ্য জানান।

গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড় রেমালে পরিণত, পায়রা-মোংলায় ৭ নম্বর বিপদ সংকেত
বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করা গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড় রেমালে পরিণত হয়েছে।এ অবস্থায় পায়রা ও মোংলা সমুদ্র বন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদফতর। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। আবহাওয়া অধিদফতরের ৮ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পূর্বমধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিমমধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি উত্তর দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হয়ে বর্তমানে উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় (১৮.৮° উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯.৫° পূর্ব দ্রাঘিমাংশ) ঘূর্ণিঝড় "রিমাল" এ পরিণত হয়েছে। এটি আজ (২৫ মে ২০২৪) সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৫৫ কি.মি. দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৪০০ কি.মি. দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ৪০৫ কি.মি. দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৬৫ কি.মি. দক্ষিণে অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হতে পারে। পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ০৩ (তিন) নম্বর স্থানীয় সর্তক সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ০৭ (সাত) নম্বর বিপদ সংকেত (পুন:)০৭ (সাত) নম্বর বিপদসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ০৩ (তিন) নম্বর স্থানীয় সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ০৬ (ছয়) নম্বর বিপদ সংকেত (পুন:) ০৬ (ছয়) নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠী, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৩-৫ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ু তাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে দেশের সকল বিভাগে দমকা/ঝড়ো হাওয়া সহ ভারী (৪৪-৮৮ মিমি) থেকে অতি ভারী (২৮৯ মিমি) বর্ষণ হতে পারে। ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় ছয় জেলাকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে এই ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলার জন্য বাংলাদেশের ছয় জেলাকে বিশেষভাবে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। আজ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের এক সভায় এ নির্দেশ দেওয়ার কথা জানান প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমান। তিনি জানান, এ পর্যন্ত প্রাপ্ত পূর্বাভাস ও ঘূর্ণিঝড় ভূমি অতিক্রমের সম্ভাব্য এলাকার ভিত্তিতে এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জেলাগুলো হলো : সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, খুলনা, বরগুনা, পটুয়াখালী ও ভোলা। ঘূর্ণিঝড়টি ২৬ মে দিবাগত রাত থেকে ২৭ মে সকালের মধ্যে উপকূল অতিক্রম করতে পারে। আজ শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বিডব্লিউওটি’র প্রধান আবহাওয়া গবেষক খালিদ হোসেনের সই করা এক বার্তায় বলা হয়, ঘূর্ণিঝড়টি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দীঘা থেকে বাংলাদেশের পটুয়াখালীর মাঝামাঝি যেকোনো জায়গা দিয়ে উপকূল অতিক্রম করবে। তবে এর সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশের সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেরহাট। বার্তায় বলা হয়, এ ঘূর্ণিঝড়ের সর্বোচ্চ শক্তিমাত্রা হতে পারে ক্যাটাগরি-১। তবে আশা করা যায় ঘণ্টায় ১৩৫ কিলোমিটারের বেশি এটি গতিবেগ পাবে না। তবে আশঙ্কার ব্যাপার হচ্ছে এটি তার পূর্ণ শক্তিতে উপকূল অতিক্রম করতে পারে। যদিও দমকা বা ঝোড়ো বাতাসের বেগ আরও কিছুটা বেশি থাকতে পারে।

সেন্টমার্টিনে পানি বৃদ্ধি, আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে মাইকিং
টেকনাফ (কক্সবাজার) : 'ঘূর্ণিঝড় রেমাল’ এর প্রভাবে বঙ্গোপসাগরের বাড়তে শুরু করেছে পানি। ফলে সেন্টমার্টিনের কয়েকটি গ্রামে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। আশ্রয়কেন্দ্রের পাশাপাশি আবাসিক হোটেল-মোটেলে দ্বীপবাসীকে সরিয়ে নিতে মাইকিং করা হচ্ছে।আজ শনিবার রাত সাতে ৮টার দিকে বিষয়টি নিশ্চিত করে সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, ‘জোয়ারের সঙ্গে সঙ্গে বঙ্গোপসাগরে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে দ্বীপের লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে যেতে মাইকিং করা হচ্ছে। এছাড়া দ্বীপে সন্ধ্যা থেকে বৃষ্টি-বাতাস বইছে। দ্বীপের বাসিন্দা আবুল কালাম জানান, রাতে জোয়ারের সঙ্গে সঙ্গে বঙ্গোপসাগরে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে দ্বীপের সাগরের তীরে কয়েকটি এলাকায় পানি ঢুকেছে। যার ফলে সেখানকার বাসিন্দাদের পানির বোতল ও শুকনো খাবার নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে মাইকিং চলছে। তবে রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বৃষ্টি আর বাতাসও বাড়ছে। এতে দ্বীপবাসীর মাঝে ভয়-ভীতি কাজ করছে। এদিকে শনিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয় বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক আজিজুর রহমান। তিনি জানান, এই ঘূর্ণিঝড়ের ফলে মোংলা ও পায়রায় ৭ নম্বর বিপদ সংকেত এবং চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও টেকনাফে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে টেকনাফ উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) সৈয়দ সাফকাত আলী বলেন, ‘বিপদ সংকেত বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন বসবাসকারীদের আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যেতে মাইকিং করা হয়েছে। দ্বীপে পর্যাপ্ত শুকনো খাবার-পানি মজুদ রাখার পাশাপাশি আমাদের মেডিকেল টিম প্রস্তুত রয়েছে।’

