
বিএনপির সঙ্গে বৈঠকের পর হেফাজতও দ্রুত নির্বাচন চায়
বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির সঙ্গে বৈঠক করেছেন হেফাজতে ইসলামের নেতারা। শনিবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ বৈঠক হয়। হেফাজত নেতারা জানিয়েছেন, বিএনপির মতো তারাও দ্রুত নির্বাচন চান। বৈঠকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ ছিলেন। হেফাজতের মহাসচিব মাওলানা সাজেদুর রহমান, নায়েবে আমির ড. আহমদ আবদুল কাদের, যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক, মাওলানা মহিউদ্দিন রব্বানী, মাওলানা বাহাউদ্দিন জাকারিয়া, মাওলানা জুনাইদ আল হাবিব, মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, মুফতি মনির হোসাইন কাসেমী বৈঠকে অংশ নিয়েছেন। মহিউদ্দিন রব্বানী জানিয়েছেন, হেফাজত নেতাদের বিরুদ্ধে ২০১৩ এবং ২০২১ সালে দায়ের মামলা, নির্বাচন, আওয়ামী লীগের বিচার এবং সংবিধান সংস্কার নিয়ে কথা হয়েছে বৈঠকে। হেফাজত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে থাকা মামলা প্রত্যাহারের দাবি বিএনপিও তুলবে বলে আশ্বস্ত করেছে। ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠিত হেফাজত অরাজনৈতিক সংগঠন হলেও কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, নেজামে ইসলাম, খেলাফত আন্দোলন, ইসলামী ঐক্যজোটের নেতারা হেফাজতেরও নেতৃত্বে রয়েছেন। খেলাফত, জমিয়ত, ইসলামী ঐক্যজোট এক সময়ে বিএনপির জোটে থাকলেও দলগুলোর নেতারা আওয়ামী লীগ আমলে হেফাজত সংশ্লিষ্ট মামলায় পড়ার পর বেরিয়ে যায়। আগামী নির্বাচনে ধর্মভিত্তিক দলগুলোকে কাছে টানতে বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামী। এ সময়ে বিএনপির নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে মহিউদ্দিন রব্বানী সমকালকে বলেছেন, বিএনপি দ্রুত নির্বাচন চায়, হেফাজতও তাই চায়। হেফাজতের ব্যানারে কেউ নির্বাচনে অংশ নেবে না। তবে সংগঠনের নেতারা নিজ নিজ দলের হয়ে নির্বাচন করবেন। একটি বৃহত জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্বকারী হিসেবে হেফাজতও মনে করে, যত দ্রুত নির্বাচন হবে ততই ভালো। নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে সরকার একেক সময় একেক কথা বলায় অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছে। সংবিধান সংস্কার কমিশন সংবিধানের মূলনীতিতে ধর্মনিরপেক্ষতার পরিবর্তে বহুত্ববাদ যুক্ত করার প্রস্তাব করেছে। বিএনপি জিয়াউর রহমানের শাসনামলে সংবিধানে যুক্ত করা ‘আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাসকে’ ফের মূলনীতি হিসেবে চায়। মহিউদ্দিন রব্বানী বলেছেন, হেফাজতও বহুত্ববাদ ‘আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাসকে’ মূলনীতিতে চায়। জামায়াতের সমালোচক হেফাজত আগামী নির্বাচনে বিএনপিকে সমর্থন করতে বলে গুঞ্জন রয়েছে। এর জবাবে মহিউদ্দিন রব্বানী বলেছেন, যারা হেফাজতের ১৩ দফাকে সমর্থন করবে, তাদেরকেই হেফাজত সমর্থন করবে।

আগে স্থানীয় নির্বাচন হওয়া দরকার: রেজাউল করিম
জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, জামায়াতে ইসলামীর দাবি অনতিবিলম্বে জাতীয় নির্বাচন। সেটির জন্য এ বছরের শেষে বলা আছে। আমরা এর আগেই দাবি করি স্থানীয় নির্বাচন হওয়া দরকার। এজন্য আমরা মেয়রসহ কাউন্সিলর প্রার্থী দিয়ে দিয়েছি। তিনি আরও বলেন, জামায়াতের মেম্বার-চেয়ারম্যান প্রার্থীরা কাজ করছেন। জাতীয় সরকার আইন প্রণয়ন করবে। কিন্তু জনগণের সেবা দেওয়ার জন্য জনপ্রতিনিধি অর্থাৎ স্থানীয় সরকারের কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু সেগুলো ভেঙে পড়ার কারণে আমরা মনে করি স্থানীয় নির্বাচন হওয়া প্রয়োজন। শনিবার (৫ এপ্রিল) রাত ৮টার দিকে লক্ষ্মীপুর পৌরসভার সমসেরাবাদ মনসা বাড়ির সামনে আয়োজিত শ্রী শ্রী বাসন্তী দুর্গোৎসব পরিদর্শনকালে এসব কথা বলেন রেজাউল করিম। জামায়াত নেতা রেজাউল করিম বলেন, ‘আমরা চাচ্ছি সম্প্রীতির একটি বাংলাদেশ। আগামী দিনে ভোটের মাধ্যমে জনগণের সরকার আসবে। মসজিদ যদি পাহারা দিতে না হয়, মন্দির কেন পাহারা দিতে হবে? আমরা সেরকম একটি সহনশীল সম্প্রীতির বাংলাদেশ চাই।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে সংখ্যালঘু বলতে কেউ আছে আমরা বিশ্বাস করি না। আমরা এ দেওয়ালটাকে অতিক্রম করতে চাই। দেশের সব নাগরিকেরই সমান অধিকার। তাই সংখ্যালঘু আর সংখ্যাগুরু বলতে কোনো কিছু নেই।’ এসময় উপস্থিত ছিলেন লক্ষ্মীপুর পৌর জামায়াতের আমির অ্যাডভোকেট আবুল ফারাহ নিশান, মন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি দেবজিৎ নাথ, সাধারণ সম্পাদক ঝন্টু দেবনাথ, বিশ্বজিৎ সাহা প্রমুখ।

গুলশানে হেফাজত নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে মির্জা ফখরুল
গুলশানে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নেতাদের সঙ্গে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বৈঠক চলছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান। শনিবার (৫ এপ্রিল) রাত ৮টা ১০ মিনিটে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বৈঠকে মির্জা ফখরুল ছাড়াও বিএনপি নেতাদের মধ্যে উপস্থিত রয়েছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। অপরদিকে হেফাজতের মহাসচিব মাওলানা সাজেদুর রহমানের নেতৃত্বে উপস্থিত রয়েছেন ড. আহমদ আবদুল কাদের, মাওলানা মাহফুজুল হক, মাওলানা মহিউদ্দিন রব্বানী, মাওলানা বাহাউদ্দিন জাকারিয়া, মাওলানা জুনাইদ আল হাবিব, মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী ও মুফতি মনির হোসাইন কাসেমী।

