
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি সক্রিয় হলেও আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ সহযোগী জাতীয় পার্টি এখনো ভোটে অংশ নেওয়ার বিষয়ে দ্বিধার মধ্যে রয়েছে।
যদিও সিদ্ধান্তে অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে, দলটি ইতিমধ্যেই প্রার্থী বাছাই ও নির্বাচনী প্রস্তুতির কাজ শুরু করেছে। দলের শীর্ষ নেতারা জানাচ্ছেন, শেষ পর্যন্ত যদি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অনুমতি পাওয়া যায়, তারা মাঠে সক্রিয়ভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে।
জাতীয় পার্টির প্রধান লক্ষ্য এককভাবে নয়, বরং জোটে নির্বাচন করা। সেই প্রেক্ষিতে দলটি বিএনপি অথবা জামায়াতে ইসলামীর যে কোনো এক দলের সঙ্গে জোটে যুক্ত হতে আগ্রহী।
দলের মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী বিবিসি বাংলাকে বলেন, "জোটবদ্ধভাবে নির্বাচনে অংশ নিলে সেক্ষেত্রে জাতীয় পার্টিরও যেমন আসন সংখ্যা বাড়বে, তেমনি যে দলের সাথে জোট হবে তাদেরও আসন ও ভোট বাড়বে।"
দলটি মনে করছে, ভোটে অংশ নেওয়া নিয়ে যেই অস্পষ্টতা আছে তা সম্ভবত তফসিল ঘোষণার পর পরিষ্কার হবে। এরপরই জোট বিষয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করা হবে।
নির্বাচন কমিশন আগামী বৃহস্পতিবার থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপ শুরু করবে। তবে জাতীয় পার্টিকে এই সংলাপে আমন্ত্রণ জানানো হবে কি-না, তা এখনো নিশ্চিত নয়।
জাতীয় পার্টি কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল হলেও দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে আলাদা কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং তা নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, দলটি যদি নিজের অভ্যন্তরীণ সমস্যা সমাধান করে কমিশনের দ্বারস্থ হয়, তখন ভোট ও সংলাপ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।
নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বিবিসি বাংলাকে বলেন, "তাদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কিছু সমস্যা আছে। এটা তারা ফয়সালা করলে কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে।"
জাতীয় পার্টির নির্বাচনী প্রস্তুতি
আগামী ডিসেম্বরেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। ইতিমধ্যেই বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী বিভিন্ন আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে এবং তাদের প্রচারণা শুরু হয়েছে।
জাতীয় নাগরিক পার্টিও প্রার্থী বাছাই শুরু করেছে এবং শিগগিরই তালিকা প্রকাশের কথা জানানো হয়েছে।
২০০৭ সালের পর আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ এবং দলটির নিবন্ধন স্থগিত হওয়ার কারণে তারা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। তবে জাতীয় পার্টি সরকারের নিষেধাজ্ঞার আওতায় নয় এবং তাদের নিবন্ধন বাতিল করা হয়নি। তাই দলটি এবার নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু করেছে।
জাতীয় পার্টির নেতারা জানিয়েছেন, ৩০০টি আসনে প্রার্থী বাছাই কার্যক্রম চলছে এবং কিছু আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদের।
শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, "প্রার্থী চূড়ান্ত করতে পার্টির চেয়ারম্যান অনেকের সাথে কথা বলেছেন। আমাদের একটা ছক আছে কোন আসন থেকে কে ভোট করতে পারেন। এ নিয়ে আমাদের প্রস্তুতি আছে। প্রার্থী ঘোষণা করতে আমাদের খুব বেশি সময় লাগবে না।"
যদিও ৩০০ আসনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে, তবে ভোটে অংশ নেওয়ার সুযোগ পেলেও সব আসনে প্রার্থী দেয়ার নয়। মি. পাটোয়ারী বলেন, "প্রাথমিকভাবে ৩০০ আসনেরই প্রস্তুতি নিচ্ছে জাতীয় পার্টি। সেটি এটা পর্যায়ে পৌঁছালে তারপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে কতগুলোতে ভোট করবো আমরা।"
জোটে অংশ নেওয়ার সম্ভাবনা
২০০৮ থেকে ২০২৪ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টি কখনো আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধ, কখনো আসন সমঝোতার ভিত্তিতে ভোটে অংশ নিয়েছে। তবে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর জাতীয় পার্টির অবস্থান কিছুটা সংকুচিত হয়ে গেছে।
দলের নেতারা বিভিন্ন সভা ও প্রেস রিলিজের মাধ্যমে নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ চেয়ে আসছেন। তাদের অভিমত, একক নির্বাচনের চেয়ে জোটবদ্ধভাবে ভোটে অংশ নেওয়া তাদের জন্য লাভজনক।
শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, "রাজনীতিতে শেষ বলে কিছু নেই। আমরা বুঝতে পারি অনেকে আমাদের সাথে জোট করতে আগ্রহী। আমরাও অনেকের সাথে জোট করতে আগ্রহী। এই মুহূর্তে জাতীয় পার্টি মনে করছে তারা যদি একক নির্বাচনের চাইতে জোটগতভাবে করে তাহলে তাদের আসন সংখ্যা যেমন বাড়তে পারে, তেমনি যে দলের সাথে জোট করবে তাদের আসনও বাড়তে পারে।"
জোটের সম্ভাব্য অংশীদার হিসেবে বিএনপি বা জামায়াতে ইসলামীকে উদাহরণ দিয়েছেন তিনি। যদিও শেষ পর্যন্ত কে সঙ্গে জোট করবে তা তফসিল ঘোষণার পর রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে।
সূত্র: বিবিসি বাংলা