
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিচ্ছেন রাজসাক্ষী এসআই শেখ আবজালুল হক, যিনি গত জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় আশুলিয়ায় ছয়জনকে হত্যা ও লাশ পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় জড়িত সাবেক এমপি সাইফুল ইসলামসহ ১৬ জন আসামির মামলার প্রেক্ষিতে আদালতে তথ্য প্রদান করছেন।
বুধবার (১৯ নভেম্বর) সকাল ১১টার পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর তিন সদস্যের বেঞ্চে তিনি তার সাক্ষ্য শুরু করেন। বেঞ্চের নেতৃত্বে রয়েছেন চেয়ারম্যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী, আর দুই সদস্য হলেন অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মঞ্জুরুল বাছিদ এবং জেলা ও দায়রা জজ নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর।
প্রসিকিউশন সূত্রে জানা গেছে, গত ২১ আগস্ট ট্রাইব্যুনাল-২ এ মামলায় ১৬ আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর নির্দেশ দেন। অভিযোগ গঠনের দিন উপস্থিত আট আসামির মধ্যে সাতজন নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন, তবে এসআই শেখ আবজালুল হক তার দোষ স্বীকার করেন। একইসঙ্গে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে মামলার বিষয়ে যা জানেন সব আদালতের সামনে প্রকাশ করতে চান। আদালতে তার দোষ স্বীকারের অংশ রেকর্ড করা হয় এবং লিখিত আবেদনের ভিত্তিতে তিনি রাজসাক্ষী হওয়ার অনুমতি পান।
এর আগে সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন ধার্য থাকলেও বিশেষ পরিস্থিতির কারণে তা স্থগিত হয়। ১২ নভেম্বরও প্রসিকিউশন সাক্ষী হাজির করতে ব্যর্থ হয়। এই ধারাবাহিকতায় আজ তার সাক্ষ্য গ্রহণ করা হচ্ছে।
আগের সাক্ষীদের মধ্যে ৫ নভেম্বর ২২ নম্বর সাক্ষী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রত্যক্ষদর্শী শাহরিয়ার হোসেন সজিব। তার সামনে একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান এবং তার বন্ধু সাজ্জাদ হোসেন সজলকে আগুনে পুড়িয়ে দেয় পুলিশ। পরে স্টেট ডিফেন্স ও আসামিপক্ষের আইনজীবীরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। ৩০ অক্টোবর ২১ নম্বর সাক্ষী হিসেবে ভুক্তভোগী সানি মৃধা পুলিশের গুলিতে আহত হওয়ার এবং ৫ আগস্ট আশুলিয়ার নৃশংসতার বর্ণনা দেন। ২৯ অক্টোবর আশুলিয়া থানার এসআই মো. আশরাফুল হাসান জব্দ তালিকার সাক্ষী হিসেবে জানান, তিনি থানার ওসির নির্দেশে চলতি বছরের ১৪ এপ্রিল রাইফেলের ছয় রাউন্ড গুলি উদ্ধার করে থানায় জমা দেন।
প্রথম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছিল ১৫ সেপ্টেম্বর। সেখানে শহীদ আস সাবুরের ভাই রেজওয়ানুল ইসলাম এবং শহীদ সাজ্জাদ হোসেন সজলের বাবা মো. খলিলুর রহমান সাক্ষ্য দেন। তার আগের দিন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সূচনা বক্তব্যে গত বছরের ৫ আগস্ট আশুলিয়ার বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের বিবরণ তুলে ধরেন।
মামলাটি ২ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে দায়ের করা হয়। অভিযোগের সঙ্গে যুক্ত করা হয় ৩১৩ পৃষ্ঠার তথ্যসূত্র, ৬২ জন সাক্ষীর বিবরণ, ১৬৮ পৃষ্ঠার দালিলিক প্রমাণাদি এবং দুটি পেনড্রাইভ। ট্রাইব্যুনাল পরে এই মামলায় ১৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গ্রহণ করেন।
এ মামলায় গ্রেপ্তার থাকা আট আসামির মধ্যে রয়েছেন ঢাকা জেলার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. আব্দুল্লাহিল কাফী, ঢাকা জেলা পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত সুপার (সাভার সার্কেল) মো. শাহিদুল ইসলাম, পরিদর্শক আরাফাত হোসেন, এসআই মালেক, এসআই আরাফাত উদ্দিন, এএসআই কামরুল হাসান, এসআই আবজাল এবং কনস্টেবল মুকুল। তবে সাবেক এমপি সাইফুল ইসলামসহ বাকি আটজন এখনও পলাতক।
গত বছরের ৫ আগস্ট আশুলিয়ায় পুলিশি গুলিতে ছয় তরুণ নিহত হন। পরে তাদের লাশ পুলিশ ভ্যানে তুলে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় একজন বেঁচে থাকলেও তাকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর ১১ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ দায়ের করা হয়।