জনগণ দ্রুত একটি নির্বাচন দেখতে চায়: আমিনুল হক
বাংলাদেশের জনগণ দ্রুত একটি অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দেখতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা মহানগর উত্তর আহ্বায়ক আমিনুল হক। শনিবার (৫ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানী পল্লবীর কালশী ইসলামিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে নতুন ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম পরিদর্শনকালে তিনি এ মন্তব্য করেন। আমিনুল হক বলেন, আমরা আশা করি, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই বাংলাদেশে একটি অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। এতে নতুন ও পুরাতন ভোটার নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করবে। তিনি বলেন, বিগত ১৫ বছরে স্বৈরাচার আওয়ামী সরকারের সময়ে কেউ ভোট দিতে পারেনি। এবার মানুষ ভোট দেওয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। নতুন ভোটারদের প্রতি শুভকামনা ও শুভেচ্ছা জানিয়ে আমিনুল হক বলেন, ভোটার হওয়া হচ্ছে একজন নাগরিকের অধিকার। সেই অধিকার অবশ্যই তাকে প্রয়োগ করতে দিতে হবে। বিএনপির এই নেতা বলেন, আমরা আশা করি— আগামী ডিসেম্বরে বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। যার মাধ্যমে জনগণ নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করবে। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন— ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি যুগ্ম আহ্বায়ক গাজী রেজাউনুল হোসেন রিয়াজ, মাহাবুব আলম মন্টু প্রমুখ।

চলতি বছরের মধ্যে নির্বাচন না দিলে আদায় করে নেওয়া হবে : ইশরাক
২০২৫ সালের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন না দিলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা নির্বাচন আদায় করে নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা কমিটির বিশেষ সহকারী ইশরাক হোসেন। শনিবার (৫ এপ্রিল) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ হুঁশিয়ারি দেন। পোস্টে অন্তর্বর্তী সরকারে থাকা ছাত্র প্রতিনিধিদের অবিলম্বে পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সরকারে থাকা ছাত্র প্রতিনিধিদের অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে। অন্যথায় নির্বাচনকালীন সময়ে অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত হবে না।

ড. ইউনূস-মোদীর বৈঠক দুই দেশের জন্য আশার আলো: ফখরুল
বাংলাদেশ ও ভারতের সরকার প্রধানের মধ্যকার বৈঠককে দুই দেশের জন্য ‘আশার আলো’ হিসেবে দেখছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শুক্রবার (৪ এপ্রিল) সন্ধ্যায় গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এমন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন তিনি। মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘বিমসটেকে সাইডলাইন বৈঠক হয়েছে। এটা (বৈঠক) খুব আনন্দের কথা। আমরা মনে করি, ভূ-রাজনীতি এবং বর্তমান বিশ্ব রাজনীতির যে প্রেক্ষাপট এবং বাংলাদেশ-ভারতের এই অঞ্চলের যে প্রেক্ষাপট, সেই প্রেক্ষাপটে আমাদের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বৈঠক আমাদের সামনে একটা আশার আলো তৈরি করছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘ভারত এবং বাংলাদেশের সম্পর্কের মধ্যে যে একটা বিটারনেস (তিক্ততা) তৈরি হয়েছিল, সেই তিক্ততা যেন আর বেশি সামনে না যায়। অথবা এটা যেন কমে আসে- সেখানে একটা সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে।’ বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমি যতদূর দেখেছি তাতে মনে হয়েছে এই ব্যাপারে দুইজনই যথেষ্ট আন্তরিক। এটা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের মানুষকে এবং ভারতের মানুষকে…, দুই দেশের মানুষের উপকার করবে।’ এর আগে আজ শুক্রবার স্থানীয় সময় দুপুরে ব্যাংককে বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রথম দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়। আধা ঘণ্টার এ বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণসহ বিভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় তুলে ধরা হয়। এদিন সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার আগে ক্রীড়াঙ্গনে কর্মকর্তা, সংগঠন এবং ক্রীড়াবিদদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন বিএনপি মহাসচিব। গুলশানে চেয়ারপারসনে কার্যালয়ে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে সংগঠন ও ক্রীড়াবিদদের মধ্যে ছিলেন মাহবুবুল আনাম, রফিকুল ইসলাম বাবু, রুম্মন বিন ওয়ালি সাব্বির, নিয়ামুর রশীদ রাহুল, মো. আশরাফুল, হাবিবুল বাশার সুমন, রিয়াজ আহমেদ, ইমতিয়াজ আহমেদ নকীব, আবু দাউদ শামসুদ্দোজা চৌধুরী ডন, মাইশিকুর রহমান রিয়াল, ফাহিম সিনহা, কাজী মহিউদ্দিন বুলবুল, সেলিম শাহেদ, সৈয়দ বোরহানুল হোসেন পাপ্পু, আকরাম হোসেন সবুজ, ইব্রাহিম খলিল প্রমুখ। এ সময় মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল হক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শরীফুল আলম উপস্থিত ছিলেন।

অনেকেই ভেবেছিল হবার নয়, প্রফেসর ইউনূস করে দেখালেন: তাসনিম জারা
রোহিঙ্গাদের ১ লাখ ৮০ হাজার নিজ দেশে ফেরত যাওয়া প্রসঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম জারা বলেছেন, ‘অনেকেই ভেবেছিল এটা হবার নয়, কিন্তু প্রফেসর ইউনূস ঠিক সেটাই করে দেখালেন।’ শুক্রবার (৪ এপ্রিল) ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড আইডিতে এক পোস্টে তিনি এ মন্তব্য করেন। পোস্টে তিনি লেখেন, ‘বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মধ্য থেকে ১ লাখ ৮০ হাজার মানুষ নিজ দেশে ফিরে যেতে পারবেন। মোট ৮ লাখের তালিকা থেকে এই প্রথম নিশ্চিতভাবে কিছু মানুষের ফেরার যোগ্য বলে জানিয়েছে মিয়ানমার। চূড়ান্ত যাচাই-বাছাইয়ের পর্যায়ে আছে আরও ৭০ হাজার রোহিঙ্গা।’ প্রধান উপদেষ্টার প্রশংসা করে তাসনিম জারা লেখেন, ‘অনেকেই ভেবেছিল এটা হবার নয়, কিন্তু প্রফেসর ইউনূস ঠিক সেটাই করে দেখালেন। যে দরজা একসময় শক্ত করে বন্ধ ছিল, আজ সেটা একটু হলেও খুলেছে। এটা আমাদের জন্য আশার খবর।’ মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর জানিয়েছে, এর আগে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ৮ লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে প্রথম ধাপে প্রত্যাবাসনের জন্য ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা যোগ্য বলে জানিয়েছে মিয়ানমারের জান্তা সরকার। তারা জানিয়েছে, আরও ৭০ হাজার রোহিঙ্গা চূড়ান্ত যাচাই-বাছাইয়ের পর্যায়ে রয়েছে।

‘সাকিব-মাশরাফি জাতির সঙ্গে প্রতারণা করেছে’
সাকিব আল হাসান ও মাশরাফি বিন মুর্তজা জাতির সঙ্গে প্রতারণা করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ক্রীড়া সম্পাদক ও ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমিনুল হক। সম্প্রতি গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে এ মন্তব্য করেন তিনি। আমিনুল হক বলেন, ‘তারা তো সুবিধাবাদী। তারা রেডিমেড অবৈধ সংসদের সদস্য হয়ে জাতির সঙ্গে প্রতারণা করেছে। আমি ২০১৪ সালের ৫ মার্চ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের একজন কর্মী হিসেবে যোগদান করেছি। সেসময় থেকে আজ পর্যন্ত দলের প্রত্যেকটি কর্মসূচিতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেছি।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের দাবি এ দেশে জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য রাজপথ থেকে আন্দোলন করেছি, সংগ্রাম করেছি। আমি বারবার জেল খেটেছি। শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছি। আমার পরিবারের ওপর নির্যাতন করেছে। সারা বাংলাদেশের মানুষের ওপর নির্যাতন হয়েছে। কিন্তু আপনারা যে দুইজন ক্রিকেটারের কথা বললেন তারা তো সুবিধাবাদী।’ আমিনুল হক বলেন, ‘তারা রাজনীতিতে তৃণমূল থেকে উঠে আসেনি। তারা আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে গড়ে ওঠেনি। তারা জেল খাটেনি। তাদের সঙ্গে আমাকে মেলালে ঠিক হবে না।’