উপকূলীয় এলাকায় লঞ্চসহ সব নৌযান চলাচল বন্ধের নির্দেশ
সাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপ এবং সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় রেমালকে কেন্দ্র করে উপকূলীয় এলাকায় লঞ্চসহ সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। তবে দেশের অভ্যন্তরীণ নৌরুটগুলোতে চলাচল করা লঞ্চ ও অন্যান্য নৌযানের ব্যাপারে এখনও এমন কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।শনিবার (২৫ মে) বিকেলে সাংবাদিকদের এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন বিআইডব্লিউটিএ এর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিচালক মো. জয়নাল আবেদীন।তিনি বলেছেন, বঙ্গোপসাগরে যে গভীর নিম্নচাপটি সৃষ্টি হয়েছে সেটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেজন্য আমরা ইতোমধ্যে সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছি। সমুদ্র বন্দরগুলোতে ৩ নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় এলাকায় সব ধরনের লঞ্চ এবং নৌযান চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে ইন্টারনাল নদীবন্দরগুলোতে চলাচল করা লঞ্চের জন্য কী নির্দেশনা আসবে সেটি সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। পরিস্থিতি বুঝে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।বিআইডব্লিউটিএর সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে বলে জানান তিনি।এদিকে গভীর নিম্নচাপ এবং সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় রেমাল মোকাবিলায় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ ভবনের ৬ষ্ঠ তলায় কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। কন্ট্রোল রুমে সংস্থাটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত থেকে আবহাওয়া অফিস, কর্তৃপক্ষের সকল নদীবন্দরে স্থাপিত নিয়ন্ত্রণ কক্ষ, বন্দরের ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা, নদীবন্দরের বিভিন্ন বিভাগের নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা এবং ড্রেজার বেইজের নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তার সাথে নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ রাখবেন।নিয়ন্ত্রণ কক্ষে যোগাযোগ করার জন্য টেলিফোন নম্বর +৮৮০২২২৩৩৫২৩০৬ ও মোবাইল নম্বর ০১৯৫৮৬৫৮২১৩ ব্যবহারের অনুরোধ করা হয়েছে।

টেকনাফে বইছে বাতাস, আতঙ্কে উপকূলবাসী
সাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপ আরও ঘনীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড় ‘রেমালে’ পরিণত হতে পারে। ঝড়ের গতিপথ এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের উপকূল। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে উপকূলের দিকে এগিয়ে আসায় শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কক্সবাজারের টেকনাফের সেন্টমার্টিন-শাহপরীর দ্বীপে বাতাস শুরু হয়েছে। সাগর ও নাফ নদীর পানির উচ্চতা স্বাভাবিকের চেয়ে পাঁচ ফুট বেড়েছে। এতে আতঙ্কে রয়েছেন সেন্টমার্টিন-শাহপরীর দ্বীপের মানুষ। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, নিম্নচাপটি আরও শক্তি অর্জন করে শুক্রবার মধ্যরাতে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। শনিবার বিকেলের মধ্যে সেটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। রোববার ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে। আর এ সময় উপকূলসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে।এদিকে টেকনাফ শহর থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে সীমান্ত সড়কের পূর্বে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তঘেঁষা নাফ নদীর পাড়ে অবস্থিত শাহপরীর দ্বীপের জালিয়াপাড়া। সেখানে পাঁচ শতাধিক মানুষের বসবাস। এখনও ভাঙন থেমে নেই দ্বীপে। এমনকি বিলীনের পথে দু’টি বিদ্যালয়ের ভবন। এছাড়া গত বছর মে মাসে ঘূর্ণিঝড় ‘মোকার’ আঘাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল সেন্টমার্টিন-শাহপরীর দ্বীপ।শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দা আবুল কালাম বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ের কথা শুনলে বুক ব্যথা শুরু হয়। আমরা নাফনদের তীরে প্রায় ২০০ পরিবার বসবাস করি। মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই বলে নদের ধারেই আশ্রয় নিয়ে বাঁচার চেষ্টা করছি। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় আসার খবরে আমরা সবাই খুব চিন্তিত থাকি। কেননা গত বছর মে মাসে ঘূর্ণিঝড় ‘মোকায়’ আমাদের এখানকার লোকজনকে তছনছ করে দিয়েছিল।’এ বিষয়ে জানতে চাইলে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের ইউপি সদস্য আবদুস সালাম বলেন, ‘পুরো এলাকাটি উপকূল। প্রায় ৫০০ মানুষ নাফ নদের পাড়ে জীবনযাপন করছে। ঘূর্ণিঝড়ে প্রতি বছর আমার এলাকার মানুষ ঘরহারা হচ্ছে।’তিনি বলেন, ‘এরই মধ্যে সকাল থেকে বাতাস শুরু হয়েছে। ফলে নৌকা ও ট্রলারগুলো কূলে নিরাপদ স্থানে রাখা হয়েছে। এছাড়া নাফনদের পাড়ে বসবাসকারীদের সতর্ক থাকাতে বলা হয়েছে। তবে পরিস্থিতি দেখে তাদের সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে।’অন্যদিকে প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে সকাল থেকে সাগরের পানির উচ্চতা বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রচণ্ড বাতাস শুরু হয়েছে।সেন্টমার্টিন দ্বীপের বাসিন্দা কবির আহমেদ বলেন, ‘বাতাস শুরু হয়েছে। এছাড়া অন্যদিনের তুলনায় সাগর উত্তালের পাশাপাশি পানিও বেড়েছে। দ্বীপবাসীর বসবাস সাগরের পাড়ে, যার কারণে আমরা ঘূর্ণিঝড় এলে খুব বেশি ভয়ে থাকি।’