
আশ্রয় আবেদন বাতিল হওয়া অভিবাসীদের দ্রুত ফেরত পাঠানোর এবং কঠোর শাস্তির বিধান রেখে নতুন আইন পাস করেছে গ্রিস। বুধবার দেশটির সংসদে অনুমোদিত এই আইনের আওতায় কিছু বাংলাদেশি নাগরিককেও নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর পরিকল্পনা করছে দেশটি। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম রয়টার্স।
রিপোর্টে বলা হয়, চলতি বছর দক্ষিণ সীমান্ত দিয়ে গ্রিসে অনুপ্রবেশকারী অভিবাসীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় সরকার অভিবাসন নীতিতে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। বিশেষ করে লিবিয়া থেকে ক্রিট ও গাভদোস দ্বীপ হয়ে দেশটিতে আগতদের সংখ্যা বাড়তে থাকায় এই আইনটি পাস করা হয়।
২০১৫-২০১৬ সালের অভিবাসন সংকটে গ্রিস ছিল ফ্রন্টলাইনে। সে সময় যুদ্ধ ও দারিদ্র্যপীড়িত মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকা থেকে এক কোটির বেশি মানুষ ইউরোপে প্রবেশের জন্য গ্রিসকে পাড়ি জমিয়েছিল। পরবর্তীতে আগমনের হার কমে গেলেও ২০২৫ সালে আবার তা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে।
নতুন আইনে বলা হয়েছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিরাপদ দেশ হিসেবে বিবেচিত তৃতীয় দেশ থেকে আসা ব্যক্তিরা যদি অবৈধভাবে গ্রিসে প্রবেশ করেন এবং আশ্রয়ের অধিকার না রাখেন, তাহলে তাদের অবশ্যই নিজ দেশে ফিরে যেতে হবে। অন্যথায় তাদের কমপক্ষে ২৪ মাস আটক থাকতে হতে পারে এবং সর্বোচ্চ ১০ হাজার ইউরো পর্যন্ত জরিমানা গুনতে হবে।
এই আইন প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকোস মিৎসোটাকিসের নেতৃত্বাধীন রক্ষণশীল সরকারের অভিবাসন নীতিকে আরও কঠোর করার অংশ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ২০১৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই তার সরকার অভিবাসীদের প্রবেশ ঠেকাতে উত্তর সীমান্তে বেড়া নির্মাণ এবং সমুদ্রপথে নজরদারি বাড়িয়েছে।
মঙ্গলবার সংসদে অভিবাসনমন্ত্রী থানোস প্লেভরিস বলেন, “যারা দেশের নিরাপত্তা রক্ষা করতে চান, সেই গ্রিক নাগরিকদের অধিকারই অগ্রাধিকার পাবে। আশ্রয়ের আবেদন প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর যারা অবৈধভাবে গ্রিসে অবস্থান করছেন, তাদের অধিকার তার চেয়ে বেশি নয়।”
অন্যদিকে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর সতর্ক করে বলেছে, নতুন আইন আন্তর্জাতিক সুরক্ষা প্রয়োজন এমন অভিবাসীদের শাস্তির ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। সংস্থাটি দ্রুত আশ্রয় প্রক্রিয়া চালুর মাধ্যমে শরণার্থী ও অশরণার্থীদের পৃথকভাবে শনাক্ত করার সুপারিশ করেছে।
গ্রিস সরকার জানিয়েছে, জুলাইয়ে আশ্রয় আবেদন সাময়িকভাবে স্থগিত করার পর শত শত অনিয়মিত অভিবাসীকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং মিসরের অভিবাসীদের ফেরত পাঠাতে আরও ফ্লাইট পরিচালনার পরিকল্পনা রয়েছে।
তবে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো অভিযোগ করছে, গ্রিস সরকার স্থল ও সমুদ্রপথে আশ্রয়প্রার্থীদের জোরপূর্বক ফিরিয়ে দিচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সীমান্ত সংস্থা জানিয়েছে, গ্রিসের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য মানবাধিকার লঙ্ঘনের ১২টি ঘটনায় তদন্ত চলছে।
সূত্র: রয়টার্স