ইউনূস-মোদি বৈঠক নিয়ে বিএনপির কী প্রতিক্রিয়া, জানালেন মির্জা আব্বাস
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বৈঠককে বিএনপি ইতিবাচক হিসেবে দেখছে বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। শুক্রবার (৪ এপ্রিল) বিকেলে রাজধানীর শাহজাহানপুরে নিজ বাসায় গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা জানান।মির্জা আব্বাস বলেন, ‘ইউনূস-মোদি বৈঠককে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে বিএনপি। তবে যদি দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট আলোচনা হয়, তবে সেটা ভালো। সামনে ড. ইউনূস আরও ভালো কিছু বয়ে আনবেন বলে প্রত্যাশা করি।’তবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, শুধু শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠালেই হবে না। হাসিনার সঙ্গে তার সহযোগীদেরও পাঠাতে হবে। শেখ হাসিনার ফেরতের মাধ্যমে তার বিচার হতে হবে।‘এছাড়া তিস্তা নিয়ে কোনো কথা হবে না, কিসের আলোচনা! চুক্তি পূরণ করতে হবে ভারতকে। হাসিনার আমলে যেসব অসম চুক্তি হয়েছে, তা বাতিল করতে হবে। সীমন্ত হত্যা বন্ধ করতে হবে।’এ সময় নির্বাচন প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, ‘নানা রকম কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু এই সরকারকে নির্বাচন দিতে হবে। নির্বাচন না দিয়ে এই সরকারের কি করার আছে? নির্বাচিত ছিল না বলেই হাসিনাকে সরে যেতে হয়েছে। তিনি পালিয়েছেন। সেখানে ড. ইউনূসের নির্বাচন না করার তো কোনো কারণ নেই।’তিনি বলেন, ‘কচু বাগানে শুকরের উপদ্রব শুরু হয়েছে। জারজ মিল্টন গালি দিয়েছে আব্বাসকে, সেটা সমর্থন দিয়েছে পিনাকী। জঘন্য ভাষায় গালি দেয়া কোনো ভদ্র লোকের মানায় না। তারা যা খুশি তাই করছে। এই পিনাকীরা সবাইকে ধরবে, ড. ইউনূসকেও তারা ধরবে। যারা ভারতকে ভালোবাসে তারাই বাংলাদেশকে ভালো থাকতে দেবে না। তারা দেশের কোনো সরকারকে কখনোই স্থিতিশীল থাকতে দেবে না।’তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপি সংস্কার ও নির্বাচন দুটির পক্ষেই। তবে কোনো সংস্কার যা জনগণের স্বার্থের বাইরে থাকবে তা মেনে নেয়া হবে না।’

আগে ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা, বিএনপিতে পেলেন সদস্যসচিবের পদ
ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার তেঘরিয়া ইউনিয়নের বিএনপির কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। কমিটিতে খোরশেদ আলম জমিদারকে আহ্বায়ক ও সামিউল্লাহকে সদস্যসচিব করা হয়েছে। গত ২০ মার্চ দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরী ও সম্পাদক মোজাদ্দেদ আলী বাবুর স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটিতে সামিউল্লাহকে তেঘরিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সদস্যসচিবের পদ দেখে ক্ষোভে ফেটে পড়েন নেতাকর্মীরা। তেঘরিয়া ইউনিয়ন বিএনপির নেতাকর্মীরা বলেন, ‘সামিউল্লাহ আওয়ামী লীগের লোক ছিলেন। তার সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু সঙ্গে ওঠাবসা ছিল। এমনকি বিপু সামিউল্লাহর বাসায় বেড়াতে আসতেন। সে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অর্থ দিয়ে সহায়তা করতেন।’ এ ছাড়া দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদের পক্ষে তিনি নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছেন। আওয়ামী লীগের নানা কর্মসূচিতে অংশ নিতেন তিনি। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর হঠাৎ বিএনপির লোক বনে যান সামিউল্লাহ। নতুন কমিটিতে সামিউল্লাহ নাম দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক এক যুবদল নেতা বলেন, ‘মাঠে লড়াই-সংগ্রাম করি আমরা। হঠাৎ কেউ এসে সাধারণ সম্পাদক পদ পেলে তা মেনে নেওয়া যায় না। ৫ আগস্টের পরে জন্ম নেওয়া কোনো নেতা তেঘরিয়া ইউনিয়নে রাজনীতি করতে পারবেন না। যিনি আওয়ামী লীগের এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যানকে জয়ী করতে মাঠে-ময়দানে নৌকা ও আনারসের জন্য ভোট ডাকাতি করতে পারেন, তিনি কীভাবে ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হন। দীর্ঘ পৌনে ১৬ বছর আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে আমাদের নেতাকর্মীরা রাজনীতি করেছেন। সেখানে আওয়ামী লীগের সঙ্গে মিশে গিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের ক্ষতিসাধন করা ব্যক্তিকে যদি সাধারণ সম্পাদক করা হয়, তাহলে বিষয়টি উচিত হয়নি। সাধারণ সম্পাদক করার জন্য কি বিএনপির লোকের অভাব হয়েছে?’ অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সামিউল্লাহ বলেন, ‘আমি দীর্ঘ দিন বিএনপির রাজনীতি সঙ্গে জড়িত ছিলাম। আমি কখনোই আওয়ামী লীগ করিনি। একটা এমপি যদি আমার বাসায় আসে তাহলে অবশ্যই তাকে সম্মান করতে হবে। বিপু যখন আমার বাসায় আসেন তখন তার সঙ্গে ছবি তোলা হয়। কিছু কুচক্রীমহল এই ছবি দিয়ে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।’ এ বিষয়ে জানতে চাইলে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা বিএনপি সভাপতি নিপুণ রায় চৌধুরীর মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়ায় তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। অপরদিকে সাধারণ সম্পাদক মুয়াদ্দেদ আলী বাবুকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি সাড়া দেননি।

ভারতে পাশকৃত ওয়াকফ বিল মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন: ইসলামী আন্দোলন
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব শেখ ফজলে বারী মাসউদ বলেছেন, ‘ভারতে সদ্য পাশকৃত ওয়াকফ বিল মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। মুসলিমদের সম্পত্তিতে সরাসরি হস্তক্ষেপের জন্যই ওয়াকফ বিল পাস করেছে বিজেপি সরকার। এটা ভারতের সংবিধানের মূলনীতির পরিপন্থী। মুসলমানদের প্রতি অবিচার। যা কথিত ধর্মনিরপেক্ষাতারও বিরুদ্ধে। ভারতে এটা নতুন করে আবারও প্রমাণিত হলো ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ মানুষের অধিকার হরণ করে। এ আইনের মাধ্যমে মুসলিমদের স্বার্থকে অবমূল্যায়ন করা হবে।’ ভারতে ওয়াকফ বিল পাশের প্রতিক্রিয়ায় শুক্রবার (৪ এপ্রিল) গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন। বিবৃতিতে ফজলে বারী আরো বলেন, ‘দাবী সংস্কারের নামে মুসলমানদের সম্পত্তিতে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চায় মোদি সরকার। নতুন করে দাঙ্গা বাধিয়ে মুসলমানদের হত্যার জন্য ব্যাপক বিরোধিতা সত্যেও বিলটি পাশ করেছে বিজেপি সরকার। অনতিবিলম্বে এই বিল বাতিল করতে হবে।’

