
জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে চূড়ান্ত সমন্বয় বৈঠক করেছে, যেখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়। ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ জানান, প্রয়োজন অনুযায়ী এরপর পৃথকভাবে বিভিন্ন বাহিনীর সঙ্গে আরও বৈঠক করা হবে।
বৃহস্পতিবার ২৭ নভেম্বর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে সব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিবও এতে যোগ দেন।
আখতার আহমেদ জানান, নির্বাচনকালীন নিরাপত্তা কার্যক্রম নজরদারির মূল দায়িত্বে থাকবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তারা অন্যান্য নির্বাচনের মতো এবারও নীতিমালা ও দিকনির্দেশনা ঠিক করবে। আর সামগ্রিক সমন্বয় করবে নির্বাচন কমিশন। এ উদ্দেশ্যে একটি পর্যবেক্ষণ সেল গঠন করা হবে, যার আকার ও প্রতিনিধিত্ব অংশীদার সংস্থাগুলোর প্রস্তাব অনুযায়ী নির্ধারণ করা হবে।
তিনি বলেন, অপতথ্য মোকাবিলায় গণমাধ্যম ও অনলাইন প্ল্যাটফর্ম পর্যবেক্ষণের জন্য আলাদা সাইবার নিরাপত্তা সেল গঠন করা হবে। এখানে ইউএনডিপির প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের পাশাপাশি তথ্য মন্ত্রণালয়, সিআইডি এবং তথ্য যাচাই করতে সক্ষম অন্যান্য সংস্থার সহযোগিতা নেওয়া হবে।
যোগাযোগ কৌশল নিয়ে সচিবের ব্যাখ্যা, মাঠ পর্যায় থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত তথ্য প্রবাহ দুই দিক থেকেই সক্রিয় রাখা হবে। শুধু কেন্দ্রীয় নির্দেশনা নয়, তৃণমূলের তথ্যও উপরে এসে সিদ্ধান্ত গ্রহণে ভূমিকা রাখবে।
তিনি জানান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মোতায়েন পরিকল্পনা তিন ভাগে সাজানো হয়েছে। কেন্দ্রভিত্তিক নিরাপত্তা বিধান, বিভিন্ন স্থানে স্থায়ী ও অস্থায়ী চেকপোস্ট এবং মোবাইল ইউনিটের টহল নিশ্চিত করা হবে। কোন ইউনিট কতগুলো কেন্দ্র দেখবে, তা সংশ্লিষ্ট বাহিনী ভৌগোলিক অবস্থা ও সড়কযোগাযোগ বিবেচনায় ঠিক করবে। রিজার্ভ বাহিনী এবং প্রচলিত স্ট্রাইকিং ফোর্সও দ্রুত সাড়া দেওয়ার জন্য প্রস্তুত রাখা হবে। পাশাপাশি এনটিএমসি ও পূজাকালীন ব্যবহৃত সাইবার সুরক্ষা ব্যবস্থাও কাজে লাগানো হবে।
আলোচনায় অতিরিক্ত কিছু বিষয়েও জোর দেওয়া হয়েছে। সচিব বলেন, “সবসময় একটি বিকল্প পরিকল্পনা ('এ' কার্যকর না হলে) প্রস্তুত রাখতে হবে, যাতে একই সঙ্গে দুই-তিনটি জায়গায় সমস্যা হলে তা মোকাবিলা করা যায়।” পার্বত্য চট্টগ্রামের মতো দুর্বল নেটওয়ার্ক এলাকায় সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সহযোগিতায় ইন্টারনেট নিশ্চিত করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বডি-ওন ক্যামেরা যথাযথভাবে ব্যবহার এবং হারানো বা অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানোর নির্দেশনাও দিয়েছেন তিনি। সন্ত্রাসীদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে প্রয়োজনীয় হলে আইনের আওতায় আনার কথাও উল্লেখ করেন। বৈধ অস্ত্র ব্যবহারে পরিস্থিতিভেদে সিদ্ধান্ত হবে বলেও জানান তিনি।
সচিব বলেন, মাঠপর্যায়ে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি, বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন। সেনাবাহিনীর বিচারিক ক্ষমতা ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৬ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে এবং তারা প্রয়োজনে তা প্রয়োগ করবে। বিদেশ থেকে আসা পোস্টাল ভোটের নিরাপত্তাও বাড়ানো হবে, বিশেষ করে এয়ারপোর্ট ও তেজগাঁও ডাক বাছাই কেন্দ্রে দ্বিগুণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। বাছাই থেকে রিটার্নিং অফিসারের কাছে পৌঁছানো, সংরক্ষণ ও গণনা সব ধাপেই কড়া নজরদারি থাকবে।
রাজনৈতিক নেতাদের কাছ থেকে আপ্যায়ন গ্রহণ না করার স্পষ্ট নির্দেশনা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ে যানবাহন সংকট দেখা দিলে প্রয়োজন অনুযায়ী দপ্তরের গাড়ি অধিগ্রহণ বা ভাড়ায় ব্যবহারের জন্য বাহিনী বাস্তবসম্মত সমাধান দেবে।
ইসি সচিব বলেন, আচরণবিধি প্রথম দিন থেকেই সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে বাহিনীর সমন্বিত সহযোগিতা অপরিহার্য। নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব কোনো বাহিনী না থাকায় সব সংস্থার সমন্বিত প্রচেষ্টার ওপর ভরসা রাখতে হবে। তিনি জানান, বাহিনীগুলো আশ্বস্ত করেছে যে তারা শুরু থেকেই মাঠে কাজ শুরু করবে। কোনো সংস্থা নির্দিষ্ট চ্যালেঞ্জ তুলে না ধরলেও সবাই সম্ভাব্য যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকার কথা বলেছে।