আমরা সতর্ক আছি জানিয়ে সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, ‘প্রচণ্ড গরমে হাঁসফাঁস জনজীবন, মনে হচ্ছে বড় কিছু হতে যাচ্ছে। দ্বীপে সাগর উত্তাল রয়েছে। সকাল থেকে আকাশ মেঘ ও বাতাস শুরু হয়েছে। এছাড়া স্বাভাবিকের চেয়ে সাগরের পানির উচ্চতা বেড়েছে।দ্বীপের বাসিন্দা খতিজা বেগম বলেন, ভাঙা ঘরে কোনোরকম জীবন পার করছি। এখন খুবই চিন্তিত আছি, যেন ঘূর্ণিঝড়ে শেষ সম্বলটুকুও হারিয়ে না যায়। গত বছর ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে ঘরবাড়ি হারিয়েছি।এ বিষয়ে টেকনাফ সহকারী কমিশনার (ভূমি) সৈয়দ সাফকাত আলী বলেন, আমরা মেডিকেল টিমসহ সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। পরিস্থিতি বুঝে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাছাড়া সাগর-নাফনদের কারণে আমরা সেন্টমার্টিন ও শাহপরীর দ্বীপকে গুরুত্ব দিচ্ছি বেশি।

মাত্র ৫ হাজার টাকায় এমপি আনারকে ৮০ টুকরো করা হয়, কসাই জিহাদের স্বীকারোক্তি
ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকাণ্ডে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন কসাই জিহাদ। খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত কসাই জিহাদকে গ্রেপ্তার করে কলকাতার পুলিশ। এরপর গতকাল তাকে আদালতে তোলা হয়।কলকাতার বারাসাত আদালতে তোলার পর ইডির পক্ষ থেকে জিহাদের বিরুদ্ধে ১৪ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। কিন্তু আদালত তার ১২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে।পুলিশ জানায়, কসাই জিহাদ স্বীকারোক্তি দিয়েয়ে এমপি আনোয়ারুলের দেহ ৮০ টুকরো করে নিউটাউন, ভাঙড় এলাকার নানা জায়গার জলাশয়ে ফেলে দেয়া হয়েছে। তার বিনিময়ে ৫০০০ টাকা পেয়েছে সে। আর তার এই স্বীকারোক্তির পর তদন্তকারীদের একাংশের মত, সেসব খণ্ডাংশ উদ্ধার করা আরও কঠিন হয়ে গেল। ইতিমধ্যেই তা কোনো না কোনো জলচর প্রাণীর পেটে চলে যেতে পারে।পুলিশ জানায়, এমপি আনোয়ারুল আজিমের মস্তিষ্ক সম্পূর্ণ গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। হাড়, মাংস পৃথক করে হলুদ মাখিয়ে একেকটি টুকরো একেক জায়গার জলাশয়ে ফেলা হয়েছে।গত ১২ মে কলকাতায় চিকিৎসা করাতে আসেন ঝিনাইদহের সাংসদ আনোয়ারুল আজীম। ১৩ মে রাতে তিনি নিউটাউনের একটি ফ্ল্যাটে খুন হন। দিন দুই নিখোঁজ থাকার পর তার হত্যা সম্পর্কে নিশ্চিত হয় পুলিশ। এই ঘটনার তদন্তভার যায় সিআইডির হাতে। হত্যায় জড়িত সন্দেহে বাংলাদেশ থেকে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।অন্যদিকে বনগাঁ থেকে গ্রেপ্তার হয় জিহাদ ও সিয়াম নামে দুই ব্যক্তি। জিজ্ঞাসাবাদে সিয়াম আরও জানায় মুম্বাই থেকে কলকাতায় এসে কাজ শেষের পর বনগাঁ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে চলে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল তার।সূত্র:সংবাদ প্রতিদিন

ভিডিও ফুটেজে দেখা গেল স্যুটকেসসহ এমপি আনারের ‘দুই কিলার’
ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ডে দুটি ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করেছে ভারতীয় সংবামাধ্যম টাইমস নাউ। এতে দেখা যাচ্ছে, দুই ব্যক্তি ফ্ল্যাট থেকে বের হচ্ছেন এবং একটি বড় স্যুটকেস নিয়ে লিফটের কাছে দাঁড়িয়ে আছেন। অন্য একটি ফুটেজে দেখা যাচ্ছে ওই দুজন স্যুটকেস নিয়ে আবার ফ্ল্যাটে ঢুকছেন। পুলিশের বিবৃতির বরাতে টাইমস নাউ ও এনডিটিভি জানিয়েছে, ওই স্যুটকেসে পলি প্যাকে ভরা ছিল এমপি আনারের লাশের খণ্ডবিখণ্ড অংশ। নিহতের হাড়গুলোকে ছোট ছোট টুকরো করে কেটে ফেলা হয়েছিল এবং চামড়াও ছাড়িয়ে নেওয়া হয়েছিল, যাতে পরিচয় নষ্ট করা যায়। তারপর স্যুটকেসে প্যাকেটগুলো ভরে ফ্ল্যাট থেকে বের করে নিয়ে কলকাতার বিভিন্ন অঞ্চলে ফেলে দেন খুনিরা। আর ভিডিও ফুটেজে দেখা দুই ব্যক্তিই এমপি আনারের কন্ট্রাক্ট কিলার। পুলিশ সন্দেহ করছে, আনোয়ারুল আজিমকে কলকাতার ওই ফ্ল্যাটে একজন নারীর ‘প্রলোভন’ দেখিয়ে নেওয়া হয় এবং তারপর কন্ট্রাক্ট কিলাররা তাকে খুন করে। নিহতের মরদেহ টুকরো টুকরো করতে জিহাদ হাওলাদার নামে এক কসাইকে মুম্বাই থেকে বিশেষভাবে কলকাতার নিউটাউনে আনা হয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গ সিআইডি জানিয়েছে, জিহাদ বাংলাদেশি। এমপি আনার হত্যার দুই মাস আগে তাকে ভারতে আনা হয়েছিল। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকে বিচারকের মুখোমুখি করলে ১২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন পশ্চিমবঙ্গের বারাসাত আদালত । টাইমস নাউ সূত্রে আরও জানা গেছে, আখতারুজ্জামান শাহীন নামে এক ব্যক্তির নির্দেশে এমপি আনারকে খুন করে লাশ টুকরো টুকরো করেছেন বলে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন জিহাদ। আখতারুজ্জামান বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক। এমপি আনারকে হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী এই আখতারুজ্জামান। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, আনারকে খুন করতে খুনিদের সঙ্গে প্রায় ৫ কোটি টাকায় চুক্তিবদ্ধ হন আখতারুজ্জামান। টাইমস নাউ বলছে, কলকাতার নিউটাউন এলাকায় যে ফ্ল্যাটটিতে এমপিকে খুন করা হয়, সেটি তার বন্ধুকে ভাড়া দিয়েছিলেন ফ্ল্যাটের মালিক। তিনি আবগারি বিভাগের একজন কর্মচারী। প্রসঙ্গত, আনোয়ারুল আজিম আনার গত ১৩ মে কলকাতায় নিখোঁজ হন। উত্তর কলকাতার বরানগরের বাসিন্দা আনারের বন্ধু গোপাল বিশ্বাস স্থানীয় পুলিশের কাছে নিখোঁজের অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে লেখা হয়, আনার বাংলাদেশ থেকে কলকাতায় আসার পর গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতেই থাকছিলেন। ১৩ মে বিকেলে ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্টের জন্য তার বাসা থেকে বের হওয়ার পর থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। সেই ডায়েরি সূত্রে নিখোঁজ সংসদ সদস্যের খোঁজ শুরু হয়। পরে ২২ মে কলকাতার নিউটাউনের সঞ্জিভা গার্ডেনসের একটি ফ্ল্যাটে রক্তের দাগ দেখতে পাওয়া যায়। লাশ না মিললেও সেখানে আনারকে খুন করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ। পরিস্থিতিগত প্রমাণ ইঙ্গিত দেয়, এমপিকে প্রথমে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছিল এবং তারপরে তার দেহকে কয়েক টুকরো করা হয়েছিল।