পরাজিত শক্তি নিউইয়র্ক টাইমসে মিথ্যা তথ্য দিয়ে রিপোর্ট করিয়েছে: রিজভী
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘পরাজিত শক্তি নিউইয়র্ক টাইমসে মিথ্যা তথ্য দিয়ে রিপোর্ট করিয়েছে। ফ্যাসিবাদের দোসররা হাজার হাজার কোটি অবৈধ টাকার মালিক। তাদের অবৈধ টাকা ব্যবহার করে বাংলাদেশকে কলঙ্কিত করার চেষ্টা করছে।’ বুধবার (২ এপ্রিল) নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সাংবাদিকদের আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, ‘বাংলাদেশে উগ্রবাদের কোনও উত্থান ঘটেনি। বরং বর্তমানে বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদের কোনও ছোবল নেই, মানুষ নির্বিঘ্নে ধর্মপালন করছে, কথা বলতে পারছে। নির্ভয়ে ঈদ পালন করেছে, ফ্যাসিবাদের দৌরাত্ম ছিল না। বিগত দিনে কেউ স্বস্তিতে ঈদ উদযাপন করতে পারেনি। শেখ হাসিনার আমলে যা সম্ভব ছিল না।’ তিনি আরো বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী অপতথ্য ছড়াচ্ছে আওয়ামী লীগের দোসররা। শেখ হাসিনা জঙ্গি দমনের নামে যে নাটক করেছেন সেটা তিনি বিশ্ববাসীকে দেখিয়েছেন। এটা ক্ষমতায় টিকে থাকতে তার রাজনৈতিক কৌশল ছিল। একজন সাবেক আইজিপির বইয়েও তা ওঠে এসেছে।’ রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বসে নেই। কালো টাকা খরচ করছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে। আওয়ামী লীগ অবৈধ টাকা অর্জন করে বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। আওয়ামী লীগ অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকাণ্ড করছে।’ বিএনপির এই কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, ‘শেখ হাসিনার নির্দেশে যেভাবে মুগ্ধ ফাইয়াজদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে সে বিষয়ে তার কোনও বক্তব্যে অনুতপ্ততা নেই। অস্থিরতা তৈরি করতে দেশকে ঘোলাটে করার চেষ্টা করছেন বিদেশে পালিয়ে থাকা আওয়ামী লীগের নেতারা। প্রশাসনের চারদিকে আওয়ামী লীগের দোসররা বসে আছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘কিছু উপদেষ্টা বিএনপির বিরুদ্ধে বিষােদগার করছেন। ষড়যন্ত্রমূলকভাবে বিএনপির বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছেন। একজন উপদেষ্টা ২০০৭ সালেও বিএনপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছিলেন। তিনি এবারও তা করছেন। মেহেরপুরে পেঁয়াজের দাম না পেয়ে একজন কৃষক আত্মহত্যা করেছেন। উপদেষ্টারা সেগুলো নিয়ে কথা বলছেন না। তারা সিন্ডিকেট ভেঙে দিলে কৃষক তার পণ্যের ন্যায্য মজুরি পেত।’ গত দুই দিনে সড়কে ২০-২৫ জন প্রাণ হারিয়েছে উল্লেখ করে রিজভী বলেন, ‘প্রশাসন শক্তভাবে কাজ করলে এতো লোক সড়কে প্রাণ হারাতো না।’ নির্বাচন নিয়ে গড়িমসি সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য নয় উল্লেখ করে রিজভী বলেন, ‘নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ স্পষ্ট না করলে ধোঁয়াশা তৈরি হবে।’ ড. ইউনূসকে এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

সবাই মিলে ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে: খালেদা জিয়া
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘আগামীতে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। একে অপরকে সহযোগিতা করতে হবে। সবাই মিলে ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’ পবিত্র ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা জানিয়ে সোমবার (৩১ মার্চ) বাংলাদেশ সময় রাত ৯টায় লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে দেশবাসী ও দলীয় নেতাকর্মীদের ঈদের শুভেচ্ছা জানান খালেদা জিয়া ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বক্তব্য রাখার অনুরোধ করেন। সবার উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, ‘আপনাদের এত ত্যাগ ও সংগ্রাম বৃথা যায়নি এবং যাবে না। দেশবাসীর ভোটাধিকার সবাই মিলে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।’ তিনি দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানান। দীর্ঘ দিন পর সবাইকে এভাবে পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি। এ সময় আগামীর পথচলায় দেশবাসীর দোয়া ও আল্লাহর সাহায্য কামনা করেন। শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে আরো অংশগ্রহণ করেন স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু, এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, যুগ্ম-মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, আবদুল আউয়াল মিন্টু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এস এম ফজলুল হক, গাজীপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কে এম ফজলুল হক মিলন, জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের আহ্বায়ক আফরোজা আব্বাস, সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি জয়নাল আবেদীন, ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু।

আ.লীগ ও দিল্লির প্রশ্নে দেশের মানুষ কোন আপস করবে না: নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী
চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ থানার শহীদ পরিবারের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী। সোমবার (৩১ মার্চ) বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে তিনি শহীদদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এছাড়াও ঈদের উপহার সমগ্রী ও আর্থিক সহায়তা দেন। নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী বলেন, ‘আমাদের যুদ্ধের স্পৃহা শহীদ পরিবার। আমরা শহীদ পরিবারের রক্তের শপথ নিয়ে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ যে আওয়ামী লীগ ও দিল্লির প্রশ্নে বাংলাদেশের মানুষ কোনো আপস করবে না। যারাই আপস করতে আসবে তাদের বিরুদ্ধেও আমাদের লড়াই চলমান থাকবে।’ এ সময় জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক মাহাবুব আলম, সদস্য সাইফুল ইসলামসহ স্থানীয় প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

৩১ দফা ফলো করা হলে সংস্কারের অন্য কিছু প্রয়োজন নেই: আব্বাস
৩১ দফা যদি ফলো করা হয় তাহলে সংস্কারের অন্য কিছু প্রয়োজন নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সোমবার (৩১ মার্চ) ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে কমলাপুর রেলস্টেশনে হতদরিদ্র পথচারীদের মধ্যে খাবার বিতরণ কর্মসূচি শেষে তিনি এ সব কথা বলেন। মির্জা আব্বাস বলেন, ‘কত দিন নির্বাচন ছাড়া থাকা যাবে? অনেকে বলেন, সংস্কারের কথা বললে বিএনপির মাথা খারাপ হয়ে যায়। আমি বলবো যারা এ কথা বলেন তাদেরই মাথা খারাপ হয়ে যায়।’ তিনি বলেন, ‘৩১ দফা যদি ফলো করা হয়। তাহলে সংস্কারের অন্য কিছু প্রয়োজন নেই। এখানে সবকিছু আছে।’ মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আমি এককভাবে জানতে চাই, এই সরকারের সংস্কার প্রস্তাব কোন রাজনৈতিক দল এককভাবে মেনে নিয়েছে?’ এই বিএনপির নেতা বলেন, ‘যেটা বাংলাদেশে চলে না এ রকম অচল কিছু প্রস্তাব তারা দিয়েছে। আমরা সচল প্রস্তাব দিয়েছি, যে প্রস্তাব বাংলাদেশের মানুষের জন্য গ্রহণযোগ্য হবে।’ নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার করে দ্রুত নির্বাচন দেওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেন আব্বাস। এ সময় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনু, যুগ্ম আহ্বায়ক ফরহাদ হোসেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শ্রমিক দলের সদস্যসচিব বদরুল আলম সবুজসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

