
শেখ হাসিনা দীর্ঘ ৪৪ বছরেরও বেশি সময় ধরে আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। একাধিকবার তিনি নেতৃত্ব ছাড়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন, কিন্তু দলের ভবিষ্যৎ ও উত্তরাধিকার সম্পর্কে কখনো প্রকাশ্যে মুখ খোলেননি।
গত বছরের ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর আওয়ামী লীগ কার্যত তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়েছিল। বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকার দলটির কার্যক্রমও কঠোরভাবে সীমিত করেছে। বর্তমানে শেখ হাসিনা ভারতে অবস্থান করছেন, যেখানে তার রাজনৈতিক কার্যক্রম নানা বিধিনিষেধের মধ্যে সীমাবদ্ধ।
বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা তার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় এবং কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল–দুইজনকেই দলের শীর্ষ নেতৃত্বে সক্রিয় করার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছেন। পাশাপাশি রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক (ববি)-এরও একটি ভূমিকা থাকবে।
প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়েছে, ভারতের কংগ্রেস দল যখন রাহুল গান্ধী ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে নেতৃত্বে নিয়ে ‘মডেল’ অনুসরণ করছে, আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রেও শেখ হাসিনা তার ছেলেমেয়েকে সামনে আনতে একই কৌশল প্রয়োগ করতে চাইছেন।
সায়মা ওয়াজেদ ইতিমধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) থেকে অনির্দিষ্টকালের ছুটিতে গিয়েছেন এবং সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছেন। তিনি মায়ের সঙ্গে একই শহরে থাকায়, ভাষণ খসড়া তৈরি ও কর্মসূচি নির্ধারণে সরাসরি সহায়তা করছেন।
অন্যদিকে, সজীব ওয়াজেদ এখন মার্কিন নাগরিক ও স্থায়ী বাসিন্দা হলেও তিনি মা শেখ হাসিনার প্রধান মুখপাত্র ও দলের প্রতিনিধিত্ব করছেন। দেশ-বিদেশের মিডিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎকারও দিচ্ছেন তিনি।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আরাফাত জানিয়েছেন, দলের ভেতরে এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে উত্তরাধিকার নিয়ে আলোচনা হয়নি। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রধান লক্ষ্য এখন বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা। দলের নেতা-কর্মীরা সেই লক্ষ্যেই একত্রে কাজ করছেন।’
বিবিসি জানায়, শেখ হাসিনা দলের পরিচালনায় কিছু পরিবর্তন এনেছেন। বর্তমানে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এই নতুন কাঠামোয় তুলনামূলকভাবে কম ভূমিকা রাখছেন। বরং কলকাতায় অবস্থানরত তিন নেতা– সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, ঢাকা-৮ আসনের সাবেক এমপি আ.ফ.ম. বাহাউদ্দিন নাসিম, এবং সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক এমপি জাহাঙ্গীর কবির নানক–এর ওপর বেশি ভরসা রাখছেন তিনি।
শেখ হাসিনার এই পরিকল্পনা অনুযায়ী, তার ছেলেমেয়ে ও ঘনিষ্ঠ নেতারা মিলিতভাবে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব ও কার্যক্রমে ভূমিকা রাখবেন।
সূত্র: বিবিসি বাংলা