পশ্চিমবঙ্গে ১২ দিনের রিমান্ডে ‘কসাই’ জিহাদ
মুখে কাপড় পরিয়ে অভিযুক্ত জিহাদ হাওলাদারকে আদালতে হাজির করা হয়বাংলাদেশের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারকে হত্যায় সংশ্লিষ্টতার দায়ে কলকাতায় গ্রেপ্তার জিহাদ হাওলাদারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বারাসাত শহরের একটি আদালত একটি আদালত। বৃহস্পতিবার কলকাতার নিকটবর্তী বনগাঁ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে জিহাদ হাওলাদারকে, যিনি পেশায় একজন কসাই। শুক্রবার সকালের দিকে তাকে বারাসাত আদালতে হাজির করে ১৪ দিন রিমান্ডের আবেদন করেন সিআইডির কর্মকর্তারা। আবেদনের ওপর শুনানি শেষে ১২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। শুক্রবার সকালে আদালতে হাজির করার পর জিহাদকে ঘিরে ধরেন সাংবাদিকরা। তবে তিনি কোনো প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে সরাসরি আদালতে ঢুকে যান। এ সময় তার মুখ কাপড় দিয়ে ঢাকা ছিল। সিআইডি সূত্রের খবর, গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জিহাদ জানিয়েছিলেন, আনোয়ারুল আজিমকে খুনের পর তার দেহাংশ পাশের জেলা দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়ের একটি জায়গায় ফেলা হয়েছিল। তারপর বৃহস্পতিবার রাতেই তাকে ভাঙড়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, কিন্তু রাতের অন্ধকারে সেখান থেকে কোনো দেহাংশ মেলেনি। মূলত দেহাংশ উদ্ধার এবং হত্যাকাণ্ড সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর জানার জন্যই জিহাদকে রিমান্ডে নেওয়া প্রয়োজন বলে আবেদনে উল্লেখ করেছে সিআইডি। রিমান্ড আবেদনে সিআইডির পক্ষ থেকে বলা হয়, গোয়েন্দারা এখনও নিহত সাংসদের কোনও দেহাংশ খুঁজে পাননি। ফলে গ্রেপ্তারদের জেরা করে যা তথ্য মিলেছে, তার ওপরেই নির্ভর করতে হচ্ছে তদন্তকারীদের। এ ক্ষেত্রে, অভিযুক্তেরা কোনও ভাবে তদন্তকারীদের ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন কি না, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। সেই সূত্রেই জিহাদকে ১৪ দিন হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। সিআইডি সূত্রে খবর, হানিট্র্যাপের শিকার হয়েছিলেন বাংলাদেশের সংসদ সদস্য। শিলাস্তি রহমান নামের এক নারীকে সামনে রেখে তাকে ফাঁদে ফেলা হয়েছিল, নিয়ে যাওয়া হয়েছিল কলকাতার নিউ টাউনের ওই আবাসনে। তার পর সেখানে আনোয়ারুল আজিমকে খুন করা হয়। গ্রেপ্তার জিহাদের বিরুদ্ধে খুনের জন্য অপহরণ, তথ্য নষ্ট করা, ভুল তথ্য দেওয়া, খুন এবং অপরাধের চক্রান্ত করার ধারা যোগ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সিআইডি। এই ঘটনায় বাংলাদেশ পুলিশ এখনও পর্যন্ত তিন জনকে গ্রেফতার করেছে। সেই তিন জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পশ্চিমবঙ্গ থেকে সিআইডির একটি দল বৃহস্পতিবার ঢাকা এসেছে। প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের খুলনার বাসিন্দা জিহাদ হওলাদার অবৈধভাবে মুম্বাইয়ে থাকতেন। খুনের অন্তত ২ মাস আগে তাকে মুম্বাই থেকে কলকাতায় আনা হয়েছিল। জেরার মুশে জিহাগ স্বীকার করেছেন, প্রথমে আনোয়ারুল আজীমকে শ্বাসরুদ্ধ করে খুন করা হয়। তার পর দেহ কাটা হয় টুকরো টুকরো করে। হাড় এবং মাংস আলাদা করা হয়। চামড়া ছাড়িয়ে নিয়ে তাতে হলুদ মাখান অভিযুক্তেরা। যাতে বাইরে কেউ জিজ্ঞেস করলে বলা যায়, রান্না করার জন্য মাংস নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সেই দেহাংশ বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে এখনও পর্যন্ত জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা। সূত্র : বিবিসি, আনন্দবাজার

কলকাতায় এমপি আনার হত্যায় ৮ দিনের রিমান্ডে তিন আসামি
কলকাতায় ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারকে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার তিন আসামির ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। আসামিরা হলেন- শিমুল ভূইয়া ওরফে শিহাব ওরফে ফজল মোহাম্মদ ভূইয়া ওরফে আমানুল্যা সাইদ, তানভীর ভূইয়া ও শিলাস্তি রহমান।শুক্রবার (২৪ মে) তাদেরকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের ওয়ারী জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মাহফুজুল ইসলাম তাদের ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন। শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দিলরুবা আফরোজ তিথির আদালত এ আদেশ দেন।

আজিম হত্যা: ভারতীয় কর্মকর্তাদের যে তথ্য দিল গ্রেফতাররা
সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার তিন সন্দেহভাজনের সঙ্গে কথা বলেছেন ভারত থেকে আসা চার তদন্তকারী। বৃহস্পতিবার রাতে তারা বেইলি রোডের গোয়েন্দা কার্যালয়ের ওয়ারী বিভাগের কক্ষে সন্দেহভাজন এবং ডিবি কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রায় ৩ ঘণ্টা ধরে কথা বলেন। এর আগে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ভারতীয় কর্মকর্তারা ডিবি কার্যালয়ে আসেন। রাত সাড়ে ৯টার দিকে তারা ওয়ারী বিভাগের কক্ষ থেকে বেরিয়ে ডিএমপির ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদের দপ্তরে যান। পরে অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ বলেন, ‘‘ডিবি হেফাজতে থাকা সন্দেহভাজন ব্যক্তিরা ডিবির কাছে ঘটনার যে বর্ণনা দিয়েছিল, সেই একই বর্ণনা ভারতের তদন্ত কর্মকর্তাদের কাছেও দিয়েছে। “আর ভারতে গ্রেফতার হওয়া এক সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে নিয়ে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন জায়গায় সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারের লাশ বা দেহের অংশ উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সে দেশের পুলিশ।” তবে ভারতীয় কর্মকর্তারা ঢাকার সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি। বৃহস্পতিবারই তারা বাংলাদেশে আসেন। আনার খুনের ঘটনায় ডিবি হেফাজতে থাকা তিনজন হলেন- আমানুল্লাহ ওরফে শিমুল ভূঁইয়া, শিলাস্তি রহমান ও ফয়সাল আলী ওরফে সাজি। ভারতীয় পুলিশের কাছ থেকে তথ্য পেয়ে তাদের আটক করে বাংলাদেশের পুলিশ। বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ সংবাদ সম্মেলন করে জানায়, আনার হত্যার হোতা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক আখতারুজ্জামান ওরফে শাহিন মিয়া। আর হত্যাকাণ্ডটি বাস্তবায়ন করেছেন চরমপন্থি নেতা আমানউল্লাহ ওরফে শিমুল। ভারতের কলকাতায় সংঘটিত এ হত্যাকাণ্ডের মাস খানেক আগেই ঢাকার গুলশান ও বসুন্ধরার বাসায় বসে খুনের ছক আঁটা হয়। গোয়েন্দা কর্মকর্তা হারুন অর রশীদ বলেছেন, সংসদ সদস্যকে হত্যার পর শরীরের বিভিন্ন অংশ টুকরো করে হলুদ লাগিয়ে ছিটিয়ে দেওয়া হয়েছে, যার কারণে লাশ উদ্ধার করা কঠিন। তবে কী কারণে আনার হত্যার শিকার হয়েছে সে বিষয়ে স্পষ্ট কিছু বলেননি এই পুলিশ কর্মকর্তা। ঝিনাইদহ-৪ আসনের তিনবারের সংসদ সদস্য আনার কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। গত ১১ মে তিনি চিকিৎসার জন্য ভারতে যান। প্রথমে কলকাতার বরাহনগরে তার বন্ধু স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে ওঠেন। কিন্তু সেখান থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হন। এরপর স্থানীয় থানায় জিডি করেন গোপাল বিশ্বাস। তদন্ত শুরু হয় দুই দেশে। বুধবার সকালে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে খবর আসে, নিউ টাউনের এক বাড়িতে খুন হয়েছেন এমপি আনার। আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন, যেখানে তার বাবাকে ‘হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণের’ অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে আসামি হিসেবে সেখানে কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি। ধরা পড়া সন্দেহভাজন তিনজনকে এ মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে শুক্রবার আদালতে সোপর্দ করে রিমান্ড চাওয়া হবে বলে জানিয়েছেন গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তা হারুন। বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, “প্রায় সব কিছু চিহ্নিত হয়েছে। কারা হত্যা করেছে, তাদের চিহ্নিত করে প্রায় কাছাকাছি এসে গেছি। এখন শুধু ঘোষণার বাকি।” দুই দেশের গোয়েন্দারা একমত হতে পারলে সেই ঘোষণা দেওয়া হবে জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আমরা এখনো তদন্ত করছি। তদন্তের প্রয়োজনে ভারতের একটি টিম এখানে (বাংলাদেশে) আসবে। প্রয়োজনে আমাদের একটি টিমও সেখানে (ভারত) যাবে।”
.jpg)
এমপি আনারকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয় দাবি ভারতীয় গণমাধ্যমের
ভারতের পশ্চিমবঙ্গে চিকিৎসার জন্য গিয়ে পরিকল্পিত ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন বাংলাদেশের ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার। এ ঘটনায় তদন্তে নেমেছে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ। তদন্তে উঠে আসছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। যা ঘিরে রহস্য আরো জমাট বাঁধছে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ১৩ মে নিউটাউনের আবাসনেই শ্বাসরোধ করে খুন করা হয় আনারকে। খুনের পর টুকরো টুকরো করে কাটা হয় মরদেহ। ১৬ থেকে ১৮ মে পর্যন্ত তিনদিন ধরে খণ্ডিত অংশ অন্যত্র সরিয়ে ফেলা হয়। কিছু অংশ ওই ফ্ল্যাটের ফ্রিজে রাখা হয়। এমনকি ফ্ল্যাট থেকে প্লাস্টিক ব্যাগ উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশের ধারণা, প্লাস্টিক ব্যাগে ভরেই খণ্ডিত অংশ বিভিন্ন জায়গায় ফেলা হয়েছে। তবে কারা ফেলেছে, কোথায় ফেলা হয়েছে তা এখনও স্পষ্ট নয়। এদিকে, এই ঘটনায় একটি গাড়ি জব্দ করেছে পুলিশ। গাড়িটির নম্বর WB18 AA 5473। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে গাড়িটিকে শনাক্ত করা হয়। এর পরই গাড়ির মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। সেই গাড়িটিকে আনা হয় নিউটাউন থানায়। উদ্ধার হওয়া গাড়ি থেকে ফরেনসিক এবং ফিঙ্গারপ্রিন্ট বিশেষজ্ঞরা নমুনা সংগ্রহ করেন। হত্যা করা হয়েছে এমন আলামত পাওয়া গেলেও এখন পর্যন্ত এমপি আনারের মরদেহ উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। মরদেহের পাশাপাশি চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড কে? আরও কারা জড়িত? এসবের প্রশ্নের উত্তরও খুঁজছে কলকাতা পুলিশ। তবে হত্যায় সংশ্লিষ্টতার ক্ষেত্রে এখনও পর্যন্ত একটি নাম এসেছে জোরালোভাবে। তিনি বাংলাদেশি আমেরিকান আখতারুজ্জামান শাহিন, কলকাতায় এসেছিলেন আমেরিকার পাসপোর্ট ব্যবহার করে। এই আখতারুজ্জামানই কলকাতায় এক লাখ রুপিতে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছিলেন এক বছর আগে। পরিকল্পিতভাবে খুন করে কলকাতা ছেড়ে বাংলাদেশ হয়ে ইতোমধ্যে তিনি আমেরিকায় পাড়ি জমিয়েছেন বলে ধারণা করছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের একাংশ। এমপি আনারের হত্যায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে বাংলাদেশের তিনজন ও কলকাতায় একজনকে আটক করা হয়েছে। গ্রেপ্তারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে কিছু তথ্য জানতে পেরেছেন বাংলাদেশ ও কলকাতা পুলিশের কর্মকর্তারা। তবে সেই মূল পরিকল্পনাকারী শাহিন আটক নাকি সত্যিই পালিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছেন তা এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়নি দুই দেশের পুলিশ।