তিন এজেন্ডা নিয়ে এগোচ্ছি, দোষীদের বিচার প্রধান: নাহিদ ইসলাম
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) তিনটি এজেন্ডা নিয়ে এগোচ্ছে বলে জানিয়েছেন দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। এর মধ্যে দোষীদের বিচার নিশ্চিত করা প্রধান এজেন্ডা বলে জানান তিনি। সোমবার (৩১ মার্চ) রাজধানীর বাংলামোটরে এনসিপি কার্যালয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় এনসিপির কেন্দ্রীয় ও বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘আমাদের পার্টি ঘোষণার পরই পবিত্র রমজান মাস শুরু হওয়ায় সাংগঠনিক কার্যক্রম সেভাবে গতি পায়নি। সামনে পার্টির সাংগঠনিক কার্যক্রম আরও গতিশীল হবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘এবারের ঈদ কয়েকটি দিক থেকে আলাদা। প্রথমত স্বৈরাচারমুক্ত প্রথম ঈদ পালন করছেন দেশবাসী। আশা করছি এই সম্প্রীতি সারাবছর বহাল থাকবে। অনেক শহীদ পরিবার তাদের সদস্যদের ছাড়া ঈদ পালন করছে, যা তাদের জন্য খুব কষ্টের। আমরা সেই পরিবারগুলোর পাশে থাকার চেষ্টা করেছি।’ সাবেক তথ্য উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘এই ঈদ রাজনৈতিকভাবেও খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমরা তিনটি এজেন্ডা- বিচার, সংস্কার এবং গণপরিষদ নির্বাচন নিয়ে আগোচ্ছি। দোষীদের বিচার নিশ্চিত করা এর মধ্যে প্রধান। আগামীতে আমাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম আরও গতিশীল হবে। আমরা সারাদেশ সফর করবো এবং সাংগঠনিক কার্যক্রম আরও বেগবান করবো। আমাদের যে তিনটি এজেন্ডা সেটি বাস্তবায়নে জনমত তৈরি করবো।’

সুবিধাবঞ্চিতদের সাথে ইসলামী আন্দোলন ঢাকা দক্ষিণের ঈদ উদযাপন
সুবিধাবঞ্চিত অসহায় মানুষের সাথে ঈদ উদযাপন করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ। সোমবার (৩১ মার্চ) ঈদের নামাজের পর রাজধানীর পুরানা পল্টন, বাইতুল মুকাররম, কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন, ঢাকা মেডিকেল, শাহবাগ, টিএসসি এবং কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় সুবিধাবঞ্চিত অসহায় মানুষের সাথে সময় কাটান তারা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মুহাম্মাদ ইমতিয়াজ আলম, কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক মাওলানা লোকমান হোসাইন জাফরী, কেন্দ্রীয় মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য মুফতী শামসুদ্দোহা আশরাফী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সহ-সভাপতি এমএইচ মোস্তফা, সেক্রেটারি আব্দুল আউয়াল মজুমদার, অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মুহাম্মাদ নুরুজ্জামান সরকার, সাংগঠনিক সম্পাদক কেএম শরীয়াতুল্লাহ, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক গোলামুর রহমান আজম, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল আহাদ, সহ-প্রশিক্ষণ সম্পাদক মুহাম্মাদ শফিকুল ইসলাম, ছাত্রনেতা আরিয়ান মুহাম্মাদ ইমন, জোবায়ের হোসেন, ওয়ারী থানা সভাপতি মাহবুবুর রহমান, মুগদা থানা সহ-সভাপতি জানে আলম সোহেল, সবুজবাগ থানা সেক্রেটারি নজরুল ইসলাম।

জুলাই আন্দোলনে নিহত মীর মুগ্ধের বাসায় গেলেন রিজভী
ঈদ শুভেচ্ছা জানাতে জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধের বাসায় গেলেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। সোমবার (৩১ মার্চ) দুপুরে সহকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে মুগ্ধের বাসায় যান তিনি। এ সময় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে রুহুল কবির রিজভীকে নিজ বাসায় পেয়ে ঈদের দিনে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন মীর মুগ্ধের বাবা মীর মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে মুগ্ধর জীবনের বিনিময়ে ম্যাডাম খালেদা জিয়া মুক্তি পেয়েছেন, ম্যাডামের ক্ষুদ্র কর্মী হিসেবে এটাই আমার সার্থকতা।’ এ সময় বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, ছাত্রদলের সহসভাপতি আউয়াল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

আমরা মুক্ত পরিবেশে ঈদ উদযাপন করছি: মির্জা ফখরুল
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘ফ্যাসিবাদ সরকারের শাসনামলের থেকে এবার ঈদ আনন্দময় পরিবেশে হচ্ছে। আমরা মুক্ত পরিবেশে ঈদ উদযাপন করছি।’ সোমবার (৩১ মার্চ) ঈদের দিন সকালে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারতের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন। গত ১৫ বছরের ঈদের সঙ্গে এবারের ঈদের পার্থক্যটা কি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অনেক পার্থক্য, এবার আমরা মুক্ত পরিবেশে একটা আনন্দময় পরিবেশে ঈদ উদযাপন করছি।’ মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকের এই দিনে আমরা আশা করব যে, যেই দায়িত্ব নিয়েছেন সেই দায়িত্বে সবাই সফল হবেন এবং বিশেষ করে অন্তবর্তীকালীন সরকার জনগণের কাছে তাদের দেয়া প্রতিশ্রুতি পালন করবেন। আমরা আমাদের দলের পক্ষ থেকে অবশ্যই সহায়তা করব।’ তিনি আরো বলেন, ‘আজকের এই পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিনে প্রত্যেকটি বাংলাদেশি মানুষ যেন আনন্দের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে পারে সেই জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করেছি ‘ ‘দোয়া চেয়েছি খালেদা জিয়া সুস্থ হয়ে দ্রুত আমাদের কাছে ফিরে আসেন এবং আমাদের নেতা তারেক রহমান তিনি যেন অতি শিগগিরই আমাদের মাঝে ফিরে আসেন সেই দোয়া চেয়েছি।’ বেলা সাড়ে ১১টায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান শেরে বাংলা নগরে জিয়া উদ্যানে জিয়াউর রহমানের সমাধিস্থলে এসে তার কবরে ফুল দেন এবং দোয়া করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন আহমেদ আজম খান, আমান উল্লাহ আমান, মাহবুব উদ্দিন খোকন, রুহুল কবির রিজভী, হাবিব উ্ন নবী খান সোহেল, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, মীর সরাফত আলী সপু, রফিকুল ইসলাম, সাইফুল আলম নিরব, মীর নেওয়াজ আলী, রফিক শিকদার, এসএম জাহাঙ্গীর, আমিনুল হকসহ দলের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের সহাস্রাধিক নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন। জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারতের পর মির্জা ফখরুল সাংবাদিকদেন বলেন, ‘আমরা দলের পক্ষ থেকে, চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং স্থায়ী কমিটির সদস্যদের পক্ষ থেকে আমরা আপনাদের সকলকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি ‘ঈদ মোবারক’। আপনাদের মাধ্যমে আমরা পুরো দেশবাসীর কাছে ঈদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি, ‘ঈদ মোবারক।’ তিনি বলেন, আজকে আমরা জিয়াউর রহমানের মাজার জিয়ারত করতে এসেছিলাম। আমরা পরম করুনাময় আল্লাহর কাছে প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেছি। আমরা একইসঙ্গে জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার কনিষ্ট পুত্র আরাফাত রহমান কোকোর আত্মার মাগফেরাত কামনা করেছি।’ বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘একইসঙ্গে বিগত গণতান্ত্রিক আন্দোলনগুলোতে যারা প্রাণ দিয়েছেন, শহীদ হয়েছেন তাদেরও আত্মর মাগফেরাত কামনা করেছি। বিশেষ করে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে যারা এদেশের স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দিয়েছেন, শহীদ হয়েছেন তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেছি এবং গণতন্ত্রের জন্য বিগত ১৫ বছর ও জুলাই-আগস্টে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেছি।’ ফখরুল বলেন, ‘আজকের এই পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিনে প্রত্যেকটি বাংলাদেশি মানুষ যেন আনন্দের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে পারে সেই জন্য আল্লাহর কাছে আমরা দোয়া করেছি। দোয়া চেয়েছি আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সুস্থ হয়ে দ্রুত আমাদের কাছে ফিরে আসেন এবং আমাদের নেতা তারেক রহমান তিনি যেন অতি শিগগিরই আমাদের মাঝে ফিরে আসেন সেই দোয়া চেয়েছি।’ মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিগত ১৫ বছর ধরে আমরা যে গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছি, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, মানুষের ভোটের অধিকার, মানুষের ভাতের অধিকার, মানবাধিকারের জন্য যে সংগ্রাম করেছে, সেই সংগ্রাম যেন প্রতিষ্ঠিত হতে পারে সেজন্য পরম আল্লাহর কাছে দোয়া করেছি।’

