
জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেলে গুম ও নির্যাতনের অভিযোগে আলোচিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক ও বর্তমান ১২ জন সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে বিচার কার্যক্রম শুরুর নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর তিন সদস্যের বেঞ্চ এই আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে বেঞ্চ অভিযোগ গঠন সম্পন্ন করে মামলার বিচার শুরু করেন। একই সঙ্গে প্রসিকিউশনের সূচনা বক্তব্য উপস্থাপনের জন্য আগামী ১৯ জানুয়ারি দিন ধার্য করা হয়।
শুনানির দিন কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে গ্রেপ্তার তিন আসামিকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করে পুলিশ। তারা হলেন ডিজিএফআইয়ের সাবেক পরিচালক মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান সিদ্দিকী এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভির মাজহার সিদ্দিকী।
অভিযোগ গঠনের সময় ট্রাইব্যুনাল উপস্থিত তিন সেনা কর্মকর্তার কাছে জানতে চান, তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ তারা স্বীকার করেন কিনা। জবাবে তারা সবাই নিজেদের নির্দোষ দাবি করে ট্রাইব্যুনালের কাছে ন্যায় বিচার প্রার্থনা করেন।
মামলার বাকি ১০ আসামি পলাতক রয়েছেন। তাদের মধ্যে পাঁচজন বিভিন্ন সময়ে ডিজিএফআইয়ের মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তারা হলেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আকবর হোসেন, মেজর জেনারেল (অব.) সাইফুল আবেদিন, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. সাইফুল আলম, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আহমেদ তাবরেজ শামস চৌধুরী এবং মেজর জেনারেল (অব.) হামিদুল হক।
এছাড়া পলাতক আসামিদের মধ্যে রয়েছেন শেখ হাসিনার প্রতিরক্ষাবিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, ডিজিএফআইয়ের সাবেক পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ তৌহিদুল উল ইসলাম, মেজর জেনারেল কবীর আহাম্মদ এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মখছুরুল হক।
এদিন ট্রাইব্যুনালে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম, ফারুক আহমেদসহ প্রসিকিউশনের অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। আসামিপক্ষে শেখ হাসিনার জন্য রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন এবং সেনা কর্মকর্তাদের পক্ষে আইনজীবী হাসান ইমাম, আজিজুর রহমান দুলুসহ অন্যান্য আইনজীবীরা শুনানিতে অংশ নেন।
এর আগে গত ৯ নভেম্বর গ্রেপ্তার তিন আসামির অব্যাহতির আবেদন নিয়ে শুনানি করেন আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু। তিনি চারটি কারণ উল্লেখ করে অব্যাহতি চান। এর মধ্যে বেআইনি আটক, অপহরণ ও নির্যাতনের বিষয়গুলো বিবেচনায় নেওয়ার কথা জানান ট্রাইব্যুনাল। অপর একটি কারণ ছিল গুম করে রাখা। দুলুর শুনানি শেষে পলাতক আসামিদের পক্ষে স্টেট ডিফেন্স আইনজীবী হাসান ইমাম, আমির হোসেনসহ অন্যান্য আইনজীবীরা যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন।
এই মামলায় প্রসিকিউশন মোট পাঁচটি অভিযোগ দায়ের করে। অভিযোগ গঠনের বিষয়ে ৭ ডিসেম্বর শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। শুনানিতে তিনি তুলে ধরেন কীভাবে জেআইসি সেলে সরকারবিরোধী মতাদর্শের ব্যক্তিদের তুলে নিয়ে গুম করে নির্যাতন চালানো হতো। একই সঙ্গে ২০১৫ সালের ২২ অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত গুম হওয়া ২৬ জনের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার বিবরণ আদালতের সামনে উপস্থাপন করেন। শুনানি শেষে তিনি ১৩ আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে চার্জ গঠনের আবেদন করেন।