
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কর্তৃক পেশ করা নতুন প্রস্তাবে কিছু অস্পষ্টতা রয়েছে বলে মনে করছে কাতার। একইসঙ্গে, এই প্রস্তাবটি নিয়ে আরও আলোচনার সুযোগ আছে বলেও জানিয়েছে দেশটির রাজধানী দোহা।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান আল থানি এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সাক্ষাৎকারে আল থানি বলেন: “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রস্তাবিত পরিকল্পনার মূল লক্ষ্য গাজায় যুদ্ধের অবসান; কিন্তু আমরা মনে করছি যে প্রস্তাবে কিছু ইস্যু রয়েছে; স্পষ্টতার স্বার্থে এগুলোর ওপর আলোচনা জরুরি। কারণ আমরা আশা করছি যে নতুন প্রস্তাবটি সবাই গঠনমূলকভাবে দেখবে এবং যুদ্ধ শেষ করার সুযোগটি কাজে লাগাবে।”
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গত ২৯ সেপ্টেম্বর সোমবার ওয়াশিংটনে তাঁর সরকারি বাসভবন হোয়াইট হাউসে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এরপর এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি ঘোষণা করেন যে, গাজায় যুদ্ধবিরতি সম্পর্কিত একটি নতুন প্রস্তাবের খসড়া চূড়ান্ত হয়েছে এবং ২০টি পয়েন্ট সম্বলিত এই প্রস্তাবটি যুদ্ধের সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর কাছে পাঠানো হয়েছে।
নতুন পরিকল্পনায় ট্রাম্প গাজার সরকারপ্রধান হিসেবে নিজের নাম এবং সরকারপ্রধানের সহযোগী হিসেবে যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের নাম প্রস্তাব করেছেন। এছাড়াও, এতে গাজায় বন্দি সকল ইসরায়েলি জিম্মিকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার এবং হামাসকে অস্ত্র সমর্পণ করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প আরও বলেন: “ইসরায়েল এবং আরব নেতারা আমার নতুন যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনাকে সমর্থন করেছেন। এখন আমরা হামাসের সাড়ার অপেক্ষা করছি। মতামত জানানোর জন্য তাদেরকে তিন থেকে চার দিন সময় দেওয়া হয়েছে।”
তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে আরও যোগ করেন: “এই সময়সীমার মধ্যেই হামাসকে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে এবং যদি তারা বিপক্ষে অবস্থান নেয়, তাহলে খুবই দুঃখজনক পরিণতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।”
হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন যে, যুদ্ধের অপর দুই মধ্যস্থতাকারী রাষ্ট্র মিসর এবং কাতারের মাধ্যমে হামাসের কাছে নতুন প্রস্তাবের অনুলিপি পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। হামাসকে নিজেদের অবস্থান জানাতে ট্রাম্প ৩ থেকে ৪ দিনের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন।
আল-জাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কাতারের প্রধানমন্ত্রী জানান যে, দোহা এই প্রস্তাব নিয়ে হামাস নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছে, তবে গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী এই সশস্ত্র গোষ্ঠীটি এখনও তাদের কোনো মতামত বা অবস্থান স্পষ্ট করেনি।
থানি আলজাজিরাকে বলেন: “কাতার ও মিসরের কর্মকর্তারা হামাসকে প্রস্তাবের কপি সরবরাহ করেছেন, বিভিন্ন পয়েন্টের ব্যাখ্যা দিয়েছেন, এ প্রস্তাবের মূল লক্ষ্য যে যুদ্ধের অবসান, তা ও বলেছেন; হামাস এখনও তাদের মতামত আমাদের জানায়নি।”
উল্লেখ্য, গাজায় হামাস ও ইসরায়েলি বাহিনীর মধ্যে চলমান সংঘাতে কাতারের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ২০২৩ সালের অক্টোবরে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে যে তিনটি দেশ উভয়পক্ষের মধ্যে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করছে, তাদের মধ্যে কাতার অন্যতম। বাকি দুটি দেশ হলো যুক্তরাষ্ট্র এবং মিসর।
সূত্র: আনাদোলু এজেন্সি