নির্বাচন বিলম্বিত হলে জনগণের মধ্যে ‘তীব্র ক্ষোভ তৈরি হবে’: বিএনপি
চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন না হলে অস্থিতিশীলতা এবং “জনগণের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ” তৈরি হবে বলে সতর্ক করেছে বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। সম্প্রতি দেশটির অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ‘নির্বাচন ২০২৬ সাল পর্যন্ত বিলম্বিত হতে পারে।’ সোমবার (৩১ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স। ছাত্র-নেতৃত্বাধীন ভয়াবহ বিক্ষোভের ফলে ভারতের দীর্ঘ দিনের মিত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে নয়াদিল্লিতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হওয়া পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গত বছরের আগস্ট মাস থেকে ১৭৩ মিলিয়ন জনসংখ্যার এই দেশটি শাসন করছে। দেশের দুই বৃহত্তম দল - হাসিনার আওয়ামী লীগ ও তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল - উভয়ই গত বছর নির্বাচন চেয়েছিল, কিন্তু ড. ইউনূস গত মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) এক বক্তৃতায় বলেন, ‘২০২৫ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে ভোট অনুষ্ঠিত হতে পারে।’ ড. ইউনূস বলেন, “বাংলাদেশের সবচেয়ে অবাধ, সুষ্ঠু এবং বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন” পরিচালনা করতে সংস্কারের জন্য সময় দেওয়া হবে। বিরোধী দল এবং কিছু পশ্চিমা দেশ হাসিনার বিরুদ্ধে পূর্ববর্তী নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ করেছিল।’ এই মাসের শুরুতে ছাত্রনেতা নাহিদ ইসলাম বলেছিলেন, ‘পুলিশিং ও আইনশৃঙ্খলা এখনও পুরোপুরি পুনরুদ্ধার করা যায়নি বলে এই বছরের নির্বাচন আয়োজন কঠিন হবে।’ কিন্তু বিরোধী দল বিএনপি এই বছর “গণতন্ত্রে ফিরে আসতে” চায় বলে দলটির সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সংস্থার সদস্য এবং সাবেক বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রী আব্দুল মঈন খান বলেছেন। গত শনিবার (২৯ মার্চ) রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মঈন খান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘আমরা তাদের বোঝানোর চেষ্টা করব যে- তাদের জন্য সবচেয়ে ভালো উপায় হলো যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নির্বাচন ঘোষণা করা এবং সম্মানজনকভাবে বিদায় নেওয়া।’ ওয়াশিংটন ডিসি থেকে কথা বলতে গিয়ে মঈন খান দাবি করেন, ‘(নির্বাচন আয়োজনের জন্য) ডিসেম্বর মাস সাধারণভাবে সম্মত সময়সূচী। ডিসেম্বরের পরে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠবে।’ ওয়াশিংটন ডিসি থেকে সাক্ষাৎকার দেওয়া এই বিএনপি নেতা সেখানে বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনা করার জন্য মার্কিন কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করতে চাইছেন। তিনি দাবি করেন, ‘বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ থাকবে। এর অর্থ হলো কিছু অস্থিরতা হয়তো... সময়ই সিদ্ধান্ত নেবে।’ মঈন খান হলেন প্রথম সিনিয়র কোন বিএনপি নেতা যিনি এই বছর নির্বাচন না হলে পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। এদিকে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পলায়ন এবং দেশের বাইরে অন্যান্য স্থানে অন্যান্য সিনিয়র নেতারা পলাতক থাকায় হাসিনার আওয়ামী লীগ মূলত ভেঙে পড়েছে। পরবর্তী নির্বাচনে বিএনপির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারে নাহিদ ইসলামের নতুন প্রতিষ্ঠিত সংগঠন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। ছাত্র নেতারা বলেছেন, ‘বাংলাদেশিরা এই দুটি প্রতিষ্ঠিত দল নিয়ে ক্লান্ত ও সবাই পরিবর্তন চায়।’ কিন্তু মঈন খান বলেন, ‘বিএনপির অভ্যন্তরীণ জরিপ থেকে দেখা যাচ্ছে যে- আগামী বছরের মধ্যে যে কোন নির্বাচনে দলটি (বিএনপি) সহজ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে এবং নির্বাচন ঘোষণার পর দলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান তারেক রহমান লন্ডনে স্ব-নির্বাসন থেকে ঢাকায় ফিরে আসবেন।’ সাম্প্রতিক মাসগুলোতে তার এবং তার মা সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি আদালতের আদেশ বাতিল করা হয়েছে, যার ফলে তিনি দেশে ফিরে আসতে পারবেন। মঈন খান বলেন, ‘বিএনপির এখনও কোন জোটের অংশ হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কোনও পরিকল্পনা নেই, তবে নির্বাচিত হয়ে গেলে তারা ছাত্রদের জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ অন্যান্য দলের সাথে কাজ করার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।’ তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের পরে গণতন্ত্রের পক্ষে যারা আছেন তাদের সাথে সরকার গঠন করতে চাইব আমরা।’

