
মসজিদ শুধু নামাজ আদায়ের স্থান নয়, বরং মুসলিম সমাজের ধর্মীয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনের কেন্দ্রবিন্দু। ইসলামের সূচনালগ্ন থেকেই এই প্রতিষ্ঠানের গুরুত্ব অপরিসীম। হিজরতের পর রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনায় পৌঁছেই যে প্রথম কাজটি করেন, তা হলো মসজিদ নির্মাণ, যা মুসলিম জীবনে মসজিদের অবস্থানকে স্পষ্টভাবে তুলে ধরে।
তবে প্রশ্ন ওঠে, অমুসলিমরা কি মসজিদে প্রবেশ করতে পারে? ইসলামী শরিয়তের বিভিন্ন উৎস ও ফিকহি মতামতের ভিত্তিতে এর উত্তর পাওয়া যায়।
আলোচিত বিষয়ের ক্ষেত্রে কোরআনের একাধিক আয়াত নির্দেশনা দেয়। সূরা তাওবার ১৮ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তারাই তো আল্লাহর মসজিদের আবাদ করবে, যারা ঈমান আনে আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি, সালাত কায়েম করে, জাকাত দেয় এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ভয় করে না। অতএব আশা করা যায়, তারা হবে সৎপথপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত।’ (সূরা তাওবা, আয়াত: ১৮)
তবে একই সূরার ২৮ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘হে ঈমানদারগণ, মুশরিকরা তো অপবিত্র; কাজেই এ বছরের পর তারা যেন মসজিদুল হারামের ধারে-কাছে না আসে। আর যদি তোমরা দারিদ্র্যের আশঙ্কা কর তবে আল্লাহ্ ইচ্ছে করলে তার নিজ করুণায় তোমাদেরকে অভাবমুক্ত করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।’
এই আয়াত থেকে বিশেষজ্ঞরা ব্যাখ্যা করেন, মসজিদুল হারামের ক্ষেত্রে অমুসলিমদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও অন্যান্য মসজিদে প্রয়োজন সাপেক্ষে তাদের প্রবেশের সুযোগ রয়েছে।
একটি প্রামাণ্য হাদিসে, উসমান ইবনে আবিল আস (রা.) বর্ণনা করেন, “যখন ছাকীফ গোত্রের প্রতিনিধিদল নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসল, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের মসজিদে থাকার ব্যবস্থা করে দিলেন। যেন তাদের দিল নরম হয়।” (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ৩০২০)
এই হাদিস ইসলামের দাওয়াতি দৃষ্টিভঙ্গিকে ফুটিয়ে তোলে, যেখানে অমুসলিমদের মসজিদে আসার সুযোগ দেওয়া হয় যাতে তারা ইসলামের মূল বার্তা উপলব্ধি করতে পারেন।
ফিকহি দৃষ্টিকোণ থেকেও ভিন্ন ভিন্ন মত রয়েছে। হানাফি মাজহাবের মতে, যদি কোনো প্রয়োজন থাকে এবং মুসলমানদের অনুমতি নেওয়া হয়, তাহলে অমুসলিমরা মসজিদে প্রবেশ করতে পারে।
ইমাম শাফেয়ি (রহ.)-এর মতে, অমুসলিমদের জন্য মসজিদুল হারামে প্রবেশ নিষেধ হলেও অন্যান্য মসজিদে তারা প্রবেশ করতে পারে। একই অভিমত পোষণ করেছেন ইমাম আহমদ (রহ.)। তিনি বলেন, হেরেম শরিফে অমুসলিমদের প্রবেশ নিষেধ, তবে অন্যান্য মসজিদে তাদের প্রবেশে বাধা নেই।
সব মিলিয়ে ইসলামী শরিয়তের দৃষ্টিতে, মসজিদের পবিত্রতা ও সম্মান বজায় রেখে, বিশেষ করে দাওয়াতি ও শিক্ষামূলক উদ্দেশ্যে, অমুসলিমদের মসজিদে প্রবেশ করার সুযোগ রয়েছে। তবে মসজিদুল হারাম ও হেরেম শরিফের ব্যাপারে রয়েছে কঠোর বিধিনিষেধ, যা সরাসরি কোরআনের আয়াত দ্বারা সমর্থিত।