.jpg)
এমপি আনার হত্যা : শেরেবাংলা নগর থানায় মেয়ের মামলা
ভারতের কলকাতায় ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজীম আনারকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। বুধবার (২২ মে) রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় খুন করার উদ্দেশ্যে অপহরণের অভিযোগে মামলাটি দায়ের করেন এমপি আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন। সন্ধ্যায় শেরে-বাংলা নগর থানায় মামলাটি নথিভুক্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আহাদ আলী। তিনি বলেন, অজ্ঞাতদের আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে (মামলা নম্বর ৪২)। এখন তদন্ত করে আসামিদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) এইচ এম আজিমুল হকও মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এমপি আনার সংসদ ভবন এলাকায় থাকতেন। সেখান থেকে তিনি ভারতে গেছেন। তাই ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) প্রধান হারুন-অর-রশিদের পরামর্শে শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা দায়ের করেন তার মেয়ে।এর আগে, আজ সকালে কলকাতার গণমাধ্যম সূত্রে প্রথম খবর ছড়ায়, বাংলাদেশের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম হত্যার শিকার হয়েছেন। এরপর এ ব্যাপারে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে সর্বপ্রথম পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, ভারতে গিয়ে নিখোঁজ বাংলাদেশের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের মরদেহ উদ্ধারের খবর পেয়েছি গণমাধ্যম সূত্রে। তবে, ইন্ডিয়ান বা কলকাতা পুলিশ আমাদের এখনো কিছু নিশ্চিত করেনি। তিনি জীবিত নাকি মৃত তা এখনো অফিসিয়ালি নিশ্চিত নই। আমরা যৌথভাবে কাজ করছি। পরে দুপুরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীমকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে। কারা তাকে খুন করেছে তা জানতে বাংলাদেশ ও ভারতের পুলিশ কাজ করছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে আটক করা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আটক তিনজন বাংলাদেশ পুলিশের কাছে আছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। মন্ত্রী বলেন, চিকিৎসার জন্য আনোয়ারুল আজীম দেশের বাইরে গিয়েছিলেন। সেখানে তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। ভারতের পুলিশ আমাদের নিশ্চিত করেছে, তাকে হত্যা করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, খুনের সঙ্গে ভারতের কেউ জড়িত নয়। বাংলাদেশিরাই খুন করেছে। সেহেতু বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক খারাপ হওয়ার কোনো কারণ নেই। ভারত আমাদের যথেষ্ট কো-অপারেশন করছে। আমাদের কাছে আরও তথ্য আছে। তবে তদন্তের স্বার্থে এখন জানাতে পারছি না। এদিকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন-অর-রশিদ জানান, ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আনার হত্যাকাণ্ডের কারণ জানতে নিবিড়ভাবে তদন্ত চলছে। সাংবাদিকদের ডিবি প্রধান বলেন, ঘটনাটি খুবই মর্মান্তিক। ঝিনাইদহ-কালিগঞ্জ এলাকার জনপ্রিয় জনপ্রতিনিধি ছিলেন তিনি। তার এলাকার সাধারণ মানুষ স্তম্ভিত। আমরা অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছি। তিনি তিনবারের সংসদ সদস্য। এটি নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ড, এটা মনে করেই তদন্তকারী কর্মকর্তারা কাজ করছেন। নিবিড়ভাবে ভারতীয় পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। কয়েকজন আমাদের কাছে আছে, তাদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাচ্ছি। তদন্তের স্বার্থে আমরা সবকিছু বলতে পারছি না। হারুন-অর-রশিদ বলেন, একজন সংসদ সদস্যকে বাংলাদেশি অপরাধীরা নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি যারা আছে তাদের প্রত্যেককে আমরা আইনের আওতায় আনব। বিচারের মুখোমুখি করব। তদন্তের স্বার্থে নাম প্রকাশ করতে চাচ্ছি না। বিভিন্ন ধরনের ভুল তথ্য ছড়ানো হচ্ছে, কী কারণে হত্যার ঘটনা ঘটেছে জানা গেছে কি না? এ প্রশ্নের জবাবে ডিবি প্রধান বলেন, আসলে এটা কী কারণে ঘটেছে জানতে আমাদের তদন্ত চলছে। এটা পারিবারিক নাকি আর্থিক নাকি এলাকায় কোনো দুর্বৃত্ত দমন করার কারণে এমন ঘটনা ঘটেছে- সবকিছু আমরা তদন্তে আনব। প্রসঙ্গত, গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য ভারতের পশ্চিবঙ্গে যান এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার। সেদিন সন্ধ্যা ৭টার দিকে কলকাতায় তার পারিবারিক বন্ধু গোপাল বিশ্বাসের সঙ্গে দেখা করতে যান। পরের দিন, ১৩ মে চিকিৎসক দেখাতে হবে জানিয়ে দুপুর ১টা ৪১ মিনিটে গোপালের বাড়ি থেকে বের হন আনার। সন্ধ্যায় ফিরবেন বলেও জানান তিনি। পরে বিধান পার্কের কাছে কলকাতা পাবলিক স্কুলের সামনে থেকে ট্যাক্সিতে উঠেছিলেন তিনি। চলে যাওয়ার পর সন্ধ্যায় আজিম তার বন্ধু গোপালকে জানান, তিনি দিল্লি যাচ্ছেন এবং সেখানে পৌঁছে তাকে ফোন করবেন। পরে তার সঙ্গে ভিআইপিরা আছেন জানিয়ে বন্ধু গোপালকে ফোন না দেওয়ার জন্য সতর্ক করেছিলেন। গত ১৫ মে হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো বার্তায় এমপি আনার বন্ধু গোপালকে জানান, তিনি দিল্লি পৌঁছেছেন এবং ভিআইপিদের সঙ্গে আছেন। তাকে ফোন করার দরকার নেই। একই বার্তা পাঠান বাংলাদেশে তার ব্যক্তিগত সহকারী রউফের কাছেও। ১৭ মে আনারের পরিবার তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে গোপালকে ফোন করেন। ওই সময় তারা গোপালকে জানান, তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না তারা। পরিবারের পক্ষ থেকে ওই দিনই ঢাকায় থানায় অভিযোগ করা হয়। এরপর থেকে এমপি আনারের খোঁজ পাওয়া যায়নি। পরে আজ ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমে বলা হয়, কলকাতার নিউ টাউনের সঞ্জিভা গার্ডেন্সের একটি ফ্লাটে এমপি