বিদেশে আওয়ামী লীগ নেতাদের রাজকীয় ঈদ, দেশে বিপাকে কর্মীরা
২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর ছন্নছাড়া আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। বিশেষ করে, যেসব নেতা দেশ ছেড়ে যেতে পারেননি, তারা আছেন বড় বেকায়দায়। হামলা মামলার ভয়ে বাড়িতে থাকতে পারছেন না। পবিত্র ঈদুল ফিতরেও বাড়িতে গিয়ে নামাজ পড়তে পারছেন না। যারা এলাকায় যাওয়ার চেষ্টা করছেন, রোষানলে পড়ছেন বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের। অথচ দলটির বড় বড় নেতারা বিদেশে রাজকীয় ঈদ উদযাপন করে ছবি দিচ্ছেন। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দেশে থাকা কর্মীরা। এরই মধ্যে ফেসবুকে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদের ঈদ উদযাপনের ছবি দেখা গেছে। দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক মন্ত্রী আব্দুর রহমানও যুক্তরাষ্ট্রে ঈদ উদযাপন করছেন। তার মতো বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী নেতারাও আছেন খোশ মেজাজে। অথচ কর্মীদের অভিযোগ, তাদের খবরও রাখছে না কেউ। জানা গেছে, দলের সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে ঈদ পালন করছেন। এছাড়া দেশের বাইরে নিরাপদে ঈদ পালন করেছেন সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, জাহাঙ্গীর কবির নানক, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসিম কুমার উকিল, সাবেক নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, সুজিত রায় নন্দী, আফজাল হোসেন, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সেলিম মাহমুদ, প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, সাবেক মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, সাবেক এমপি পংকজ দেবনাথ, আওলাদ হোসেন প্রমুখ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাবেক ছাত্রনেতা ও আওয়ামী লীগের একজন কর্মী বলেন, ‘আমরা দেশে নানা জায়গায় পালিয়ে বেড়াচ্ছি। পরিবার-পরিজন থেকে বিচ্ছিন্ন। নিজের ঈদগাহেও যেতে পারছি না। নেতারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে না, আমরা ফোন দিলে ধরে না। অথচ তারা বিদেশে বসে রাজকীয় ঈদ উদযাপন করে সেলফি দিচ্ছেন। কর্মীদের সঙ্গে এটা তো মশকরা।’ আওয়ামী লীগকর্মী সোহাগ উদ্দিন বলেন, ‘আল্লাহর অশেষ রহমতে সুখ-দুঃখ মিলিয়ে পরিবার পরিজন দলীয় নেতাকর্মীর সঙ্গে কুশল বিনিময় ছাড়া এবারের ঈদ কাটছে। প্রিয় পরিবার ও দলীয় নেতাকর্মীদের অনেক অনেক মিস করি।’ সামিউল আলম সাকিব নামের একজন বলেন, ‘গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন হুমকির শিকার হয়ে পলাতক ও দেশছাড়া। কেউ বাড়িছাড়া হয়ে আছে। সবাই যখন ঈদে মা, বাবা পরিবার-পরিজন নিয়ে ঈদে ব্যস্ত, তখন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা চার দেওয়ালে আবদ্ধ। পরিবার ছাড়া সব নেতাকর্মীদের ঈদ বেদনাদায়ক!’ এ নিয়ে বিদেশে থাকা খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘পৃথিবীর যে যেই দেশে আছে, সবাই অসামান্য নির্যাতন নিপীড়নের মধ্যে আছে। আজ আওয়ামী লীগ নাই, বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে কোনো ঈদ আনন্দ নেই। শেখ হাসিনা নেই, দেশের মানুষের মনে শান্তি নেই। ইউনূস সরকার বাংলাদেশে একটা তাণ্ডব তৈরি করেছে। রাজনৈতিক শিষ্টাচার ধ্বংস করে দিয়েছে। এরমধ্যেও আমাদের নেতাকর্মীরা সাধারণ মানুষের সঙ্গে ছিল। রমজানের সংযমের মধ্য দিয়ে ফের আমরা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার শপথ নিয়েছি।’

গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী প্রথম ঈদে ফ্যাসিবাদ পুনরুত্থান রোধের সংকল্প বিভিন্ন দলের নেতাদের
ফ্যাসিস্ট আমলে ৩০টির বেশি ঈদ এলেও উৎসব করতে পারেননি বিরোধী রাজনীতিকরা। তাই, গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে প্রথম ঈদে ফ্যাসিবাদ পুনরুত্থান রোধের প্রতিজ্ঞা করেছেন তারা। গত বছরের জুলাই-আগস্টে ৩৬ দিনের ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অবসান ঘটে শেখ হাসিনার প্রায় ১৬ বছরের শাসনের। প্রায় দুই হাজার মানুষের আত্মত্যাগে স্বৈরাচার মুক্ত হয় দেশ।আওয়ামী লীগের শাসনামলে উদ্যাপিত হয়েছে ৩৪টি ঈদ। কিন্তু সেইসব ঈদ কেবলই দুঃখগাঁথা ছিল ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক কর্মীদের স্মৃতিতে। সেই স্মৃতিই তুলে ধরলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জহির উদ্দিন স্বপন।তিনি বলেন, ‘গত ৩০টা ঈদ বিরোধী দলের কোনো নেতাকর্মী শান্তিতে উদ্যাপন করতে পারেনি। আমি বছরের পর বছর বাড়িতে যাওয়ার সুযোগ পাইনি। বাবা-মায়ের কবর জিয়ারত করতে পারেনি।’ দীর্ঘ দিন জুলুমের শিকার হন ইসলামি দলের নেতারা। বিগত দেড় দশকের ঈদের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে যন্ত্রণার কথা তুলে ধরেন তারা।বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশের আমির মামুনুল হক বলেন, ‘গত সাতটা ঈদ আমাকে দীর্ঘ দিন কারাগারে বন্দি থাকতে হয়েছিল। এই বন্দি অবস্থায় ঈদটা অতিরিক্ত বেদনা নিয়েই হাজির হয়। আমার চেয়ে আরও বেশি নির্যাতিত বহু মানুষ রয়েছে।’জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘মায়ের সঙ্গে ঈদ করার জন্য আমাদের নেতাকর্মীরা বাড়িতে গেছে। ঘরে ঢোকার আগেই সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে নিয়ে গেছে। এমনও হয়েছে। বাসায় ঢোকার আগে ধরে নিয়ে ক্রসফায়ারে গুলি করে হত্যা করে চলে যেত। এমন নির্মম ঘটনা অনেক হয়েছে।’ তবে সম্প্রতি মাঠ পর্যায়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তির মধ্যে যে বিভেদ তৈরি হয়েছে, তা দূর করে ঐক্যবদ্ধ থাকার তাগিদ দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদিব।তিনি বলেন, ‘সব রাজনৈতিক দলকে এক হতে হবে। সবাই মূলত দেশের জন্য, দেশের মানুষ ও গণতন্ত্র রক্ষার জন্য কাজ করবে। সে জায়গা থেকে আমরা মনে করি, সব দলগুলো রাজনৈতিক উদারতার পরিচয় দেবে এবং সব ধরনের বিভেদ ভুলে সবাই একমত হবে।’নতুন বাংলাদেশে কোনো নাগরিক যেন বিগত দিনের মতো ধর্মীয় ও রাজনৈতিক অধিকার হরণের শিকার না হয় সে বিষয়ে সোচ্চার থাকার কথা জানান এসব দলের নেতারা।