আনারকে খুন করা হয়েছে। এনডিটিভি বলে, ১২ মে কলকাতায় আসার পর নিখোঁজ হওয়া এমপি আনারের খোঁজে তল্লাশি শুরুর পর বুধবার সকালে তার খুনের ব্যাপারে নিশ্চিত হয় পুলিশ। প্রাথমিকভাবে এনডিটিভির প্রতিবেদনে এমপি আনারের মরদেহ উদ্ধারের তথ্য জানিয়ে বলা হয়, সেখানে মরদেহের খণ্ডিত অংশ পাওয়া গেছে। পরবর্তী সময়ে এনডিটিভির ওই প্রতিবেদন থেকে খণ্ডিত মরদেহ উদ্ধারের তথ্য সরিয়ে ফেলা হয়। এতে বলা হয়, বাংলাদেশি ওই এমপি খুন হয়েছেন বলে ধারণা করছে কলকাতা পুলিশ। তার মরদেহ কলকাতার নিউ টাউন এলাকায় বিভিন্ন স্থানে ফেলে রাখা হয়েছে। তল্লাশি অভিযানের সময় নিউটাউনের একটি ফ্লাটে রক্তের দাগ দেখতে পেয়েছে পুলিশ। এদিকে, কলকাতা পুলিশের বরাত দিয়ে বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া একজন ক্যাবচালক জানিয়েছেন, এক সপ্তাহ আগে নিখোঁজ হওয়া ঝিনাইদহের এমপি আনারকে হত্যা করা হয়েছে এবং মরদেহ খণ্ড-বিখণ্ডিত করে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। যদিও পরে বিবিসি বাংলাও ক্যাব চালকের স্বীকারোক্তির তথ্য তাদের প্রতিবেদন থেকে সরিয়ে ফেলেছে। পুলিশের কর্মকর্তারা বলেছেন, যে ফ্ল্যাটে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে; সেটি পুলিশ ঘিরে রেখেছে। সেখানে কাউকে এখন ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। পুলিশের সূত্র বলেছে, ওই ফ্ল্যাটে তিনজনকে ঢুকতে সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে। তাদের মধ্যে একজন নারী। তবে ওই তিনজনকে সেখান থেকে বের হতে আর দেখা যায়নি। এর আগে, ২০ মে এমপি আনারের খোঁজ করতে গিয়ে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ তার মোবাইল লোকেশন ট্র্যাক করে। তারা জানতে পারে, কলকাতায় বন্ধুর বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর তার মোবাইলের লোকেশন একবার পাওয়া গিয়েছিল সেখানকার নিউমার্কেট এলাকায়। এরপর ১৭ মে তার ফোন কিছুক্ষণের জন্য সচল ছিল বিহারে।

এমপি আনারের লাশ কেটে লাগেজে ভরে বাইরে নেন ৩ জন
কলকাতায় ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারের হত্যা রহস্য আরও ঘনীভূত হচ্ছে। সেখানকার পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ১৩ মে তারিখ দুপুরের পর তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল নিউটাউনের অভিজাত আবাসন সঞ্জীবা গার্ডেনে। সে সময় তার সঙ্গে ছিলেন দুই পুরুষ ও এক নারী। তারা চারজনেই ওঠেন আবাসনের বি ইউ ব্লকের ৫৬ নম্বর ফ্ল্যাটে। রক্তের দাগ ও একাধিক পায়ের চিহ্ন দেখে পুলিশের অনুমান, ওই রাতে চারজন একসঙ্গেই ছিলেন। এরপর সেখানে তাকে হত্যা করা হয়। পরে লাগেজে করে মরদেহের টুকরো বের করে নেয় দুষ্কৃতকারীরা। এ কাজ করতে সময় লাগে তিন দিন। তারা পরিকল্পিতভাবে প্রতিদিনই লাগেজ নিয়ে একজন করে বের হয়েছে। পুলিশের অনুমান, প্রথমে বের হন ওই নারী। এ ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে কলকাতা পুলিশ। তবে কারা গ্রেপ্তার হয়েছেন, তারা বাংলাদেশি নাকি ভারতীয় এ নিয়ে পুলিশ মুখ খোলেনি। রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান অখিলেশ চতুর্বেদী বলেন, এখনই তদন্তের স্বার্থে কিছু বলব না। গোয়েন্দা প্রধান জানান, সিসিটিভি ফুটেজ ও লিংকম্যানের মাধ্যমে তদন্ত শিগগিরই শেষ হবে। পুলিশ জানায়, ওই ফ্ল্যাটের মালিক সন্দীপ রায়। তিনি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আবগারি বিভাগে রয়েছেন। অথচ তিনি ফ্ল্যাটটি ভাড়া দিয়েছিলেন, আখতারুজ্জামান নামে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী এক বাংলাদেশিকে। যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ওই বাংলাদেশি কোথায়? পুলিশ বলছে, এখনই এ নিয়ে কোনো তথ্য দেব না। তবে পুলিশ নিশ্চিত, এটি নিখোঁজের ঘটনা নয়, পরিকল্পিত হত্যা। এখন ফ্ল্যাটে ফরেনসিক বিভাগের কর্মকর্তারা কাজ করছেন।

বাবার হত্যার বিচার চাই
বুধবার (২২ মে) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে অবস্থিত ডিবি কার্যালয়ের সামনে তিনি এ কথা বলেন।তিনি বলেন, আমার বাবার হত্যার বিচার চাই। আমার বাবাকে যারা হত্যা করেছে তাদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে এইটা আমি দেখতে চাই। আমরা কাউকে সন্দেহ করছি না। তবে আমার বাবাকে যারা হত্যা করেছে তাদের আমি দেখতে চাই। ডরিন বলেন, আমি জেনেছি যে, আমার বাবাকে হত্যা করা হয়েছে। এটা শুনেই আমি ডিবি প্রধানের কাছে এসেছি। তারা এরইমধ্যে তিনজনকে ধরেছেন। আমি মামলা করব। ডিএমপি কমিশনার, ডিবি প্রধান ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। সবাই আমাকে আশ্বস্ত করেছেন। ডিবি আন্তরিকতার সঙ্গে বিষয়টি দেখছেন। তিনি বলেন, আমার কোনো ভাই নেই। আমরা দুই বোন। বড় বোন ডক্টর। আমি এলএলবি পড়ছি। আমি ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের আন্ডারে এলএলবি পড়ছি। আমি নিজেই আজ এখানে এসেছি। ডিবি পুলিশ আন্তরিকতার সঙ্গে বিষয়টি দেখছেন বলে আমি অনেক তথ্য পাচ্ছি। গণমাধ্যমের সহযোগিতা কামনা করে ডরিন বলেন, আমি আমার বাবা হত্যার বিচার চাই। আপনারা এই বিষয়ে আমাকে সহযোগিতা করুন। আপনারা নিউজ করুন অনুসন্ধান করুন। আপনাদের নিউজে সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি হোক। আমি যেন বিচার পাই, আমার বাবাকে কারা হত্যা করেছে, সেটা যেন জানতে পারি। তিনি বলেন, আমার বাবাকে কারা হত্যা করেছে, কেন করেছে, এর সুষ্ঠু তদন্ত চাই। আমি এর শেষ দেখতে চাই, তারা কেন বাবাকে হত্যা করেছে? আমি যেন দেখতে পাই আমার বাবার হত্যাকারীদেরকে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝোলানো হয়েছে। ডরিন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আজকে আমি এতিম হয়ে গেছি। আজকে আমার পড়াশোনা শেষ হয়নি। সবার পরিবার আছে, সন্তান আছে। সবাই জানেন, যার বাবা থাকে না তার কেউ থাকে না, সে এতিম হয়ে যায়। যতই কাছের আত্মীয়, আপন মানুষ থাকুক না কেন বাবা বাবাই। বাপের