কারাগারে আওয়ামী লীগের নেতাদের ঈদ
তাদের বাড়িভর্তি মানুষ ছিল গত বছরও। কেউ ঈদ সেলামি দিতে আসছেন। কেউ নিতে। কেউবা আবার ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়ে করতে আসছেন। অথচ বছর না ঘুরতেই আজ তারা কারাগারে আসামি হিসেবে ঈদ পালন করছেন। মন্ত্রী, সাংসদ ও নেতা নানা পদ-পদবি আর কতই না দাপট ছিল তাদের। অথচ এখন তাদের হাতে হাতকড়া। পিছমোড়া দিয়ে তাদের তোলা হচ্ছে আদালতে। ঠিক ধরেছেন। বলছি, পতিত সরকারের পদস্থ কর্মকর্তা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের কথা। একসময়ের দোর্দণ্ড দাপুটে এই নেতারা এখন বড্ড অসহায়। তাদের একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। কী ছিল না তার? অর্থবিত্ত বা ক্ষমতা! এখন সবই হাতছাড়া। তিনিও ঈদ করছেন কারাগারে। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমু। আওয়ামী লীগের এক সময়ে ‘মিস্টার সিদ্ধান্ত’ নামে খ্যাত এই নেতা দলে অপাঙক্তেয় হলেও এলাকায় আধিপত্য ঠিকই ধরে রেখেছিলেন। তার কাছে হাজিরা দিতে ও দোয়া নিতে হতো বহু শিল্পপতির। বরিশাল অঞ্চলে নেতা হতে হলে হাতেগোনা যে দুই-তিনজনের আশির্বাদ প্রয়োজন হতো, তিনি তাদেরই অন্যতম। প্রতাপশালী এই নেতার গ্রেফতারের পর তার ঢাকার ও ঝালকাঠির বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা উদ্ধার হয়েছে। কারাগারে অসহায় ঈদ পালন করছেন তিনিও। যদিও সম্প্রতি আদালতে সাবেক এই মন্ত্রী বলেছিলেন, ‘আমি ঢাকা বারের সদস্য, হাইকোর্ট বারের সদস্য। এখানকার পরিবেশ দেখে দুঃখিত। এই পরিবেশে কিছু বলা উচিত না। মামলা চলবে, ভবিষ্যতে আমি আমার বক্তব্য উপস্থাপন করবো। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অনেক কথা বলেছেন। আমি একজন রাজনীতিবিদ। রাজনৈতিক বক্তব্য দিতে গেলে দুই ঘণ্টা লেগে যাবে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা একে অপরের ভাই ভাই। মিলে-মিশে থাকা উচিত। আমরা একসঙ্গে থাকবো। কেন দ্বন্দ্বে জড়াবো? আশা করছি, এ পরিবেশ থাকবে না।’ তার এ কথার মধ্যেই বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা চিৎকার শুরু করেন। তারা বলতে শুরু করেন, তিনি (আমু) ভয় দেখাচ্ছেন। তখন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী তাদের শান্ত করেন। পরে আমু বলেন, ‘আমরা যার যার পক্ষ অবলম্বন করবো। নিজেরা নিজেরা কেন দ্বন্দ্বে জড়াবো।’ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মোশাররফ হোসেন, আব্দুর রাজ্জাক, ফারুক খান, শাজাহান খান, কাজী জাফরউল্লাহ, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, কামরুল ইসলাম, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী দীপু মনিরও ঈদ কাটছে কারাগারে। একেকজন একেকটা আসনে ধরাকে সরা জ্ঞান করলেও এখন তাদের অসহায়ত্বে কেউ পাশে নেই। সাবেক শিল্প প্রতিমন্ত্রী ও মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা কামাল আহমেদ মজুমদার তো শেষ বয়সে এসে কারাগারের যন্ত্রণা না নিতে পেরে রাজনীতি ছেড়ে দেওয়ারই ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি আদালতে বলেন, ‘আমার ৭৬ বছর বয়স। আমার চোখ ৭০ শতাংশ নষ্ট হয়ে গেছে। আমার পরিবার সম্পর্কে কোনো খোঁজ-খবর নিতে পারছি না। আমি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের রাজনীতি করবো না।’ ‘রাজনীতি থেকে ইস্তফা দিলাম। আমি আওয়ামী লীগের কোনো পদে নেই। এখন থেকে প্রাথমিক সদস্য পথ থেকেও পদত্যাগ করলাম। একের পর এক মামলা দেওয়া হচ্ছে। একের পর এক নির্যাতন করা হচ্ছে। এই বয়সে আমার ওপর জুলুম চালানো হচ্ছে। আল্লাহকে ডাক দেওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই’- বলেন ঢাকার রাজনীতির এই প্রভাবশালী নেতা। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের কথিত ছোটভাই সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকও ঈদ করছেন কারাগারে। সবচেয়ে প্রভাবশালী এই প্রতিমন্ত্রী এখন সবচেয়ে অসহায়। ১০ মার্চ দুদকের মামলায় হাজিরা দিতে আদালতে এসে সাংবাদিকদের দেখে জুনাইদ আহমেদ পলক বলতে শুরু করেন, ‘কথা বললেই রিমান্ড ও মামলার সংখ্যা বাড়ে। হাত পেছনে নিয়ে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে আটকে রাখে। কথা বলে কী লাভ?’ এর বাইরে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, জাতীয় কমিটির সদস্য বলরাম পোদ্দার, সাবেক সাংসদ হাজী মোহাম্মদ সেলিমসহ দলটির জেলা-উপজেলা পর্যায়ের অসংখ্য নেতা এ বছর কারাগারে ঈদ করছেন।

জুলাই-আগস্টে যারা মানুষ হত্যা করেছে তাদের বিচার হতেই হবে: জামায়াত আমির
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘আজ ঈদ হলেও বাংলাদেশের অনেকের ঘরেই আজ ঈদের আনন্দ নেই। অনেক মা তার সন্তানের জন্য কান্না করছে। জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে যারা গণহত্যা চালিয়েছে এবং মানুষ হত্যা করেছে তাদের বিচার হতেই হবে।’ সোমবার (৩১ মার্চ) বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে অনুষ্ঠিত ঈদের প্রথম জামাতে অংশ নেওয়ার পর তিনি এসব কথা বলেন। দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে জামায়াত আমির বলেন, ‘আমরা শহীদের আত্মার মাগফেরাত কামনায় আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিচার হতেই হবে। তাহলে এই শহীদদের পরিবার কিছুটা হলেও সান্ত্বনা পাবে। আমরা আগামীতে এমন একটি বাংলাদেশ প্রত্যাশা করি যেখানে রক্তের হোলি খেলা হবে না। যেখানে মানুষের জীবনকে তুচ্ছ হিসেবে গণ্য করা হবে না। যেখানে মানুষ ভালোবাসা সম্মান মর্যাদা এবং সমতার ভিত্তিতে বসবাস করতে পারবে। এখানে ধর্ম বিবেচনায় মানুষকে প্রমাণ করা হবে না এবং তার অধিকার কেড়ে নেওয়া হবে না। একজন নাগরিক হিসেবে সকলেই সেখানে সমান অধিকার ভোগ করবে। আর এসব শুধু আল্লাহর কোরআনের আইন বাস্তবায়নের মাধ্যমে সম্ভব। আমরা এই সমাজের জন্য লড়াই করছি। আমরা ক্ষুধা মুক্ত একটি সমাজ চাই।’ শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা চাঁদাবাজ-দখলবাজ মুক্ত সমাজ গড়তে চাই। এ ব্যাপারে আমাদের কোনো দ্বিমত নাই। এই কথাটি যদি আমার নিজের বিপক্ষে যায় তাও আমাকে বলতেই হবে। সত্য কথা বলা ছাড়া আমাদের অন্য কোনো উপায় নাই। এই দেশে আর দুর্বৃত্তায়নের রাজনীতি আমরা হতে দিতে চাই না। কারণ মানুষ আর মানুষ ফ্যাসিবাদের কবলে না পড়তে চায় না।’ এর আগে জামায়াত আমির উপস্থিত মুসল্লিদের সঙ্গে কোলাকুলি করেন ও কুশল বিনিময় করেন।