মতো কেউ আপন হয় না। তিনি বলেন, আমার বাবা অনেক স্বপ্ন নিয়ে আমাকে এলএলবিতে ভর্তি করিয়েছেন। আমি পরীক্ষাও দিয়েছি। সামনে রেজাল্ট দেবে। বাবা আমাকে বলে গেছে ইন্ডিয়া থেকে ফিরে আমার রেজাল্ট চেক করবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি অনুরোধ জানিয়ে ডরিন বলেন, আমার একটাই অনুরোধ আপনার আমার বাবার হত্যার সুষ্ঠু বিচার করুন। একটা সময় আমার বাবা ১৪টা বছর মিথ্যা মামলায় পালিয়ে থেকেছেন। তখন আমি অনেক ছোট। তখনো আমি আমার বাবাকে কাছে পাইনি। যখন একটু বুঝতে শিখে তখন আমার বাবাকে কাছে পেয়েছি। এখন আবার আমার বাবাকে হারিয়ে ফেললাম। আপনারা কেউ আমার বড় ভাই কেউ বাবার মত। আপনারা আমাকে সহযোগিতা করবেন। আমি আমার বাবার হত্যার বিচার চাই। আমি স্বচক্ষে দেখতে চাই কারা আমাকে এতিম করল কেন করল। আপনি বা আপনার পরিবার কাউকে সন্দেহ করছে কিনা? তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এর মধ্যে একজনের নাম আনোয়ারুল আরেকজনের নাম ফয়সাল। আপনি তাদেরকে চেনেন কিনা? জানতে চাইলে ডরিন বলেন, আমি চিনি না কিন্তু চিনতে চাই আমি ডিবি প্রধানকে বলেছি, আপনি আইডেন্টিফাই করুন কেন এরকমটি হলো। আমি নিজেও আইন পড়ছি আইনের কিছু বিষয় আমি জানি। আপনি দেখুন আমাকে চেনান তারা কারা। আমি তাদের চিনতে চাই আমি তাদের প্রকাশের মৃত্যু দেখতে চাই। আমাকে এভাবে এতিম করে দিল! বাবার সঙ্গে আপনার বা পরিবারের সঙ্গে শেষ কি কথা হয়েছিল জানতে চাইলে ডরিন বলেন, আমার সঙ্গে বাবার সর্বশেষ ভিডিওকলে কথা হয়েছে। সে বলেছে আম্মু আমি ইন্ডিয়াতে যাচ্ছি। দু-একদিনের মধ্যে চলে আসব। তোমার দাঁতের ডাক্তারের কাছে দেখানোর কথা। আমি ফিরে এসে তোমাকে দাঁতের ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাব, তুমি যেও না। ডাক্তার ফোন করলে বলবে যে বাবা ইন্ডিয়াতে গেছে, ফিরে আসলে যাব। তুমি থাকো আমি আসছি। তারপর আর বাবার সঙ্গে কথা হয়নি। কাউকে সন্দেহ করছি না উল্লেখ করে ডরিন বলেন, আমি আগে দেখতে চাই কারা এ কাজ করেছে, তারপর আমি আমার সন্দেহের কথা বলব। কারো সঙ্গে কোনো শত্রুতে ছিল কিনা জানতে চাইলে বলেন, কারো সঙ্গে ছিল কিনা আমি জানি না। এরকম কি এখনো আমি জানতে পারিনি। যাদেরকে সন্দেহ করা হচ্ছে তাদেরকে আগে ধরা হোক তাহলে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে অনেক কিছু বেরিয়ে আসবে। আমি যদি জানতাম তাহলে তো ডিবি পুলিশকে বলেই যেতাম। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তিনি বলেছেন চিন্তা করো না। আমি তার হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

আনোয়ারুল আজীমকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
পরিকল্পিতভাবে ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীমকে খুন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি বলেন, কারা কারা খুন করেছে তা জানতে বাংলাদেশ ও ভারতের পুলিশ কাজ করছে। বুধবার (২২ মে) দুপুর দেড়টার দিকে নিজ বাসায় এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান মন্ত্রী। এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে আটক করা হয়েছে বলেও জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, আটক তিনজন বাংলাদেশ পুলিশের কাছে আছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। মন্ত্রী বলেন, চিকিৎসার জন্য আনোয়ারুল আজীম দেশের বাইরে গিয়েছিলেন সেখানে তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। ভারতের পুলিশ আমাদের নিশ্চিত করেছে তাকে হত্যা করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তের বরাত দিয়ে মন্ত্রী বলেন, খুনের সঙ্গে ভারতের কেউ জড়িত না। বাংলাদেশিরা খুন করেছে। সেহেতু বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক খারাপ হওয়ার কোনো কারণ নেই। ভারত আমাদের যথেষ্ট কো-অপারেশন করছে। তিনি বলেন, আমাদের কাছে আরও তথ্য আছে। তবে তদন্তের স্বার্থে এখন জানাতে পারছি না।

নিখোঁজ এমপি আনারের কোনো হালনাগাদ তথ্য নেই: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
ঢাকা: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, ভারতে চিকিৎসা নিতে গিয়ে নিখোঁজ ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারের এখন পর্যন্ত কোনো হালনাগাদ তথ্য নেই। মঙ্গলবার (২১ মে) দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার বৈঠকের পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এমন মন্তব্য করেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের ও ভারতের ইমিগ্রেশন পার হয়ে যথাযথভাবেই তিনি ভারতে যান। তার পরিবার থেকে আমাদের জানানো হয়েছিল যে তার কোনো খোঁজ খবর পাওয়া যাচ্ছে না। সরকারি সব সংস্থাগুলো এটা নিয়ে কাজ করছে। আমাদের এনএসআই, এসবি ও পুলিশ কাজ করছে। ভারতীয় পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে কাজ করা হচ্ছে। আশা করছি, ভারতীয় সরকারের মাধ্যমে শিগগিরই তার বিষয়ে জানতে পারবো। তার বিষয়ে কোনো আপডেট (হালনাগাদ তথ্য) পাওয়া গেছে কিনা এমন প্রশ্নে জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমার কাছে এখন পর্যন্ত কোনো আপডেট নেই। যতটুকু শুনছি, আনারের মোবাইলটাও বন্ধ আছে। সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা নিয়ে জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান বলেন, এটা নিয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই। কেন এই নিষেধাজ্ঞা এসেছে, সেটা আমার কাছে এখনো আসেনি। আমি কেবল একটি বিজ্ঞপ্তির কথা শুনেছি। এটা বিস্তারিতভাবে না জেনে প্রশ্নের জবাব দিতে পারব না। মন্ত্রী বলেন, একটা জিনিস আমি বুঝতে পেরেছি, মার্কিন সরকার অনেক দেশের অনেক ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। অনেক দেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এটা তাদের জন্য নতুন কিছু না। আমাদের দেশে যাকে দেওয়া হয়েছে, আমাদের কাছে এখনো সেটা সঠিকভাবে আসেনি।